নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladesh my home

বীরেনদ্র

Nothing much to say about

বীরেনদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমাজতন্ত্রের শেষ দুর্গে (দ্বাদশ পর্ব)

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৫২

স্মৃতি সৌধ থেকে বেরিয়ে চললাম সান্তা ক্লারা শহর কেন্দ্রের দিকে। অনেক দিনের পুরোনো শহর। শহর কেন্দ্রের বেশ বড় চত্তর বা পার্কের চারপাশ ঘিরে উপনিবেশ যুগে নির্মিত বিল্ডিং গুলো আজও অপূর্ব স্থাপত্যের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে। সুন্দর এ পার্কে রয়েছে অনেক মূর্তি, ফোয়ারা, বসার যায়গা এবং খেলা করার জন্য ছোট মাঠ। ডাউনটাউনের পার্কে অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক ভদ্রলোকেরা দাবা খেলছিলেন। খোশগল্পরত ভদ্রলোকদের কাছে তাদের শহর সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমেই উঠে এল চে' গুয়েভারা প্রসংগ। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরাজীতে একজন বৃদ্ধ জানালেন তার কাকা ছিলেন চে’র গেরিলা দলের সদস্য।১৯৫৮ সালের ডিসেম্বরের সান্তা ক্লারার যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সবাই দেবতার মত ভক্তি করে চে’কে এবং স্কুলের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা এসেম্বলীতে গান গেয়ে সবাই বড় হয়ে চে’র মত বিপ্লবী হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে থাকে এ শহরে। খোলা চত্বর বা পার্ককে কেন্দ্র করে চারপাশে শহর গড়ে তোলার রীতি ছিল স্প্যানিশদের। শহর কেন্দ্র খোলামেলা হলেও চারপাশের রাস্তাগুলো অনেক সরু এবং বিল্ডিংগুলো একটার গায়ে আরেকটা দাঁড়িয়ে, অনেক ঘিঞ্জি। কিছুক্ষন শহর কেন্দ্রে ঘোরাফেরা করার ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হলো না কারন গাড়ী পার্ক করার মত যায়গা ছিল না আশেপাশে।শহর কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে চলে এলাম শহরের অপর প্রান্তে রেল লাইনের ধারে। এ রেল লাইন হাভানা শহর থেকে চলে গিয়েছে দক্ষিনের বড় শহর সান্টিয়াগো পর্যন্ত। এটিই কিউবার একমাত্র দীর্ঘ রেললাইন। বিপ্লব চলাকালীন সময়ে ট্রেনে করে সান্টিয়াগোতে সৈন্য এবং গোলা বারুদ পাঠাচ্ছিলো বাতিস্তা সরকার। এখানেই সে ট্রেনকে লাইনচ্যুত করে চে'র গেরিলা বাহিনী এবং আত্মসমর্পন করে বিপুল সংখ্যক সৈন্য। বিপুল পরিমান গোলা বারুদ চে'র গেরিলাদের হস্তগত হয়েছিল গেরিলাবাহিনীর যা কাজে লেগেছিল শহরের চুড়ান্ত যুদ্ধে। সেদিনের লাইনচ্যুত ট্রেনের বগি এবং ট্রেন লাইনচ্যুত করতে ব্যাবহৃত বুলডোজার রেল লাইনের পাশে ছোট উন্মুক্ত যাদুঘরে রাখা আছে। লম্বা উচু শ্বেত পাথরের স্তম্ভে সে দিনের সে ঘটনার বর্ননা এবং অংশ গ্রহনকারীদের নাম লিপিবদ্ধ করা আছে। এখানে ছবি তুলে বেরিয়ে এলাম শহর থেকে।
সান্তা ক্লারা শহর ছেড়ে ট্যাক্সি ছুটল ত্রিনিদাদের দিকে। কলাম্বাস তার আমেরিকা অভিযানে কিউবার পূর্ব উপকুলে পা রাখেন ১৪৯২ সালে।তখন থেকে কিউবাতে স্পেনের শাসন শুরু। স্প্যানিশরা ক্যারিবিয়ান সাগর তীরে ১৫১৪ সালে নতুন শহরের গোড়া পত্তন করে Trinity শব্দের অনুকরনে নাম রাখে ত্রিনিদাদ।খৃস্টান ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী Trinity হল একই ঈশ্বরের তিন রুপ।ক্যারীবীয় অঞ্চলের প্রাচীনতম শহর ত্রিনিদাদের অবস্থান কিউবা দ্বীপের Sancti Spíritus প্রদেশে।স্প্যানিশ শাসনামলে ত্রিনিদাদ শহরকে ঘিরে গড়ে ওঠে চিনি শিল্প যা আজও কিউবার অন্যতম রফতানী পন্য চিনির যোগান দিয়ে থাকে। UNESCO ১৯৮৮ সালে এ শহর এবং পাশের চিনিশিল্প এলাকা গুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বা World heritage site হিসেবে ঘোষনা করে।
