![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
টোরোণ্টোর রয়্যাল ওন্টারিও মিজিয়ামের সিলাকান্থ মাছ
১৮৩৯ সালে ইংরেজ প্রকৃতিবিদ লুই আগাসিজ(Louis Agassiz ) এক অদ্ভুত মাছের জীবাশ্ম খুজে পেয়ে মাছের নাম রেখেছিলেন সিলাক্যান্থ। গ্রীক থেকে উদ্ভুত সিলাক্যান্থের মানে হল ফাকা মেরুদন্ড। তারপর আরো অনেকেই খুজে পেলেন এই মাছের জীবাশ্ম। এই মাছের শেষ যে জীবাশ্ম পাওয়া গেল তার বয়সও সাড়ে ৬ কোটি বছর। বিজ্ঞানীরা ধরে নিলেন আজ থেকে সাড়ে ৬ কোটী বছর আগের ক্রেটাসিয়াস যুগের শেষে ব্যাপক হারে প্রানীকুল মারা পড়ে যে প্যালিওজীন এক্সটিংশানে( Paleogene Extinction) সেই সময়ে ডাইনোসরদের সাথে সাথে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছে এই মাছ।
জীবাশ্ম আবিস্কারের প্রায় ১০০ বছর পর ১৯৩৮ সালের ২১ শে ডিসেম্বর দক্ষিন আফ্রিকার পুর্ব উপকুলে চালুমনা নদীর মোহনার অদুরে ( Chalumna River ) মাছ ধরছিল ট্রলার নেইরিনের জেলেরা। জেলেদের জালে ধরা পড়ল অদ্ভুত এক মাছ যা আগে কেউ কোনদিন দেখেনি। ধরা পড়ার পর কয়েক ঘন্টা বেচেছিল মাছটি। জাহাজের অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন মিঃ গুসেন( Hendrik Goosen) ও ৫ ফুট লম্বা নীল রঙের এই অদ্ভুত মাছকে চিনতে পারলেন না। এই মাছ খাওয়ার অনুপযোগী ধরে নিয়ে রেখে দিলেন মাছটিকে মিস লাটিমের কাছে বিক্রি করার জন্য , কারন মিস লাটিমের নতুন কোন মাছ পেলেই তা ভাল দাম দিয়ে কিনে নিতেন। । মিস মারজরী কার্টনী লাটিমের ( Miss Marjorie Courtenay-Latimer) ছিলেন দক্ষিন আফ্রিকার ইস্ট লন্ডন যাদুঘরের কিউরেটর । লাটিমের এই অদ্ভুত দর্শন মাছ কিনে নিয়ে পড়লেন ফ্যাসাদে। কিভাবে নিয়ে যাবেন যাদুঘর ,কিভাবে সংরক্ষন করবেন এটিকে? সেই সময়ে তার না ছিল কোণ ফ্রীজ বা কোল্ড স্টোরেজ। অগত্যা ট্যাক্সিডার্মিস্টের সহায়তায় সংরক্ষন করলেন এটিকে। কিউরেটর লাটিমের তন্ন তন্ন করে খুজেও এই রকম কোন মাছের বর্ননা পেলেন না জীব বিদ্যায়। যাদুঘরের চেয়ারম্যান ও বাজে জিনিস বলে উড়িয়ে দিতে চাইলেন এই মাছকে। অনন্যোপায় হয়ে লাটিমের চিঠি লিখলেন দক্ষিন আফ্রিকার রসায়নের অধ্যাপক জে, বি, স্মিথ(Professor James Leonard Brierley Smith ) এর কাছে। চিঠির সাথে মাছের একটা স্কেচ ও পাঠালেন লাটিমের। ১৯৩৯ সালের ৩রা জানুয়ারী চিঠি পৌছালো স্মিথের হাতে। প্রফেসর স্মিথ রসায়নের অধ্যাপক হলেও মৎস বিদ্যা বা ( Icthiology) তে তার সবিশেষ দখল এবং উৎসাহ ছিল। মাছে্র ছবি দেখে অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে রইলেন প্রফেসর স্মিথ। এ ও কি সম্ভব? এই ছবি তো আজ থেকে সাড়ে ৬ কোটী বছর আগে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেওয়া মাছ সেলোকান্থ এর । তবে কি পৃথিবীতে এখনো টিকে আছে জীবন্ত সেলোকান্থ মাছ?
