|  |  | 
| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস | 
বিবর্তনের ধারায়  মানুষ যখন চার পা থেকে দুপায়ে সোজা হয়ে চলাফেরা শুরু করল তখনকার মানুষেরা হল Homo  erectus । আজ থেকে ১৮ লক্ষ বছর আগের  প্রথম Homo  erectus এর দেখা মেলে আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ায় আর সবচে' নতুন জীবাশ্মের  বয়স হল ৩ লক্ষ বছর। ১৮৯৬ সালে ফরাসী প্রত্নতত্ববিদ ডুবোয়া (Dubois)  প্রথম জাভা মানুষের(Java man)   কঙ্কালের জীবাশ্ম আবিস্কার করে দাবী জানান Homo  erectus দের অস্তিত্বের। চার পা ছেড়ে দুপায়ে হাটার  দাঁড়িয়ে  সোজা হয়ে চলাফেরা করার যোগসুত্র  বা Missing link  হিসাবে দাবী করলেন জাভা মানুষ(Java man)   দেরকে। ডুবোয়ার সে দাবী বিজ্ঞানীরা শিম্পাঞ্জী বা বানর জাতীয় প্রানীর জীবাশ্ম হিসাবে  উড়িয়ে দিলেন।  এরপর  তাঞ্জানিয়া, স্পেন, ভারত, চীন,  প্রভৃতি স্থানে পাওয়া গেল  Homo  erectus এর  জীবাশ্ম।
১৯২১ সাল। সুইডেনের প্রত্নতত্ববিদ  এবং ভূতত্ববিদ এন্ডারসন  (Johann Gunnar Andersson ) কাজ করতেন চীন সরকারের কৃষি মন্ত্রনালয়ে । লোক মুখে শুনলেন রাজধানী পিকিংয়ের ৫০ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমের পাহাড় ঘেরা গ্রাম চৌকুতিয়ান (Zhoukoudian)  এর উত্তরের  “ড্রাগন হাড়ের পাহাড়” এ হরহামেশাই দেখা মেলে  জীবাশ্ম এবং জীব জন্তুর হাড়গোড়ের । কৌতুহলী এন্ডারসন ছুটে গেলেন চৌকুতিয়ান (Zhoukoudian)  ।  জরীপ চালিয়ে  প্রানীর হাড়গোড়ের সাথে পাহাড়ে খুজে পেলেন  বিশেষ ধরনের কোয়ার্জ পাথরের । এই ধরনের  পাথর  এই পাহাড়ে পাওয়ার কথা নয়। নিশ্চয়ই অন্য কোথা থেকে কেউ নিয়ে এসেছে এই পাথর। কারা তারা?  শুরু করলেন ব্যাপক  অনুসন্ধান এবং খননকাজ। ১৯২৩ সালে খুজে পেলেন  দুটো  মানুষের দাঁতের জীবাশ্ম। কয়েক লক্ষ বছরের পুরোন সে দাঁত। ১৯২৬ সালে সুইডেনের রাজপুত্রের চীন সফরকালের সংবর্ধনা সভায় এন্ডারসন নিজের আবিস্কার তুলে ধরে দাবী জানালেন এই এলাকায় লক্ষ বছর আগে মানুষের অস্তিত্বের। বিস্মিত হলেন বিজ্ঞানী সমাজ কারন এই এলাকায় আদিম মানুষের অস্তিত্বের কথা তখন পর্যন্ত শোনা যায় নি। কিন্তু মাত্র দুটো দাঁত? 
কানাডার প্রত্নতত্ববিদ ডঃ  ব্লাক (Dr. Davidson Black ) ছিলেন পিকিং  এর ইউনিয়ন মেডিকেল কলেজের  এনাটমী বিভাগের ডীন। ডঃ ব্লাক, এন্ডারসনের পাওয়া দাঁত দুটো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলেন যে দাঁত দুটো প্রকৃত পক্ষেই আদিম মানষের । তিনি নতুন এই আদিম মানুষের নাম দিলেন  Sinanthropus pekinensis  আর আমেরিকার ভূতত্ববিদ A. William Grabau,  নাম দিলেন “পিকিং মানব”,  যা  পরবর্তীকালে  নামকরন করা হয় Homo erectus pekinensis.
