নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladesh my home

বীরেনদ্র

Nothing much to say about

বীরেনদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

আতা তুর্কের দেশে (ষষ্ঠ পর্ব)।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৪





আজকের পর্ব লিখতে শুরু করতে গিয়ে মনে পড়ল বহুদিন আগে পড়া The adventure of the copper beeches বইয়ে শার্লক হোমসের সেই উক্তি “ Data! Data! Data!" he cried impatiently. "I can't make bricks without clay” গোয়েন্দা শার্লক হোমস যেমন ডাটা ছাড়া রহস্য উদঘাটন করতে পারতেন না, আমার পক্ষেও ডাটা বা তথ্য ছাড়া ভ্রমন কাহিনী লেখা অসম্ভব। । সে তথ্য আমি কোথায় পাই তা একটু পরেই লিখছি। তথ্য ছাড়া শুন্য থেকে পর্বত সৃস্টি করে পাঠকের মন জয় করার মত মেধা আমার নেই।

বায়েজিদ লিখেছে “বীরু ,তুই এত কিছু মনে রাখিস কি করে? মোস্তফার প্রশ্ন ছিল “দাদা, আপনি এত নির্ভূল বাংলা শব্দগুলো লেখেন কি ভাবে? ওদের প্রশ্নের উত্তর তখন দিইনি কারন তাতে করে আমার অগাধ পান্ডিত্যের গোমর ফাক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আপনাদেরকে আজ চুপিচুপি বলি ভ্রমন কাহিনীর তথ্যের জন্য সবচে’ বেশী জরুরী নিজে দেখা এবং শোনা। এরপর ট্যুর গাইড, “অভ্র” এবং “গুগল” এগুলোই হল আমার পান্ডিত্যের গোপন রহস্য।







হাগিয়া সোফিয়া থেকে বেরোনোর পর দুপুরের খাওয়ার পালা। ট্যুর গাইড জানালেন গাড়ী আসতে ১৫/২০ মিনিট দেরী হবে ,এ সময়টুকু free time , আপনারা ঠিক ১২-৩০ মিনিটে লাঞ্চে যাওয়ার জন্য হাগিয়া সোফিয়ার সামনের মাঠে হাজির থাকবেন । আশে পাশে দেখার অনেক কিছুই ছিল। চতুর্থ শতাব্দীতে ইস্তাম্বুলের চারদিক ঘিরে নির্মিত দুর্ভেদ্য দেওয়ালের অংশ বিশেষের ছবি তুলে ফিরে আসার সময় চোখ পড়ল হাগিয়া সোফিয়ার উল্টোদিকে বেদীর উপর মাথা কাটা পিরামিড আকৃতির , লম্বা পুরোনো দিনের এক স্তম্ভের উপর। এগিয়ে গিয়ে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে ফেললাম। দরজার উপর লেখা “ Entrance to the Basilica Cistern পড়ে তবে বুঝতে পারলাম সে ঘরের রহস্য। ব্যাসিলিকা সিস্টার্ন যে দর্শনীয় স্থান তা পুস্তক অধ্যয়নের সুবাদে আগে থেকেই জানতাম কিন্তু সময়াভাবে দেখার সৌভাগ্য হয় নি। না দেখলেও ব্যাসিলিকা সিস্টার্ন সম্পর্কে “দুইখান কথা” না বললেই নয় কারন হল- যে সমস্ত পাঠকরা ভবিষ্যতে ইস্তাম্বুলে বেড়াতে যাবেন তারা যেন আমার হয়ে এটি দেখে আসেন। দুপুরের খাবারের তুর্কী কাবাব ছিল অপূর্ব সুস্বাদু।