নিশ্চিত ভাবে বলার আগে একটূ ভালভাবে দেখতে হচ্ছে ব্যাপারটা। প্রফেসর স্মিথ লাটিমেরকে টেলিগ্রাম করলেন “ ভালভাবে মাছ সংরক্ষন কর, আমি ফেব্রুয়ারীতে আসছি” ইত্যবসরে বন্ধু ড: বার্নার্ডের কাছ থেকে বই ধার করে নিয়ে ভালভাবে পড়লেন প্রাগৈতিহাসিক যুগের মাছ সম্পর্কে, এবং চিঠির সাথে পাঠানো কয়েকটা মাছের আঁশ পরীক্ষা করে প্রাগঐতিহাসিক যুগের মাছের আঁশের সাথে সাদৃশ্য খুজে পেলেন। ১৬ই ফেব্রুয়ারী ১৯৩৯ প্রফেসর স্মিথ পৌছালেন ইস্ট লন্ডন। সরাসরি গেলেন যাদুঘরে। বিষ্ময়ে চোখ ফেরাতে পারছেন না স্মিথ, সাড়ে ছয় কোটী বছর আগে প্রাগৈতিহাসিক যুগে হারিয়ে যাওয়া সিলাকান্থ মাছ তার চোখের সামনে। তাহলে এখনো পৃথিবীতে বেচে আছে এই মাছ? স্ত্রীকে নিয়ে ৪ মাস কঠিন পরিশ্রম করে অবশেষে ১৯৩৯ সালের জুন মাসে প্রফেসর স্মিথ বৈজ্ঞানিক সমাজে প্রকাশ করলেন তার আবিস্কার। সাড়া পড়ে গেল বিজ্ঞানী সমাজে। প্রফেসর স্মিথ মিস লাটিমের এর সম্মানার্থে এবং প্রাপ্তিস্থান চালুমনা নদী অনুসারে মাছের বৈজ্ঞানিক নামকরন করলেন Latimeria chalumnae । জীবন্ত সিলাকান্থ মাছকে খুজে পাওয়াকে জীবন্ত ডাইনোসর খুজে পাওয়ার সমতুল্য অভিহিত করলেন বিজ্ঞানীরা।
এই মাছের শরীরের অভ্যন্তরের অংগ প্রত্যংগ গুলো সঠিকভাবে সংরক্ষিত না থাকায় স্মিথ চাইছিলেন আরো একটা আস্ত মাছ। তিনি ১০০ পাউন্ডের পুরস্কারের ঘোষনা দিয়ে মাছের ছবিসহ পোস্টার বিতরন করে দিলেন আশে পাশের দেশগুলোতে।
১৯৫২ সালের ডিসেম্বর মাস। দক্ষিন ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাস্ট্র কমোরো। এই রাস্ট্রের আনুজান দ্বীপের অদুরে সমুদ্রে আহমদি আবদুল্লাহর জালে ধরা পড়ল ৮২ পাউন্ড ওজনের মাছ। মাছের আঁশ সরিয়ে কেটে ফেলার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন আবদুল্লাহ। এমন সময় একজন শিক্ষক এসে তাকে দেখালেন প্রঃ স্মিথের সিলাকান্থ মাছের লিফলেট। আবদুল্লাহ ২৫ মাইল দূরে ক্যাপটেন এরিক হান্টের কাছে পৌছে দিলেন মাছকে। হান্ট টেলিগ্রাম পাঠালেন প্রফেসর স্মিথের কাছে। সেই মুহুর্তে কমরো যেতে চাইলেন হান্ট, কিন্তু কোন ফ্লাইট না থাকায় দক্ষিন আফ্রিকার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানালেন কমরো যাওয়ার। প্রঃ স্মিথের ভয় ছিল যে সামান্য ফরমালিন ছিল ক্যাপ্টেন হান্টের কাছে তা দিয়ে ভালভাবে মাছকে সংরক্ষন করতে পারবেন কিনা ? কমরো ফরাসী এলাকা হওয়াতে ফরাসীদের হাতে এই মাছ পড়লে তা আর পাবেন না স্মিথ। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সামরিক বিমানে অবশেষে বেশ দেরীতে কমরো পৌছালেন হান্ট। মাছ দেখে আনন্দে কেঁদে ফেললেন স্মিথ । স্মিথের ধারনা সঠিকই ছিল । মাছ নিয়ে রওয়ানা দেওয়ার পর পরই ফরাসীরা এই মাছের সন্ধানে বিজ্ঞানীদের কমরো দ্বীপে আসা নিষিদ্ধ করে। বাচ্চা কাচ্চারা যেমন খেলনা নিয়ে ঘুমায়, প্রফেসর স্মিথও সেই রাত দক্ষিন আফ্রিকা ফেরার পথে মাছ সাথে নিয়েই ঘুমিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে স্মিথ মৎস বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের মাইক ব্রুটন এবং হান্স ফ্রিক কমরো দ্বীপের অদুরে সমুদ্রে প্রাকৃতিক পরিবেশে এই মাছ নিয়ে গবেষনা করেন নিজস্ব সাবমেরিনে।
