নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সম্পর্কে: https://t.ly/atJCp এছাড়া, বইটই-এ: https://boitoi.com.bd/author/2548/&

দারাশিকো

লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি

দারাশিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

ষাঁড়ের লড়াই

১১ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:০৫



লিংক

আগামীকাল ঈদ। সবুজ ঘাসে মোড়ানো বড় মাঠে ঘুরে ঘুরে ঘাস খাচ্ছে কোরবানী উপলক্ষে কেনা বারো-তেরোটা গরু। তাদের গলার দড়ি ধরে রাখালের দায়িত্ব পালন করছে আট-বারো বছরের অনেকগুলো শিশু-কিশোর। দূরে দাড়িয়ে আছে তাদের বাবারা, খেয়াল রাখছেন গরু এবং তাদের সন্তানদের দিকে। হঠাৎ দূর থেকে ভেসে আসতে শুরু করলো ব্যান্ড পার্টির ড্রাম আর বিউগলের আওয়াজ, সাথে মিছিলের স্লোগান। গরুর দড়ি ছেড়ে দিয়ে সকল শিশু-কিশোর ছুটে পেরিয়ে গেল মাঠ, উপস্থিত হলো বড় রাস্তার পাশে। এ পথ দিয়েই যাবে বিজয় মিছিল!

ড্রাম-বিউগল আর স্লোগানের শব্দ এগিয়ে আসছিল। তারপর হঠাৎই দেখা গেলো সেই মিছিল। ‘চ্যাম্পিয়ন! চ্যাম্পিয়ন!’ স্লোগানের সাথে সাথে শত শত কিশোর-তরুণের মধ্যমণি হয়ে বীরদর্পে এগিয়ে আসল এক ষাড়! বৃষ গরু! ব্লেডে চাঁছা চোখা তার শিং, ঝুলে পড়েছে তার কুঁজ। গলায় বিজয় মালা। দুলে দুলে রাজার মতো হেঁটে যাচ্ছে গরুটা – তাকে নিয়ে বাকীদের এই উচ্ছ্বাস নিশ্চয়ই তাকে স্পর্শ করেছে।

চ্যাম্পিয়নের পেছনে আসতে লাগলো আরও গরু। তারাও মধ্যমণি, তবে তাদের জন্য স্লোগান নেই। কারও রং লাল। কারও কুচকুচে কালো। কিছু সাদা। কারও চোখের চারদিকে কালো বৃত্ত তার চাহনিকে করেছে হিংস্র। কিছু গরু উঁচু। কিছুর পেট মোটা। সবগুলোই লড়াকু। কারও পেটে, কারও মাথার কাছে, কারও বা পাছার দিকে গোবর-কাদামাটি লাগানো। ওইসব জায়গায় কেটে গেছে – শিং এর গুতোয়। রক্ত বন্ধ করতে গোবর লেপে দেয়া হয়েছে। কোনটার ক্ষত উন্মুক্ত। প্রতিপক্ষ কতটা শক্তিশালী ছিল সেটা বোঝা যায় সেই ক্ষত দেখে। প্রায় সবগুলোর শিং-এই মাটি লেগে আছে, লড়াইয়ের আগে শিং দিয়ে মাটিতে গর্ত করার ফল। এভাবে বিশ-পঁচিশটি বৃষ গরু আর কয়েকশ ছেলে-পেলের মিছিলটা এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।

আশি-নব্বইয়ের দশকে প্রায় প্রত্যেক বছরে এই দৃশ্য দেখা যেতো চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে – কোরবানীর ঠিক আগেরদিন। কোরবানী উপলক্ষে কেনা বৃষ গরুর এই লড়াই দেখার জন্য অনেক দূর থেকে দর্শক আসতো। লড়াই হতো আগ্রাবাদ জাম্বুরী মাঠে। বিশাল সে মাঠ। জাম্বুরী মাঠের পেট চিড়ে মা ও শিশু হাসপাতালের দিকে যে রাস্তাটা গিয়েছে তার বামদিকে ছিল বিশাল বস্তি, ডানদিকের মাঠে হতো এই ষাঁড়ের লড়াই।