এগিয়ে এলেন চীনের বিজ্ঞানীরা।১৯২৮ সালে  চীনের জীবাশ্মবিদ, Dr C. C. Young, এবং  Wenzhong Pei, খুজে পেলেনপিকিং মানুষের চোয়ালের হাড়। মিলল আমেরিকার রকফেলার ফাউন্ডেশানের আর্থিক আনুকুল্য। শুরু হল পদ্ধতিগত খননকাজ। ১৯২৯  সালে ডঃ পেং এবং  ডঃ ব্লাক মিলে পিকিং মানব গবেষনার জন্য প্রতিষ্ঠা করলেন গবেষনাগার "Cenozoic Research Laboratory" ।  ডঃ ব্লাক ১৯৩৪ সালে তার মৃত্যু অবধি  অধিকাংশ জীবাশ্মের আবিস্কারে ভূমিকা রাখেন। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৭ অবধি আবিস্কৃত হল ১৪টি মাথার খুলির অংশ,১১টি নীচের চোয়ালের হাড়, অসংখ্য দাঁত এবং অনান্য হাঁড় গোড়।
পিকিং মানবের মাথার খুলি।
 হাড়গোড় গুলোর বয়স নির্ধারন করা হয় ৫ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ বছর আগ পর্যন্ত যদিও সাম্প্রতিক গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে  পিকিং মানবেরা ছিল আরো পুরোনো বা  সাড়ে ৭ লক্ষ বছর আগের ।অপেক্ষাকৃত আধুনিক ৩০হাজার বছরের পুরোন মানুষের হাড়গোড়ের জীবাশ্মও পাওয়া গেছে এখানে। ১৯৩৭ সালে জাপানের চীনে আগ্রাসন শুরু হলে  পিকিং মানব গবেষনায় খননকাজ বিঘ্নিত হল। ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালীন সময়ে পিকিং মানুষের পাওয়া  জীবাশ্ম নিরাপত্তার খাতিরে  জাহাজে করে পাঠানো হয় আমেরিকায়। দুঃখের বিষয় হল পথিমধ্যে সমস্ত জীবাশ্ম হারিয়ে যায় যার সন্ধান আজও পাওয়া যায় নি। তবে তাদের অবিকল প্রতিকৃতি সংরক্ষিত আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে কিছুদিন পিকিং মানব গবেষনায় ছেদ পড়ে। ১৯৬৬ সালে ডঃ পেং নতুন করে চোয়ালের হাড়ের জীবাশ্ম  আবিস্কার করেন চৌকুতিয়ানে। ১৯৯৬ সালে ইউনেস্কো চৌকুতিয়ানকে  World Heritage site  ঘোষনা করে।
আবার মাথার খুলি। 
 
কেমন ছিল পিকিং মানবেরা? 
