![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দু’পাশের দুই উচু স্তম্ভের মাঝখান দিয়ে দ্বিতীয় চত্বরে প্রবেশ পথ গেট অফ স্যালুটেশান (Gate of Salutation) । এখান দিয়ে সুলতান ছাড়া অন্য কারো ঘোড়ায় চড়ে ভেতরে ঢোকার অনুমতি ছিল না। চত্বরের ডান বা দক্ষিনদিকে উচু চিমনীওয়ালা বিরাট রাজকীয় রন্ধন শালা। প্রতিদিন ছয় হাজার লোকের খাবার রান্না হত এখানে । জেনিসারী বা সৈনিকদের কোয়ার্টার, বেকারী, হাসপাতাল , স্কুল ইত্যাদি ছিল এই অংশে। বাম বা উত্তর দিকে সুলতানের হেরেম, রাজকীয় কাউন্সিল হল(Imperial Council Hall) এবং বিচার স্তম্ভ বা জাস্টিস টাওয়ার(justice Tower)।
বিচার স্তম্ভ বা জাস্টিস টাওয়ার(justice Tower)।
এই টাওয়ারটিই হল রাজপ্রাসাদে সবচে’ উচু। বিচারকে সম্মুনত রাখতেই এই ব্যাবস্থা। রাকজীয় কাউন্সিল হল মন্ত্রী পরিষদের কার্য্যালয়। অটোম্যান সুলতানদের প্রধানমন্ত্রীকে বলা হত Grand Vizier । সাম্রাজ্যে দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যাক্তি ছিলেন তিনি, সুলতানের পরেই তার স্থান।
প্রত্নতাত্বিক সামগ্রী
রাজকীয় হেরেম ছিল সুলতান, ছেলে মেয়ে , উপ পত্নী( Concubine) , প্রধান খোজা সহ পরিবারের অনান্য সবার বাসস্থান। আরবী শব্দ হারেম এর অর্থ হল নিষিদ্ধ। হেরেম এখন আলাদা যাদুঘর। প্রায় চারশ’ আলাদা আলাদা রুম আছে এখানে। উপপত্নীরা হত ক্রীতদাসী বা উপহার পাওয়া অমুসলিম রমনী। সর্বোচ্চ ৪৭৪ জন উপপত্নী ছিলেন হেরেমে কোন এক সময়। ইসলামী আইন অনুযায়ী কোন মুসলমান রমনীকে উপপত্নী রাখা ছিল নিষিদ্ধ। সুলতান তার পছন্দ মত শয্যা সঙ্গীনি বেছে নিতেন এখান থেকে।
হেরেমের প্রবেশ দ্বার।
কোন উপপত্নী সন্তান জন্ম দিলে তিনি স্ত্রীর মর্য্যাদা পেতেন। কালো নিগ্রো ক্রীতদাসকে নপুংসক বা খোজা করার পর তাদের নিয়োগ দেওয়া হত হেরেমের রক্ষী হিসেবে। হেরেমের আইনকানুন নিয়ন্ত্রন করতেন সুলতানের মা Sultan Valide । দশম অটোম্যান সম্রাট সুলাইমানের শাসনকাল ছিল স্বর্নযুগ । তার সময়ে অটোম্যান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল সর্বাধিক। পারস্য থেকে ইউরোপ উত্তর আফ্রিকা প্রভৃতি এলাকা নিয়ে বিশাল সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল ১ কোটী ৬০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। । ইউরোপের বেলগ্রেড এবং হাঙ্গেরীর দক্ষিন অংশ জয় করেন সুলাইমান।
দ্বিতীয় চত্বর।
