নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladesh my home

বীরেনদ্র

Nothing much to say about

বীরেনদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

আতা তুর্কের দেশে ( শেষ পর্ব)

০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:১২







গালাটা সেতু



পিয়েরে লোটি পাহাড়ঃ- বসফরাস ক্রুইজ শেষে আমরা চললাম পিয়েরে লটি পাহাড়ে। এ পাহাড় এবং আশে পাশের এলাকার নাম রাখা হয়েছে উনবিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত ফরাসী লেখক পিয়েরে লোটির নামে। ফরাসী নৌবাহিনীর অফিসার এই লেখক তার জীবনের এক উল্লেখযোগ্য সময় কাটান ইস্তাম্বুলে। এখানে বাস করার সময় আজিয়াদে নামের জনৈক হারেম রমনীর প্রেমে পড়েন লোটি। আজিয়াদেকে চিরস্মরনীয় করে রাখতে তার আত্মজীবনী মুলক বিখ্যাত উপন্যাসের নাম রাখেন আজিয়াদে।







কামাল আতা তুর্ক সেতু



এ পাহাড়ের চুড়ার কাছে পিয়েরের প্রিয় কফি শপ আজ ও আছে। বাসে করে পাহাড় চুড়ায় পৌছে দিয়ে ট্যুর গাইড নীচে নেমে গেলেন । পাহাড় চুড়া থেকে ইস্তাম্বুলের পুরোন অংশ বা গোল্ডেন হর্ন, আধুনিক ইউরোপীয় অংশ এবং এশীয় অংশ খুব ভাল ভাবে চোখে পড়ে। এখানে দেখা পেলাম আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশী দম্পতির সাথে। দেশের মানুষ পেয়ে খুশী হলাম, বাংলায় কথা বলার সুযোগ পেলাম। বাড়তি সুবিধা হল ছবি তোলার। পাহাড় থেকে নামার ব্যাবস্থা কেবল কারে। ২০/২৫ মিনিট পর কেবল কারে চেপে নামতে থাকলাম । প্রায় ৫০০ মিটার লম্বা কেবল কার পথে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নীচে নেমে এলাম সমাধি ক্ষেত্রের উপর দিয়ে। এ সমাধিতে চিরনিদ্রায় শায়িত কয়েকজন তুর্কী মহা পুরুষ।











পিয়েরে লোটি পাহাড়ের উপর থেকে আধুনিক ইস্তাম্বুল।



ঘুর পথে ইস্তাম্বুলের নগর দেওয়ালের বাইরে দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য ফিরে চললাম আগের দিনের রেস্তোরায়। দেড় হাজার বছরের ও বেশী পুরোন নগর দেওয়াল ছিল তিন স্তরে। বিভিন্ন সময়ে তা আরো মজবুত করে গড়েছিলেন বিভিন্ন সময়ের শাসকেরা। এ দেওয়াল এখন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।













