![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন মানুষের একটি ছোট্ট দেশ বাংলাদেশ। আশির দশকেও এই দেশটাকে সারা বিশ্ব তেমনভাবে চিনত না। আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ বেশ পরিচিতি পেয়েছে। তার অন্যতম একটি কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রবেশ আর উত্থান। তবে, সেটা রাতারাতি হয় নি। তার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সহ্য করতে হয়েছে অনেক অপমান। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বহুবার। টেস্ট স্ট্যাটাস টিকিয়ে রাখতে তাদেরকে করতে হয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। তারপরও হয়তোবা তারা অনেক সময় এ দেশের মানুষদেরকে সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। তবু এদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে আর ঐ স্বপ্নটাকে বুকে ধারণ করে পথ চলে। আর সেই স্বপ্নটা যখন বাস্তবে রূপ নেওয়ার হাতছানি দেয় তখন সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। ঠিক যেমন আজ সারা বাংলাদেশের মানুষ হয়েছিল। আর ঐ স্বপ্নটাতে কেউ আঘাত হানলে সব থেকে নীরিহ মানুষটাও হয়ে ওঠে ক্ষুধার্ত বাঘ। আজ বলতে গেলে সারা বাংলাদেশে ছিল জাতীয় ছুটির দিন। ছুটির দিনগুলোতেও শহরের রাস্তাঘাটে রিক্সার বেশ ভালোই আনাগোনা দেখা যায়। কিন্তু আজ বাংলাদেশে ছিল ব্যতিক্রম। চায়ের দোকান, র্যাংগস, সনি শোরুমের সামনে খেলা দেখার জন্য দিনমজুর, শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের উপচে পড়া ভিড়। অনেক ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসেই ছিল ক্লাস বন্ধ। চাকুরীজীবীদের মধ্যেও ছিল অফিস বর্জনের প্রবণতা। ক্রিকেটের আতুড়ঘর ইংল্যাণ্ডের মানুষজনও ক্রিকেটের প্রতি এতোটা আবেগপ্রবণ কিনা তা আমার জানা নেই। বাংলার এই মানুষগুলো কি চেয়েছিল?? শুধু এতোটুকুই তো চেয়েছিল যে, বাংলাদেশ তাদের পঞ্চম বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠবে। মজার ব্যাপার হলো, সৃষ্টিকর্তাও তাদের বাধ সাধে নি। সকাল থেকে রাস্তায় রাস্তায় উল্লাস দেখে বোঝা গিয়েছে প্রথম থেকেই বাংলাদেশ ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেছে। কিন্তু বাধ সেধেছে নিজেদের ভাগ্য নিজেই লিখতে চাওয়া ভারত। ইতিহাসে এরকম স্বেচ্ছাচারীদের পতন ঘটেছে বারবার। ভারতও তার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না। সেমিফাইনালে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে অস্ট্রেলিয়া। বাংলার কোটি দর্শককে কাঁদানোর ফল তারা পাবে। ভারত আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে তারা আমাদের কেমন বান্ধব।
আমি আমার জীবদ্দশায় ভারত অথবা পাকিস্তান কাউকে অসম্মান করে কখনো মন্তব্য করতাম না। বরং যারা করে তাদেরকে বলতাম- বাংলাদেশের মানুষ জন্মসূত্রে একটি বৈশিষ্ট্য পায়। হয় ভারতকে ঘৃণা করে নতুবা, পাকিস্তানকে ঘৃণা করে। এই রকম ঘৃণা করতে করতে তার জীবন কেটে যায়। নিজের দেশটাকে ভালো বাসার সময়ই পায় না। আমি মনে করতাম, আমি একটা জাতির প্রতিনিধি হিসেবে আরেকটা জাতিকে কিভাবে নিচু করতে পারি?? এটা তো তাদের জন্য লজ্জার না, বরং আমার জন্য লজ্জার। প্রত্যেক জাতিরই তাদের নিজের একটা সম্মান প্রাপ্য। নিজের দেশের জন্য যদি কিছু করতেই হয় তবে সেটা নিজের দেশকে ভালোবেসে, অন্য কোন দেশকে ঘৃণা করে নয়। কিন্তু আজ প্রমাণ হয়ে গেল সবাই শক্তের ভক্ত, নরমের যম। মাঠের ভিতরে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের মতো ভদ্র খেলোয়াড় খুব কমই আছে। আর মাশরাফির মতো বিনয়ী অধিনায়ক আরও বিরল। মাহমুদুল্লাহকে আউট দেওয়ার ভুল সিদ্ধান্তের পর পাকিস্তান বা অন্য কোন টিম হলে কাল আর নতুন ব্যাটসম্যান মাঠে নামাত না। খেলা ওখানেই তারা বর্জন করত। ভারতীয় কিছু সাপোর্টারকে ফেসবুকে দাবি করতে দেখলাম, যে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত খেলারই একটা অংশ। আচ্ছা, ধরে নিলাম তাই সত্যি। কিন্তু একের পর এক এতো গু্লো ভুল সিদ্ধান্ত কেন? আর সবগুলো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে গেল কেন?? প্রথমে, রুবেলের বলে রোহিত শর্মা আউট এবং সেটা নো-বল বলে এড়িয়ে যাওয়া। যার ফলশ্রুতিতে রোহিত পায় সেঞ্চুরি আর ২৫ বলে বাড়তি ৪৬ রান। এরপর, রয়নাকে মাশরাফি এলবিডব্লিউ করলেও আম্পায়ার সেই আবেদন নাকোচ করে। সবশেষে, ভারতের তথাকথিত গাব্বার সিং নামে খ্যাত গাদ্দার সিং ওরফে ধাওয়ান মাহমুদুল্লাহর ছক্কাকে আউট বলে চালিয়ে দিয়ে বাংলাদেশীদের স্বপ্নকে কফিনে পুরে তাতে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেয়।
যা হোক, আজ মনে হয় ভারত আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে, রাস্তার কিছু উন্মাদই তাদের ইদানীং কালের গণধর্ষণের জন্য দায়ী না। পুরো জাতিটাই আজ মস্ত বড় প্রতারক হিসেবে গড়ে উঠছে। আসলে ঐ ঘৃণ্যনীয় কর্মকাণ্ড শুধু কতিপয় পাগলের নয় বরং সারা রাষ্ট্রের, তার প্রমাণ আজ সারা বহির্বিশ্ব পেল। ওয়ার্ল্ডকাপের মতো একটা বড় আসরে ভারত তাদের এই রুপটা দেখিয়ে সারা বিশ্বের কাছে নিজেদের আসল চেহারা ফুটিয়ে তুলল। ক্রিকেটের মতো একটা ভদ্র খেলার মধ্যে যারা জোচ্চুরি করতে পারে ওরা আসলে জন্মগতভাবেই চোর। ব্রিটিশরা চলে গেলেও তাদের যোগ্য নাজায়েজ উত্তরসূরী ঠিকই রেখে গেছে। বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠলে যত বড় ইতিহাস তৈরি না হতো তার থেকে বড় ইতিহাস তৈরি হয়ে গেছে। আর সেটা হল ভারত ক্রিকেট ইতিহাসে সব থেকে বড় প্রতারণা করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে কলুষিত করল। এই চুরির রেকর্ড ভাঙ্গার ক্ষমতা শুধু মনে হয় ভারতেরই আছে।
কবি শামসুর রাহমানের পংক্তিটি মনে পড়ে গেল-
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে,
নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।
২০ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৫
সবাক বাংলাদেশী বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫২
কাবিল বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম