নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladesh my home

বীরেনদ্র

Nothing much to say about

বীরেনদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমাজতন্ত্রের শেষ দুর্গে( ৩য় পর্ব)

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:২২

মসৃন চওড়া পথ দিয়ে বাস যাত্রা শুরু করল হোটেলের দিকে।জানালা দিয়ে যতটা চোখে পড়ছে সবই সবুজ,সাজানো গোছানো। সবচে’ বেশী চোখে পড়ে পাম গাছ।এটি কিউবার জাতীয় গাছও বটে। মিঃ রামন রাস্তার পাশের সারি সারি পামগাছের দিকে দৃস্টি আকর্ষন করে কৌতুক করলেন “ওগুলো হল গর্ভবতী পাম গাছ”।এরকম অদ্ভুত আকৃতির পাম গাছ আগে কোথাও চোখে পড়ে নি, যদিও কিউবার আশে পাশের দেশগুলোতে ঘুরেছি অনেকবার। গাছগুলোর আগা এবং গোড়া চিকন কিন্তু মাঝখানের অংশ গর্ভবতী মহিলার পেটের মতই মোটা।রাস্তায় লোকজনের বালাই নেই কারন তখন রাত বারোটার বেশী বাজে আর কিউবার লোকসংখ্যা এমনিতেও অনেক কম। এক লক্ষ নয় হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশে লোকসংখ্যা মাত্র ১ কোটি ১১ লক্ষ, অর্থাৎ বাংলাদেশের দশভাগের এক ভাগের চেয়েও কম।বিশ পঁচিশ মিনিট পর আমাদের হোটেল “ক্লাব কাওয়ামা”র সামনে নামিয়ে দিল ট্যুরিস্ট বাস। হোটেল রিসিপশানে নাম এবং পাসপোর্ট রেজিস্ট্রি করে, খাতায় দস্তখত সেরে ফেললাম। কামরার চাবি হাতে দিয়ে, রিসিপশানিস্ট মহিলা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ইলেক্ট্রিক গাড়ীতে চড়তে অনুরোধ করলেন। এটি একটি থ্রি স্টার হোটেল, বেশ বড় যায়গা জুড়ে বীচের পাশে এবং চল্লিশ পয়তাল্লিশটি ছোট ছোট কটেজই হল অতিথিদের বাসস্থান। মালপত্র সহ গাড়ী হোটেল কামরায় পৌছে দিলে ড্রাইভারকে বখশিশ দিয়ে বিদায় করলাম। ঘরে টেলিফোন , টেলিভিশন, ফ্রীজ, এসি সব কিছুই আছে। উত্তর আমেরিকার ছোট ছোট হোটেলগুলোতেও দেখেছি রুমে কফির ব্যাবস্থা থাকতে কিন্তু এখানে তেমন কিছু দেখলাম না।হোটেল ঠিক করার সময় হোটেলে ইন্টারনেট থাকার ব্যাপারে যত্নবান ছিলাম, কিন্তু রিসিপশানে ফোন করে জানলাম ওদের ওয়াই-ফাই অচল। টোরোন্টোতে বাসায় ফোন করতে চাইলাম সে ব্যাপারেও রিসিপশানিস্টের জবাব এল যে হোটেলের ফোন থেকে শুধুমাত্র হোটেলের মধ্যেই ফোন করা যাবে,এর বাইরে নয়। অগত্যা নিদ্রাদেবীর কোলে অর্থাৎ বিছানায় আশ্রয় নিলাম।একটু পরেই কানের কাছে গুন গুন গান করে মশারা জানানো শুরু করল যে তারাও রুমের বাসিন্দা, যদিও তারা সংখ্যায় নগন্য। গত বছর দেশ থেকে আসার পর মশা দেখা হয় নি। কানাডায় যে পতঙ্গ দেখার সূযোগ সচরাচর মেলে না, কিউবায় এসে সেই দূর্লভ প্রানীর সাক্ষাৎ মিলল।
প্রথম দিন
পরদিন ভোরে সূর্য্য ওঠার আগেই ঘুম ভাঙ্গল। চমৎকার সকাল। উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা আটলান্টিকের নির্মল বাতাসে মুহুর্তেই মন ফুরফুরে হয়ে উঠল।সমূদ্রসৈকতে সূর্য্যোদয় দেখার লোভে হাফ প্যান্ট পরে কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। হোটেলের সামনের খাল দিয়ে ভারাডেরো শহর কিউবার মূল ভূখন্ড থেকে আলাদা করা।খালের দু’পাড় সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো। রাস্তাঘাট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। বীচে না গিয়ে খালের পাড় বরাবর হেটে হেটে চলে গেলাম খালের উপরের ব্রীজের দিকে। খালের উপরের এই ব্রীজে দিয়ে ভারাডেরো শহর থেকে হাইওয়ে চলে গিয়েছে কিউবার মূল ভূখন্ড এবং হাভানার দিকে।খাল পাড়ের মাটিতে অসংখ্য গর্ত। কোনো কোনো গর্ত থেকে উকি দিচ্ছে লাল কাকড়া।কাছে গেলেই ঢুকে যাচ্ছে গর্তের মধ্যে।কাকড়াগুলো আবার বেশ বড়, বাংলাদেশের বড় কাকড়া থেকে দ্বিগুন আকারের।সমুদ্রের জল অসম্ভব পরিস্কার। খালের পানিতে ছোট এবং মাঝারী বিভিন্ন রঙ এবং আকারের মাছ ভর্তি, মনে হয় এক বিশাল একুয়ারিয়াম।পাড়ে পানির গভীরতা সামান্য হলেও খালের মাঝখানে জল বেশ গভীর। পাড় থেকে নীচে তাকালেই চোখে পড়ে মেঝেতে শুয়ে থাকা হাজার হাজার জেলী ফিশ।কোনটা মেঝে থেকে সাতার কেটে পানির উপর ভেসে উঠছে আবার কোনো কোনটা ফিরে যাচ্ছে মেঝের দিকে। জেলী ফিশ গুলো বিষাক্ত; হাত দিয়ে ধরলে হুল ফুটিয়ে বিষ ঢেলে দেবে। ট্যুর গাইড মিঃ রামন জানিয়েছিলেন যে জেলী ফিশের এই বিষের ঔষধ হল ভিনিগার। ভিনিগার না পাওয়া গেলে প্রস্রাব করে দিতে হবে হুল ফোটানো জায়গার উপর। জেলী ফিশের বিষ সম্ভবত ক্ষার যা ভিনিগারের এসেটিক এসিড বা প্রস্রাবের এসিড নিস্ক্রিয় করে দেয়। ভারাডেরোর সাগরে হাঙ্গর নেই ফলে নিরাপদে স্নান করা চলে এখানে।
খালের পাড় বেয়ে উলটো দিক থেকে হেটে আসা এক ভদ্রলোক স্প্যানিশ ভাষায় দৃস্টি আকর্ষন করলেন জলের দিকে।পানির তলায় তার দশ পা দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে এক মাঝারি আকারের সাদা অক্টোপাস।ক্যামেরা তাক করে সাটার টিপলাম, কিন্তু বিধি বাম। জল ভেদ করে ক্যামেরার নিশানা অক্টোপাস পর্যন্ত পৌছালো না- উঠল খালের জলের ছবি। আরো কিছুদুর এগিয়ে সেতুর নীচ দিয়ে হেটে গিয়ে পৌছলাম পুরোনো আধা ভাংগা ব্রীজের উপর। এখানে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে দশ বারোজন ছেলেবুড়ো। টপাটপ মাছ তুলছে সবাই। মৎস শিকারীরা জানালেন মাঝারি আকারের এই মাছগুলোর নাম “বিহাইও”। রেস্টুরেন্টে এ মাছগুলো খেয়েছি অনেকবার কিন্তু স্বাদে গন্ধে বাংলাদেশের কোনো মাছের ধারে কাছেও নেই তারা।ততক্ষনে পূর্বাকাশে সূর্য্যদেব উকি দিচ্ছেন। ফিরে চললাম হোটেলের দিকে।রিসিপশানে এসে জানতে চাইলাম কানাডায় ফোন করার উপায় কি? সুন্দরী রিসিপশানিস্ট জানালেন যে হোটেল থেকে একশ’ গজ দূরে্র টেলিফোন বুথ থেকে ইন্টারন্যাশনাল কলিং কার্ড কিনে ফোন করা যাবে। হোটেলের রেস্টুরেন্ট তখন নাস্তার জন্য খুলেছে।এ হো্টেলে চারটে রেস্টুরেন্ট।একটা বুফে অর্থাৎ এখানে সাজানো শ’খানেক প্রকারের খাবার এবং পানীয়ের মধ্যে যেটা ভালো লাগে সেটা খেতে পারবেন ইচ্ছেমত।আর একটা হল a la carte রেস্টুরেন্ট;এখানে আপনাকে মেনু থেকে বেছে অর্ডার দিতে হবে, এটাও হোটেলবাসীদের জন্য ফ্রি।বাকী দুটো রেস্টুরেন্ট বারের সাথে। মোট পাঁচটা বার এবং চারটে সুইমিং পূল আছে হোটেলে। বিউটি সেলুন, ডিসকো ক্লাব, জিমনিসিয়াম, গিফট শপ সব কিছুই আছে এখানে। সবচে ভাল হল বীচ চেয়ার এবং তালপাতার ছাতা। সমুদ্রে সাতার কেটে বীচ বার থেকে পছন্দমত কোমল বা এলকোহলিক পানীয় নিয়ে বীচের হেলানো চেয়ারে শুয়ে শুয়ে সূর্য স্নান করে করছিলেন স্বল্প বসনা শেতাঙ্গী ললনারা। ওদের Tan করা, আমাদের মত গরম দেশের মানুষের জন্য Banকরা হলে ভাল হয়।একবার সূর্য্যস্নান চেস্টা করতে গিয়ে নাকাল হয়েছিলাম;দু’মিনিট থাকার পরই প্রচন্ড রোদে গা পুড়ে চিটমিট করতে থাকল, এবং ঘাম ঝরতে লাগল দরদর করে ।(চলবে)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৫০

মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: ভাল্লাগছে

২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৪

মাকড়সাঁ বলেছেন: সমাজতন্ত্র nia lakha valo lagce asa kori ses a sob gulo eksatha diben

৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২

শামছুল ইসলাম বলেছেন: মাছ যেমন পানিতে অনায়াসে সাঁতার কাঁটে, আপনিও সহজসরল ভাষায় ভ্রমণ কাহিনীটাকে সার্থকভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

রসবোধ লেখায় নতুন মাত্রা যোগ করেছেঃ

//একটু পরেই কানের কাছে গুন গুন গান করে মশারা জানানো শুরু করল যে তারাও রুমের বাসিন্দা, যদিও তারা সংখ্যায় নগন্য।//

........................................

//ওদের Tan করা, আমাদের মত গরম দেশের মানুষের জন্য Banকরা হলে ভাল হয়।একবার সূর্য্যস্নান চেস্টা করতে গিয়ে নাকাল হয়েছিলাম;দু’মিনিট থাকার পরই প্রচন্ড রোদে গা পুড়ে চিটমিট করতে থাকল, এবং ঘাম ঝরতে লাগল দরদর করে //


লেখার মতই, ছবি গুলোও ঝকঝকে।

ভাল থাকুন। সবসময়।

৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব সুন্দর পোস্ট| কিউবার ভ্রমণকাহীনি পড়িনি কোনদিন| আপনার মাধ্যমেই পড়ছি|

৫| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৩

বীরেনদ্র বলেছেন: ধন্যবাদ@শামসুল ইসলাম

৬| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৯

ইমরান আশফাক বলেছেন: চমৎকার লাগছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.