নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Bangladesh my home

বীরেনদ্র

Nothing much to say about

বীরেনদ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

সমাজতন্ত্রের শেষ দুর্গে (পঞ্চদশ পর্ব)

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:২৮


হাভানা- কিউবার রাজধানী এবং বন্দর নগরী হাভানা। স্প্যানিশরা এ শহরের গোড়া পত্তন করে ১৫১৯ সালে। ভৌগলিক অবস্থানের কারনে নিউ ওয়ার্লড বা নতুন আবিস্কৃত আমেরিকা মহাদেশ থেকে ইউরোপের পথে হাভানা গড়ে ওঠে গুরুত্বপূর্ন বন্দর এবং বানিজ্যনগরী হিসেবে।১৫৫৫ সালে ফরাসী জলদস্যুরা হাভানা দখল করে লুটপাঠ করে পুড়িয়ে দেয়।বহিঃশত্রুর হাত থেকে নগরীকে রক্ষা করতে তখন হাভানা উপসাগরের পাহাড়ের উপর দুর্গ গড়ে তোলে স্পেন। ১৫৯২ সালে স্পেনের রাজা ফিলিপস-২ হাভানাকে নগরীর মর্য্যাদা দেন। সেই সময়ে গড়ে ওঠা এখনকার পুরোনো হাভানা বা Havana Vieja পরিচিত ছিল নতুন হাভানা নামে। আজ যা নতুন কাল তা পুরোনো হবে এটাই তো প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম।ক্রমশঃ হাভানা বিস্তার লাভ করে হাভানা উপসাগরের পশ্চিম এবং দক্ষিন দিকে।সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি মহামারীতে হাভানা নগরীর এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা প্রান হারায়।১৭৫৫ সালে বৃটিশরা হাভানা দখল করে নেয়, কিন্তু এক চুক্তির মাধ্যমে ফ্লোরিডার বিনিময়ে স্পেনকে হাভানা ফিরিয়ে দেয় বৃটেন। নগরীর সুরক্ষায় মন দেয় স্পেন। নতুন দূর্গ এবং পূরোনো দুর্গকে সংস্কার করে গড়ে তোলে।আজকের হাভানা প্রধানতঃ তিন এলাকায় বিভক্ত, পুরোনো হাভানা, কেন্দ্রীয় হাভানা বা ভেডাডো (Vedado)এবং উপশহর। ভেডাডো এলাকা প্রধানতঃ গড়ে ওঠে বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে।এ শহরের উত্তর সীমানার হাভানা উপসাগর পাড়ে রয়েছে ১৭ কিলোমিটার লম্বা, ১০ থেকে পনেরো ফুট উচু পাথুরে বাধ বা Malecon। হাভানার লোক সংখ্যা ২১ লক্ষ এবং আয়তন ৭৪৮ বর্গ কিলোমিটার। পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় এ নগরীতে বছরে ১২ লক্ষাধিক পর্যটক বেড়াতে আসেন। ১৯৮৮ সালে পুরোনো হাভানাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষনা করে ইউনেস্কো(UNESCO)।
আমাদের বাস গিয়ে থামল পুরোনো হাভানায়।বাস থেকে নামার আগে এখান থেকে বাস ছাড়ার সময় মনে করিয়ে দিলেন মিস লিসবেথ।হাভানা স্কয়ারে ঘুরে বেড়ানো পূরোনো দিনের বৈচিত্রময় পোষাক পরা সুন্দরীদের সম্পর্কে সতর্ক করে দিলেন, কারন এরা পর্যটকদের জড়িয়ে ধরে ছবি তোলার পর দুই ডলার দাবী করে থাকে।
গোড়াপত্তনের সময় পুরনো হাভানা ছিল শহরের প্রানকেন্দ্র বা ডাউনটাউন। চারকোনা খোলা বড় চত্তর বা হাভানা স্কোয়ার এর চারপাশ ঘিরে গড়ে উঠেছিল, গির্জা, স্কুল, অতিথিশালা ইত্যাদি সেই স্প্যানিশ আমলে।দুই বর্গকিলোমিটার আয়তনের পুরোনো হাভানা স্কোয়ারে আজও টিকে আছে ১৫৯১ সালে নির্মিত হাভানা ক্যাথেড্রাল।হাভানা স্কোয়ার থেকে উপসাগরের দিকে তাকালে চোখে পড়ে অপর পাড়ের পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকা সূউচ্চ যীশুর মূর্তি, মনে করিয়ে দেয় রিও-ডি জেনিরোকে। কিউবার সমস্ত শহরেই স্প্যানিশ আমলে নির্মিত অসংখ্য গির্জা। কমিউনিস্ট দেশে লোকজন ধর্মকর্ম কতটা পালন করে? ট্যুরিস্ট গাইড মিস লিসবেথ জানালেন দু'একজন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা ছাড়া ধর্মকর্মে কারও আগ্রহ নেই।আমাদের হোটেলের পাশের গির্জাতে রবিবারেও কাউকে চোখে পড়ে নি।আমার ধারনা উন্নত বিশ্বে প্রচলিত ধর্ম তার আবেদন হারাচ্ছে। বড়দিনের উৎসব দেখতে হিমাঙ্কের নীচের তাপমাত্রা এবং বরফ উপেক্ষা করে গিয়ে হাজির হয়েছিলাম ইউনাইটেড মেট্রোপলিটান চার্চ অফ টোরোন্টোতে।জনা পঞ্চাশেক লোককে হাজির দেখেছিলাম বড়দিনের প্রার্থনা সভায়,৮০ শতাংশ চেয়ার ছিলো শুন্য।
মিস লিসবেথের পিছু হেটে পুরনো হাভানা দেখতে সময় মিলল দু' ঘন্টা।অনেক দেশে ট্যুরিস্ট গাইডের পেছনে ঘুরে দেখার সময় দেখেছি যে গাইড একটা পতাকা উচু করে তুলে ধরে এগিয়ে যান আর ট্যুরিস্টরা তার পিছু নেন। এ রকম ব্যাবস্থা থাকলে আমাদের পক্ষে সুবিধে হত।কিন্তু মিস লিসবেথ উত্তর দিলেন কিউবাতে নাকি ট্যুরিস্ট গাইডদের পতাকা নিয়ে এগিয়ে চলার অনুমতি নেই। কেন নেই? তা ভগবানই জানেন। হাভানা ক্যাথেড্রালের পাশেই চোখে পড়ে উনবিংশ শতাব্দীতে হাভানায় বসবাসরত পুরোনো হাভানার স্থপতি এবং অধ্যাপক Jaquin E Weisis এর ব্রোঞ্জের মুর্তি। বাচ্চাদের কাছে গল্প বলিয়ে হিসেবে অসাধারন জনপ্রিয় এ ব্যাক্তি হাভা্না স্কোয়ারে বাচ্চাদের গল্প শোনাতেন। জনশ্রুতি আছে যে এ মুর্তি স্পর্শ করে মনে মনে কোন ইচ্ছা প্রকাশ করলে তার মনোস্কামনা পূর্ন হয়। হাভানা স্কোয়ার তখন মানুষের ভীড়, দলে দলে বিভক্ত পর্য্যটকেরা গাইডকে অনুসরন করে পুরোনো হাভানা ঘুরে ফিরে দেখছেন।
হাভানা স্কোয়ার থেকে সামান্য উত্তরে পড়ল ছোট এক পার্ক। এ পার্কে দক্ষিন আমেরিকার অমর বিপ্লবী সাইমন বলিভারের পাথরের মূর্তি সবার দৃস্টি কাড়ে। পার্কের কোনায় গেরুয়া পোশাক পরা এক ভদ্রলোক সামান্য একটা লাঠি বাম হাতে ধরে বসে আছেন প্রায় শুন্যের উপর ভেসে । কিভাবে এ অবস্থায় ভেসে থাকে তা অবাক করার ব্যাপার।এরপর মিউজিয়ামের পালা। এখানে অনেক গুলো মিউজিয়াম। সিরামিক মিউজিয়াম, ফাইন আর্টস মিউজিয়াম, ফায়ার ব্রিগেডের মিউজিয়াম, অস্ত্র শস্ত্রের মিউজিয়াম ইত্যাদি। কিউবার বিপ্লবে ব্যবহৃত হালকা অস্ত্রশস্ত্রের মিউজিয়ামে অনেক ধরনের পিস্তল, রিভলভার, রাইফেল ছুরি চাকু ইত্যাদি রাখা আছে। ফায়ার ব্রিগেড মিউজিয়ামে অস্টাদশ শতাব্দীতে ব্যবহৃত ঘোড়ায় টানা অগ্নি নির্বাপন যানের দেখা মেলে। হাভানা সিটি মিউজিয়ামটি ছিল স্প্যানিশ উপনিবেশিক সরকার এবং বিংশ শতাব্দীতে কিউবান সরকারের অফিস। এ মিউজিয়ামে ভিতরের চারকোনা চত্বরে ছোট বাগানের মধ্যে স্থাপিত আছে কলম্বাসের মূর্তি। গাইডের কাছে শুনলাম কলম্বাসের সমাধি নাকি এই শহরেই, কিন্তু তা দেখার সৌভাগ্য হয় নি।এ মিউজিয়ামে ষোড়শ শতাব্দী থেকে উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত স্প্যানিশ আমলের শাসকদের ব্যবহৃত সামগ্রী, রাজকীয় পোষাক, ঘোড়ার গাড়ী, সিংহাসন ইত্যাদী প্রদর্শনীর জন্য রাখা আছে। এখানে ছবি তোলা নিষেধ। এর মধ্যেও দেখলাম কয়েকজনকে ছবি তুলতে। ব্যাপার কি? একজন হাঙ্গেরিয়ান পর্যটক জানালেন "উপযুক্ত পারিশ্রমিক" দিলে জাদুঘরের কর্মচারীরা ছবি তুলতে সহায়তা করেন।এর পর দু তিন কামরায় ছবি তুলেছিলাম পারিশ্রমিকের বিনিময়ে।
মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে এগিয়ে চললাম Hotel Ambos Mundos এর দিকে।লাল রঙ এর ছয় তলা এ হোটেলের ৫০৬ নং রুমে দীর্ঘ বিশ বছর কাটিয়েছেন প্রখ্যাত মার্কিন লেখক Ernest Hemingway। এখানেই তিনি রচনা করেন তার নোবেলজয়ী উপন্যাস "The old Man and the sea"। মনে পড়ল এ বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র সান্তিয়াগোর উক্তি "A man is not made for defeat...a man can be destroyed but not defeated." ১৯৪০ সাল থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত হাভানা নিবাসী এ লেখক কিউবান নেতা ফিদেল কাস্ট্রোর ভাল বন্ধু ছিলেন।১৯৬০ সালে দেশে ফিরে যান হেমিঙ্গওয়ে।তিনি যে ১৯৬১ সালে আত্মহত্যা করেন- এ তথ্য প্রথম জানলাম মিস লিসবেথের কাছ থেকে।(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.