![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রাতঃভ্রমন সেরে হোটেলে ফিরে ছুটলাম প্রাতঃরাশের সন্ধানে।বুফে রেস্টুরেন্টের নাম La Tasca। বীচের পাশের রেস্টুরেন্টে খাবার প্রচুর, কিন্তু খাবারগুলোর কোনটাতেই মরিচ বা মশলার বালাই নেই। আমি ঝাল খেতে পছন্দ করি।কেন পছন্দ করি এ প্রশ্নের উত্তরে বন্ধু শ্যামলের কৌতুকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলি “মরিচই হল একমাত্র খাবার যার স্বাদ পাওয়া যায় দুই বার; প্রথমদিন খাওয়ার সময় এবং দ্বিতীয় দিনে বাথরুমে”।আসলে আমার বাংলাদেশী জিহ্বায় ঝাল মশলা ছাড়া তৃপ্তি পাই না। প্রতঃরাশ শেষে হোটেলে রুমে ফিরে প্রাতঃকৃত্য সারলাম এবং তারপর সারাদিন ভারাডেরো ঘুরে দেখার প্রস্তুতি নিয়ে রুম থেকে বেরোলাম। সেই মুহুর্তে সবচে’ বেশী প্রয়োজন ছিল কানাডায় কথা বলা এবং তার জন্য দরকার ছিল কিউবার মুদ্রা্র। কিউবাতে দুই ধরনের মুদ্রা প্রচলিত; Cuban National Peso এবং Convertible Cuban Peso বা CUC যাকে সংক্ষেপে কুকও বলা হয়।কিউবানরা বেতন পান ন্যাশনাল পেসোতে এবং নুন্যতম প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারেন সেগুলো দিয়ে।আর ট্যুরিস্টদের খরচ করতে হবে Convertible Cuban Peso বা CUC। এ দূটো মুদ্রার ফারাক অনেক- এক সি,ইউ,সি ২৪ ন্যাশনাল পেসোর সমান।আমেরিকান ডলার ভাঙ্গাতে চাইলাম হোটেলে।রিসিপশানের পাশে Havana Tour এর বুথে কর্মরত ভদ্রলোক বুদ্ধি দিলেন হোটেলে ভাঙ্গালে আপনাকে দেবে আশি সি,ইউ,সি কিন্তু একশ গজ হেটে ব্যাঙ্ক বুথে গেলে আপনি পাবেন ৮৭ সি,ইউ,সি আর ব্লাক মার্কেটে ভাঙ্গালে ৯৪/৯৫ সি,ইউ,সি পর্যন্ত পেতে পারেন। এখানে ব্লাক মার্কেট আছে নাকি? তাজ্জব ব্যাপার ! পরে দেখেছি কোনো কোনো দোকানদার আমেরিকান ডলার নিয়ে সি,ইউ,সি বা কুক দিয়ে থাকেন।তারা ঠিক মুদ্রা ব্যবসায়ী নন এবং এই বিনিময় হয় পুলিশের উপস্থিতিতেই প্রকাশ্যে।পুলিস দেখেও না দেখার ভান কর, হয়ত নিয়মিত মাসোহারার বিনিময়ে। যেহেতু এ বিনিময় ঘটে ব্যাঙ্কের বাইরে সেহেতু তা নিশ্চয়ই আইনসিদ্ধ নয়।এই মুদ্রা বিনিময়ের একটা অদ্ভুত ব্যাপার উল্লেখ করেছিলেন ট্যুরিস্ট গাইড যার সত্যতার প্রমান পাই পরবর্তীতে ব্যাঙ্কে গিয়ে।সেটি হল- কিউবাতে আমেরিকান ডলারের চেয়ে কানাডিয়ান ডলারের দাম বেশী, যদিও কানাডাতেই আমেরিকান ডলার থেকে কানাডিয়ান ডলারের দাম কম। কিউবাতে মুদ্রা বিনিময়ের এই ব্যাপারগুলোকে মনে হয়েছে জোরজবরদস্তি। কিন্তু কিউবাতে কিউবান মুদ্রা ছাড়া তো সবকিছুই অচল। অগত্যা তাদের ব্যাঙ্কে গিয়ে ডলারের বিনিময়ে কিউবান মুদ্রা বা সি,ইউ,সি জোগাড় করলাম। যে দেশের যা নিয়ম বা আচরন সে দেশে গেলে তা মানতেই হবে। কথায় আছে- When in Rome, do as the Romans do।
কিউবান মুদ্রা “কুক” নিয়ে হাজির হলাম টেলিফোন বুথে। কিউবার টেলিযোগাযোগ সরকা্রী নিয়ন্ত্রনাধীন।টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সবার জন্য উন্মুক্ত নয়।সরকারী সংস্থ্যা ETECSA নিয়ন্ত্রন করে টেলিযোগাযোগ,আর একমাত্র সেলুলার ফোন কোম্পানী হল Cuba Cell। বুথের মহিলা জানালেন যে তার কাছে এই মুহুর্তে International Calling Card নেই তবে সরাসরি কথা বলার জন্য চেস্টা করতে পারেন কিন্তু প্রতি মিনিটের জন্য দিতে হবে দুই কুক, যা দুই ডলারেরও বেশী। উত্তর দিলাম“কুছ পরোয়া নেহি”। ভদ্রমহিলা মিনিট পাঁচেক চেস্টা করার পর জানালেন টেলিফোন করা সম্ভব নয়, আপনি ভারাডেরোর শহর কেন্দ্রের ETECSA এর প্রধান অফিস থেকে চেস্টা করে দেখতে পারেন। হোটেল কাওয়ামা শহরের এক প্রান্তে। হোটেল থেকে সামান্য হেটে গিয়ে উঠলাম ট্যুরিস্ট বাসে।ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাসগুলোতে যাওয়া আসার ব্যাবস্থা হল Hoff on and Hoff off পদ্ধতির, অর্থাৎ বাস থেকে যেখানে খুশি নেমে ঘুরে ফিরে দেখেশুনে আবার এই কোম্পানীর যে কোন বাসেই ওঠা যাবে,নতুন করে টিকিট কাটার দরকার পড়বে না। সারাদিনের জন্য টিকেটের মূল্য হল পাঁচ কুক।ETECSA এর প্রধান অফিসে গেলে তা্রা জানালেন সে দিনের মত কলিং কার্ড শেষ আগামীকাল সকালে পেলেও পেতে পারেন।প্রতিদিনের জন্য টেলিফোন কলিং কার্ডের নাকি নির্দ্দিস্ট কোটা থাকে এখানে।ইন্টারনেটে্র ব্যাপারে জানতে চাইলে ভদ্রমহিলা উত্তর দিলেন তার জন্যও কার্ড কিনতে হবে; প্রতি ঘন্টার জন্য দিতে হবে পাঁচ কুক। কিন্তু সেখানেও লম্বা লাইন। এরপর গেলাম Cuba Cell এর অফিসে। সেখান থেকেও নিরাশ হয়ে ফিরতে হল। এখানকার যে কোনো সরকারী অফিসে ঢোকার নিয়ম হল একজন একজন করে ঢুকতে হবে,তা সে ব্যাঙ্ক বুথই হোক বা ইমিগ্রেশানের বুথই হোকনা কেন। টেলিফোন ইন্টারনেটের ব্যাপারে তাদের এত রাখঢাক কেন বুঝিনি।কানাডা থেকে রওয়ানা দেওয়ার আগে সেল ফোন রোমিং করে নিয়ে নিয়ে কিউবাতে সে ফোণ ব্যাবহার করার সম্ভাবনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম টোরোন্টোর সেলফোন অফিসে। প্রতি মিনিটে তিন ডলার পঁচিশ সেন্ট গুনতে হবে দেখে সে ব্যাবস্থা করে যাই নি। এখন বুঝলাম ইন্টারন্যাশনাল রোমিং এর ব্যাবস্থা করে নিয়ে গেলে অন্ততঃ জরুরী প্রয়োজনে কিউবা থেকে টোরোণ্টোতে যোগাযোগ করতে পারতাম। কিউবার চেয়ে অনেক গরীব দেশ নেপালে গিয়েও তো এমন ঝামেলায় পড়তে হয় নি? কয়েকজনকে এ প্রশ্ন করে কোন সদুত্তর পাই নি। টেলিফোনে কথা বলার জন্য সেল ফোনের বোতাম টিপলে যেখানে চলে তার জন্য এত হ্যাঁপা? সেদিনের মত ক্ষান্ত দিয়ে বের হলাম শহর পরিক্রমায়।
ভারাডেরো শহর হল ট্যুরিস্ট সিটি।কিউবানরা ভারাডেরোকে বলেন উপদ্বীপ, কিন্তু আমার ভৌগলিক জ্ঞানমতে ভারাডেরো হল ক্ষুদ্র দ্বীপ কারন আমাদের হোটেলের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে এ ভূখন্ড কিউবার প্রধান অংশ থেকে সম্পূর্ন আলাদা।ছো্ট বেলায় ভূগোলে পড়েছিলাম “চারদিকে জল পরিবেস্টিত স্থলভূমিকে দ্বীপ বলে”। সে দ্বীপই হোক বা উপদ্বীপই হোক তা নিয়ে বেশী মাথা না ঘামিয়ে ফিরে চলি ভারাডেরোয়।পঁচিশ/ছাব্বিশ কিলোমিটার লম্বা এবং সর্বোচ্চ দুই কিলোমিটার চওড়া এ ভূখন্ড কিউবার উত্তর কোনায় মূল দ্বীপে লাগোয়া।এখানে কিউবানদের বসতি নেই বললেই চলে। সামান্য দু’ চারটে ব্যাক্তিগত বাড়ি ছাড়া সমস্ত বাড়ী ঘরদোরই হোটেল, রেঁস্তোরা, গিফট শপ ইত্যাদি। রাজধানী হাভানা থেকে ভারাডেরোর দুরত্ব মোটর গাড়িতে দুই ঘন্টার পথ।(চলবে)
ভারাডেরোর আধুনিক শপিং মল।
পাম গাছ।
হোটেল
নৈসর্গিক সুন্দর দ্বীপের একাংশ
খালপাড়
সাগর তলে ঘুমিয়ে থাকা জেলীফিশ এবং কোরাল
উনিশশো পঞ্চাশের দশকের ফোর্ড গাড়ী
ভোর বেলার সাগর
সাগরতল
খালপাড়।
২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩
নীলসাধু বলেছেন: ভাল লাগা রইল
ছবিগুলো বেশ সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৭
বীরেনদ্র বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও
৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৭
কল্লোল পথিক বলেছেন: কিউবা সর্ম্পকে অনেক কিছু জানা ছিল না।ধন্যবাদ ভাই।
৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৯
দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: জিকে!!!!!!!!!!ভাল++++++লাগল
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:১৫
শামছুল ইসলাম বলেছেন: কিউবা সম্বন্ধে অনেক কিছু জানা হলো।
এবারের ছবি গুলোও সুন্দর হয়েছে।
ভাল থাকুন। সবসময়।