![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনান্য দিনের মতই এথেন্সের প্রথম দিন ঘুম ভাঙ্গলো ভোর পাঁচটায়। বাইরে সবেমাত্র আলো ফুটছে এবং লোকজনের ছোটাছুটি শুরু হচ্ছে। কফি খেয়ে, ঠাকুর ঘর থেকে মায়ের আরাধনা শেষ করে বারান্দায় গিয়ে চেয়ারে বসলাম। আমার আরাধনা সম্পর্কে অনেকের মত পার্থক্য থাকতে পারে, তবে সুধেন্দুদা'র মত আমিও বিশ্বাস করি জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে এ আরাধনার মধ্যেই স্বর্গ। একবার হেপাটাইটিসে আক্রান্ত সুধেন্দুদা মায়ের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হলেন অর্থাৎ পায়খানা বন্ধ হলো, দাদার পেট ফুলে উঠলো ঢোল হয়ে এবং জরুরী অপারেশানের প্রয়োজন দেখা দিলো। আংশিক কর্মক্ষমতা হারানো লিভার এবং রক্তে বিলিরুবিনের উচ্চমাত্রার কারনে "অজ্ঞানবাবু" রা বেকে বসলেন- এই ডাক্তার রোগীকে অজ্ঞান করা ঝুকিপূর্ন। তিন চার দিন পর দাদার পেট যখন ঢাকের কাছাকাছি, " আল্লাহ ভরসা" বলে এক অজ্ঞানবাবু দাদাকে অজ্ঞান করে দিলেন এবং অপারেশান হলো। সুস্থ্য হয়ে ওঠার অনেক বছর পর আজও দাদা সেই "স্বর্গ"কে কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরন করেন।
আমার হোটেলে বিনামূল্যে নাস্তার ব্যাবস্থা ছিলো কিন্তু রেস্তোরাঁ খুলবে সকাল আটটায়। সকালের নাস্তা সেরে বেরোনোর ইচ্ছে থাকলেও হঠাৎ মনে হল হোটেলে বসে থেকে দুই ঘন্টা সময় নস্ট করার কোনো মানে হয় না, বেরিয়ে পড়াই ভালো। যে ভাবা সেই কাজ অর্থাৎ বেশভূষা পালটে কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এথেন্সের এ এলাকায় প্রচুর বেকারী কাম ফাস্টফুডের দোকান। দোকানের ভেতরে বসার ব্যাবস্থার পাশাপাশি বাইরে ফুটপাথের উপর ও বসার ব্যাবস্থা আছে সবগুলোতে। পাঁচ ইউরো দিয়ে স্যান্ডউইচ এবং গ্রীক কফি নিয়ে বাইরের ফুটপাথের টুলের উপর বসে নাস্তা সেরে নিলাম। এথেন্সে কম খরচে উদরপূর্তির এমন ব্যাবস্থা আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। গ্রীক কফির বিশেষত্ব হল যে কেবলমাত্র অর্ডার দেওয়ার পরই ছোট পিতলের পাত্রে জল গরম করে সেখানেই কফি বানিয়ে দেয় দোকানী; অনেকটা আমাদের দেশের চা'এর দোকানের মত। বেশ ভাল লেগেছিল গ্রীক কফি এবং যতদিন এথেন্সে ছিলাম গ্রীক কফি ছিল আমার জলখাবারের অংশ। হোটেল থেকে চার পাঁচশ গজ দূরে ওমানিয়া স্কোয়ার। টিকেট কেটে সাবওয়ে স্টেশানে ঢুকে প্লাটফর্মে ট্রেনের অপেক্ষা করছি এমন সময় আমাদের উপমহাদেশের চেহারার জনৈক ভদ্রলোক পাশে এসে দাড়ালেন। তিনি একজন বাংলাদেশী। এথেন্স নগরীর কেন্দ্র "Syntagma Square" এ যাচ্ছি কিন্তু কোথাও টিকেট পাঞ্চ করিনি শুনে তিনি বললেন " তাড়াতাড়ি উপরে উঠে মেশিনে টিকেট পাঞ্চ করে আসুন, ধরা পড়লে ৭৫ ইউরো জরিমানা গুনতে হবে। টোরোণ্টো এবং নিউইয়র্কে শুধুমাত্র ঢোকার সময় টিকেট পাঞ্চ করলেই চলে, সিউল এবং সাংহাই এ ঢোকা এবং বেরোনো দুই সময়েই টিকেট পাঞ্চ করতে হয় আর এথেন্সে টিকেট পাঞ্চ না করেও প্লাট ফরমে ঢোকা যায়। তাড়াতাড়ি উপরে উঠে টিকেট কাউন্টার থেকে সামান্য দুরের মেশিন আবিস্কার করলাম যেখানে লেখা আছে "Validate your Ticket here"। টিকেট পাঞ্চ করে মেট্রোরেল ধরে "Syntagma Square" এ গিয়ে ভেসে উঠলাম। এথেন্স শহরের প্রানকেন্দ্র হল "Syntagma Square" যার বাঙ্গলা অর্থ হল সংবিধান স্কোয়ার। ১৮৩৪ সালে গন আন্দোলন এবং সামরিক বাহিনীর চাপে গ্রীসের প্রথম আধুনিক রাজা " অটো" এখানে সংবিধান ঘোষনা করতে বাধ্য হন। সেখান থেকেই ছোট এ স্কোয়ারের নামকরন।
