![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডায়োনিসসের থিয়েটার এর পাশ দিয়ে বামদিকে ঘুরে পাকা রাস্তা উঠে গিয়েছে এক্রোপোলিসের চুড়ায়। এ পথ সমান হলেও হলেও অনেক লম্বা। কিছুটা শর্টকাটের কারনে থিয়েটারের পাশের এবড়ো খেবড়ো পাথুরে রাস্তা দিয়ে হেটে উঠে চললাম আক্রোপোলিসের প্রোপাইলিয়ন বা আনুষ্ঠানিক গেট এর দিকে।এ পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক প্রাচীন দেওয়াল, মূর্তি এবং অনান্য স্থাপনার চিহ্ন।পাথরের ফলকে লেখা আছে তাদের বর্ননা এবং সেগুলোর গুরুত্ব। হামিদুরের মত অনেকেই প্রশ্ন করেন "দাদা, ঘুরতে গিয়ে আপনি এত কিছু দেখেন কিভাবে? সমস্ত রহস্য বলা ঠিক হবে না তবুও বলি, প প্রথমতঃ আমি সময় নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখি এবং ভবিষয়তে লেখার ছক কেটে ফেলি। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার কারনে চারদিন এথেন্সে থেকেও এ নগরীর অনেক কিছুই দেখা বাকী থেকে যায় এবং বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও ফুসরত পাইনি। দ্বিতীয়তঃ আমি যত পারি ছবি তুলি ( প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনগুলোর পাশের ফলকে বর্নিত বর্ননা সহ)। তৃতীয়তঃ কোনো কিছু দেখার আগে সে সম্পর্কে যথাসাধ্য অধ্যয়ন করে জ্ঞানার্জন করি। ভ্রমনকালে অধ্যয়নের কারন হল তৃতীয় বর্ষে পড়া Hamilton Bailey এর Clinical methods in Surgery বইটি, যেখানে পড়েছিলাম "Eyes do not see what mind does not know"। সুতরাং আমি সব সময় সতর্ক থাকি যাতে করে Eyes do see what My mind does know।
ডায়ানিসসের থিয়েটার ছেড়ে পাহাড় বেয়ে একটু উপরে উঠলে চোখে পড়ল পথের চারপাশে ছোট ছোট এলোমেলো পাথর খন্ড। এটি হচ্ছে পূব দিক দিয়ে এক্রোপোলিসে ঢোকার প্রবেশদ্বার বা Eastern Paradosএর ধ্বংশাবশেষ। আরো একটু উপরে এক্রোপলিসের চারপাশ ঘিরে প্রতিরক্ষা দেওয়াল যা মাঝে মাঝে ধ্বসে পড়লেও অনেক স্থানে এখনো খাড়া দাঁড়িয়ে। দেওয়াল ঘেষেই চলে গেছে চারদিকের বৃত্তাকার রাস্তা বা Peripatos। প্রতিরক্ষা দেওয়াল এবং পেরিপাটোসের মাঝে ঊঁচু বেদীর উপর স্থাপিত আছে প্রাচীন যুগের বিখ্যাত গ্রীক কবি Aeschylus (খৃস্টপূর্বাব্দ ৫২৫-৪৫৫) এর আবক্ষমূর্তি। এ আবক্ষ মূর্তির ঠিক উলটো দিকে ছিল এস্কুলেপিয়সের (Aeschulepyus) মন্দির। এক্রোপলিসের পূবদিকের ঢালু যায়গার এ মন্দিরের কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই এবং পাথরের ফলকে লেখা না থাকলে কোনোভাবেই বোঝার উপাই নেই যে একদা এখানে এক সময় শোভা পেত প্রাচীন গ্রীসের চিকিৎসা ও নিরাময়ের দেবতা এস্কুলেপিয়সের আশ্রম বা মন্দির।