ত্রিনিদাদ শহরে ঢোকার আগে ছোখে পড়ল সিগার তৈরীর ছোট কুটির শিল্প। ফ্যাক্টরীর সামনের ছোট দোকানে বিভিন্ন আকারের সিগারের বাক্স। দোকানের পেছনের ঘরে কর্মরত কারিগরদের কাছে শুনলাম তামাক গাছের একটা মাত্র পাতা দিয়ে তারা একটা সিগার তৈরী করে থাকেন।
ত্রিনিদাদ শহর কেব্দ্রে যখন পৌছলাম তখনও কাঠফাটা রোদ্দুর।সরু সরু রাস্তা ঘাট এবং বাড়ীঘরদোর গুলো সব পুরোনো। শহর কেন্দ্রের রাস্তাগুলো পাথর বা Cobble stone এর। সান্তা ক্লারার মত এ শহরের একদম মাঝখানে অনেক খানি যায়গা নিয়ে পার্ক। পার্ক থেকে অল্প দূরে যাদুঘর, অস্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত গির্জা ইত্যাদি।স্প্যানিশরা এ দেশ জয় করার পর স্থানীয় অধিবাসীদের হত্যা করে, আবার অনেকে প্রান হারায় ইউরোপিয়ানদের বয়ে নিয়ে আসা রোগ শোকে।শিল্প কলকারখানা এবং অনান্য কাজ করার জন্য তখন প্রয়োজন পড়ে ক্রীতদাসদের। আফ্রিকা থেকে কিনে বা জোর করে নিয়ে আসা হয় কালো মানুষদের।তারা তাদের সাথে বয়ে নিয়ে এসেছিলো উপজাতীয় ধর্ম বিশ্বাস। এমনি এক প্রাচীন আফ্রিকান উপজাতীয় দেবতার মন্দির চোখে পড়ল সামান্য দূরে। হেটে গিয়ে যে দেবীর দেখা পেলাম তার সাথে হিন্দু ধর্মের মা কালীর সাদৃশ্য থাকলেও মূর্তির অবস্থান ভিন্ন। ঘরের এক কোনে কালো ছোট বাচ্চা মেয়ের মত সে মুর্তি উচু বেদীর উপর বসানো, এবং কাপড় দিয়ে ঢাকা। পুরোহিত মন্দিরেই ছিলেন। দেবীর নাম ,পুজা পদ্ধতি,পূন্যলাভ ইত্যাদি জানার ইচ্ছে নিয়ে দু একটা প্রশ্ন করলেও ভাষার পার্থক্যের কারনে বিন্দু বিসর্গও উদ্ধার করতে পারলাম না।অতঃপর ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এলাম।মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য পাশের রেস্তোরাঁয় ঢোকার মুখে চোখে পড়ল কয়েকজন মধ্যবয়সী মানুষ "Dominos" খেলায় ব্যাস্ত। ক্যারম বোর্ডের উপর বড় আকারের পাশার গুটি দিয়ে খেলা হয় ডোমিনোস যা নাকি শুধুমাত্র কিউবায় দেখা যায়।হোটেলের বিল চুকিয়ে ফিরে এলাম ট্যাক্সিতে। ট্যাক্সি ছুটল সিয়েনফুগো(Cienfuegos) শহরের দিকে।
কখনো উচুনীচু পাহাড়ি পথ আবার কখনো বা সমতলের মধ্যে দিয়ে আধঘন্টা মত চলার পর পৌছলাম ক্যারিবিয়ান সাগর তীরে। প্রায় আধ ঘন্টা মত গাড়ী চলল সাগর তীর ঘেঁষে। ছোট ছোট গ্রাম এবং ঘরবাড়ী পেছনে রেখে এগিয়ে গেলাম সিয়েনফুগোর দিকে।গ্রাম গুলোতে অনেক বাড়ীঘরদোর হতশ্রী, স্পস্ট বোঝা যায় তাদের দারিদ্র্য। পথে পড়ল বেশ কিছু ছোট নদী যা গিয়ে মিশেছে ক্যারিবীয়ান সাগরে। সিয়েনফুগো শহরে ঢোকার মুখে চোখে পড়ল স্প্যানিশ আমলে নির্মিত সিমেট্রি বা কবরস্থান।(চলবে)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৭

কল্লোল পথিক বলেছেন: চমৎকার ছবি ও বর্ণনা!

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৩

কেউ নেই বলে নয় বলেছেন: দারুন লাগছে। ++

৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৯

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: ভালো লাগলো পোস্ট। অনেক শুভেচ্ছা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.