নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের অনুমতি ব্যতীত যে কোন কবিতা, গল্প, ছড়া, ছবি পোস্ট করা হতে বিরত থাকবেন।
আমার লক্ষী মা,
কি দিয়ে শুরু করব বুঝতেছি না মা। মা, আমি তোমার অধম ছেলে তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে তোমার নিকট হতে মৌন সম্মতি চেয়ে নিলাম। আমি জানি মা, কাল ভোরে উঠে তুমি আমার রুমের দরজায় অবাক চোখে স্তব্ধ দাঁড়িয়ে রুম ফাঁকা দেখে ঘাবড়ে যাবে। দুনিয়ার ভাবনা নিয়ে বিছানার পাশে আসবে; ঘরের চারপাশে চোখ বুলাবে। চিন্তায় দুর্বল হয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়বে। দেশের এই পরিস্থিতিতে চিন্তা আর ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। আচমকা আমার পড়ার টেবিলে ভাজ করা কলম চাপা কাগজ দেখে আৎকে উঠবে। ধীর পায়ে এসে বিশাল চিঠি হাতে নিয়ে আকাশ পাতাল ভাবনা নিয়ে চিঠিখানি পড়া শুরু করবে।
চিঠি পড়ে একফোটা চোখের পানি ফেলবে না মা এই বলে দিলাম। ফযরের আজান হল বুঝি। আজ পুকুরঘাটে তুমি একাই যেয়ো মা। প্রতিদিন মা ছেলে একসাথে অজু করে ফজরের নামাজ আদায় করেছি। হয়ত আবার একসাথে নামাজ পড়তে পারব হয়ত পারব না।
মা এবার আসল কথায় আসি,মন দিয়ে শুন মা, দেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে প্রায় চারমাস। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশের অবস্থা এতটা ভয়াবহ হবে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। এতদিন লোকমুখে আমার দেশের অসহায় জনগণের উপর পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচার, নিপীড়নের কথা শুনেছি। রেডিওতে খবর শুনেছি, তুমিও শুনে আসছ। মা বোনদের উপর নির্যাতন, ইজ্জত নিয়ে পাকিদের ভয়াবহতা চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে।
মা, পাক বাহিনী এবার আমাদের গ্রামে ঢুকে পড়েছে। গত পরশু আমরা কয়েকজন বন্ধু শফিক চাচার চায়ের টঙে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। মাগো আমাদের চোখের সামনে দিয়ে রহিম চাচার মেয়ে ফুলবানুকে টেনে হিঁচড়ে কয়েকজন পাক সেনা তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটির আর্তনাদ কানে এখনো লেগে আছে। মা এ তো ছিল মেয়েটির ইজ্জত বাঁচানোর আকুলতা। সেদিন খালি হাতে আমরা কিছুই করতে পারিনি। ভয়ে গাছের আড়াল থেকে শুধু দেখে গেছি আমরা কয়জন। সেদিন রাতে চোখের পাতা এক করতে পারিনি মা। শুধু অসহায় মেয়েটির করুণ চাহনি আর বাঁচার আর্তি শুনেছি রাতভর। তোমাকে সেদিন বলতে পারিনি মা। তোমার অযোগ্য ছেলে তার বোনকে হিংস্র হায়েনাদের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি সেদিন। মাগো পরদিন সকালে জয়নাল ভাইয়েত ডুবায় মেয়েটির লাশ পাওয়া যায়।
মা, আমাদের পাশের বাড়ির প্রশান্ত কাকার বাড়িতেও আগুন দেয় পাকিরা। ঘুমন্ত অবস্থায় আগুন দেয়ায় কাকার পরিবারের কাকি, নির্মল আর সুভাষিনি জ্বলে পুড়ে অন্তিমে চলে গেছে। শুধু প্রশান্ত কাকা বাড়ির সামনে ফ্যাল ফ্যাল করে বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অঙ্গার হওয়া শবের পানে। প্রশান্ত কাকা সেদিন বাড়িতে ছিলেন না তাই বেঁচে ছিলেন। এসব তো তুমি নিজের কানেই শুনেছ মা। তাইতো আমাকে বাড়ির বাইরে যেতে দিতে না।
আচ্ছা মা, আজ যদি তোমার আদরীকে এভাবে ধরে নিয়ে যেত হায়েনারা। তুমি কি করতে মা? গালে হাত দিয়ে বসে পড়তে? আমি কি করতাম বল? ওদের ভয়ে কুঁকড়ে যেতাম? আর আমার বোনের ইজ্জত নিয়ে ওরা হুলি খেলবে? এমন জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই শ্রেয় মনে করি মা। তুমি কি চাইবে তোমার ছেলে কাপুরুষের ন্যায় স্বার্থপরের মত শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবব। তুমিই তো শিখিয়েছিলে মা, অন্যায় মেনে নিবি না কখনো। অন্যায়কারী তোর মা হলেও পিছ পা হবি না। রুখে দাঁড়াবি, প্রতিবাদ করবি। অন্যায়ের সাথে কোন আপোষ করবি না। তোকে পড়াশুনা করাই বলে তুই চাকরী করবি, টাকা তৈরীর মেশিন হবি, আমাকে দেখবি এ আমি চাই না। আমি চাই শুধু তুই মানুষের মানুষ হবি। দেশকে ভালবাসবি আর মানুষকে ভালবাসবি। আমি কি করে তোমার কথা ফেলি মা বলো।
