![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখাটার শুরুতেই আমি আমাদের সমাজের কিছু পুরুষ এবং নারীকে মানসিকতাভেদে মোট চারভাগে ভাগ করে নিচ্ছি। যথা- ১. সমালোচক পুরুষ, ২. সমালোচক নারী, ৩. অতি আগ্রহী পুরুষ, ৪. অতি আগ্রহী নারী
তবে আমাদের সমাজের সকলে কিন্তু এই প্রকারভেদের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুস্থ এবং ভদ্র মানসিকতার অনেক বেশি মানুষ বিরাজমান।
১. সমালোচক পুরুষঃ নারীদের সকল বিষয় নিয়ে এদের মাথাব্যথার অন্ত নেই। পোশাক-আশাক, চাল-চলন সবকিছুতেই এদের খুত ধরাটা একটা মানসিক রোগের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এরা একজন হিজাব পরিহিতা নারীরও চাল-চলনের কোনো না কোনভাবে সমালোচনা করবে। তারা নারীকে ঘরের বাইরে আসা থেকে বিরত থাকতে বলেন। তাহলে জ্ঞানচর্চাটা হবে কিভাবে? ইসলাম নারীদেরকে জ্ঞানচর্চা থেকে কোনভাবেই বিরত থাকার আদেশ দেয় নি। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহিয়সী নারী মা ফাতিমা জাহরা (রা.) এর মধ্যে বাগ্মিতা ও সাহিত্য-প্রতিভার মতো অনন্য গুণগুলো বিদ্যমান ছিল। তাই, তিনি তখনকার দিনে নারীদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। হযরত ফাতিমা জাহরা (রা.)’র নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ মিশরের বর্তমান আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তীত নাম। ইসলামের ইতিহাসে প্রয়োজনের সময় নারীকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করারও দৃষ্টান্ত রয়েছে।
২. সমালোচক নারীঃ কোন ঘটনা ঘটার সাথে সাথেই এরা সারা বিশ্বের পুরুষশাসিত সমাজ এবং পুরুষদের ওপর দোষারোপ করা শুরু করে দেয়। ধানমণ্ডির লেকে ভরদুপুরে, বিভিন্ন পার্কে, বিভিন্ন পার্টি কিংবা নাইট ক্লাবে যা হচ্ছে তার জন্য শুধু একটা ছেলেকে দায়ী করা কি আসলেই যৌক্তিক? আমি আমার ভার্সিটিতে (পাবলিক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) থাকাকালীন সময় ২০১২ সালে একটি ঘটনা ঘটে। সংক্ষেপে তার বর্ণনা দিচ্ছি। সদ্য ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া একটি মেয়েকে তার সিনিয়র(মেয়ে) গার্লস হোস্টেলের ভিতরে বিবস্ত্র করে র্যাগিং করে। এইরকম ঘটনা উক্ত ভার্সিটির ইতিহাসে সর্বপ্রথম। কারণ, তুলনামূলকভাবে প্রকৌশল ভার্সিটির মেয়েরা অনেক শালীন এবং সেখানে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে না বললেই চলে। যা হোক, এই ঘটনা কিন্তু একটা মেয়ের দ্বারাই সংঘটিত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরে একটা মেয়ের র্যাগিং এর সময় যে শ্লীলতাহানি হয় তাতে কিন্তু মেয়েরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সক্রিয় থাকে। তাদেরকেও একটা কারণ দর্শানোর নোটিশের বাইরে তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এইসকল ছাত্র কিংবা ছাত্রীদেরকে আজীবন বহিস্কার না করার কোন হেতু আমি খুঁজে পাই না।
৩. অতি আগ্রহী পুরুষঃ এরা সেই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত যারা কিনা নারী অধিকারের ব্যাপারে একটু বেশিই আগ্রহী। তাদের নিজেরদের অফিসের রিসিপশনিস্ট নারী না হলে চলে না। এদের সংখ্যাই সমাজে বেশি। এরা নারীদেরকে সুযোগ পেলেই লাঞ্ছিত করতে ছাড়ে না। নারীদের শ্লীলতাহানির মতো কোন ঘটনা দেখলে এরা মোটেও এগিয়ে যায় না। বরং দূর থেকে মজা দেখে আর হাতের মোবাইলের ক্যামেরাটার সদ্ব্যবহার করে। পরবর্তীতে, নিজের বন্ধুবান্ধব কিংবা সহকর্মীর কাছে সেই ঘটনার নোংরা বর্ণনা দিতে তাদের নির্লজ্জ মেলা ভার। এরাই নারীদেরকে সফলতার লোভ দেখিয়ে বাইরে বের করে এনে তাদেরকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে।নারীরা সেটা বুঝতেও পারে না। ঊনবিংশ শতাব্দীতে মেয়েদেরকে যেভাবে ব্যাবহার করা হত আজও অতি সূক্ষ্মভাবে সেই পন্থাতেই ব্যবহার করা হচ্ছে। নারীরা শুধুমাত্র তার ঘরের কিছু মানুষের কাছে স্বাধীনতা হারাবার ভয়ে বাইরের অসংখ্য পুরুষের কাছে পরাধীন হয়ে থাকাটাকেই উত্তম পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছে। যে কোন একটা গাড়ির সামনে মডেল হিসেবে একটা মেয়েকেই রাখা হয়। ডিলার, কনজিউমার, নারী মডেল সবাই ভালো করেই বুঝতে পারছে মার্কেটিং এর স্বার্থে এটা করতেই হবে। কিন্তু, তারপরও কিছু করার নেই। ঊনবিংশ শতাব্দীতে জমিদারদের জলসা ঘরে নারীদের দ্বারা বিনোদনের ব্যবস্থা করা হতো। আজও আইপিএল থেকে শুরু করে ফুটবল খেলার মাঠে নারীদেরকে বিনোদনের জন্য চিয়ারলীডার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অথচ ঐ মেয়েটার জন্য কি সারা বিশ্বে এর থেকে ভালো কোন পেশা অথবা লেখাপড়ার সুযোগ অপেক্ষা করছে না??
৪. অতি আগ্রহী নারীঃ এরা আবার পুরুষদের সংগ পাবার জন্য সর্বদা এককাঠি এগিয়ে। এরা অফিসে, পার্টিতে পুরুষদেরকে তাদের পোশাক, চাল-চলন দ্বারা প্রভাবিত করে পরিবার নষ্ট করে অন্য নারীর জীবন নষ্ট করে। এরা নারী হয়ে নারীর ক্ষতি করতে সদা প্রস্তুত। এদের মতো কিছু নারীই নিজে মুসলিম শিক্ষক হয়েও একজন শিক্ষার্থীকে হিজাব পড়ার জন্য সবার সামনে অপমান করতে পারে। এরা একাধারে নারী এবং পুরুষ উভয় জাতির জন্যই ক্ষতিকর।
এবার আসলে প্রসঙ্গে আস যাক। বর্ষবরণে যারা একাজ করেছে তাদেরকে বাহ্যিক গঠন দেখে তো মানুষ বলে মনে হলেও এদের মধ্য আত্মিক ব্যাপারটা নেই। এরা যে মানসিক ভারসাম্যহীন উন্মাদ সে ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই। এদেরকে আসলে কোন ক্যাটাগরিতে ফেলা সম্ভব না। কারণ, উন্মাদের তো আর কোন জাত-পাত হয় না।
তবে, বর্ষবরণের ঘটনার দায় এড়াতে সরকার পক্ষের যারা এর দায় কোন ইসলামী সংগঠনের উপর চাপাতে চাচ্ছে তাদের জন্য বলার একটাই ভাষা আছে- এই সরকারের সুযোগ্য পোষ্য পুত্রদের দ্বারা এধরনের ঘটনা এটাই প্রথম না। সত্যিই যদি দেশপ্রেম থাকে তাহলে আসল দোষীদেরকে শাস্তি দিয়ে দেশের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত। আর যারা বিবৃতি দিচ্ছে-এর মাধ্যমে নারীকে ঘরবন্দী করার ষড়যন্ত্র চলছে। তার সাথে অন্য ধর্মাবলম্বী যারা ইসলামের খুত খোজার চেষ্টা করেন তাদের জন্য- ইসলাম সেই ধর্ম যা নারীদেরকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। ফাতিমা জাহরা (রা.) কে দেখলে বিশ্বনবী (সা.) বসা অবস্থায় থাকলে উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে সালাম করতেন। তিনি তাঁর বংশধারা রক্ষাকারী একমাত্র এই কন্যার মর্যাদা প্রসঙ্গে বলেছেন, মা ফাতেমা (রা) আমার দেহের অংশ, যা ফাতিমাকে কষ্ট দেয়, তা আমাকে কষ্ট দেয় এবং যা আমাকে কষ্ট দেয় তা আল্লাহকেও কষ্ট দেয়। শুধু তাই নয়। নারীদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সর্বপ্রথম যে বাঙ্গালী নারী এগিয়ে আসেন তিনিও ছিলেন একজন মুসলিম পরিবারের যিনি তার ভাই এবং স্বামীর কাছ থেকে অনেক সম্মান এবং সমর্থন পেয়েছেন। তিনি হলেন বাঙ্গালী নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। এরপর এসেছেন সুফিয়া কামাল(১৯১১-১৯৯৯), মহাশ্বেতা দেবী (১৯২৬), নবনীতা দেব সেন (১৯৩৮) এবং মল্লি¬কা সেনগুপ্ত। উপরি দেশপ্রেম দেখানো একটি চরম মাত্রার হঠকারীতার পর্যায়ে পড়ে।
আর আমাদের দেশের পুলিশ প্রশাসন এক্কেবারে নিষ্পাপ শিশু। তারা তাদের ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্য ঘটনার সত্যতাকেই অস্বীকার করে। প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাবে মাঝে মাঝে তারা বলতে চায়, তারা এই দুনিয়ায় তাদের মাতৃগর্ভ ছাড়াই ভূমিষ্ঠ হয়েছে। ঢাকা ভার্সিটির প্রক্টর থেকে শুরু করে এদেশের মন্ত্রীসহ পুলিশ প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতি একটাই প্রশ্ন- ঐদিন ওখানে আপনার সন্তানও থাকতে পারত। তখন কি আপনার পদক্ষেপ এইরকমই হতো??
সমালোচক নারীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-সনাতন হিন্দু ধর্মে সতীদাহ প্রথার প্রচলন ছিল। সেই প্রথা বাতিলের জন্য সমাজে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন রাজা রামমোহন রায়ের মতো একজন পুরুষ। এছাড়া ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কন্যাশিশু হত্যা বন্ধ এবং বিধবাবিবাহের প্রচলনের জন্য কঠোর আন্দোলন করেন। সমাজে নারীর ভূমিকা তুলে ধরার কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদানের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনকি যে যুবকেরা সেদিন এগিয়ে এসেছিল তারাও পুরুষ ছিল।
সবশেষে বলতে চাই, যারা নারীদে্র সম্মানে আঘাত হানার জন্য সচেষ্ট এবং সক্রিয় হয় তাদেরকে আত্মপক্ষসমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এবং আইনী জটিলতার মধ্য দিয়ে না গিয়ে অনতিবিলিম্বে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। প্রত্যেকের উচিত একজন ব্যতীত সকল নারীকে শুধুমাত্র ভগিনীতুল্য দৃষ্টিতে নয় বরং মাতৃতুল্য দৃষ্টিতে দেখা। তাতে নিজের স্ত্রী এবং অন্য সকল নারীর প্রতি উপযুক্ত সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকবে। পরিবারে সুখ বিরাজ করবে এবং সমাজের নৈতিক মূল্যবোধ অক্ষুণ্ণ থাকবে। আমাদের দেশের সকল নারীর উচিত জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে যথেষ্ট বিচক্ষণ, বুদ্ধিমতী, শিষ্টাচারসম্পন্ন মানসিকতা নিয়ে গড়ে ওঠা। কারণ, একটা সন্তান তার মায়ের কাছ থেকেই সামাজিক মূল্যবোধের বেশিরভাগটা শেখে। "তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের একটা শিক্ষিত জাতি উপহার দেব"- নেপোলিয়নের উক্তিটিই তার যথার্থ প্রমাণ। একজন নারী সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ, তার উপরেই এই সমাজের মূল্যবোধ নির্ভর করছে। তাই, আমাদের উচিত একটা মেয়ে যাতে পরবর্তীতে একজন ভালো মা হয়ে উঠতে পারে সেজন্য ছোটবেলা থেকেই তাকে সেরকম পরিবেশ, সুরক্ষা, শিক্ষা প্রদান করা। এতে করে নারীদের পুরুষদের প্রতি সম্মান বাড়বে বৈ কমবে না। জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের প্রতি একটাই অনুরোধ- কোন কাজ করার আগে নিজের সৃষ্টিকর্তা আর মায়ের কথা একবার স্মরণ করুন। নিজের মাকে ভালবাসতে না পারলে দেশকে কখনোই ভালোবাসা সম্ভব নয়।
©somewhere in net ltd.