![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সুলতান মেহমুত স্কোয়ার থেকে ৫ মিনিটের হাটা পথ হাজিয়া সোফিয়া । সোফিয়া বুলগেরিয়ার রাজধানী হওয়াতে ধারনা ছিল হাজিয়া সোফিয়া বুলগেরিয়াতেই হবে। আসার কিছুদিন আগে বুলগেরিয়ার সহকর্মী গ্যালিনা আমার সে ভুল ভেঙ্গে দেন। দেশ বিদেশে ঘোরার সময় দেখেছি কোম্পানীর ট্যুরগাইডেরা ছোট পতাকা তুলে এগিয়ে যান আর ট্যুরিস্টরা এগিয়ে চলেন পতাকা অনুসরন করে। এখানেও তার ব্যাতিক্রম ছিল না। ছোট পতাকা হাতে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া ট্যুর গাইডকে অনুসরন করে আমাদের কাফেলা এসে থামল হাজিয়া সোফিয়ার সামনে। ট্যুর গাইড হাজিয়া সোফিয়ার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানিয়ে দিয়ে টিকেট কিনে নিয়ে এলেন।
হাজিয়া সোফিয়া মূল গীর্জার প্রবেশ দ্বার।
হাগিয়া সোফিয়াঃ- বিভিন্ন ভাষায় এ চার্চের নাম বিভিন্ন রকম। গ্রীক ভাষায় (Hagia Sophia ) হাগিয়া সোফিয়া, ল্যাটিনে স্যাঙ্কটা সোফিয়া( Sancta Sophia) আর তুর্কী ভাষায় Aya Sophia । নাম যাই হোকনা কেন এর অর্থ হল Holy Wisdom বা পবিত্র জ্ঞান । খৃস্টীয় ট্রিনিটি এর দ্বিতীয়টি হল জ্ঞান বা Logos । Logos এর উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত হওয়ার কারনেই এ চার্চের নাম হয় হাজিয়া সোফিয়া। বর্তমানের হাজিয়া সোফিয়া হল এই স্থানে গড়ে ওঠা তৃতীয় স্থাপনা।
খনন কাজ চালিয়ে পাওয়া দ্বিতীয় গীর্জার অংশ বিশেষ
৩৬০ সালে সম্রাট দ্বিতীয় কনস্ট্যান্টিয়াসের আমলে পৌত্তলিক মন্দির ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে প্রথম গীর্জা নির্মান করা হয় এ স্থানে। ৪০৪ সালে দাঙ্গার সময় দাঙ্গাকারীরা পুড়িয়ে দেয় সে গীর্জা। এরপর সম্রাট দ্বিতীয় থিওডোসিয়াস ৪১৫ খৃস্টাব্দে নির্মান করেন দ্বিতীয় চার্চ। ৫৩২ সালে নিকা বিদ্রোহীরা সে গ্রীক অর্থোডক্স চার্চকে পুড়িয়ে ধ্বংশ করে দেয়।
আজও টিকে থাকা ধ্বংশ প্রাপ্ত দ্বিতীয় গির্জার স্তম্ভ
সেই বছরেই সম্রাট জাস্টিনিয়ানের ব্যাক্তিগত উদ্যোগে আবার শুরু হয় নির্মান কাজ। ছয় বছরের কম সময়ে ৫৩৭ সালে নির্মান কাজ শেষ হওয়ার পর থেকে এই চার্চ এক হাজার বছর ধরে পৃথিবীর বৃহত্তম গীর্জা ছিল । ১৫২০ সালে স্পেনের ক্যাথিড্রাল সেভিলের কাছে প্রথম স্থান হারায় হাজিয়া সোফিয়া। এ চার্চ বাইজেন্টাইন স্থাপত্যকলার এক অনুপম নিদর্শন। ভূমিতে এ গীর্জা ২৭০ ফুট লম্বা এবং ২৪০ ফুট চওড়া আর ১৮০ ফুট উচু। এ গীর্জায় কোন প্রকার ইস্পাত ব্যবহার করা হয় নি। সবচে’ আশ্চর্য্যজনক হল এর গম্বুজ বা ডোম যার ব্যাস ১০০ ফুটের চেয়েও বেশী। ১২০৪ সালে চতুর্থ ক্রুসেডাররা লুট করে হাজিয়া সোফিয়া। তারপর থেকে ১২৬১ সাল পর্যন্ত এটি রোমান ক্যাথলিক চার্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
হাজিয়া সোফিয়া
১৪৫৩ সালের ২৯ শে এপ্রিল অটোম্যান সম্রাট দ্বিতীয় মেহমুদ ইস্তাম্বুল দখল করার পর সে সময়ের প্রথা অনুসারে তার সৈন্যদের ইচ্ছেমত তিনদিন ধরে লুটতরাজ করতে লেলিয়ে দেন। বাদ যায়না হাজিয়া সোফিয়া । লুন্ঠিত হয় গীর্জার ভেতরের মুল্যবান পাথর সোনা,দানা। গীর্জার ভিতরে আশ্রয় নেওয়া নারীদের ধর্ষন করা হয় , কেউ হয় যৌন দাসী, সক্ষম ব্যাক্তিদের জবাই করে হত্যা করা হয় এবং শিশুদেরকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রী করা হয়।
হাজিয়া সোফিয়ার অভ্যন্তরের দৃশ্য।
সম্রাট মেহমুত এখানে পৌছেই নির্দেশ দেন গীর্জাকে মসজিদে রুপান্তরিত করতে । নামিয়ে ফেলা হয় গীর্জার উপরের ক্রুশ। মৌলানা এসে সাহাদা পাঠ করেন আর পরবর্তী শুক্রবার পহেলা মে এখানে জুম্মার নামাজ আদায় করেন সম্রাট মেহমুদ। এরপর ক্রমশঃ মসজিদে রুপান্তরের বাদ বাকী কাজ শুরু হয়। তৈরী করা হয় মিনার এবং কাবা শরীফের দিকে মুখ করে মিহরাব ।