ব্যাসিলিকা সিস্টার্নের প্রবেশ পথ।





ব্যাসিলিকা সিস্টার্ন:- রোমান যুগে বড় আকারের হলঘর , চারকোনা খোলা যায়গা বা কোন কোন গীর্জাকে বলা হত ব্যাসিলিকা । এখানে বিচারকেরা বিচার করতেন, জনসভা বসত ইত্যাদি। সিস্টার্ন হল জলাধার। বাইজেন্টিয়ামের প্রথম পাহাড়চুড়ায় যে ব্যাসিলিকা ছিল তার মাটির নীচে ষষ্ঠ শতাব্দীতে এই জলাধার নির্মান করেছিলেন সম্রাট জাস্টানিয়ান। মাটির নীচের পাঁচশ’ ফুট লম্বা এ জলাধারের ছাদ ছিল ৩০ ফুট উচু ৩৩৬ টি পাথরের স্তম্ভের উপর এবং এর ধারনক্ষমতা ছিল ১ লক্ষ টন । রোমান যুগের গ্রেট প্যালেসে বা অটোম্যানদের তোপকাপি প্যালেসে জল সরবরাহ করা হত এখান থেকে।২০ কিলোমিটার দূর থেকে মাটির নীচের খাল বা aqueduct দিয়ে জল এসে জমা হত এখানে। জলাধারের বারো সারির স্তম্ভের প্রতি সারিতে আছে ২৮টি করে স্তম্ভ । এর মধ্যে উত্তর পশ্চিম দিকে দুটো স্তম্ভের গোড়া হল উলটো করে বসানো ভুতের মাথা বা Medusa Head । কেন বা কোথা থেকে এনে এমন অদ্ভুত স্তম্ভ এখানে বসানো হয়েছিল তা জানা যায় নি।

তোপকাপি প্রাসাদঃ- দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে হাজির হলাম তোপকাপি রাজপ্রাসাদ তোরনের সামনে। হাজিয়া সোফিয়া র সাথেই এ রাজ প্রাসাদ। তুর্কী সম্রাটদের অগুনতি রাজপ্রাসাদের মধ্যে সবচে’ বড় ছিল এ প্রাসাদ। দীর্ঘতম সময় প্রায় ৪০০ বছর ধরে অটোম্যান সুলতানদের বাসস্থান এবং দরবার ছিল এখানে। ইউরোপের অনান্য রাজপ্রাসাদ যেখানে একই ছাদের নীচে বিশাল অট্টালিকা ,তোপকাপি প্রাসাদ সেখানে আলাদা আলাদা অট্টালিকার সমস্টি। বাইজেন্টাইন যুগে অপেক্ষাকৃত উচু পাহাড়ের উপরে অবস্থানের কারনে এ যায়গা ছিল Acropolis। তূর্কী শব্দ তোপ এর অর্থ হল কামান আর কাপি শব্দের অর্থ হল গেট বা দরওয়াজা। রোমান আমল থেকেই ইস্তাম্বুল ছিল দুর্ভেদ্য দেওয়াল ঘেরা নগরী। নগর দেওয়ালের কিছুদুর পর পর ছিল পর্যবেক্ষন টাওয়ার আর চলাচলের জন্য থাকত গেট বা দরোজা। কামান নিয়ে গেট এর উপরে এবং পাশে সদা প্রস্তুত থাকত প্রহরী।

গোল্ডেন হর্নের শেষ সীমায় সাগর কিনারে পাহাড়ের উপর অবস্থিত এ রাজ প্রাসাদ থেকে বসফরাস প্রনালী এবং মারমারা সাগরের অনেকদুর পর্যন্ত চোখে পড়ে।









প্রাসাদের প্রথম চত্বর থেকে ডাইনে মারমারা সাগর এবং সোজা দেখা যাচ্ছে বসফোরাস প্রনালী এবং আধুনিক ইস্তাম্বুল নগরী









