![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পেরিপাটোস বেয়ে উঠে চললাম এক্রোপলিসের চুড়ার দিকে। অল্প কয়েক ফুট উঠার পর এসকুলেপিয়াসের মন্দিরের পশ্চিমে চোখে পড়ল খৃস্টপূর্ব চতুর্থ এবং পঞ্চম শতাব্দীর ব্রোঞ্জ সামগ্রী তৈরী করার ফাক্টরী। এটি ফ্যাক্টরী-ডি হিসেবে পরিচিত, এক্রোপোলিসের বিভিন্ন অংশে এ, বি, সি, ইত্যাদি ফ্যাক্টরী আবিস্কৃত হয়েছে আগেই। ১৮৮৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এখানে খননের ফলে আবিস্কৃত হয়েছে সে সময়ের মূর্তির অংশ, মূর্তি তৈরী করার ছাঁচ এবং অন্যান্য সামগ্রীর ধ্বংশাবশেষ। অনেকের মতে পার্থেননের পাশের দেবী Athena Promachos এর ব্রোঞ্জ মূর্তি তৈরী হয়েছিল এখানে। এক্রোপোলিসে রোমানদের দু'একটা স্থাপনার কথা বাদ দিলে প্রায় সব স্থাপনাই খৃস্টপূর্ব যুগের। এক্রোপলিস সম্পর্কে বন্ধু রিদওয়ানের মন্তব্য হল " ওখানে সবকিছুই খৃস্টপূর্বাব্দ, খৃস্টাব্দ নামের কোন শব্দ এক্রোপলিসের ইতিহাসে নেই"। আরো একটু এগিয়ে গেলে বামদিকে বেশ কিছুটা নীচুতে দেখা গেল বড়সড় এক থিয়েটার যার নাম "Odeon of Herodes Atticus"। Odeon শব্দের অর্থ প্রেক্ষাগৃহ বা অডিটোরিয়াম। দ্বিতীয় খৃস্টাব্দে রোমান সম্রাট হ্যাড্রিয়ানের আমলে এ থিয়েটারটি নির্মান করেন এথেন্সের, লেখক, এবং অভিজাত ব্যাক্তি Herodes Atticus। থিয়েটারের চারপাশ ঘিরে তিনতলা সমান উচু পাথরের দেওয়াল। দেওয়ালে মাঝে মাঝে থাকা জানালা গুলোর কপাট এখন নেই ফলে সে গুলো এখন ফাকা। এ থিয়েটারের ছাদ তৈরী হয়েছিল মূল্যবান লেবানিজ সিডার কাঠ দিয়ে যা আজ উধাও এবং এটি এখন একটি উন্মুক্ত স্টেডিয়ামের মত। নীচের দিকের পাথরের মঞ্চ থেকে পাথরের গ্যালারীর সারি সারি আসনগুলো তিনদিকে উপবৃত্তাকারে উঠে গেছে ক্রমশ বড় হয়ে উপরের দিকে। এ থিয়েটারের ধারন ক্ষমতা পাঁচ হাজার।আজও এখানে আগের মতই এথেন্স ফেস্টিভ্যালে নাচ,গান, নাটক ইত্যাদি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।আরো কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ডানদিকে দুতিন তলা সমান উচু পাথরের সিড়ি বেয়ে ওঠে গিয়ে পৌছলাম প্রোপাইলয়নে। সিড়ির বাম দিকে নয় মিটার উচু চারকোনা পাথরের একটি স্তম্ভ দাঁড়িয়ে। প্যানএথেনিক ক্রীড়ায় জয়ের স্মারক স্তম্ভ এবং সম্রাট Eumenes II, এর সম্মানে এটি নির্মিত হয় ১৭৮ খৃস্টপূর্বাব্দে। তখন এ স্তম্ভের উপর শোভা পেত চার ঘোড়ায় টানা রথ। রোমানরা এথেন্স দখল করার পর এখানে জুলিয়াস সিজার এবং ক্লিওপেট্রার মুর্তি স্থাপন করা হলেও তা এক সময় ঝড়ে ভেঙ্গে পড়ে যায়।সম্রাট Agrippa এটিকে পূনর্নিমান করেন এবং তার নাম অনুসারেই এটি এখন Agrippa স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত।
প্রোপাইলিয়নঃ- গ্রীক শব্দ প্রোপাইলিয়নের অর্থ হল সম্মুখের দ্বার। এক্রোপলিসের প্রবেশমুখে এ গেট নির্মান করেন সম্রাট পেরিক্লিস আর স্থপতি ছিলেন Mnesclis। খৃস্টপূর্ব ৪৩৭ সাল থেকে শুরু হয়ে ৪৩২ খৃস্ট পূর্বাব্দে পেনোপোলিসের যুদ্ধ শুরু হয়া পর্যন্ত এর নির্মান কাজ চলে। ডানে এবং বায়ে দুদিকে পেন্টেলিক মার্বেলে নির্মিত দুটি প্রশস্ত দু'তলা দালানে অনেকগুলো কক্ষ। এক্রোপলিসে ঢোকার পথ মাঝখানের করিডর দিয়ে। প্রোপাইলিয়নের ভেতরের দেওয়াল এবং কক্ষগুলো শিল্পকর্ম, সোনাদানা এবং অন্যান্য মূল্যবান পাথর দিয়ে সাজানো ছিলো। এখন সে সব কিছুর পাত্তা নেই। এখানকার কিছু পূরাকীর্তি কনস্ট্যানন্টিনোপলের হিপোড্রোমে স্থানান্তর করেছিলেন বাইজেন্টাইন সম্রাটেরা কিন্তু সেগুলোও লুট করে নিয়ে যায় ক্রুসেডারেরা। মাঝখানের চলার পথের সামনের ডানদিকে তিনটি এবং বামদিকে তিনটি মোট ছয়টি শ্বেত পাথরের স্তম্ভ। একইভাবে পেছনের দিকে ডাইনে এবং বায়ে প্রতিদিকে তিনটি করে মোট ছয়টি শ্বেত পাথরের স্তম্ভ। মাঝখানের চলার পথ বা করিডোরকেও তিনভাগে ভাগ করা আছে দুই সারি পাথরের স্তম্ভ দিয়ে। প্রোপাইলন পেরিয়ে এক্রোপলিসে ঢোকার অনুমতি পেত শুধুমাত্র পুতঃপবিত্র হবার পর। বাম দিকের কক্ষকে ব্যবহার করা হত ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির ভোজনশালা হিসেবে। প্রোপাইলনের অনুকরনে প্রবেশদ্বার নির্মিত হয়েছে পৃথিবীর অন্যান্য শহরে। বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেট এবং মিউনিখের প্রোপাইলন তার অন্যতম। রোমান এবং বাইজেন্টাইন আমলে প্রোপাইলন মোটামুটি অক্ষত ছিল।বাইজেন্টাইন আমলে এটি ছিল বিশপের বাসভবন এবং অটোমান সম্রাটদের যুগে অটোম্যান প্রোপাইলন ছিল গভর্নরের বাসভবন। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝির যুদ্ধে কামানের গোলা এখানে সরাসরি আঘাত হানায় পার্শবর্তী পার্থেনন সহ প্রোপাইলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো।(চলবে)
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২২
চাঁদগাজী বলেছেন:
পেছনে তাকালে গ্রীস আসে নজরে।