এবার নগর পরিক্রমার পালা। টিকেট কেটে" Hop on and hop off" ট্যুরিস্ট বাসে চেপে বসলাম। নগর পরিক্রমায় আমার ভ্রমনপদ্ধতি হলো সারা শহর একবার ঘুরে এসে তারপর আকর্ষনীয় যায়গাগুলো ভালো করে দেখা। এবার সে পুরোনো ফর্মুলায় ছেদ পড়লো। ন্যাশনাল গার্ডেনকে বা দিকে রেখে মাইলখানেক যাওয়ার পর বা দিকে প্রাচীন গেট দেখে বাস থেকে নেমে পড়লাম। এটি হল Hadrian Arch । রোমান সম্রাট Hadrian ১৩১-৩২ খৃস্টাব্দে এ দ্বিতল গেট নির্মান করেন। গেটকে পাশে রেখে রাস্তা বেয়ে এগিয়ে গেলাম অনেক যায়গা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন স্তম্ভগুলোর দিকে। প্রাচীন গ্রীসের স্থাপনা গুলোর দেখাশোনা এবং রক্ষনাবেক্ষনের কাজ করে থাকে Ministry of Culture। একসাথে এথেন্সের সাতটি অবশ্য দর্শনীয় স্থানের কেটে ফেললাম কারন তাতে পাঁচ ইউরো সাশ্রয় হলো। গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে এগিয়ে গেলাম স্তম্ভগুলোর দিকে। এ স্থান ছিল অলিম্পিয়ান দেবরাজ জিউসের মন্দির। অলিম্পিয়ান দেবরাজের আশ্রম হওয়ার কারনে এ স্থানকে অলিম্পিয়োন(Olympeon) ও বলা হয়ে থাকে।
প্রাচীন গ্রীসে স্থান এবং কাল ভেদে দেবতারা ছিলেন ভিন্ন ভিন্ন। প্রথম দিকের দেবতারা ছিলেন পরবর্তীকালের দেবতাদের থেকে আলাদা আবার একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে প্রধান উপাস্য দেবতারা ছিলেন ভিন্ন ভিন্ন। মজার ব্যাপার হলো রোমানরা গ্রীস দখল করার পর তারাও এই দেবতাদের পূজা করতেন, তবে রোমান নাম ছিল গ্রীক নাম থেকে ভিন্ন। গ্রীক দেবরাজ জিউস রোমানদের কাছে ছিলেন জুপিটার, গ্রীক প্রেমের দেবতা আফ্রোদিতি ছিলেন রোমান দেবী ভেনাস ইত্যাদি। প্রথম দিকের দেবতারা ছিলেন তিন শ্রেনীর ১) আদিম দেবতা ২) টাইটান দেবতা এবং ৩) অলিম্পিয়ান দেবতা।
গ্রীকদের প্রচলিত ধর্ম বিশ্বাস মতে তাদের প্রথম পূর্বপূরুষ ডিউক্যালিয়ন ( Deucalion) খৃস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে এখানে মন্দির নির্মান করে তা দেবরাজ জিউসকে উৎসর্গ করেন। বড় আকারে মন্দিরের নির্মান কাজ শুরু হয় খৃঃ পূঃ ৫১৫ খৃস্টাব্দে। তবে বর্তমানের দাড়িয়ে থাকা স্তম্ভগুলো যে বৃহৎ মন্দিরের অংশ ছিল তার নির্মানকাজ শুরু হয় খৃস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে। রোমান্ সম্রাট অগাস্টাসের সময় নির্মানকাজ কিছুটা এগোলেও মন্দির নির্মান শেষ হয় সম্রাট হ্যাড্রিয়ানের শাসনামলে খৃস্টপূর্ব ১৩১/১৩২ সালে। প্রাচীনকালের অন্যতম বৃহৎ এ মন্দিরটি ছিল প্রায় পাঁচশ ফুট লম্বা এবং একশ ত্রিশ ফুট প্রশস্থ। মার্বেল পাথরের তৈরী এ মন্দিরের ছাদ বসানো ছিলো ১০৪টি স্তম্ভের উপর। প্রতিটি স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় পঞ্চাশ ফুট। দেবরাজ জিউস এবং সম্রাট হ্যাড্রিয়ানের উপাসনা করা হত এ মন্দিরে। এ মন্দিরের প্রায় সবকিছুই আজ ধ্বংশপ্রাপ্ত। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত মোট ষোলটি স্তম্ভ দাড়িয়েছিলো এখানে। ১৮৫২ সালে ঝড়ে একটি স্তম্ভ উপড়ে মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর এখন মোট পনেরটি স্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে। অটোম্যান তূর্কীদের শাসনামলে তারা এ মন্দিরের পাশে একটি মসজিদ নির্মান করেন। সে মসজিদও এখন নেই। জিউসের মন্দির থেকে প্রাচীন এথেন্সের প্রানকেন্দ্র Acropolis স্পস্ট চোখে পড়ে। প্রাচীনকালে এ মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যেত Iliasos নদী। জিউসের মন্দির থেকে বেরিয়ে রাস্তা পার হয়ে উল্টোদিকে গিয়ে হাজির হলাম। নজরে পড়ল ফুটপাথের পাশেই এক নারীর আবক্ষ মূর্তি। মূর্তিটি হলিউডের খ্যাতিমান অভিনেত্রী Melina Mercouri এর। Melina Mercouri কিছুদিন গ্রীসের সংস্কৃতি মন্ত্রী ছিলেন। (চলবে)।
Syntagma Square.
Hadrian Arch
Olympeon , now the remnants of the Temple of the Olympean Zeus.
Olympeon , now the remnants of the the Temple of the Olympean Zeus.
Olympeon , now the remnants of the the Temple of the Olympean Zeus.
Bust of Holywood Actress and Cultural minister of Greece.- Melina Mercuori.
©somewhere in net ltd.