এ স্থান যেন শিল্প প্রদর্শনীতে টানিয়ে রাখা সাদা কাগজ। কোনো এক শিল্প প্রদর্শনীতে সমস্ত রংগীন ছবির পাশে টানিয়ে রাখা বড়সড় আকারের সাদা কাগজ দেখে এক ভদ্রলোক এগিয়ে গিয়ে শিল্পীকে প্রশ্ন করেন " ভাই আপনার ছবির বিষয়বস্তু কিছুই বুঝলাম না, ব্যাপার কি একটু বুঝিয়ে বলবেন?"। - "কেন ? এটিতো গরুর ঘাস খাওয়ার ছবি" - উত্তর দিলেন শিল্পী। ভদ্রলোক তখন জানতে চাইলেন ঘাস এবং গরু কোথায়? শিল্পী উত্তর দিলেন ঘাস তো গরুতে খেয়ে ফেলেছে, আর গরু ঘাস টাস খেয়ে চলে গিয়েছে অন্য কোথাও।
গ্রীক পৌরানিক গল্পগুলো আমার অত্যন্ত প্রিয়। বন্ধু সিরাজের অনুরোধ এবং নিজের ভালোলাগার তাগিদে সে উপাখ্যানগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ি এবং পাঠকদের কাছে তুলে ধরার চেস্টা করি।
এস্কুলেপিয়স (Aeschulepyus)ঃ-
এস্কুলেপিয়স ছিলেন প্রাচীন গ্রীসের রোগ নিরাময় এবং চিকিৎসার দেবতা। হোমার তার ইলিয়াড মহাকাব্যে তাকে একজন মরনশীল অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে উপস্থাপন করেন। স্বীয় গুনাবলির কারনে পরবর্তীকালে তিনি একজন দেবতা হিসেবে পূজিত হতে থাকেন প্রাচীন গ্রীস এবং ভুমধ্যসাগরের আশেপাশের দেশগুলোতে।তার বাবা ছিলেন সূর্য্যদেবতা এপোলো এবং মা ছিলেন ত্রিক্কিয়ানের রাজকন্যা করোনিস (Coronis)।
জন্মঃ- প্রসবকালে মা করোনিস মারা গেলে তাকে দাহ করার আয়োজন করা হয়। চিতায় আগুন ধরানোর ঠিক আগ মুহুর্তে এপোলো করোনিসের পেট কেটে শিশু সন্তানকে বের করে আনেন এবং সে কারনেই তার নাম হয় এসকুলেপিয়স। গ্রীক ভাষায় এসকুলেপিয়স শব্দের অর্থ কেটে বের করে আনা। এপোলো মাতৃহীন শিশুপুত্রকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন সেন্টর(Centaur) কিরন(chiron) কে। সেন্টর হল এক কল্পিত প্রানী যার উপরের দিক ছিল মানুষের এবং নীচের দিকটা ঘোড়ার।এস্কুলেপিয়াস সেন্টর কিরনের কাছে রোগ নিরাময় করার পদ্ধতি এবং চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা পান। এক সময় এস্কুলেপিয়াসের জ্ঞান ও খ্যাতি, এপোলো এবং কিরনকেও ছাড়িয়ে যায়। কথিত আছে যে এসকুলেপিয়াস কোন এক সময়ে এক সাপকে সারিয়ে তোলেন। বিনিময়ে সাপ এসকুলেপিয়াসকে ক্ষত সারিয়ে তোলার গোপন বিদ্যা শিখিয়ে দেয়। প্রাচীন গ্রীসে সাপদের পবিত্র এবং স্বর্গীয় হিসেবে বিবেচনা করা হত। এসকুলেপিয়াসের ছিল পাঁচ কন্যা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এইয়িয়া( Hygieia) এবং প্যানাসিয়া। ইংরাজী "Hygiene" শব্দ এসেছে এইয়িয়া থেকে। প্যানাসিয়া(Panacea) হলেন সর্বরোগের মহৌষধ দানকারী দেবী। এসকুলেপিয়াসের তত্ববধানে প্রাচীন গ্রীসে বহু রোগ নিরাময় কেন্দ্র গড়ে ওঠে যাদেরকে বলা হত এসকুলেপিয়ন (Aeschulepeon)। পৃথিবীর ইতিহাসে এস্কুলেপিয়নই হল প্রাচীনতম হাসপাতাল। যে সমস্ত চিকিৎসক এবং অনান্য সেবক সেবিকারা রোগীর চিকিৎসা এবং পরিচর্য্যা করতেন তাদেরকে বলা হত