গরুগুলো আসতো আশেপাশের এলাকা থেকেই। যারা লড়াই করায় তারা সাধারণত প্রতি বছরই গরু নিয়ে আসে। তারা অপেক্ষাকৃত ধনী। লড়াইয়ের গরু ছাড়াও তারা মাংসের জন্য বলদ গরু কিনে। গরুর লড়াই কিংবা কোরবানীর গরুর লড়াই কতটা নৈতিক, সে বিষয়ে কেউ চিন্তা করে না। শুধু জানে – এই লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে সম্মান – অনেক বছরের জন্য। এক সময় চ্যাম্পিয়নকে সাদা-কালো টিভি দেয়া হতো, অথবা বড় কালো শিল্ড। কে দেয়, কারা আয়োজন করে – জানি না। কোন ব্যানার ছিল না। কোন নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে লড়াই হতো না। তারপরও কিভাবে যেনো একটি গরু চ্যাম্পিয়ন, আরেকটি গরু রানার্স আপ হয়ে যেতো



জাম্বুরী মাঠের একাংশ শিশুপার্কের জন্য ঘিরে ফেলা হলে মা ও শিশু হাসপাতালের মাঠে হলো লড়াই কয়েক বছর। সেই মাঠও একসময় দেয়াল দিয়ে ঘিরে ভেতরে ফুলের বাগান হলো। বস্তি উচ্ছেদ হয়েছে ততদিনে। আবারও জাম্বুরী মাঠে ফিরলো ষাঁড়ের লড়াই, তবে সেটা সিডিএ এক নাম্বারের দিকে। একসময় সেই মাঠটাও হারাতে হলো। তারপর সিডিএ বালুর মাঠে লড়াই হলো। কিন্তু ততদিনে জৌলুস হারিয়েছে ষাঁড়ের লড়াই।

এই ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে কত গল্প যে রয়েছে। একবার একটি গরুর পেটে অন্য গরুর শিং ঢুকে গিয়েছিল। গরুটা মরে যাওয়ার আগে মাঠেই জবাই করে ফেলা হয়েছিল সেই গরু। রক্তারক্তি তো সাধারণ ব্যাপার। কুঁজ, কান আর চোখের আশ-পাশ, পেছনে রানের মাংস, কখনও পেটে – ব্লেড দিয়ে চোখা বানানো আর সরিষার তেল দিয়ে চকচকে বানানো শিং এর আঘাতে কেটে যায় এসব জায়গা। কখনও কখনও শিং ভেঙ্গে যায়। শিং ভাঙ্গা, কাটাছেড়া চামড়ার গরু দিয়ে কোরবানী হয় না বলে জানি, যারা লড়াই করে তারাও জানে। তারপরও লড়াই হয়। একবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সেই গরু নাকি পরের বছরের জন্য রেখে দেয়া হয়েছিল। একবার কেলেঙ্কারি ঘটিয়ে দিয়েছিল সাদা রং এর এক ইন্ডিয়ান বলদ গরু। বলদটা লড়াই জানে না, কিন্তু গায়ের জোরে তাকে হারাতে পারেনি কোন বৃষ।

কোরবানীর গরু দিয়ে এখন আর লড়াই হয় কিনা জানি না। এখন বাজারে বলদ দেখা যায় না বলেই চলে। বৃষগুলোও বলদগোছের – এগুলো কেবল অন্য বৃষের পেছনে লাফিয়ে উঠে পড়া ছাড়া কিছু পারে না। যেগুলো দেখতে একটু সুন্দর, সেগুলো মাংসের বস্তা – বাজার থেকে হেঁটে ঘরে ফিরতে পারে না, গাড়িতে ফিরতে হয়। বৃষের লড়াই লাগাবে সেই কিশোর-তরুণরাও বা কই? পাবজি খেলে তাদের ঘার ব্যাঁকা হয়ে গিয়েছে, এরা গরুর রক্ত দেখে ডরায়, লড়াই লাগাবে কিভাবে?

