নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সম্পর্কে: https://t.ly/atJCp এছাড়া, বইটই-এ: https://boitoi.com.bd/author/2548/&

দারাশিকো

লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি

দারাশিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভ্রমণ কাহিনী: রাজশাহী-নাটোরে (২য় পর্ব)

২৩ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৭

রাজশাহী-নাটোরে (১ম পর্ব)

শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা

যেদিন রাজশাহীতে পৌঁছলাম সেদিন থেকে শুক্রবার পর্যন্ত রাজশাহীতে বৃষ্টির দেখা পাইনি। অথচ এর আগের কয়েকদিন 'হালকা থেকে মাঝারী অথবা ভারী বৃষ্টিপাত' হয়েছে। তার উপর আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু দেশ ফারাক্কা বাঁধের অনেকগুলো স্লুইসগেট খুলে তাদের অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিয়েছে। ফলে পদ্মায় পানি বেড়েছে, বিপদসীমাও অতিক্রম করেছে কিছু জায়গায়। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনার কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং বন্যার আশংকা করা হচ্ছে। রাজশাহী ভ্রমণের সময় আমরা এই পানি বৃদ্ধির কিছু চিত্র দেখেছি বটে,সেটা রাজশাহী শহরে নয়। বিগত কয়েকদিনের বৃষ্টির ফলাফল দেখা গেল শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায়।



চিড়িয়াখানার প্রবেশপথ বেশ চমৎকার। বাঁধানো রাস্তা, বাহারী গেট, ছোট্ট ঘরে টিকেট কাউন্টার। ভেতরে বেশ প্রশস্ত বাঁধানো জায়গা। কিন্তু তার পুরোটাই পানিতে ডুবে আছে। অনেক আগ্রহ নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছি, ভেতরে না ঢুকেই ফেরত যেতে হলে ব্যাপারটা বেশ খারাপ হবে। টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মানুষটির সাথে কথা বলে জানা গেল - শুধুমাত্র এই চত্ত্বরটুকুই পানিতে ডুবে আছে। বাকী জায়গায় কাদা থাকলেও পানি নেই।

টিকেট কেটে, জুতা-মোজা হাতে নিয়ে, প্যান্ট গুটিয়ে প্রায় হাঁটুপানিতে নেমে বুঝলাম - বেশ ঝুঁকি নিয়েছি। টাইলস করা মেঝে অত্যন্ত পিচ্ছিল হয়ে আছে। যে কোন সময় পা হড়কালে কেবল ব্যাথাই পেতে হবে না, নোংরা কাদা-পানিতে মাখামাখি হতে হবে। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সবাই হাত ধরাধরি করে অত্যন্ত সতর্কভাবে পা টিপে টিপে প্রায় ষাট ফিট দুরত্ব পার হয়ে তারপর মূল অংশে পৌঁছলাম। নিজেকে কলম্বাস মনে হচ্ছিল।

আমার রাজশাহী ভ্রমণ এবার প্রথম নয়। প্রথম এসেছিলাম ২০০৯ সালে। তখন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রযোজকের সহকারী ছিলাম। রাজশাহীর টেনিস ক্লাবে একটি ইন্টারন্যাশনাল টেনিস টুর্নামেন্ট কাভার করতে এসেছিলাম। থেকেছি পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেলে। মোটেল, টেনিস ক্লাব আর চিড়িয়াখানা পায়ে হাঁটা দূরত্বে। চিড়িয়াখানাও তখন বেড়িয়ে গিয়েছিলাম।

যে বিশাল জায়গা জুড়ে আজকের কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা তা এককালে ছিল রেসকোর্স ময়দান। ব্রিটিশ আমলে এবং সম্ভবত পাকিস্তান আমলেও এখানে ঘোড়দৌড় হতো। পরে রেস বন্ধ হলে এই বাগান অব্যবহৃত অবস্থায় ছিল। স্বাধীনতার পরে একে কেন্দ্রীয় উদ্যান হিসেবে কিছু উন্নতি সাধন করা হয়। আশির দশকে প্রথমে কয়েকটা ঘড়িয়ালের বাচ্চা ছাড়ার মাধ্যমে চিড়িয়াখানার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। বর্তমানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর তত্ত্বাবধায়ক।