কনস্ট্যান্টিনোপল দখলের অল্প কিছুদিন পরপরই ১৪৫৬ সালে বিজয়ী অটোম্যান সম্রাট সুলতান দ্বিতীয় মেহেমুত জলপাই বাগান ঘেরা পাহাড়ী বনভুমিতে রাজকীয় প্রাসাদ গড়ে তোলা শুরু করেন । প্রথমে এ প্রাসাদ নতুন প্রাসাদ নামে পরিচিত হলেও, অস্টাদশ শতাব্দীতে নতুন নাম পায় তোপ কাপি। কামান বসানো দরজা পাশে হওয়াতেই এ প্রাসাদের এমন নাম। সে তোপ বা কামান, কাপি বা দরোজা এবং প্রথম তৈরী প্রাসাদ এখন নেই। ইস্তাম্বুলের শহর দেয়াল আজ ও অনেক যায়গায় টিকে আছে। ১৪৭০ সাল থেকে এখানে বসবাস শুরু করেন সুলতানরা। ১৮৬৫ সালে সম্রাট আব্দুল মজিদের সময় সুলতানরা তোপকাপি ছেড়ে চলে যান বসফরাস প্রনালী তীরের নতুন, ডোলমাবাচী রাজপ্রাসাদে। চারশ বছর সময় ধরে এ প্রাসাদের পরিবর্তন, পরিবর্ধন , পুনর্নির্মান এবং সংস্করন হয়েছে অনেকবার । ১৫০৯ সালের ভুমিকম্প এবং ১৬১৬ সালের অগ্নিকান্ডের পর এ প্রাসাদ নতুন করে গড়ে তোলা হয়। অটোম্যান সম্রাটদের অনেক ঘটনা দুর্ঘটনার নীরব সাক্ষী এ প্রাসাদ। । সম্রাটদের অনেক কাহিনী রুপকথাকেও হার মানায়। সম্রাটের প্রথম জন্ম নেওয়া সন্তান সম্রাট হবেন এ প্রথা অনেক সাম্রাজ্যে চালু থাকলেও অটোম্যানদের মধ্যে এ প্রথা ছিল না। ফলে পরবর্তী সুলতান কে হবেন তা নিয়ে সম্রাটপুত্রদের মধ্যে শুরু হত ঘৃন্য প্রতিযোগিতা। প্রথম দিকে নতুন অটোম্যান সম্রাট সিংহাসন নিস্কন্টক করতে অনান্য ভাইদের নির্মম ভাবে হত্যা করতেন। পরবর্তীতে অবশ্য এ প্রথা কিছুটা শিথিল হয় এবং অনান্য ভাইদেরকে সম্পূর্ন আলাদা ভাবে প্রাসাদেই বন্দী করে রাখা হত বা দূর দেশের গভর্নর করে পাঠানো হত। সম্রাট চতুর্থ মুরাত ভাই ইব্রাহীমকে দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে বন্দী করে রাখেন কারগারে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ইব্রাহীম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে উন্মাদ জীবন কাটান। মাতাল সম্রাট সেলিম অতিরিক্ত পরিমান শ্যাম্পেন খেয়ে মাতাল অবস্থায় বাথরুমের মেঝেতে আছাড় খেয়ে মারা যান এই প্রাসাদেই।



তোপকাপি প্রাসাদ ইস্তাম্বুল নগরীর মধ্যেই আরেক নগরী। সাত লক্ষ বর্গমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা এ প্রাসাদে ছিল টাকশাল, স্কুল, লাইব্রেরী, মসজিদ, রাস্ট্রীয় কোষাগার, উজির নাজিরদের বাসস্থান প্রভৃতি। এ প্রাসাদের প্রধান চার চত্বর বা কোর্ট ইয়ার্ড। গোটা প্রাসাদ এলাকা ছিল উচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা। ইম্পেরিয়াল বা রাজকীয় গেট দিয়ে ঢুকলে প্রথম যে চত্বর পড়বে তা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে ছিল প্রাসাদ রক্ষীদের বসবাসের স্থান, টাকশাল ইত্যাদি।











তোপকাপি প্রাসাদের প্রথম চত্বরের ফোয়ারা বা তুর্কী হাম্মাম স্নান করা ওজু করার ব্যাবস্থা এখানে । প্রাসাদ দেওয়ালের অংশ বিশেষ ছবির বাম দিকে









হাজিয়া ইরেনী গীর্জা । এটাকে মসজিদে রুপান্তরিত করা হলেও এখানে নামাজ পড়া হত না।





এ চত্বরের বাম দিকে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ষষ্ঠ শতাব্দীতে তৈরী চার্চ হাজিয়া ইরেনী। গ্রীক শব্দ ইরেনীর অর্থ হল শান্তি। রোমান ভাষায় এ গীর্জাকে বলা হত সান্তা ইরেনী। ইতালীর সান্তোরিনা দ্বীপ সান্তা ইরেনীর অপভ্রংশ। ইম্পেরিয়াল গেটের ডানদিকে আছে তূর্কী হাম্মা্ম বা ফোয়ারা। ওজু বা স্নান করার ব্যাবস্থা ছিল এখানে। প্রাসাদ রক্ষী অটোম্যান সৈন্য বা জেনেসারীদের কুচকাওয়াজের মাঠও ছিল এই প্রথম চত্বর।





দ্বিতীয় চত্বরে ঢোকার গেট অফ স্যালুটেশান ।





প্রথম চত্বর থেকে দ্বিতীয় চত্বরে ঢোকার গেট হল “গেট অফ স্যালুটেশান” দ্বিতীয় চত্বর ছিল প্রশাসনিক এলাকা। মূল চত্বর ছিল হরিন , ময়ুর এবং ফুলগাছ দিয়ে সজানো বাগান।চত্বরের চারদিক ঘিরে গড়ে উঠেছিল প্রশাসনিক ভবনগুলো।











( চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪

আহমেদ আলিফ বলেছেন:
ভালো লেগেছে , চালিয়ে যান.....

২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৩

পাঠক১৯৭১ বলেছেন: ডাটা, ডাটা, ডাটা

শুরুটা বিরক্তিকর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.