তবে এখনও ষাঁড়ের লড়াই হয় বাংলাদেশে। সেই লড়াই দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লড়াকু কিছু গরু নিয়ে যাওয়া হয়। ধান কাটা হয়ে গেলে বিশাল মাঠে হয় এই লড়াই। সিলেটে হয়, সুনামগঞ্জে হয়, নড়াইলে হয়। নেত্রকোনায় ষাঁড়ের লড়াই আয়োজন করে কিছুদিন আগে বরখাস্ত হয়েছেন একজন ইউপি সদস্য। এই লড়াইগুলো অনেক গোছানো। বিশাল এলাকা বাঁশ-দড়ি দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। দর্শক থাকে বাহিরে, গরু থাকে ভিতরে। রেফারি থাকে, মাইকে ধারাভাষ্য দেয়া হয়। গরুগুলোর নাম থাকে, নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা মেনে লড়াই হয়। চ্যাম্পিয়নের জন্য থাকে পুরস্কার।

তবে, বাংলাদেশের ষাঁড়ের লড়াই পানসে। এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে যে লড়াইগুলো হয় সেগুলোর ভিডিও দেখেছি – ঠেলাঠেলি ছাড়া আর কিছু না। ষাঁড়ের সাথে যারা থাকে তাদের দায়িত্ব হলো নিজ নিজ গরুকে ঠেলে লড়াই লাগানো এবং লড়াই লেগে গেলে আবার ছাড়িয়ে দেয়া। একে কি লড়াই বলে? ভিডিওর কোয়ালিটিও এত খারাপ। কাঁপাকাপির কারণে কোনটা গরু আর কোনটা মানুষ – বোঝা দুষ্কর।



লড়াই দেখতে হলে লাওস আর ভিয়েতনামের ষাঁড়ের লড়াই দেখতে হবে। গরুগুলোকে দেখে খাঁটি বাংলাদেশী গরু বলে মনে হবে। চোখা শিং। আর কি সে লড়াকু একেকটা গরু। ফেরোসাস। রক্তারক্তি খুবই সাধারণ ব্যাপার। শিং এর গুতোয় চামড়া ছিদ্র করে প্রতিপক্ষকে শূণ্যে তুলে ফেলার মত ঘটনা অহরহ ঘটে। গরুর রাখালরাও হাতে চিকন লম্বা কাঠি নিয়ে অপেক্ষা করে লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত। প্রত্যেক গরুর নাকে লোহার রিং পড়ানো আছে। লড়াই শেষে হাতের লাঠি দিয়ে সেই রিং-কে টেনে ধরে গরুর নিয়ন্ত্রণ নেয় রাখালরা।

ষাঁড় বা বৃষ গরুর লড়াই বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্য। সম্ভবত শিল্পী এস এম সুলতানের একটি বিখ্যাত পেইন্টিং আছে ষাঁড়ের লড়াই নিয়ে। নড়াইলে সুলতান মেলায় ষাঁড় বা এঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজন করা হয়। তবে কোরবানীর পশু দিয়ে লড়াই অনুচিত। এই ঐতিহ্য সারাজীবন টিকে থাকুক – আমি সেই কামনা করি

আমার ব্যক্তিগত ব্লগে নিমন্ত্রণ

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি নিজে ষাঁড়ের লড়াই দেখতে পাছন্দ করেন? চট্টগ্রাম শহরের জাম্বুরী ফিল্ড এলাকা, নিমতলা ইত্যাদির লোকগুলো মগজহীন ইডিয়ট।

১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১৫

দারাশিকো বলেছেন: মন্তব্য পছন্দ হয় নাই :(

২| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: ষাড়ের লড়াই সামনা সামনি কখনও দেখা হয় নাই। ইউটিউবে দেখেছি।

