![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিউবার তৃতীয় দিনে কানাডায় ফোন করে কথা বলতে সক্ষম হলাম। কানাডা থেকে মাত্র তিন সেন্টে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে ফোনে কথা বলা সম্ভব হলেও এখানে লাগে প্রতি মিনিটে আড়াই কুক বা প্রায় তিন ডলার।সকালে নাস্তা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ভারাডেরো শহরের ডাউনটাউনের দোকানে কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করার পর প্রচন্ড গরমে ঢুকে পড়লাম হোসোনে পার্ক(Josone Park) এ। চমৎকার সাজানো গোছানো পার্কের গাছতলার সবুজ ঘাসে জিড়িয়ে নিলাম কিছুক্ষন।ফেরার পথে পার্কের প্রবেশ মুখে বসানো কিউবার জাতীয় বীর হোসে মার্টি’(Jose Marti)র আবক্ষ মূর্তি’র ছবি তুলে চড়ে বসলাম ট্যুরিস্ট বাসে।এ দিনে ইচ্ছে ছিল ডলফিন শো দেখার। কিন্তু আমরা যখন পৌছলাম শো তখন শুরু হয়ে গেছে আর পরের শো শুরু হবে সাড়ে তিনটেয়।দু তিনদিন চেস্টা করেও শেষ অবধি ডলফিন শো দেখা হয় নি। সে জন্য অবশ্য আক্ষেপও খুব নেই কারন চার পাঁচ বছর আগে মায়ামিতে যথেস্ট ভালো ডলফিনের শো দেখেছিলাম। মায়ামির সী একুয়ারিয়াম এ ডলফিন গুলোর সার্কাস বিশেষভাবে মনে আছে কারন ডলফিনগুলো একই সাথে লাফিয়ে উঠে আছাড় খেয়ে পড়েছিল একেবারে দর্শক সারির কাছে আর নোনা পানি ভিজিয়ে দিয়েছিল জামা কাপড়,ক্যামেরা ইত্যাদি। ভারাডেরো ডাউনটাউনের পাথরের স্তম্ভের কাছের হোটেলের নাম হোটেল কোরাল যা বাংলা করলে দাঁড়ায় প্রবাল হোটেল।মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষের হাইজিন ট্যুরের সময় দু তিন রাত কাটিয়েছিলাম কক্সবাজারের হোটেল প্রবাল এ। এদের প্রবাল হোটেল কক্স বাজারের থেকে অনেক আধুনিক। এ দিনও কাটল ভারাডেরোতে। অনান্য সময় ভারাডেরো দেখে বেড়ালেও খাবার জন্য ফিরে আসতে হত হোটেলে কারন বাইরের খেতে গেলেই পকেট থেকে খরচ করতে হত বিশ পচিঁশ ডলার। পর্যটন শহর হওয়ার কারনে ভারাডেরোতে বিভিন্ন দেশের অনেক রেস্তোরাঁ। রেস্তোঁরার সামনের বোর্ডে সেদিনের স্পেশাল মেনু ,কোন খাবারের কত দাম ইত্যাদি লেখা থাকে। পর্যটক দেখলেই রেস্তোরার বয় এগিয়ে আসে মেনু বই হাতে নিয়ে। একদিন বিকেলে কোনো এক রেস্তোঁরার বেয়ারা তাদের গলদা চিংড়ির স্পেশাল মেনু খেয়ে দেখার জন্য অনুরোধ জানালো। চিংড়ির দেশ কানাডার মানুষ আমি। গত বছর পূর্ব কানাডার নিউ ব্রান্সউইক এ দেখেছিলাম দুই তিন কিলো ওজনের সামুদ্রিক চিঙ্গড়ি বা লবস্টার। ওখানেই জেনেছিলাম যে কয়েক বছর আগে ৪৩ পাউন্ড ওজনের পৃথিবীর বৃহত্তম চিংড়ি ধরা পড়েছিল নিউ ব্রান্সউইকে। চিংড়ি মাছের প্রতি বিশেষ দুর্বলতার কারনে ঢুকে পড়লাম রেঁস্তোরায়।কিউবার চিঙ্গড়ির খোসা কানাডার লবস্টার এর মত পুরু এবং শক্ত নয় এবং রান্নায় যথারীতি ঝাল নেই।টেবিলে থাকা ব্লাক পিপার বা গোলমরিচের গুড়া মিশিয়ে যথা সম্ভব ঝাল করার চেস্টা করলাম। টক মিস্টি কাজু বাদাম মিলিয়ে লবস্টার ছিল বেশ সুস্বাদু, সম্ভবত সেটা ছিল ইটালিয়ান রেস্টুরেন্ট।
