নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের অনুমতি ব্যতীত যে কোন কবিতা, গল্প, ছড়া, ছবি পোস্ট করা হতে বিরত থাকবেন।
স্মৃতিচারণ:
২০০১ সাল তখনো হাতে মোবাইল আসেনি। একমাত্র ভরসা চিঠি চালাচালি। অপেক্ষা করতে হতো সপ্তাহ মাস। ২০০০ সাল পর্যন্ত কিন্ডার গার্টেন এ শিক্ষিকা হিসাবে নিয়োজিত ছিলাম। পাশাপাশি বন্ধুরা মিলে কম্পিউটার কোর্সের একটা প্রতিষ্ঠান খুলি। স্কুল ছুটি হলেই প্রতিষ্ঠানে এসে বসতাম। প্রতিষ্ঠানটি নাম ছিল এবাকাশ কম্পিউটার্স ওয়ার্ল্ড। সেখানে বেশ খানিকটা সময় কাটাতাম। বসে পত্রিকা পড়তাম আর স্টুডেন্টদের কিছু ইনস্ট্রাকশন দিতাম অথবা কিছু টাইপের কাজ করে দিতাম। এমনি একদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা বিজ্ঞাপন দেখে সাথে সাথেই এপ্লাই করার জন্য কাগজপত্র রেডি করলাম এবং কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিলাম। অবশেষে পরীক্ষার ডাক পড়লো। আল্লাহর উপর ভরসা করে পরীক্ষা দিতে ঢাকা আসলাম আব্বার সাথে। পরীক্ষা দিলাম এবং শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডাটা এন্ট্রি হিসাবে নিয়োগ পেলাম।
চাকুরীতে যোগদানের তারিখ ছিল ১৭ মে ২০০১ সালে। জয়েন করার জন্য আমি আগেই পৌঁছি দুলাভাইয়ের সাথে আমার বোনের বাসায়। বাসা ছিল সেনাপল্লী মিরপুর-১৩তে। সেখান থেকে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের দুরত্ব বেশীই ছিল । তাছাড়া আমি চাকুরীর সুবাদেই ঢাকা এসেছি এই প্রথম স্থায়ীভাবে। এর আগে এসেছি দুই একদিন থেকেছি বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য।
যেদিন ব্যাংকে জয়েন করবো সেদিন কথা ছিলো আব্বা ঢাকায় এসে আমাকে নিয়ে আসবেন ব্যাংকে। কারণ আমি তো রাস্তাঘাট চিনিনা । দুলাভাই অফিসে যাবেন। আমাকে পথ চিনিয়ে নিয়ে আসার কেউ ছিল না তখন। মে মাসের ১৬ তারিখ রাত পর্যন্ত আব্বার অপেক্ষায় ছিলাম। যেহেতু মোবাইল বা ফোনে যোগাযোগের কোন পথই ছিল না সেহেতু অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় কিছু ছিল না। শেষ পর্যন্ত আব্বা আর আসেননি সেদিন। যেখানে আব্বার উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিত ছিল সেখানে আব্বা আসেন নাই। অনেক চিন্তা আমাদের মধ্যে উঁকি ঝুঁকি দিতে লাগল।
১৭ তারিখ সকালে আমার আপা আমাকে একটা সিএনজি ঠিক করে দিলেন এবং চালককে ভালভাবে বুঝিয়ে দিলেন সে যেনো আমাকে একেবারে ব্যাংকের ভিতর পৌঁছে দিয়ে তারপর সে প্রস্থান করে। চালক আমাকে যথাস্থানে সেদিন পৌঁছিয়েছিল। তার জিজ্ঞেস করতে করতে এইচআরডিতে এসে কাজে যোগদান করি এবং যারা মিরপুরে থাকেন তাদের সাথে বড় ভাইয়েরা পরিচয় করায়ে দেন এবং সে মতে সেদিন থেকে আর আসা যাওয়ায় অসুবিধা হয়নি।
এভাবেই কাটল ১০/১২ দিন । আব্বার বা বাড়ির কোন খবরই পাচ্ছিলাম না আমরা। শেষে ব্যাংক থেকে ছুটি নিয়ে বাড়িতে বেড়াতে যাই। চুনারুঘাটে পৌঁছেই পরিচিতরা বলতে লাগল তোমার আব্বা তো একসিডেন্ট করেছিলেন, এখন কেমন আছেন ইত্যাদি নানান জিজ্ঞাসা। ভয়ে তখনই আত্মা শুকিয়ে গেছিলো। হায় আল্লাহ বাড়িতে গিয়ে না জানি কি দেখি।
অবশেষে বাড়িতে পৌঁছাই এবং গিয়ে দেখি আব্বা বিছানায় মাথায় বেন্ডিজ বাঁধা অবস্থায়। আব্বারে ধইরা কান্নাকাটি পর্ব শেষে জানতে পারলাম। আব্বা ঢাকা আসার জন্য যে বাসে উঠেছিলেন সে বাসটি এক্সিডেন্ট হয়েছে। অনেক নিহত আহত হয়েছে। আব্বার মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন এবং ১২টা সেলাই লেগেছিল।
ঘটনার বর্ণনা আব্বা এভাবে দিয়েছিলেন-