বিষ্ময়ের হানিমুন- ১৯৯৭ সাল। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন মেরিন বায়োলজিস্ট মার্ক আর্ডম্যান মধুচন্দ্রিমা উদযাপন করছেন ইন্দোনেশিয়ার উত্তর সুলায়েসী দ্বীপের মেনাডোতে। নতুন বৌ বাজারে অদ্ভুত নীল মাছের দিকে আর্ডম্যানের দৃস্টি আকর্ষন করলেন। মুহুর্তেই মার্ক চিনতে পারলেন সিলাকান্থ। তিনি ছবিসহ তার নতুন দেখা সিলাকান্থ মাছের উপর রচনা ইন্টেরনেটে প্রকাশ করলেন। কানাডার গুয়েলফ ইউনিভার্সিটির দুজন সিলাকান্থ মাছ গবেষক আর্ডম্যানকে টেলিফোন করে নিশ্চিত করলেন ইন্দোনেশিয়ার তার সিলাকান্থ মাছ। অবষেষে আবিস্কৃত হল কমরো দ্বীপ থেকে ৬,০০০ মাইল পুবদিকে এই মাছের দ্বিতীয় আবাস স্থল। একই রকম দেখতে হলেও ইন্দোনেশিয়ার এই মাছ ভিন্ন প্রজাতি আবিস্কৃত হল ডি,এন,এ পরীক্ষা করে। এই মাছের নাম হল ( Latimeria mnadoensis )
ইন্দোনেশিয়ার সিলাকান্থ মাছ
সিলাকান্থ মাছ- রঙ- গাঢ় নীল , ইন্দোনেশিয়ার প্রজাতি অপেক্ষাকৃত হালকা। লম্বা- ৫-৬ ফুট অবধি। ওজন- ৮০- কিলোগ্রাম অবধি এ পর্যন্ত ধরা পড়া মাছ গুলোর মধ্যে সবচে’ বড়টি ১৯৯১ সালে মোজাম্বিকের অদুরে ধরা পড়ে । প্রাপ্তিস্থান- দক্ষিন ভারত মহাসাগরের কমরো দ্বীপপুঞ্জের আশ পাশের এলাকা এবং ইন্দোনেশিয়া। আবাসভুমি- ৩০০-৭০০ ফুট গভীরে নাতিশীতোষ্ণ পানিতে, সমুদ্রের পাহাড়ের খানাখন্দ। এরা সাধারনতঃ রাতের বেলায় শিকার করে এবং সর্বভুক। এদের চোখে রয়েছে বিশেষ ব্যাবস্থা যাকে বলা হয় “টেপটাম” যার কারনে বিড়াল কুকুরের মত এদের চোখও অন্ধকারে জ্বলজ্বল করে এবং এরা গভীর সমুদ্রের অন্ধকারেও ভালভাবে দেখতে পায়। এরা ১০০ বছর অবধি বাঁচে, ২০ বছর বয়স হয়ার পর প্রজনন সক্ষম হয় এবং ১৩ মাস গর্ভধারনের পর ২০-২৫ টা বাচ্চা প্রসব করে। জাতিসঙ্ঘ এর প্রকৃতি সঙ্গরক্ষন অর্গানাইজেশান বা IUCN এর তালিকায় এরা বিলুপ্তির ছুকিপুর্ন মাছ। প্রাকৃতিক পরিবেশে ৫০০ মত মাছ এখন জীবিত আছে।
গভীর সমুদ্রে প্রাকৃতিক পরিবেশে সিলাকান্থ মাছ।
বিশেষত্ব- চতুস্পদ জন্তুদের মত এদেরও রয়েছে চার হাত পা এর সমতুল্য পাখনা। মজার ব্যাপার হল এই হাত এবং পা’য়ের মধ্যে হাড়ও আছে এবং এ গুলো দিয়ে তারা চতুস্পদ জন্তুর মত চলা ফেরা করে। এদের মাথার খুলিতে রয়েছে একটা অতিরিক্ত জোড়া যার ফলে এরা মুখ হা করতে পারে অনেক বড় করে এবং অনেক বড় শিকার গলাধকরন করতে পারে। মেরদন্ড এর স্থলে রয়েছে ফাঁকা নটোকর্ড যা চলে গেছে লেজ অবধি যে কারনেই এদের নাম হল সিলাকান্থ। এদের মুখের সামনের দিকে রয়েছে বিশেষ বিদ্যুৎ সনাক্ত করন ব্যবস্থা যা দিয়ে এরা শিকার খুজে পায়। লেজ এ রয়েছে তিনটি ভাগ।
সিলাকান্থ এর গুরুত্ব- বিবর্তনের ধারায় প্রানের জন্ম হয় সমুদ্রে। এক কোষী- বহুকোষী হয়ে সামুদ্রিক মেরুদন্ডী প্রানী- মাছ- ক্রমশ উভচর প্রানী - স্তনপায়ী প্রানীর জন্ম হয়। সিলাকান্থ মাছকে ধরা হয় মাছ এবং উভচর প্রানীর মধ্যকার অবস্থাকে। এই অবস্থায় তাদেরকে ধরা হয় লাঙ্গফিশ এবং প্রাথমিক চতুস্পদী প্রানীর সমতুল্য।
সুত্র-
১
২
৩
৪
৫
.
২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:২৯
মানুষ বলেছেন: পড়ে আনন্দ পেলাম
৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১৮
জাহিদুল হাসান বলেছেন: আনেক কিছু জানলাম। ভালো আছেন ?
৪| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৫৭
বীরেনদ্র বলেছেন: হ্যাঁ জাহিদ তুমি কেমন আছ
৫| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১৭
ইথান মাহমুদ বলেছেন: জানা হলো একটা জিনিস। ধন্যবাদ।
৬| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৩১
অসীম বেস্ট বলেছেন: বাহ, ভাল লাগল।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:২৬
১১স্টার বলেছেন: ভালো লাগলো