বাইজেন্টাইন আমলে নির্মিত কনস্ট্যান্টিনোপল নগরীর সীমানা প্রাচীর।





ডোলমা বাচী প্রাসাদঃ- চারশ’ বছরের পুরোন তোপকাপি প্রাসাদ সেকেলে হয়ে যাওয়ায় আধুনিক প্রাসাদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে একত্রিশতম অটোম্যান সুলতান প্রথম আব্দুল মজিদ নতুন প্রাসাদ গড়তে উদ্যোগী হন। ১৮৪৩ সালে শুরু হয়ে ১৮৫৬ সালে শেষ হয় এর নির্মান কাজ। বসফরাস প্রনালী তীরের প্রাসাদের এ যায়গায় ছিল ছোট উপসাগর। মাটি ফেলে ভর্তি করে সেখানে তৈরী করা রাজকীয় উদ্যান এবং প্রাসাদ। সে বাগান এবং প্রাসাদ ভেঙ্গে ফেলে তৈরী হয় বিলাসবহুল এই প্রাসাদ। তুর্কী শব্দ ডোলমাবাচী’র অর্থ হল ভরাট করা বাগান। ভরাট করা বাগানের উপর গড়ে ওঠাতেই এ প্রাসাদের এমন নাম। অটোম্যান সাম্রাজ্য তখন পড়তির দিকে। তবুও এ প্রাসাদ নির্মানে কোন কার্পন্য করেন নি সুলতান। লন্ডনের বাকিং হাম বা প্যরিসের ভার্সাই প্রাসাদের সমতুল্য এ রাজপ্রাসাদ তুরস্কের মধ্যে বৃহত্তম। এক লক্ষ দশ হাজার বর্গ মিটার মোট আয়তনের এ প্রাসাদ ভবন পয়তাল্লিশ হাজার বর্গ মিটার জায়গার উপর গড়ে তোলা হয়। ইউরোপীয় ধাঁচে তৈরী এ প্রাসাদে একটাই মূল ভবন। এখনকার সময়ের ১৪৮ কোটী ডলার খরচ করা হয় এই প্রাসাদ নির্মানে। চৌদ্দ টন সোনা ব্যবহার করা হয় ভবনের দেওয়াল , স্তম্ভ এবং আসবাব পত্র সাজাতে। ২৮৫ টা কক্ষ এবং ৪৬ টা বড় হলঘর , ৬টি তুর্কী হাম্মাম এবং ৬০টি টয়লেট বা প্রসাধন কক্ষ আছে এখানে।







ডোলমাবাচী ঘড়ি স্তম্ভ বা ক্লক টাওয়ার

রাজ প্রাসাদের চারদিকে উচু সীমানা প্রাচীর দেওয়া। বসফরাস প্রনালী সংলগ্ন সীমানা প্রাচীর পনেরশ’ ফুট লম্বা। এ রাজ প্রাসাদ এখন যাদুঘর। ফলে ঢুকতে হয় টিকেট কেটে। এখানে শুধু মাত্র ট্যুর গাইডের তত্ববধানে ঘুরে দেখা সম্ভব। ক্লক টাওয়ার বা ঘড়ি স্তম্ভের পাশের রাস্তা দিয়ে এগোলে প্রধান গেট , তার থেকে বিশ ত্রিশগজ পর পড়বে আরো একটা গেট। দ্বিতীয় গেটের পর পড়বে বাগান। বাগানের স্বল্প গভীরতার বড় পুকুরের মাঝখানে বড় ফোয়ারা। বাগান পেরোলে পড়বে মূল ভবন। অনান্য অটোমান রাজ প্রাসদের মতই এ রাজ প্রাসাদের দুটো প্রধান অংশ। সেলামলিক এবং হারেমলিক। সেলামলিক হল দরবার অংশ আর হারেমলিক সুলতান এবং পরিবারের বসবাসের স্থান। জুতোর উপর প্লাস্টিক ব্যাগ পেচিয়ে ঢুকতে হয় প্রাসাদে। প্রবেশ দ্বারের পেরোলেই প্রথমে পড়ে বিশাল হল ঘর। সেখান থেকে উপরে উঠে গেছে কৃস্টাল গ্লাসে তৈরী সিড়ি। নীচতলায় বিশাল সেরিমোনিয়াল হল। দ্বিতীয় তলার বিশাল হলে আছে সাড়ে চার টন ওজনের ঝাড়বাতি, মহারানী ভিক্টোরিয়া সুলতানকে এ ঝাড় বাতী উপহার দেন। ছয়শ বাতি এবং ষাটটী বাহু আছে এ ঝাড়বাতিতে। সুলতানের অভ্যর্থনা হলে মুল্যবান কার্পেটের উপর ভাল্লুকের চামড়া বিছানো আছে যা তিনি উপহার পান রশিয়ার জারের কাছ থেকে। প্রাসাদের পেছনের দিকের হারেমলিকের এক কক্ষে রানীমা ভালিড সুলতান তার ছেলে -সুলতানের জন্য উপপত্নীদের সাক্ষাৎকার নিতেন। তূর্কী প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল তার জীবনের শেষ দিন গুলো কাটান এই প্রাসাদে। ১৯৩৮ সালের ১০ ই নভেম্বর সকাল ৯ টা পাঁচ মিনিটে মারা যান তিনি। কামালকে সম্মান জানিয়ে ৯-০৫ এ স্থির করে রাখা আছে এ ঘরের ঘড়িকে। আজও প্রতি বছর দশই নভেম্বর সকাল নয়টা পাচ মিনিটে তুরস্কে থেমে যায় গাড়ী ঘোড়া, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে তূর্কীরা সম্মান জানায় আতা তুর্ককে। প্রাসাদের অভ্যন্তরে ছবি তোলা বা ভিডিও করা নিষিদ্ধ। প্রাসাদের বাইরের কিছু ছবি তুলে ফিরে এলাম।