১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১৭

দারাশিকো বলেছেন: দেখার আগ্রহ থাকলে এ ধরনের গ্রুপগুলোতে খোঁজ রাখতে পারেন। ছবি তোলার জন্য ষাড়েঁর লড়াই ভালো বিষয়।

৩| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৫৪

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: একটি নিষ্ঠুর কাজ।

১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১৮

দারাশিকো বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১:০৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আগের দিনের বোকামি কাজ

১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:১৮

দারাশিকো বলেছেন: এখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ষাঁড়ের লড়াই অনুষ্ঠিত হয়।

৫| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৫৩

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এই ধরনের খেলা আমি পছন্দ করি না।

১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২০

দারাশিকো বলেছেন: ষাঁড়ের লড়াই একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। এ যুগে মানুষের পছন্দ না হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

৬| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:৪৬

অন্তরা রহমান বলেছেন: ঠিক কতদিন পরে 'দারাশিকো'র ব্লগ পড়লাম, জানি না। দারুণ লিখেছেন। ভিডিও দেখে শিউরে উঠেছি।

১৩ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৪৬

দারাশিকো বলেছেন: খুব ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে। অনেকদিন পরে সামহোয়্যারইনব্লগে লিখছি, পুরাতন পাঠক পাবো আশা করিনি। আপনার ব্লগও ঘুরে দেখছি। লী চাইল্ডের গল্পটা পড়া শুরু করেছি।

ভালো থাকবেন।

৭| ১৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৩:১০

জাওয়াত আররাজ বলেছেন: ভালো লিখেছেন, সুন্দর একটি উপস্থাপনা। আর এই খেলাটা একটা ঐতিহ্যবাহী খেলা। যুগ যুগ ধরে মানুষ এসব নৃশংস খেলার পেছনে নিজের সময়-অর্থ সব ব্যয় করে এসেছে। মানুষ জন্মগত ভাবেই হিংস্র, সে ভায়োলেন্স পচ্ছন্দ করে। একসময়ের রোমান গ্ল্যাডিয়েটর এর যুদ্ধও মানুষ খুব উল্লাসের সাথে দেখেছে। তাই সবার এতো নাক সিটকানোটা ঠিক মানায় না বোধহয়। হয়তো এখন যে যুগ এ যুগে বিনোদন মাধ্যমের অভাব নাই দেখে এখন আর কেউ এগুলা পচ্ছন্দ করেনা। কিন্তু গলির মোড়ে, অফিস ঘরে কিংবা ট্রাফিক জ্যামে আজও আমরা বিভিন্ন ঝামেলায় জড়িয়ে যাই মনের অজান্তে। যুদ্ধ করে ফেলি যুক্তিতে যুক্তিতে, পুরোটাই বোধহয় ডিএনএ এর কারসাজি। যাহোক, ভালো থাকবেন।

১৯ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:২০

দারাশিকো বলেছেন: ধন্যবাদ জাওয়াত আররাজ, আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য। আপনার মন্তব্যের সাথে আমি সম্পূর্ণভাবেই একমত। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা, নিষ্ঠুরতার বিচার শুরু হয়েছে বেশিদিন আগে নয়। বাংলাদেশে এই খেলা এখনও আইনগতভাবে সিদ্ধ, পৃথিবীর বহু দেশেও তাই। খেলায় অংশগ্রহণ করা বা দর্শক হওয়া না হওয়া ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করবে।

ভালো থাকবেন।

৮| ২১ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৪৯

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: ষাঁড়ের লড়াই কখনো দেখা হ্য়নি।
দেখার ইচ্ছা আছে স্পেন এ গিয়ে।

২১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:০১

দারাশিকো বলেছেন: স্পেন আর বাংলাদেশের ষাঁড়ের লড়াইয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। এদেশে ষাঁড়ে-ষাঁড়ে লড়াই হয়, ওখানে ষাঁড়ে-মানুষে। ষাঁড়ের জেতার কোন সম্ভাবনাই থাকে না, কেবল ছুটোছুটি, সেটাই মানুষ মজা করে দেখে। স্পেনে না এই লড়াই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে?

ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.