মাগো, ওরা আমার বাপ ভাইয়ের রক্ত নিয়ে হুলি খেলছে। সবুজ ভিজিয়ে দিয়েছে মা, তাজা বুকের লাল রক্ত দিয়ে। মাগো, বাংলার আকাশে আজ লাশের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। কি করে আমি ঘরে বসে থাকি বল।মা, আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করেছি আমরা আমাদের দেশ মাকে এভাবে অপমানিত হতে দিব না। বিশ্ব মানচিত্রের বুকে স্বাধীন দেশ হিসাবে এদেশের মানচিত্র বসাবোই।
ওরা তো মুখের ভাষাও কেড়ে নিতে চাইছিল মা। কই পেরেছিল? না পারে নি। বাংলার সাহসী সন্তানরা তার মায়ের মুখের ভাষা ফিরিয়ে এনেছিল বুকের রক্ত দিয়ে। মা আমরা হারতে শিখিনি। দেখ তুমি এবারও হারব না আমরা। তুমি দেখে নিও।
আর বেশি লিখতে পারছি না, বার বার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। আমি তো কাঁদিনি মা, আজ কেনো অশ্রু ঝরছে অঝরে! মাগো লেখাগুলো মাঝে মাঝে চুপসে গেছে অশ্রু জলে। তুমি কষ্ট করে পড়ে বুঝে নিও মা।
রাতও আর বেশি নেই। আমাকে এখনি বের হতে হবে। তোমাকে বলে যেতে পারতাম, তুমিও না করতে পারতে না আমি জানি । কিন্তু মা, যাবার বেলা তোমার মলিন মুখে চোখের জল দেখে কিভাবে যেতে পারতাম? কলিজা ফেটে যেত মাগো।
যখন তুমি আমার এই চিঠি পড়বে তখন তোমা হতে আমি অনেক দুরে। নদী পার হয়ে ভারতে যেয়ে ট্রেনিং নিয়ে হায়েনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামব মা।
মা তুমি দোয়া করো যেন স্বাধীন দেশের পতাকা হাতে তোমার কোলে ফিরে আসতে পারি। আর যদি ফিরতে না পারি তুমি দু:খ করো না কান্নায়ও বুক ভাসাবে না। গর্বে বুক ফুলিয়ে বলবে আমার ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের প্রতিটি বীরই তোমার সন্তান মনে করো মা।
তাড়াহুড়ো করে লেখা চিঠিতে কিছু ভুল লিখে বা বলে থাকলে ক্ষমা করো মা। আমার সোনা মা আদরীকে নিয়ে তুমি অনেক ভাল থেক, সাবধানে থেক। আর শুন, বাবার বয়স হয়েছে আমাকে না দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলতে পারেন। এমনকি বাবা অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। তুমি তোমার সাধ্য দিয়ে বাবাকে সামাল দিয়ো মা। আমি সময় আর সুযোগ পেলে তোমাকে আমার অবস্থান আর কেমন আছি জানাব। তুমি চিন্তা করো না আমি ভালই থাকব। আজ আর নয় মা। আল্লাহ হাফেজ।
ইতি
তোমার আদরের ছেলে রাতুল
বি:দ্র: মা রেডিওতে একটা গান বাজে সেটা শুনো। তাহলে তুমি অনেকটা শান্তি পাবে। গানটি হলো- মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি। মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: থ্যাংকস সুমন দা
২| ১৫ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:২৫
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: অসাধারণ এক সৃষ্টি এটি।
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:২৪
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: ভালো লাগার সংগাটা পাল্টে গেল।
১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: কেনো কেনো
ধন্যবাদ
৪| ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: আপনার লেখাটা পড়ে ভালো লাগার পারদটা উপরে উঠে গেল যে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৩১
সুমন কর বলেছেন: যুদ্ধের চিঠিতে ভাল লাগা।