![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিউবাতে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠার একটু সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আছে। উনিশশ’ ত্রিশের দশকে পর্য্যটন ছিল কিউবার প্রধান আয়ের উৎস। সে সময়ে পতিতাবৃত্তি এবং জুয়ার জন্য হাভানা বিখ্যাত ছিল। ১৯০৮ সালে স্প্যানিশ দের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৫৯ সালের কমিউনিস্ট বিপ্লবের আগ পর্যন্ত সময়কে কিউবানরা বিবেচনা করেন “American Occupation Period” হিসেবে। বিপ্লবের পর স্নায়ুযুদ্ধকালে অকাতরে রাশিয়ান সাহায্য পেত কিউবা। সে সময় নিশ্চিন্তে স্বচ্ছল ছিল কিউবানরা। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় সে সাহায্য।উনিশশ’ নব্বই দশকে চরম দুরবস্থায় পড়ে কিউবানরা, কিউবা পৌছে যায় দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। কিউবানরা এ সময়কে বলেন Special Economic Period। তখন কিউবা ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হতে থাকে। বিদেশী ট্যুরিস্টদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় কিউবাকে।কিউবান সরকার ৫১/৪৯ অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে কিউবার পর্যটন শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের অনুমতি দেন।এগিয়ে আসে বিদেশী ব্যাবসায়ীরা। এর মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য সংস্থ্যা হল স্পেনের Melia Hotel Group । প্রথম দিকে বিদেশীদের সামান্য কিছু যায়গা ভ্রমনের অনুমতি দেওয়া হত যাকে বলা হয় Enclave Tourism। এখন বিদেশী ট্যুরিস্টদের জন্য কিউবার সমস্ত যায়গা উন্মুক্ত। ক্যারিবীয় অঞ্চলে পর্যটন শিল্পে কিউবা এখন দ্রুত এগুচ্ছে। এখানে অধিকাংশ ট্যুরিস্ট আসেন কানাডা, ইউরোপ চীন, রাশিয়া কোরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে। ২০১১ সালে ২৬ লক্ষ বিদেশী পর্যটক কিউবা ভ্রমন করেন যা থেকে কিউবার আয় ছিল প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার। ভারাডেরোতে আমি বেশ কয়েকজন পর্যটককে দেখেছি যারা কিউবাতে এসেছেন একাধিক বার। কিউবাতে পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিস্তারের পেছনে সবচে’ গুরত্বপূর্ন মনে হয়েছে সে দেশের নিরাপত্তা। কিউবার যে কোন যায়গায় নিরাপত্তা প্রশ্নাতীত।অপর গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হল 3S।বেশ কয়েক বছর আগে মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রী উল্লেখ করেছিলেন এই 3Sএর, যা হল Sun, Shopping,এবং Sex। মালয়েশিয়ার মন্ত্রী আরো উল্লেখ করেছিলেন যে প্রথমদুটো মালয়েশিয়াতে আছে আর তৃতীয়টি আপনাকে খুজে নিতে হবে। কিউবাতে কিন্তু 3S এর সবগুলোই সহজে মেলে। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে বি,এন,পি সরকার সীমিত আকারে বিয়ার উৎপাদনের অনুমতি দেন কিন্তু হুজুরদের বাধার কারনে তা বাতিল করতে বাধ্য হন। সেই সময়ের পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মীর নাসির মন্তব্য করেছিলেন “সস্তায় বিয়ার পর্যন্ত পাবে না পর্যটকেরা, তাহলে তারা কি বাংলাদেশে আসবে মিলাদ পড়াতে”।পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতে এ সমস্ত কিছুরই দরকার আছে। দ্বীপ দেশ হওয়াতে কিউবার চারপাশেই সৈকত। ভারাডেরোর সমুদ্রসৈকত দর্শনীয় কিন্তু আমাদের কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত কিন্তু কম সুন্দর নয়। বাংলাদেশে যদি কিউবার অনুকরনে পর্য্যটন শিল্প গড়ে তোলা যায় তাহলে বিপূল পরিমান বৈদেশিক মূদ্রা আয় করা সম্ভব। নাহলে পর্যটন শিল্পকে সেই তিমিরেই থেকে যেতে হবে।আজকের ভারাডেরোকে মনে হয় ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকার আধুনিক শহর।