পাশ্চাত্যে সুলাইমান "Suleiman the Magnificent" হিসেবে আর তুর্কিদের কাছে কানুনী হিসেবে পরিচিত ছিলেন । অটোম্যান সম্রাটদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম আইন এবং বিচার ব্যাবস্থার প্রনয়ন করে তা লিপিবদ্ধ করেন। ৪৬ বছর রাজত্ব করেন সুলাইমান। হেরেমের উপপত্নী রোক্সেলানা ছিলেন ইউক্রেনের ক্রীতদাসী । তুর্কী সাম্রাজ্যের ইতিহাসে রোক্সেলানা ছিলেন সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাবান নারী। সম্রাট সুলাইমান রোক্সালানা কে বিয়ে করেন যা ছিল কোন তূর্কী সম্রাটের শেষ বিয়ে। তুর্কী সম্রাটেরা বিয়ে করতেন না। উপপত্নীরা সন্তান জন্ম দিলে তারা পত্নীর মর্য্যাদা পেত। রোক্সেলানার গর্ভে সম্রাট সুলাইমানের ছয়জন পুত্র কন্যার জন্ম হয়। সুলাইমানের প্রথম স্ত্রীর পুত্র মোস্তফা কে দূর প্রদেশের গভর্নর করে পাঠানো হয় এবং পরে সম্রাটের জ্ঞাতসারেই মোস্তফাকে আততায়ী খুন করে। এ সমস্ত কিছু ঘটে রোক্সেলানার প্ররোচনায়। হেরেমের সমস্ত উপপত্নীকে রাজপ্রাসাদ থেকে তাড়িয়ে দেন রোক্সেলানা।
দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় চত্বরে প্রবেশ দ্বার।
দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় চত্বরে ঢোকার গেট হল Gate of felicity । গেট এর উপরে বেশ বড় গম্বুজ এবং সবচে’ উপরে আছে সোনালী রং এর চাঁদ তারা খচিত মিনার। আরবীতে সোনালী হরফে লেখা কুরানের আয়াত এবং সুলতানদের মনোগ্রাম খচিত আছে এই গেট এ। গেট এর সামনেই অনুষ্ঠিত হত সাম্রাজ্যের গুরুত্ব পূর্ন অনুষ্ঠানগুলো, যেমন সম্রাটের অভিষেক, ধর্মীয় উত্সব, নামাজে জানাজা ইত্যাদি। পাথরের চারকোনা ঘেরা যায়গা আছে গেট এর সামনে । এখানে টানানো হজরত মোহাম্মদের পবিত্র ব্যানারের নীচে শপথ নিতেন সম্রাটেরা, সেনাপতিরা এবং প্রধানমন্ত্রী । তৃতীয় চত্বরে ঢোকার আগেই গেট এর সাথে আছে Audience Hall । সুলতান এখানে কুটনীতিক এবং সম্মানিত অতিথিদেরকে অভ্যর্থনা জানাতেন। Audience Hall এ সুবিশাল সিংহাসনের চাঁদোয়া রাখা আছে। তৃতীয় চত্বরে সুলতান বা তার পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কারো ঢোকার অনুমতি ছিল না।
এখানেই টানানো হত হযরত মোহাম্মদের পবিত্র ব্যানার।
তৃতীয় চত্বরের কেন্দ্র হল সুন্দর সুবিশাল বাগান বা পার্ক। চত্বরের ডান দিকে ছিল সুলতানের কোষগার যা এখন যাদুঘর। এই চত্বরে বাইজেন্টাইন যুগের কিছু নিদর্শনের দেখা মেলে। প্রাসাদের সবচে’ আকর্ষনীয় হল যাদুঘর। মোট চারটে বিশাল হলঘরে রাখা আছে অমুল্য প্রত্নতাত্বিক সামগ্রী। এ যাদুঘরে ছবি তোলা নিষিদ্ধ। ডান দিক থেকে দ্বিতীয় হলরুমে রাখা আছে সুলতানদের সিংহাসন। মোট ১৫/২০টা সিংহাসনের মধ্যে একটি হল পারস্য সম্রাট নাদির শাহ কর্তৃক ভারত থেকে লুট করে নিয়ে যাওয়া, যা তিনি অটোম্যান সম্রাটকে উপহার দিয়েছিলেন ।
এই যাদুঘরে সুলতানদের ব্যবহৃত অলংকারাদি যেমন রাজমুকুট , মনিহার ইত্যাদি রাখা আছে। ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় দিকে দিয়ে গুরুত্ব পূর্ন হল তরবারী বা অস্ত্রশস্ত্র গুলোকে। এখানে হজরত মোহাম্মদের ব্যবহৃত মোট আটটি তরবারী আছে। চার খলিফার ব্যবহৃত তরবারি, সুলতান সুলাইমানের তরবারি, মিশরের মামলুক সুলতানদের ব্যাবহৃত তরবারী, মনি মানিক্য খচিত তোপ কাপি তরবারী, ইস্তাম্বুল বিজয়ী অটোম্যান সম্রাট সুলতান মেহমুত- ২ এর তরবারী ইত্যাদিও রাখা আছে এ হলে। শেষ হলের অমুল্য সামগ্রী হল ৮৬ ক্যারেটের হীরা যা সুলতানদের রাজমুকুটে শোভা পেত। এই বড় হীরা্র চারপাশ জুড়ে রয়েছে আরো উনপঞ্চাশটি ছোট ছোট হীরা যা পৃথিবীর ষষ্ঠ বৃহত্তম ।