আব্বা গাড়ির সীটে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। মানুষের চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে এবং আব্বার মাথায় ব্যথা অনুভূত হয় বেশী এবং সারা গায়ে রক্ত দেখতে পান । যে এলাকায় বাস এক্সিডেন্ট হয়েছিল সেখানকার লোকেরা আব্বাকে টেনে বাহিরে নিয়ে আসে এবং মাথায় পানি দেয়। তখন আব্বা চারিদিকে চিৎকার আর কান্না শুনতে পান। গাড়িটা একেবারে ভেঙ্গে নাকি গুঁড়ো হয়ে গিয়েছিল।
তখন গ্রামের একজন মহিলা আব্বার মাথায় গামছা বেঁধে অন্য গাড়িতে উঠিয়ে দিয়েছিলেন হবিগঞ্জে আসার জন্য। চুনারুঘাটে পৌঁছে হাসপাতালে গিয়ে আব্বা মাথার চিকিৎসা করান। সেদিন আল্লাহর অশেষ রহমত আব্বার বেশি ক্ষতি হয়নি। আর সেই গ্রামের মহিলার কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ যে তিনি আমার আব্বার যত্ন করেছিলেন। আল্লাহ উনার ভাল করুন ইহকালে এবং পরকালে।
আসলেই কতটা পিছিয়ে ছিলাম আমরা আমাদের সেই যুগগুলোতে। তখন একমাত্র চিঠিই ভরসা ছিল অথবা স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে খবর পৌঁছানোই ছিল একমাত্র ভরসা। মোবাইল বা টেলিফোনের ব্যবস্থা থাকলে তো সাথে সাথেই খবরটা পেয়ে যেতাম এবং বাড়ি পৌঁছাতে পারতাম। ভাগ্যিস সে সময় কম্পিউটার প্রচলন শুরু হয়েছিল এবং আমি কম্পিউটার শিখতে পেরেছিলাম, শিখিয়েছিলামও...... তানা হলে হয়তো এত বড় প্রতিষ্ঠানে জব করার দু:সাহস দেখাতে পারতাম না। সেটাই বা কম কিসে, আলহামদুলিল্লাহ শুকরিয়া আল্লাহ তাআলার দরবারে।
আল্লাহর অশেষ রহমতে আজ আমি প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যাংকার। ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন সবাই, হাসিখুশিতে ভরে থাকুক আপনাদের সবার জীবন। সর্বাবস্থায় নিরাপদে থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। কষ্ট করে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২২
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:০২
এম এ কাশেম বলেছেন: হেট্রিক করলাম কিন্তু মন্তব্যে..........
বেলা বিস্কিট দিয়ে কফি খাওয়ান।
০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২২
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: হেট্রিক হয়নি
৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:১৪
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আব্বা...
সব কিছুতেই ছায়ার মত জরিয়ে রাখেন...
০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২২
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: জি আপি থ্যাাংকস
৪| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২১
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: হেট্রিক কই মাত্র দুইটা আর একটা বাকি কিন্তু
৫| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: ফেলে আসা দিনগুলো সবসময়ই নস্টালজিক করে দেয়।
শুভ কামনা আগামী দিন গুলোর জন্য।
০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: হুম ঠিক ভাইয়া
ভাল থাকুন
৬| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৮
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: স্মৃতিচারণ পড়লাম।
কর্মজীবনে সফলতার পিরামিডে ওঠেন সেই প্রত্যাশা রইল।
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৪১
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ভাল থাকুন
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:০১
এম এ কাশেম বলেছেন: আপনার আব্বার দুর্ঘটনার কথা জেনে যেমন ব্যাথিত হয়েছি
তেমনি আপনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকার হয়েছেন জেনে
আনন্দিত ও হয়েছি,
শুভ কামনা অবিরত।