কিউবাতে আমাদের প্রথম দিন কাটল ভারাডেরোতেই। টেলিফোন করতে ব্যার্থ হয়ে চেপে বসলাম ট্যুরিস্ট বাসে। প্রচন্ড গরমে বেশ অস্বস্তি লাগলেও খোলা ছাদের দোতলা ট্যুরিস্ট বাস চলতে শুরু করলে মন চাঙ্গা হয়ে উঠল।রাস্তায় গাড়ীঘোড়া কম।ট্যাক্সি,ট্যুরিস্ট বাসের পাশাপাশি আছে বিশেষ ধরনের অটো রিক্সা।দুই সীটের এই যানবাহনগুলো বেশ মজার।ঘোড়ার গাড়ীও আছে অনেক। কানাডার নায়াগ্রাতে ঘোড়ার গাড়ীর ভাড়া দিতে হয় আধ ঘন্টার জন্য তিরিশ ডলার, কিন্তু ওখানে তা ট্যাক্সির চেয়ে অনেক সস্তা;তিন/চার কিলোমিটারের ভাড়া মাত্র এক ডলার। আধুনিক ট্যাক্সিগুলো কোরিয়া ফ্রান্স জার্মানী চীন প্রভৃতি দেশের। সে তুলনায় জাপানের গাড়ী অনেক কম।চীনের তৈরী সেডান গাড়ীও প্রথম দেখলাম কিউবাতে।পূরোনো দিনের টাক্সির মধ্যে আছে কিছু রাশিয়ার তৈরী LADA গাড়ী । ট্যাক্সি চালকদের কাছে শুনেছি এখানে গাড়ীর দাম আকাশছোয়া। একটা হিউন্দাই বা পুজো ট্যাক্সির দাম ৪০,০০০ ডলারের কাছাকাছি আর রশিয়ান গাড়ির দাম ১২-১৪,০০০ ডলার। সরকারী ট্যক্সিগুলোর চালক আগে সবাই ছিলেন সরকারী কর্মচারী এখন তারা সরকারের কাছ থেকে গাড়ী ভাড়া নেন। প্রতিদিনের জন্য সরকারকে দিতে হয় দৈণিক ৩৫ ডলার।ট্যুরিজিমের কারনে এখানে ট্যক্সি চালকেরা স্বচ্ছল। পেট্রোল এবং অনান্য খরচ বাদে তারা গড়ে প্রতিদিন ৩০/৩৫ ডলার আয় করেন। পেট্রোলের দাম আমেরিকা কানাডা থেকে বেশী, লিটার প্রতি দেড় ডলার। কিউবার নিজস্ব কোনো পেট্রোল নেই।শুনেছি কানাডার শেরিট কোম্পানী কিউবার উত্তরে সাগরে তেলের মজুদ খুজে পেয়েছে। এরা তেল পান ভেনিজুয়েলার কাছ থেকে। এখন কিউবা ভেনিজুয়েলার কাছ থেকে বেশ বড় পরিমান সাহায্য পেয়ে থাকে যা সোভিয়েত সাহায্যের সমতুল্য।কিউবার একমাত্র তেল শোধনাগার স্থাপন করা শুরু হয়েছিল আশির দশকে রাশিয়ান সহযোগিতায়।সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর সে শোধনাগার নির্মান শেষ হয় নি।ভেনিজুয়েলার সহযোগিতায় এ শোধনাগার নির্মান শেষ হয় ২০০৮ সালে। সবাইকে পেট্রোল কিনতে হয় কনভার্টিবল পেসো দিয়ে। যে সমস্ত কর্মচারী কিউবান পেসোতে বেতন পান তা দিয়ে ব্যাক্তিগর গাড়ীর তেলের খরচ যোগানো প্রশান্তীত।ট্যুরিস্ট বাসে ঘোরার সময় কিউবার দক্ষিনাঞ্চলের শহর সান্টিয়াগো থেকে আসা এক ডাক্তার দম্পতির সাথে আলাপ হয়েছিল। ডাক্তাররা এখানে উচ্চ বেতনের কর্মচারী।কিউবান পেসোতে মাসিক ১৭০০ পেসো হলেও সি,ইউসি বা ডলারে তা মাত্র ৭০ ডলার। সম্ভবত এই কারনেই কিউবান ডাক্তার লোপেজ ত্রিনিদাদে কাজ করতেন মাসিক ১৫০০ ডলারে যা আমার কাছে মনে হত খুব কম।(চলবে)
মাছ শিকার।
ভারাডেরো দ্বীপের সবুজ গাছপালা।
ডাক্তার দম্পতির সাথে
স্প্যানিশ উপনিবেশিক আমলে নির্মিত জলাধার
বিপ্লব পূর্বের আমেরিকান গাড়ী
আটলান্টিক মহাসাগর।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৪
বীরেনদ্র বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪০
শামছুল ইসলাম বলেছেন: সুন্দর ছবি ও বর্ণনা ভাল লেগেছে।
বিজয়ের শুভেচ্ছা।
ভাল থাকুন। সবসময়।