Therapeutae of Aeschulepius। প্রাচীন গ্রীসে প্রায় তিনশত বিশটি এসকুলেপিয়াসের আশ্রম বা হাসপাতালের অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। এদের মধ্যে সবচে' বড়টি হল পেনিপোলিসের এপিডোরাসে। এসকুলেপিয়াসের প্রতীক হল লাঠির চারপাশে জড়িয়ে থাকা সাপ যা আজও চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাপ যেমনি খোলস ছেড়ে দিয়ে নতুন খোলসে জীবন শুরু করে তেমনি এসকুলেপিয়াসের চিকিৎসায় রোগীরাও নতুন জীবন পেত।
মৃত্যুঃ- এস্কুলেপিয়াসের চিকিৎসায় ভাল হয়ে উঠত যে কোনো রোগী। এমনও শোনা যায় যে তিনি, মৃত ব্যাক্তিকে জীবনদান করার ক্ষমতা অর্জন করেন।তার চিকিৎসার কারনে পৃ্থিবীতে মানুষের সংখ্যা অবিশ্বাস্য রকম বেড়ে যায় এবং পরলোকে আত্মার সঙ্কট দেখা দেয়। পরলোকের দায়িত্বপ্রাপ্ত দেবতা হেডস আত্মার স্বল্পতা নিয়ে ভাই দেবরাজ জিউসের কাছে এস্কুলেপিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। সৃস্টির নিয়ম ভঙ্গের অপরাধ এবং হেডস এর অভিযোগের কারনে দেবরাজ জিউস এসকুলেপিয়াসকে বজ্র নিক্ষেপ করে হত্যা করেন। অচিরেই জিউস নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং তিনি এসকুলেপিয়াসকে আকাশে জ্বলজলে নক্ষত্র বানিয়ে রাখেন। (চলবে)।
২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০১
শামছুল ইসলাম বলেছেন: "দাদা, ঘুরতে গিয়ে আপনি এত কিছু দেখেন কিভাবে?" প্রশ্নের উত্তরে আপনি যা বলেছেন, খুব ভালো লেগেছেঃ
১। প্রথমতঃ আমি সময় নিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখি এবং ভবিষয়তে লেখার ছক কেটে ফেলি।
২। আমি যত পারি ছবি তুলি ( প্রত্নতাত্বিক নিদর্শনগুলোর পাশের ফলকে বর্নিত বর্ননা সহ)।
৩। কোনো কিছু দেখার আগে সে সম্পর্কে যথাসাধ্য অধ্যয়ন করে জ্ঞানার্জন করি। ভ্রমনকালে অধ্যয়নের কারন হল তৃতীয় বর্ষে পড়া Hamilton Bailey এর Clinical methods in Surgery বইটি, যেখানে পড়েছিলাম "Eyes do not see what mind does not know"। সুতরাং আমি সব সময় সতর্ক থাকি যাতে করে Eyes do see what My mind does know।
আরো অনেক কিছু জানা হলোঃ
//এসকুলেপিয়াসের প্রতীক হল লাঠির চারপাশে জড়িয়ে থাকা সাপ যা আজও চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাপ যেমনি খোলস ছেড়ে দিয়ে নতুন খোলসে জীবন শুরু করে তেমনি এসকুলেপিয়াসের চিকিৎসায় রোগীরাও নতুন জীবন পেত।//
ভাল থাকুন। সবসময়।
৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২০
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: আগের পর্বগুলোর লিঙ্ক দিয়ে দিতেন।
প্রথম থেকে পড়া শুরু করছি দাঁড়ান। সেভ রাখলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৯
প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল।