নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladesh my home

বীরেনদ্র

Nothing much to say about

বীরেনদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ম, রাজনীতি এবং বাংলাদেশের পরিস্থিতি

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:৫৫



দু’একজন নাস্তিক বাদ দিলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে ধর্ম অতি পবিত্র, অনেকের কাছে (অন্ততঃ মুখে মুখে )ধর্ম জীবনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ন, যদিও তাদের অধিকাংশের অন্তরে সেই চিরন্তন সত্য “জান বাচানো ফরজ। মানুষ হিসাবে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার ,নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার সবারই রয়েছে, যেমন রয়েছে মুসলমানের, ঠিক তেমনি রয়েছে হিন্দু,বৌদ্ধ বা খৃস্টানের। বাংলাদেশের সমস্ত নাগরিকের এই অধিকার সংবিধান স্বীকৃত। একজন মুসলমান যেমন তার ধর্মের কথা বলার অধিকার রাখে ঠিক একইভাবে একজন হিন্দুও তার ধর্মের কথা বলার অধিকার রাখে। একজন নাস্তিক বা ধর্মে অবিশ্বাসী কি তার মত প্রকাশের অধিকার রাখে না?



গত পরশু হেফাজতে ইসলামী মতিঝিলে ইসলাম রক্ষার এবং নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবীতে লং মার্চ শেষে মতিঝিলে জনসভার আয়োজন করে। বিশাল বড় সে সভায় দুই লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে । হেফাজত-এ- ইসলাম দলের নাম ২/৩ মাস আগেও আমি শুনিনি। অজ্ঞতা স্বীকার করছি। তবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই দলের সদস্য সংখ্যা উপস্থিত জনসাধারনের ১০ ভাগের ১ ভাগ হবে কিনা সন্দেহ। বি,এন,পি, জাতীয় পার্টি , জামায়াত ইত্যাদি রাজনৈতিক দলের সদস্যেরাই ছিলেন বেশীর ভাগ। উপরোক্ত দলগুলো হেফাজতে ইসলামের সাথে সঙ্গহতি প্রকাশ করে সে সভায় উপস্থিত ছিলেন। ধরে নিতে পারি হেফাজত-এ ইসলামের সাথে মতাদর্শগত দিক দিয়ে উপরোক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান অভিন্ন।



ইসলামের হেফাজত বা রক্ষা করা বাংলাদেশে হঠাৎ কেন গুরুত্বপুর্ন হয়ে দাড়ালো? কাদের মোল্লার রায় হল যাবজ্জীবন কারাদন্ড। সে রায় মেনে নিতে পারে নি তরুনেরা, যদিও কাদের মোল্লা নিজে ফাসির দড়ি থেকে বেচে যাওয়ার রায়ে বিজয়সুচক “ভি” চিহ্ন দেখান। । তরুনেরা শাহবাগে সমাবেশ করে কাদের মোল্লা সহ সমস্ত রাজাকারদের ফাসীর দাবী জানাতে সমবেত হল। ইসলামের অবমাননা তখন ও হয় নি। জামায়াতে ইসলামী তাদের নেতাদের রাজনৈতিক ভাবে হয়রানী করা হচ্ছে, অবৈধ ট্রাইবুনাল ইত্যাদি বললেও ইসলামের অবমাননা হচ্ছে এমন দাবী তখনও করেন নি। এরপর সাঈদীর ফাসির রায় হল। এবার স্বরুপে আবির্ভুত হল জামায়াতে ইসলাম। এবার ইসলামের অবমাননা হল। সাইদীর মৃত্যদন্ডাদেশ কি তাহলে ইসলামের অবমাননা? যদি তাই না হবে তাহলে ফাসির রায়ের আগে কেন ইসলামের অবমাননা হয় নি এবং এর পর থেকে ইসলামের অবমাননা কেন হবে? শুরু হল হরতাল, জ্বালানো পোড়ানো, মন্দির ভাংচুর, হিন্দুদের বাড়ী ঘরদোর লুট ইত্যাদি। বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বি,এন,পি সমর্থন জানালো জামায়াতের হরতালে এবং নিজেরাও হরতাল দিলেন। রাজনৈতিক নেতারা দাবী করেন হরতাল পালন করে জনগন এবং সে জন্য জনসাধারনকে ধন্যবাদ জানান আহবান কারী দল। প্রশ্ন হল যদি গাড়ী না ভাঙ্গা হয়, যদি জ্বালানো পোড়ানো না হয় তাহলে কি হরতাল হয় না, তখন কি রাস্তা ঘাট অফিস আদালত বন্ধ থাকে? রাজনৈতিক নেতারা কি একটু সন্ত্রাস বন্ধ করে দেখবেন তাদের হরতাল কতটুকু পালন করে জনগন? বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে আগে হরতাল আমি দেখেছি। সেই সময়ে যানবাহন পোড়ানো হত না, দোকানীরা নিজেরাই, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই হরতালে অংশ নিতেন স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৯০% মুসলমান। যে দেশে ৯০% লোক মুসলমান সে দেশে কেন ইসলামের অবমাননা হয়? বা ইসলামের অবমাননা আদৌ হয় কিনা? সরকারের পক্ষ থেকে কেউ কি ইসলামবিরোধী কোন বক্তব্য দিয়েছেন? দেন নি? বরং অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে তাৎ ক্ষনিক ব্যাবস্থা নেওয়া বা নাস্তিকদের গ্রেফতার করা ইত্যাদি কাজ করেছেন। হয়ত তা ইসলামের হেফাজতের জন্য যথেস্ট নয়। হেফাজত-এ ইসলাম আরো হেফাজত আশা করেন। ইসলামের অবমাননার দু একটা উদাহরন দেবেন হেফাজতকারীরা, যেমন ফেসবুকে নবী অবমাননা কারী উত্তম বড়ুয়া, হাটহাজারীতে মসজিদ ভাঙ্গা ইত্যাদি। সেখানেও দেখা যায় ফেনীর জনৈক মাদ্রাসা ছাত্র ফেসবুকে ছবি ট্যাগ করে রামুতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়েছিল, হাটজারীর মসজিদ ভেঙ্গেছিল ভ্যান চালক জসিম ৫০ টাকার বিনিময়ে। ইসলামের অবমাননা করল কে? হাট ভ্যানচালক জসিমকে মসজিদ ভাংতে টাকা দেওয়া নেতা, না হিন্দুরা? ফেসবুকে ছবি ট্যাগ করা মাদ্রাসা ছাত্র,না বৌদ্ধরা? প্রকৃত পক্ষে ইসলাম বা নবী অবমাননার মত কোন কাজ করার মত দুঃসাহস বাংলাদেশের সংখ্যালঘু কেউ দেখাবে না। কিছু না করেই তাদের বাড়ী ঘর দোর হারাচ্ছে ,দেশে বেচে থাকার নিরপত্তাটুকুও পাচ্ছে না হিন্দুরা। যেমন- বিচারে সাঈদীর মৃত্যদন্ডাদেশ হল আর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে হরিদয়াল শীল খুন হল শতাধিক বাড়ী ঘরদোর লুট হল,পুড়ল দোকান ঘর। যেখানে বেচে থাকার নিরাপত্তা পাচ্ছে না সেখানে ইসলাম অবমাননার মত দুঃসাহস কেউ দেখাবে না। এই সমস্ত অত্যাচারের কোন বিচার কি পাবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো? ২০০১ সালের অত্যাচারের জন্য কেউ কি শাস্তি পেয়েছে? ১৯৭১ সালের রাজাকারদের বিচার করা শুরু করতেই সেখানে শুরু হল হাজার যুক্তি- অবৈধ ট্রাইবুনাল, রাজনৈতিকভাবে হয়রানী, আমরা ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করব, প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে না ইত্যাদি।

ইসলামের হেফাজত বা ইসলামকে রক্ষা করা সমস্ত মুসলমানের পবিত্র দায়িত্ব। কিন্তু কিভাবে ইসলামের হেফাজত করা সম্ভব? সে ব্যাপারে হেফাজতে ইসলাম তার ১৩ দফা দাবী পেশ করেছে। যেমন শাহবাগের নাস্তিকদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। শাহবাগের নাস্তিকদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলাতে হবে ইত্যাদি।প্রশ্ন হল শাহবাগের তরুনদের কতজন নাস্তিক? আমার বিশ্বাস কয়েক হাজার তরুনের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন হয়ত নাস্তিক। কয়েকজনকে ইতিমধ্যে তাদের নাস্তিকতার কারনে বা ইসলামের অবমাননার কারনে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজীব ইতিমধ্যেই খুন হয়েছে। সে ছিল নাস্তিক, সেটাই হয়ত তার অপরাধ। কেউ যদি ইসলাম ত্যাগ করে সে হয় “মুরতাদ” এবং মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড( আহম্মদ শরীফ সম্পর্কে এমনই ফতোয়া দিয়েছিলেন পূর্ব রাজাবাজার মসজিদের খতীব - তা নিজে শুনেছিলাম) যাদেরকে পুলিস গ্রেফতার করেছে তারা যে শিবির কর্মী তা পুলিসের অনুসন্ধানেই বেরিয়ে এসেছে।