অনান্য Homo  erectus দের সময়কাল বা মধ্য প্লিওস্টিন ( Middle Pleistocene,) যুগে বসবাস ছিল পিকিং মানবদের। এরা  ছিল আধুনিক মানুষ বা  Homo sapiens  দের মতই। অপেক্ষাকৃত খর্বাকৃতির ছিল পিকিং মানবেরা। পুরুষদের উচ্চতা থাকত ১৫৬ সেঃমিঃ এবং মেয়েদের ১৪৪সেঃমিঃ। এদের মাথার খুলি ছিল অপেক্ষা কৃত ছোট আধুনিক মানুষদের দেড় লিটারের যায়গায় ১১০০ থেকে ১২০০ সিসি পর্যন্ত। এদের মাথার  আকৃতি ছিল চ্যাপ্টা কম উচ্চতার এবং নীচের চোয়ালের হাড় ছিল সামনের দিকে  থাকা। এরা চাষাবাস জানত না, গাছের ফলমুল এবং বন্যপ্রানী শিকার  ছিল এদের খাবারের প্রধান উৎস। অন্ততঃ দুই প্রকার হরিন ছিল এদের মাংসের উৎস। চৌকুতিয়ানের খননে আবিস্কৃত হয়েছে অসংখ্য পাথরের হাতিয়ার। তারা কোয়ার্জ এবং বেলেপাথর দিয়ে তৈরী করত এই সমস্ত হাতিয়ার। পিকিং মানব আগুনের ব্যবহার শিখেছিল ,ফলে রান্না বান্না এবং  নিজেদেরকে বন্যপ্রানীর আক্রমনের হাত থেকে রক্ষা করা এদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল । তারা বন্যপ্রানীর চামড়া পরত এবং খাবার দাবার ফলমুল মজুদ করে রাখত।  এদের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল খুবই বেশী কারন হিসেবে বলা হয় যে আবিস্কৃত জীবাশ্মের অধিকাংশই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্কদের। এরা গুহায় বাস করত। তাদের আয়ুস্কাল ছিল আধুনিক মানুষদের তুলনায় অনেক কম মাত্র ৪.৫% লোক ৫০ বছর পর্যন্ত বাচত আর ১৪ বছর বয়সের আগেই মারা যেত ৬৮.২%, এরা সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করতএবং তাদের মধ্যে শ্রম বিভাজন ছিল। মেয়েরা করত গৃহস্থালী কাজ আর পুরুষেরা শিকার এবং ফলমুল আরোহনে ব্যস্ত থাকত।
আমার কথা- কথায় বলে বেকারের কাজ বেশী । তাই নেই কাজ তো খৈ ভাঁজ।ক্রীসমাস উপলক্ষে স্কুল ছুটি হয়ে গেল  সুতরাং টোরন্টোর রয়্যাল ওন্টারিও মিউজিয়াম। বার বার যাই ওখানে । প্রথম কারন হল টোরোন্টো পাবলিক লাইব্রেরীর সুবাদে ২৫ ডলারের টিকিট পাই বিনামুল্যে আর দ্বিতীয় কারন হল যাদুঘরের প্রতি আকর্ষন । গত ১৭ই ডিসেম্বর রয়াল ওন্টারিও মিউজিয়ামে  ঢুকেই দেখি ফ্রী সেমিনার “Peking man- Canada connection” আমন্ত্রন না থাকা সত্বেও লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। কিন্তু অভ্যর্থনাকারী সবিনয়ে জানালেন প্রবেশাধিকার শুধু মাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য তবে...... কোন আমন্ত্রিত অতিথি যদি অনুপস্থিত থাকেন তাহলে প্রবেশাধিকার পেলেও পেতে পারেন। অগত্যা শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঢুকেছিলাম সেমিনারে। টোরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ শেং পেং পিকিং মানবের উপর একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পন্ডিত। প্রায় এক ঘন্টা মন্ত্রমুগ্ধের মত তার বক্তৃতা শুনেছিলাম। চীনের  বেইজিং বিশ্বাবিদ্যালয়ের  একদল গবেষক ও যোগ দিয়েছিলেন সে সেমিনারে।  পিকিং মানবের মাথার খুলির ছবি  তুলেছিলাম।
 সুত্র- ১) এখানে  
২) এখানে  
৩)এখানেও  
৪) এবং এখানেও  
৫) রয়্যাল ওন্টারিও মিউজিয়াম,টোরোন্টো, কানাডা।
 ১ টি
    	১ টি    	 +০/-০
    	+০/-০©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩  রাত ১০:৩৭
০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩  রাত ১০:৩৭
সিডির দোকান বলেছেন: ভালা অইছে রে......