![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ শিবিরের দখলে থাকা ময়দানে ছাত্রলীগ
চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের মূল ফটকের সামনে রোববার মহাসমাবেশ করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ - বাঁশের মাথায় বাঁধা ব্যানার ধরে দাঁড়িয়ে আছে কেউ কেউ। তাতে লেখা মৌলবাদমুক্ত ক্যাম্পাস চাই। হাতে হাতে ফেস্টুন। মাথায় বাঁধা লাল-সবুজের ফিতা। শত শত শিক্ষার্থীর দেয়া 'জয় বাংলা' সস্নোগানে প্রকম্পিত মাইল খানেক এলাকা।
ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে দাঁড়িয়ে নেতারা রাখছেন মৌলবাদ রুখে দেয়ার প্রত্যয়দীপ্ত বক্তব্য। এ চিত্র চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের মূল ফটকের সামনের। দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে জামায়াত-শিবিরের দখলে থাকা ছাত্ররাজনীতির এ মাঠে গত এক মাস ধরে দখলে রেখেছে ছাত্রলীগ।
গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে আট দফা আদায়ে আয়োজন করে মহাসমাবেশের। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি বলেন,,, চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে বিগত ত্রিশ বছর ধরে একদিনের জন্যও বঙ্গবন্ধু, মুুক্তিযুদ্ধের কোনো কথা উচ্চারিত হয়নি। উল্টো লাখো শিক্ষার্থীকে শুনতে হয়েছে মওদুদী আর গোলাম আযমদের স্বাধীনতাবিরোধী বয়ান। এবার ছাত্রলীগ শপথ নিয়েছে জামায়াত-শিবির শুধু চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ থেকে নয়; গোটা চট্টগ্রাম থেকে রাজনৈতিকভাবে তাদের উৎখাত করে ছাড়বে।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইয়াসির আরাফাত কচি বলেন, রোববারের মহাসমাবেশ মৌলবাদ মুক্তির চূড়ান্ত শপথের সমাবেশ। চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে ছাত্রলীগ দীর্ঘ এক মাস ধরে অহিংস কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে এ ক্যাম্পাসে শুধু প্রগতির পতাকাবাহীরাই রাজনীতি করবে।
আশির দশক পর্যন্ত চট্টগ্রাম কলেজ ও সরকারি হাজী মহসিন কলেজ ছিল প্রগতিশীল শক্তির ঘাঁটি। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের এজিএস ও ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে শিবির ক্যাডাররা গলা কেটে হত্যা করে।
১৯৮৪ সালে রাতে চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হোস্টেলে একই কায়দায় তারা হত্যা করে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শাহাদাত হোসেনসহ দুই ছাত্রকে। একের পর এক প্রগতিশীল ছাত্রনেতাদের হত্যার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগ, বাকশালপন্থী জাতীয় ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নকে বিতাড়িত করে তারা। একইসঙ্গে তারা চট্টগ্রাম কলেজের পার্শ্ববর্তী সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের নিয়ন্ত্রণ নেয় আশির দশকেই। এরপর থেকে প্রায় তিন দশক পর্যন্ত প্রগতিশীল কোনো ছাত্র সংগঠন চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি। এ কারণে চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে ছিল না কোনো সাংস্কৃতিক চর্চা। মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে গেলেই বাধা হয়ে দাঁড়াত শিবির। কখনও কখনও মেধাবী ছাত্রদের ধরে এনে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়েছে শিবির ক্যাডাররা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম কলেজে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা চালায়; কিন্তু শিবিরের অস্ত্র আর শত শত ক্যাডারদের সঙ্গে পেরে উঠেনি ছাত্রলীগ। সর্বশেষ গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম কলেজে বিজয় দিবস উপলক্ষে ছাত্রলীগ মিছিল করতে যায়। এসময় ছাত্রশিবির কর্মীরা ছাত্রলীগের ওপর হামলা চালায়। ছাত্রলীগও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলে। পালাতে বাধ্য হয় শিবির কর্মীরা। এ ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগের দাবির মুখে শিবিরের দখলে থাকা চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের প্রতিটি ছাত্রবাস বন্ধ করে দেয়া হয়। এক মাস চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে চট্টগ্রাম কলেজে প্রতিদিনই কর্মসূচি পালন করে ছাত্রলীগ। দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন, আট দফা দাবি, মিছিল-সমাবশে, লিফলেট বিতরণ থেকে রক্ত ঢেলে প্রতিবাদের মতো অহিংস কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা।
সর্বশেষ চট্টগ্রামের প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে মহাসমাবেশ করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে জামায়াত-শিবিরের দখলে থাকা রাজনীতির এই মাঠে প্রথমবারের মতো দীর্ঘস্থায়ী খেল দেখাল চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ।
©somewhere in net ltd.