আমার প্রশ্ন হল কেউ যদি নাস্তিক হয় তাকে ফাসির দড়িতে ঝুলাতে হবে এই দাবী কতটুকু গ্রহনযোগ্য? বাংলাদেশের আইন অন্ততঃ তা বলে না। দু’একদিন আগে পড়েছিলাম ধর্ম অবমাননার শাস্তি মৃত্যুদন্ড আইন করার কথা বলেছেন সরকারের কেউ কেউ। যদি এমন আইন করা হয় তখন হয়ত এই দাবীকে আইন সম্মত বলা যাবে। ধর্ম বলতে সমস্ত ধর্ম, নাকি শুধুমাত্র ইসলাম? জামাত বা হেফাজত, ইসলামের অবমাননার কথাই বলে। মুসলমানেরা ইসলামের কথাই বলবে এটাই স্বাভাবিক । জাকির নায়েকের বক্তব্য- আল্লাহ’র কাছে গ্রহনযোগ্য একমাত্র ধর্ম হল ইসলাম। এর কোন সুত্র হয়ত থাকলেও থাকতে পারে, তবে জাকির নায়েকের বক্তব্যকে সত্যি ধরে নেওয়া হয় তাহলে হিন্দু ধর্ম কোন ধর্ম নয়। যেহেতু তা ধর্ম নয়, তাই তার অবমাননার প্রশ্নও ওঠে না।



আমার মনে একটা প্রশ্ন আসে তা হল ইসলামের কেন এত বেশী অবমাননা হয়? ইসলাম কি অতি সংবেদন শীল ধর্ম ? নাকি স্বার্থসিদ্ধির জন্য ইসলামের অবমাননার বিষয়কে বার বার টেনে আনা হয়? একজন হিন্দুকে বা বৌদ্ধকে তার ধর্ম সম্পর্কে খারাপ কিছু বলুন কেউ কিন্তু আপনাকে খুন করতে আসবে না। ইউটিউবে কটুক্তি করা হল ইসলাম নিয়ে আর বেনগাজীতে আমেরিকার কুটনৈতিককে খুন করা হল। ধর্ম নিয়ে কটুক্তি নিন্দনীয়, কিন্তু কি দোষ করেছিল আমেরিকার সে কুটনীতিক? দুটোর মধ্যে যোগসুত্রই বা কি?



উপসঙ্গহার- যখনই কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয় তখনই বেরিয়ে আসে অপরাধীরা। মুখে তাদের ইসলাম রক্ষার সংগ্রাম । যেমন এসেছিল ১৯৭১ সালে। ইসলাম রক্ষার নামে কি করেছিল তৎকালীন জামায়াতে ইসলাম তা সবার জানা। অপরাধ অপরাধই। কিন্তু অপরাধ করে বাঁচার শ্রেষ্ঠ উপায় কি তাহলে ধর্মকে আকড়ে ধরা? ধর্ম অতিশয় পবিত্র। তাকে রক্ষা করতেই হবে যে কোন মুল্যে - সাধারন মানুষের এই অনুভুতির শ্লোগান দিয়ে স্বচ্ছন্দে পার পেতে চায় অপরাধীরা। ধর্ম মানুষের কল্যানের জন্য নাকি অপরাধীর বাঁচার অস্ত্র? সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সবাইকে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৯:১৬

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন বলেছেন: ফাঁসি হওয়া উচিত তাদের যারা ধর্ম বেঁচে খায়। প্রত্যেক ব্যক্তি স্বাধীন । কি একটা ফালতু বিষয় নিয়ে দেশ আজ তোলপাড়?
আন্দোলন চলছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে। সেখানে কে আস্তিক আর কে নাস্তিক এ নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অবান্তর হাস্যকর ও নিম্নরুচির এবং অশিক্ষার পরিচায়ক। মজার ব্যাপার হলো দেশের বেশির ভাগ মানুষ অশিক্ষিত ও ধর্মান্ধ থাকায় আমার দেশের সম্পাদক এই নিম্নরুচির খেলা খেললেন। যাউকগা সত্যের জয় হবেই।
Click This Link

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৪১

ওছামা বলেছেন: আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করোনা, আমাদের ধর্মবিশ্বাস বেচে দিওনা। আমাদের শ্বাস নিতে দাও।আমরা সাধারন মানুষ আজ ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, বিভ্রান্ত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.