রাজপ্রাসাদের প্রধান প্রবেশ দ্বার।







প্রাসাদ আঙ্গিনার সরোবর







প্রাসাদের বসফরাস প্রনালীর তীরের সীমানা দেওয়ালের গেট।







প্রাসাদের বসফরাস প্রনালীর দিকের অংশ।



















প্রাসাদের মূলভবনের সম্মুখভাগ।







ডোলমাবাচী প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে অটোম্যান সুলতানদের অস্ত্রাগারকে বামে রেখে গেলাম তাকসিম স্কোয়ার। বাস থেকে দেখেই সন্তুস্ট থাকতে হল । ভবনের দেওয়ালে টানানো কামাল আতা তুর্কের বিশাল ছবি। এরপর বসফরাস সেতু পার হয়ে গেলাম এশীয় অংশের পাহাড়ের উপরের রেস্তোরায়। এশীয় অংশে দর্শনীয় কিছু ছিল না তবে ইস্তাম্বুলের চমৎকার দৃশ্য চোখে পড়ে পাহাড়ের উপর থেকে।







প্রাসাদের দ্বিতীয় প্রবেশ দ্বার।





সুলাইমানিয়া মসজিদঃ- পরদিন সকালে বায়েজিদ স্কোয়ার হয়ে গ্রান্ড বাজারের পাশ দিয়ে গিয়ে উপস্থিত হলাম সুলাইমানিয়া মসজিদে। ইস্তাম্বুলের তৃতীয় পাহাড়ের উপর এ মসজিদ নির্মান করেন অটোমান সুলতান “ সুলাইমান দি ম্যাগনিফিসিয়েন্ট। ১৫৫০ সালে এ মসজিদের নির্মানকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৫৫৮ সালে। এটি ইস্তাম্বুলের বৃহত্তম মসজিদ । বিখ্যাত তুর্কী স্থপতি মিমার সিনান ছিলেন এ মসজিদের প্রধান স্থুপতি। অনান্য মসজিদের মত এ মসজিদ কমপ্লেক্সে আছে রন্ধনশালা, হাসপাতাল, মাদ্রাসা, মেডিকেল স্কুল,অতিথিশালা এবং সুলতান সুলাইমান, রানী রোক্সেলানা ও পরিবারের অনান্য সদস্যদের সমাধি। অটোমান সুলতান সুলাইমান চেয়েছিলেন এ মসজিদকে জেরুজালেমের টেম্পল মোরিয়ায়তে অবস্থিত ডোম অফ দি রক এবং হাগিয়া সোফিয়ার চেয়ে বড় এবং সুন্দর করে গড়ে তুলতে। এ মসজিদের চার মিনারের দুটো আনা হয়েছে ইসাম্বুলের বাইজেন্টাইন প্রাসাদ থেকে একটি বাবলেক থেকে এবং অপরটি মিশরের আলেক্সান্দ্রিয়া থেকে। সুলতান সুলাইমান ছিলেন দশম অটোমান সুলতান। সেই অনুসারে এ মসজিদে তৈরী করা হয়েছে দশটি গ্যালারী। প্রধান স্থপতি মিমার সিনানের সমাধি আছে মসজিদ কমপ্লেক্সের ঠিক বাইরে।





