নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladesh my home

বীরেনদ্র

Nothing much to say about

বীরেনদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি বিজ্ঞাপন- চাচী আবশ্যক।

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৫





আমার একজন বুড়ো চাচী চাই। ঠিক করেছি চাচিকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেব। না, বুড়ো বয়সে আমাকে ভীমরতিতে ধরে নি , তবুও কেন চাচী খুজছি? কেন এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম সে কথাই বলি।



গত পরশুদিন সুব্রতদার সাথে আমার প্রথম আলাপ । নিজের নাম সুব্রত বলেই দাদা যোগ করলেন “ আপনি সুব্রতের পরিবর্তে কুব্রতও বলতে পারেন। উত্তর দিলাম “ বালাই ষাট, এমন সুন্দর মানুষটাকে কুব্রত বলব, পাপ হবে যে। দাদা উত্তর দিলেন সু বা ভাল কাজ করে মানুষের নজরে পড়া যায় না , কিন্তু কু বা খারাপ কাজ করলে বিখ্যাত হতে সময় লাগে না । হিসেব করে দেখলাম কথাটা মিথ্যে বলেন নি দাদা।





আমি তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি। একদিন শোনা গেল আমাদের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন তার চাচীকে নিয়ে গত রাত থেকে উধাও। মকবুল চেয়ারম্যানের বয়স তখন আমার এখনকার বয়সের সমান আর চাচী বয়সে চেয়ারম্যান সাহেব থেকে কিছুটা ছোটই হবেন, চাচার দ্বিতীয় পক্ষ বলে কথা। দু’জনে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন, নতুন করে ঘর বাঁধবেন ইত্যাদি কথা আলোচিত হতে লাগল হাটে বাজারে। লোক মুখে সে কথা ছড়াতে ছড়াতে একদিন বিশেষ সংবাদ দাতার মারফত চাচীকে নিয়ে চেয়ারম্যানের উধাও হয়ে যাওয়ার খবর স্থান পেল জাতীয় দৈনিকের পাতায়। পর দিনই ফিরে এলেন চেয়ারম্যান সাহেব এবং চাচী। কি ব্যাপার কোথায় গেছিলে তোমরা, ফিরে এলে কখন? ইত্যাদি প্রশ্ন সবার। চেয়ারম্যান সাহেবের উত্তর কোথায় আবার যাব? গেছিলাম চাচীর বাপের বাড়ীতে। কিন্তু সবাই যে বলাবলি করছে তুমি চাচীকে নিয়ে নতুন করে ঘর বাধবে, তাই দুজনে রাতের অন্ধকারে বাড়ী ছেড়েছো। চেয়ারম্যান সাহেবের উত্তর “ আরে ধুস চাচাই তো আমাকে পাঠালো চাচীকে তার বাপের বাড়ীতে নিয়ে যেতে। কিন্তু লোকজন এমন বলাবলি করছে কেন? চেয়ারম্যান সাহেব উত্তর দিলেন “ মোতালেবকে দিয়ে এমন খবর প্রচার করিয়েছি আমি নিজে। অদ্ভুত ব্যাপার! কেনই বা এমন কাজ করালেন চেয়ারম্যান? চেয়ারম্যান সাহেব এবার উত্তর দিলেন পাঁচ পাঁচ বার ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হলাম অথচ খবরের কাগজে যায়গা পেলাম না।খবরের কাগজের পাতায় নাম ওঠাতেই এই ব্যাবস্থা। বিখ্যাত হওয়ার অনেক রকম উপায় থাকে।



আমি তখন সিলেট মেডিকেল কলেজে পড়ি। আমাদের একবছর নীচে পড়ত যাযাবর। যাযাবরের আসল নাম ছিল কাজী ফারুক হোসেন। মাথায় ছিট ছিল যাযাবরের। একদিন অফিস চলাকালে অজ্ঞাত কেউ প্রিন্সিপাল স্যারকে টেলিফোনে জানাল “ স্যার আপনার কলেজের ছাত্র যাযাবর আখালিয়া বি ডি আর ক্যাম্পের সামনে গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে আছে। শীঘ্রই কাউকে পাঠান। প্রিন্সিপাল স্যার তাড়াতাড়ি দুজন ছাত্রকে দিয়ে এম্বুলেন্স পাঠালেন। গিয়ে দেখা গেল ক্যাম্পের সামনে দিব্যি দাঁড়িয়ে যাযাবর। এম্বুলেন্স যাযাবরকে নিয়ে এসে হাজির করল প্রিন্সিপাল স্যারের অফিসে। প্রিন্সিপাল স্যার জিজ্ঞেস করলেন যাযাবরকে “ কি ব্যাপার যাযাবর “ তুমি নাকি গুরুতর আহত । - জী স্যার । জামার হাতা উঠিয়ে স্যারকে দেখালো তার ডান কনুইয়ের কাছে ছড়ে যাওয়া চামড়া। রিকশা থেকে নামতে গিয়ে আঘাত পেয়েছে যাযাবর। স্যার জানতেন যাযাবর কিছুটা পাগলা। কি আর করা , ছেড়ে দিলেন যাযাবরকে। প্রিন্সিপাল স্যারের রুম থেকে বাইরে এলেই ছাত্রেরা ঘিরে ধরল যাযাবরকে “ কী ব্যাপার? অজ্ঞাত পরিচয় কেউ যে ফোন করে স্যারকে জানালো তুমি গুরুতর আহত । যাযাবরের উত্তর “ আরে ধুস টেলিফোন করেছিলাম আমি নিজে। কলেজে ফেরার কোন যানবাহন পাচ্ছিলাম না আর এই সুযোগে ছাত্র ছাত্রীদের কাছে “বিখ্যাত” হলাম।