হাজিয়া সোফিয়ার ভেতরে মা মেরী এবং যীশূ খৃস্টের ছবি।
গম্বুজের ভেতরের দৃশ্য। আরবী হরফে কুরানের আয়াত।
সরিয়ে ফেলা হয় খৃস্টান ধর্মের যাবতীয় নিদর্শন। দেওয়াল গায়ের মার্বেল পাথরে আঁকা ম্যুরালগুলোকে ঢেকে দেওয়া হয়। ১৫০৯ সালে ভুমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ হলে তা পূনর্নিমান করা হয়। চারশ’ বছরের বেশী সময় ধরে হাজিয়া সোফিয়া মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৯৩৫ সালে তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম প্রেসিডেন্ট মোস্তফা কামাল পাশার সময়ে মিউজিয়ামে রুপান্তরিত হয় এই মসজিদ। ১৯৮৫ সালে হাজিয়া সোফিয়াকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে ইউনেস্কো।
হাত মুখ ধোয়া বা স্নানের জন্য মূল গীর্জার বাইরের ফোয়ারা
গেট দিয়ে ঢুকে নিরাপত্তা তল্লাসী পেরিয়ে সামনের খোলা উঠোন। সামনের প্যাসেজের ডানদিকে ফোয়ারা। প্রার্থনা বা উৎসবাদিতে স্নান করা বা হাতমুখ ধুয়ে নেওয়ার ব্যাবস্থা ছিল এ ঝর্নায়। বামদিকের রেস্তোরা পেরিয়ে মুল বিল্ডিংয়ে ঢোকার পথের ডাইনে বায়ে চতুস্কোণ গর্তের মধ্যে রাখা ধ্বংশ প্রাপ্ত দ্বিতীয় চার্চের খুজে পাওয়া অংশ গুলো। প্রবেশ মুখের বায়ে দ্বিতীয় চার্চের পাথরের স্তম্ভ এখনো দাঁড়িয়ে আছে। চার্চের ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে ফোয়ারার অংশ।সামনেই বিরাট হলঘর। এটাই ছিল নামাজ বা প্রার্থনার জমায়েতের স্থান। বিরাট বিশাল পাথরের স্তম্ভ গুলো উপরের ছাদকে ধরে রেখেছে। হল ঘরের মাঝে ছাদ থেকে ঝুলানো আছে হাজার আলোর ঝাড়বাতি।
হাজিয়া সোফিয়ার ভেতরে ষোড়শ শতান্দীর
ফোয়ারার অংশ
সম্রাট সুলাইমানের আমলে হাঙ্গেরীর এই ঝাড়বাতি এখানে স্থাপন করা হয়। উপরের ডোমের ভিতরের দিকে হাতে লেখা কূরানের আয়াত এবং সুরার হস্তলিপি। একই ভাবে চারকোনায় বিশাল বৃত্তাকার চাকতির উপর লেখা আছে আরবী হরফে আল্লাহু আকবার বা কুরান শরীফের আয়াত। গায়ে এবং মেঝেতে বিভিন্ন রঙয়ের মোজাইকের কাজ। দেওয়ালের গায়ে যীশু খৃস্ট, মা মেরী মাতার এবং অনান্য ছবি আকা আছে অগুনতি। মেঝে থেকে ৩০/৪০ ফুট উচুতে এর দ্বিতীয় তলার গ্যালারী। এখানে ছিল সম্রাজ্ঞীর আসন। পাশের তোপ কাপি প্রাসাদ থেকে এখানে আসার ব্যাবস্থা ছিল। দ্বিতীয় তলায় ওঠার ঘোরানো সিড়ির পাশে এক কোনে দেওয়ালের গায়ে একটা ছিদ্র চোখে পড়ার মত। লোকমুখে প্রচলিত কুসংস্কার আছে যে কেউ যদি এই ছিদ্রে বুড়ো আঙ্গুল ঢুকিয়ে হাতকে পুরো বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে আনতে পারে তাহলে তার মনের ইচ্ছে পূর্ন হবে। প্রথম এবং দ্বিতীয় তলায় প্রদর্শনীর বিভিন্ন সামগ্রী। আছে হেলেনীয় যুগের পাথরের পাত্র। প্রথম দ্বিতীয় তলায় ঘুরতে ঘুরতে কখন যে নির্ধারিত এক ঘন্টা শেষ হল বুঝতে পারি নি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলাম। সাথী ট্যুরিস্টরা ততক্ষনে বাইরে এসে জড়ো হচ্ছেন পরবর্তী গন্তব্যে রওয়ানা দিতে।
২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২৯
তৌফিক মাসুদ বলেছেন: ভাল থাকবেন,শুভকামনা রইল।
৩| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৯
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: এই দেশে আমারও ভীষন যাওয়ার ইচ্ছে। আপনার সৌজন্য দুধের স্বাদ কিছুটা হলেও মেটাতে পারছি।
৪| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৯
মাধুকরী মৃণ্ময় বলেছেন: গত দুই দিন ধরে আপনার সব লেখা পড়ে ফেলেছি এবং ফ্যান হয়ে গেছি। ভালো থাকবেন ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৬
জীবনানন্দদাশের ছায়া বলেছেন: কোন একদিন এই দেশটা আমাকে ঘুরে দেখতেই হবে!