বেয়াজিত টাওয়ারঃ- পুরোনো ইস্তাম্বুল নগরীর অধিকাংশ বাড়ীঘর ছিল কাঠের তৈরী । আগুন লেগে বাড়িঘরদোর পুড়ে যাওয়া ছিল খুবই সাধারন ব্যাপার। আগুন পর্যবেক্ষনের জন্য ইস্তাম্বুলের তৃতীয় পাহাড় চুড়ার উপরে কাঠ দিয়ে উচু টাওয়ার নির্মান করা হয়েছিল ১৭২৯ সালে। মজার ব্যাপার হল আগুন পর্যবেক্ষনের কাঠের সে স্তম্ভ নিজেই পুড়ে যায় আগুনে। অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ১৮২৮ সালে কাঠের স্তম্ভের পরিবর্তে একই স্থানে নির্মান করেন পাথরের স্তম্ভ। গোলাকৃতি এ স্তম্ভে উপরে ওঠার জন্য ছিল ১৮০টি সিড়ি। প্রথমে এ টাওয়ারের ছাদ ছিল কাঠের তৈরী এবং পর্যবেক্ষনের জন্য ছিল ১৩টি জানালা। ১৮৪৯ সালে গোলাকার স্তম্ভের উপর নির্মান করা হয় আরো তিনতলা। উপরের চতুস্কোণ এ তলা গুলোতে তিনদিকের প্রতিদিকে আছে একটি করে জানালা। ১৮৪৯ সালে ছাদের উপর স্থাপন করা হয় ১৩ মিটার উচু লৌহ দন্ড। এখন এ স্তম্ভের অবস্থান ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটির আঙ্গিনায় । এ টাওয়ারের ছাদ পাথর দিয়ে তৈরী, উচ্চতা দুইশ আশি ফুট , এবং ভুমিক্ষেত্রে আয়তন পঞ্চাশ বর্গ মিটার । ২৫৬টি ঘোরানো সিড়ি দিয়ে এ স্তম্ভের উপরে ওঠার ব্যাবস্থা আছে।



নারগিলা বারঃ- শীশা বারের মতই হুক্কায় করে ধুমপানের জন্য বার আছে ইস্তাম্বুলে । তুরস্কে এগুলোর নাম নারগিলা বার।



বাকলাভা উৎসবঃ- তুরস্কের জনপ্রিয় মিস্টির নাম বাকলাভা। ইস্তাম্বুলে থাকার শেষদিনে সৌভাগ্য হয়েছিল জনপ্রিয় এ মিস্টির উৎসব দেখার। নিউ মস্ক বা নতুন মসিজদের পাশের স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত এ উতসবে দেখা পেলাম অটোমান সুলতান আমলের সৈনিক এবং সৈন্যদলের বাদ্যযন্ত্রীদের পোষাক পরা তুর্কী যুবকদের। স্যুভেনির হিসেবে কিনে নিয়ে এলাম দুই প্যাকেট বাকলাভা।



মিলিয়ন স্তম্ভঃ- ব্যাসিলিকা সিস্টার্ন এ প্রবেশ পথ থেকে অল্প দূরে চতূর্থ শতাব্দীতে স্থাপিত এ স্তম্ভকে ধরা হত বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের কেন্দ্র হিসেবে। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের দুরত্ব মাপা হত এ স্তম্ভ থেকে।



ইস্তাম্বুল ভ্রমন শেষে উড়াল দিলাম ঢাকার পথে। ভবিষ্যতের ইস্তাম্বুল ভ্রমনে ইচ্ছুক পাঠক এ লেখা থেকে কিছুটা হলেও যদি উপকৃত হন তা হলেই নিজেকে স্বার্থক মনে করব । শেষ হল ইস্তাম্বুল ভ্রমন কাহিনী।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২০

শোভন শামস বলেছেন: ভাল লাগল, আপনার ভ্রমন কথা লিখে যান।

ধন্যবাদ

২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:২১

শোভন শামস বলেছেন: ইস্তানবুলে একদিন থাকতে পারি। কিভাবে কাটাব জানালে খুশি হব।
ধন্যবাদ

৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৮:৫৩

কেএসরথি বলেছেন: সুন্দর দেশ। যাওয়া হয়নি কখনও। ইচ্ছা আছে ভবিষ্যৎে।

৪| ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৪৪

সুমন কর বলেছেন: গুড পোস্ট।
শেষ পর্বে, আগের পর্বগুলোর লিংক দিলে, পরে সবার কাজে লাগতে পারে।

৫| ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:১৭

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

নাইস পোস্ট। ছবিগুলো বেশ ভাল লাগছে সাথে বর্ণনা দারুণ।

৬| ০৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৩:০২

এহসান সাবির বলেছেন: ছবি বর্ণনা সবই সুন্দর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.