অটোমান সম্রাটের সিঙ্ঘাসনের চাঁদোয়া।
চতুর্থ চত্বরে আছে অনেকগুলো প্যাভিলিয়ন এবং চার পাশ খোলা ঘর বা kiosk যেমন বাগদাদ kiosk জোড়া kiosk ইত্যাদি। চতুর্থ চত্বর থেকে বামে বসফোরাস প্রনালী এবং ডাইনে মারমারা সাগর এবং আরো দূরে আধুনিক ইস্তাম্বুল চোখে পড়ে।
ইসলামের তিন পবিত্র নগরী মক্কা, মদিনা এবং জেরুজালেম অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। অটোম্যান সম্রাটরা খলিফা বা ইসলামের ধর্ম গুরু বিবেচিত হতেন। বৃটিশ ভারতে বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দশকের গোড়ার দিকে যে খেলাফত আন্দোলন গড়ে ওঠে তা এই অটোম্যান খিলাফতকে ঘিরেই। ১৮৬৫ সালে অটোম্যান সুলতানেরা তোপকাপি প্রাসাদ ছেড়ে চলে গেলেও এখানে টাকশাল, স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদি ছিল।
সেদিনের কোষাগার যা এখন যাদুঘর
প্রত্যেক সাম্রাজ্যের উত্থান এবং পতন আছে। ছয়শ বছরের পুরোন অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ থেকে। প্রথম মহাযুদ্ধে জার্মানীর পক্ষ নেন অটোম্যান সুলতান। জার্মানীর পরাজয়ের সাথে সাথে অটোম্যানদের মৃত্যঘন্টা বেজে ওঠে। ইটালী,বৃটেন, ফ্রান্স এবং গ্রীস ভাগ বাটোয়ারা করে নেওয়ার পর তূর্কীদের ভাগে থাকল সামান্য কিছু যায়গা।
সম্রাটের লাইব্রেরী।
এই সময় তুর্কী জাতীয়তাবাদী নেতা মোস্তফা কামাল পাশা জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তোলেন। বৃটিশ,ফরাসী এবং গ্রীকদের যুদ্ধে হারিয়ে দিয়ে আধুনিক তুরস্ককে পুনরুদ্ধার করেন। একদিনের যে সাম্রাজ্য পারস্য থেকে শুরু করে ইউরোপের ভিয়েনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তা শেষ হল সুলতান ষষ্ঠ মেহমুতের পলায়নের মধ্য দিয়ে ১৯২৩ সালে। ১৯২৪ সালে তোপ কাপি প্রাসাদকে মিউজিয়াম বা যাদুঘরে রুপান্তরিত করেন কামাল পাশার সরকার। ১৯৮৫ সালে তোপ কাপি প্রাসাদকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ঘোষনা করে ইউনেস্কো।
তৃতীয় চত্বর থেকে মারমারা সাগর। বামে ইস্তাম্বুলের ইউরোপীয় অংশ এবং ডাইনে এশীয় অংশ।
প্রায় দুই ঘন্টা প্রাসাদের বিভিন্ন কিছু দেখার পরেও মনে হল অনেক কিছুই দেখা বাকী থেকে গেল। বিকেল সাড়ে তিনটের দিকে বেরিয়ে এলাম প্রাসাদ কম্পাউন্ড থেকে। চারটার পর নীল মসজিদ বা Blue Mosque বন্ধ হয়ে যায় দর্শনার্থীদের জন্য। সুতরাং তড়িঘড়ি করে ছুটলাম সেদিকে ( চলবে)
২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪২
সুমন কর বলেছেন: চমৎকার !!
৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫৬
বীরেনদ্র বলেছেন: @ পথহারা নাবিক, এটি সপ্তম পর্ব। এর আগের পর্বগুলোতে আপনার প্রশ্নের উত্তর আছে। আছে আরো অনেক ছবি ইস্তাম্বুল শহরের। সবগুলো আমার ব্লগে পাবেন।
৪| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৬
মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: আল্লাহ তৌফিক দিলে একবার এই দেশে যাওয়ার ইচ্ছে আছে... ধন্যবাদ পোস্টের জন্য...
৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৭
মুদ্রা সংগ্রাহক বলেছেন: ইনশাল্লাহ এই এপ্রিলে যাওয়া হবে তুরস্কে। যেহেতু মাত্র ২ সপ্তাহ বরাদ্দ করতে পেরেছি তাই লোনলি প্ল্যানেট পড়ছি আর কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি কোথায় যাব আর কোথায় বাদ দিব। ৪ দিন ইস্তান্বুল এর জন্য আপাতত বরাদ্দ রেখেছি। একদম সঠিক সময়ে আপনার এই পোস্টটা চোখে পড়ল। অনেক কিছু জানা যাবে আপনার কাছ থেকে। আমিও আপনার মত প্ল্যান করছি সুলতানআহমেত এলাকাটাতে থাকার জন্য - আমার মূল লক্ষ্য হল ঐতিহাসিক জায়গা গুলো দেখা। আমার মনে হয় এই এলাকাটাতে থাকলেই ভাল হবে, কি বলেন? গাইডেড ট্যুর নেওয়ার দরকার আছে কি ইস্তান্বুলে?
৬| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৩৩
কালোপরী বলেছেন:
৭| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৪:৫০
বীরেনদ্র বলেছেন: @মুদ্রা সংরক্ষক, গাইডেড ট্যুরের সুবিধা হল স্বল্প সময়ে দর্শনীয় যায়গা গুলো দেখতে পেবন ইতিহাস জানবেন ইত্যাদি। অসুবিধা হল খরচ বেশী এবং আপনার স্বাধীন ইচ্ছেমত চলতে ফিরতে পারবেন না। কিছুদিন গাইডেড ট্যুর এবং কিছুটা সময় নিজের জন্য রেখে প্লান করতে পারেন।
৮| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:১১
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: বাহ বাহ বেশতো।
৯| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৮
nurul amin বলেছেন: আবদুস সাত্তার এর লেখা তুরষ্ক সম্পর্কে একটি ভ্রমন কাহিনী পড়েছি আপনারটাও পড়ছি। আসলেই তুর্কিরা ভাগ্যবান।
১০| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৫
বশর সিদ্দিকী বলেছেন: আপনার ডিটেইলস গুলো খুব ভাল লাগে। অনেক কিছু জানতে পারি আপনার লেখা থেকে। অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৩৩
পথহারা নাবিক বলেছেন: অনেক সুন্দর পোষ্ট!! ধন্যবাদ আপনাকে!! জানতে ইচ্ছা করতেছে ঠিক কি কারনে ওই খানে যাওয়া হয়েছিলো!!