তৃতীয় দিন বিকেলে হোটেলের সুইমিং পুলে ছিল Aquatic Dance।ছেলে মেয়েরা এক ঘন্টার ও বেশী সময় ধরে নানা কসরত দেখালো পানির মধ্যে। সেদিন বিকেল এবং সন্ধ্যাও কাটল হোটেলে। হোটলেই উপভোগ করার মত অনেক কিছু ছিল। ইচ্ছে হলে পুল পারের চেয়ারে বসে বীয়ার খান, পুলে অথবা সাগরে সাতার কাটুন, ইচ্ছে হলে যা খুশি তাই করুন। আমাদের টোরোন্টোরই এক সহযাত্রী উঠেছিলেন আমাদের হোটেলে। চীনা বংশোদ্ভুত এই ভদ্রলোক হোটেল ছেড়ে কোথাও যেতেন না। তার যুক্তি ছিল তিনি কিছুদিন কিউবায় আসেন নিজের মত করে সময় কাটাতে। মোট দশ বারোবার কিউবায় এসেছেন। পেশায় ট্রাক চালক এই ভদ্রলোক সুবিশাল ট্রাক নিয়ে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দেন কানাডার এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত। অনেক দিন রাত কাটে পথে পথে। সুতরাং এখানে নিশ্চিত বিশ্রাম নিতে চান তিনি। দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে ভদ্রলোককে দেখলাম কপালে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায়। জিজ্ঞেস করে জানলাম বাথরুমে পড়ে গিয়ে তার এই দুর্গতি। আমার ধারনা মাত্রাতিরিক্ত সেবনের কারনেই তার এই দুর্ভোগ, কারন ভদ্রলোককে প্রায় সবসময়েই দেখেছি পানীয়ের গ্লাস হাতে। সেদিন রাতে একটু সকাল সকাল খাবার খেয়ে রুমে চলে এলাম, কারন পরদিন আমাদের ভ্রমনসুচীতে ছিল কিউবার ত্রিনিদাদ, সান্তা ক্লারা এবং সিয়েনফুগো- এই তিন শহর। সকাল আটটায় রওয়ানা দিয়ে হোটেলে ফিরতে হবে রাত দশটায়। উপনিবেশিক যুগে অভিযাত্রীরা নতুন পৌছানো জায়গার নাম রেখেছে তাদের নিজ শহরের নাম অনুযায়ী।স্প্যানিশরা বিভিন্ন শহরের নাম রেখেছে স্পেনের শহর অনুযায়ী। ত্রিনিদাদে দেখেছি স্পেনের অনুকরনে ছোট এক শহরের নাম রাখা হয়েছে ভ্যালেন্সিয়া, আবার কিউবার এক শহরের নাম হল ত্রিনিদাদ। চিলির রাজধানীর নাম সান্তিয়াগো আবার কিউবার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরেরও একই নাম। ইঙ্গরেজরাও তাদের উপনিবেশের শহর গুলোর নাম রেখেছে ইঙ্গল্যান্ডের শহরগুলোর নাম অনুসারে। কানাডা তে খুজে পাওয়া যায় লন্ডন এবং সিডনী শহর। অনেক নতুন যায়গাকে নামকরন করেছে নিজ শহরের আগে নিউ শব্দ লাগিয়ে দিয়ে, যেমন নিউ ব্রান্সউইক বা নিউইয়র্ক শহর।(চলবে)
©somewhere in net ltd.