সুতরাং মনোবেদনার সাথে সিদ্ধান্ত নিয়েছি চাচীকে নিয়ে ভাগব । বিখ্যাত আমাকে হতেই হবে। মকবুল চেয়ারম্যানের মত মহাজ্ঞানী মহাজন............ এর পথে গিয়েই বরনীয় হব। এবার মনো বেদনার কারন বলি। প্রতিদিন ফেসবুকে আডা দিই লেখালিখি করি। নিজের দেখার সাথে মিশিয়ে বইপত্র ঘেটে ঘুটে , পড়াশোনা করে ইস্তাম্বুলের ভ্রমন কাহীনি লিখছি । ইস্তাম্বুলে যাওয়া আসা থাকা খাওয়ার খরচ, দেড় হাজার ডলার দিয়ে ক্যামেরা কেনা সে সব কথা না হয় বাদই দিলাম। ফেসবুকে পোস্ট করার তিন ঘন্টা পর নোটিশ পেলাম “ Four people liked your status । যারা লাইক করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ দিলাম । কিন্তু ধাক্কা খেলাম যখন দেখলাম ৩৫ মিনিট আগে জনৈক মহিলা পোস্ট করেছেন “ এই মাত্র বাড়ী পৌছলাম” এবং তার নীচেই লেখা 77 people liked it । সুব্রতদা ঠিকই বলেছেন ভাল কাজের দাম নেই, সত্যি কথার ভাত নেই। পুরুষ মানুষের দাম নেই, মহিলা হলে like এর অভাব নেই।



চাচীকে নিয়ে ভাগতে হলে আমার প্রথম একজন চাচী দরকার । আমার নিজের চাচীরা সবাই পরলোকগত। শেষ চাচীও ইহধাম ছেড়েছেন দশ বছর আগে। চাচী যে পাব সে ব্যাপারে আমি খুব আশাবাদী নই। ।আমার এমন বিশ্বাসের কারন হল আমার এক কালের রোগী শ্রীযুক্ত বাবু শুশীল কুমার কুন্ডু। শুশীল বাবু আমার পুরোন রুগী। আশীতিপর বৃদ্ধ শুশীল বাবুকে আমি দাদু ডাকতাম। দাদু কখনই এক আসতেন না সব সময়ে দিদিমা সাথে থাকতেন। বুড়ো মানুষ একা একা বেরোলে কোথায় কি দুর্ঘটনায় পড়েন। মজার ব্যাপার ছিল যে দাদু দিদিমা চেম্বারে আমার সামনেই ঝগড়া শুরু করে দিতেন। ঝগড়া শুরু হওয়ার নমুনা দিই । দাদু চেম্বারে ঢুকলে জিজ্ঞেস করতাম “ আজ কেমন আছেন দাদু” - ভাল আছি স্যার। অমনি শুরু করলেন দিদিমা “ ভাল না ছাই,সারা রাত ব্যাথায় কোকায় , আমাকে তেল মালিশ করতে হয়। এবার দাদু “ আমি রোগী, তুমি কি আমার চেয়ে বেশী জান? শেষ মেষ মধ্যস্থতা করে ঝগড়া থামাতে হত আমাকে। যাই হোক একদিন কিছুটা কৌতুক করেই দাদুকে বললাম “ দাদু এই ঝগড়াটে বুড়ীকে নিয়ে কিভাবে এখনো সংসার করেন, তালাক দিয়ে দিন, আমি নতুন করে দিদিমা আনার ব্যাবস্থা করি। প্রচন্ড ক্ষেপে গেলেন দাদু “মস্করা করেন আমার সাথে? চিকিৎসার জন্য এসেছি সম্ভব হলে চিকিৎসা করুন , না পারলে আমি চললাম, এই রইল আপনার ফি। পকেট থেকে পাঁচশ টাকার নোট টেবিলে রেখে চলে যেতে উদ্যত হলেন দাদু । অনেক অনুনয় বিনয় করে এবং দিদিমাকে দিয়ে শেষ মেষ দাদুকে শান্ত করি। বয়স হলে সবাই একটু আবেগপ্রবন হয়, কোন ব্যাপার না। সবার কাছেই Old wine and old wife are precious । সুতরাং কোন বৃদ্ধা চাচী চাচাকে ছেড়ে আমার সাথে আসবেন সে ভরসা কম। ফ্রান্সিস বেকন বলেছিলেন Age appears to be best in four things; old wood best to burn, old wine to drink, old friends to trust, and old authors to read. আমি এর সাথে আরো একটা Old যোগ করতে চাই তা হল Old wife ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: মজা পেলুম।

২| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:১০

বীরেনদ্র বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৬

সাজ্জাদ আলী চৌধুরী বলেছেন: Thanks

৪| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪১

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: Sundor !!!!!

৫| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:৪৩

আজমান আন্দালিব বলেছেন: ভালো লেখার পাঠক এত কম ক্যানে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.