দশ বছরের ব্যবধানে চিড়িয়াখানার বৈচিত্র্য বাড়েনি, অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হয়েছে। তখন সবচেয়ে অবাক হয়েছিলাম খাঁচায় আটক একটি গাধাকে দেখে, কারণ ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানায়ও গাধা দেখিনি। এবার অবশ্য গাধা একটা নেই, অনেকগুলো হয়েছে। এখন অবশ্য ঢাকার চিড়িয়াখানাতেও গাধা আছে, কিছুদিন আগে দেখে এসেছি। বিভিন্ন ধরণের হাঁস, পাখি আর হরিণ-বানর-বেবুন-অজগর ছাড়া উল্লেখযোগ্য আর কিছুই নেই। বাঘ-সিংহ-ভালুক ছাড়া চিড়িয়াখানা ঠিক জমে না। জ্যান্ত না হলেও একটি জিরাফ, আর একটি গরিলা দেখা গেলো। তারপর হঠাৎ করেই চিড়িয়াখানাটা শেষ হয়ে গেলো।

দেখার কিছু না থাকলেও চিড়িয়াখানায় লোকজন আসছে। বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। অল্প কিছু বাচ্চা-কাচ্চাও আছে। তারা কেন এখানে আসে তা বোঝা গেল চিড়িয়াখানার শেষাংশে পৌঁছানোর পর।

একটি মিনি শিশুপার্ক আছে এখানে। দোলনা, ট্রেন, ঝুলন্ত নৌকা সহ বেশ কিছু রাইড রয়েছে। আছে পানিতে ঘূর্ণায়মান হাঁস আকৃতির নৌকা। পানিতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে কিছু প্লাস্টিকের বল। হাঁসের পিঠে বসে ঘুরতে ঘুরতে সেই বলগুলো ধরতে পারার মধ্যে এক ধরণের সাফল্য আছে। প্রত্যেক রাইডের জন্য আলাদা আলাদা টিকেট। তা হোক, বিনোদনের জন্য এসেছি, সেটা তো হলো।



চিড়িয়াখানা আর মিনি শিশুপার্ক ছাড়া আর আছে ফাঁকা মাঠ। বড় একটি লেক রয়েছে। লেকের মাঝখানে আছে জলপরী ফোয়ারা। আছে একটি ছোট্ট সেতু। চারদিকে বসার বেঞ্চি। প্রেমিক-প্রেমিকারা এখানে বসে সম্পর্ক গড়ে। কেউ কেউ ভাঙ্গে।

সৌভাগ্যবশত বের হবার সময় সেই পানি-কাদা মাড়াতে হলো না। কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় ভিন্ন একটি রাস্তা দিয়ে প্রবেশ ও বাহিরের উপায় করেছে। প্রথম থেকেই এই পথ চালু থাকলে কাদা-পানি এড়ানো যেতো। সেক্ষেত্রে প্রথম শিশুপার্ক, তারপর চিড়িয়াখানা বেড়াতে হতো। শিশুপার্ক পেরিয়ে চিড়িয়াখানা উপভোগ্য হতো কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।

আমাদের এবারের গন্তব্য বরেন্দ্র গবেষনা জাদুঘর।

বরেন্দ্র গবেষনা জাদুঘর

বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন জাদুঘরটি যে রাজশাহীতে অবস্থিত এই খবর আমার রাজশাহী ভ্রমণের সময়ও অজানা ছিল। ঠিক হলো না, বরং বলা উচিত রাজশাহীতে যে একটি জাদুঘর রয়েছে সেটিই এবার রাজশাহী ভ্রমণের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে জেনেছি। জাদুঘর এমনিতেই আমার বেশ পছন্দের স্থান, সুতরাং সবচেয়ে পুরাতন জাদুঘরে যেতেই হবে। কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা থেকে যখন অটোতে চড়ে বরেন্দ্র গবেষনা জাদুঘরে উপস্থিত হলাম, তখন দুপুর আড়াইটা বেজে গেছে।

বরেন্দ্র জাদুঘর একদম শহরের মধ্যে অবস্থিত। পরের কয়েকদিনে বার কয়েক এর পাশ দিয়ে যেতে হয়েছে। বোঝা যায়, রাজশাহী শহরের পুরাতন এলাকাগুলোর মধ্যে এটি একটি।



ব্যক্তিগত উদ্যোগ থেকে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৯১৩ সালে। মূল ভবনটি একতলা। পরবর্তীতে পাশে আরও ভবন তৈরী করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে অফিস ও লাইব্রেরি। তবে সাধারণ দর্শকদের জন্য কেবল মূল দালানের অভ্যন্তরে জাদুঘর অংশটিই কেবল উন্মুক্ত। সেখানে রয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন সময়ের নিদর্শন। এদের মধ্যে সনাতন ধর্মীয় নানা রকম দেব-দেবীর মূর্তি, বুদ্ধমূর্তি, ব্যবহার্য জিনিসপত্র ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব নিদর্শনের মধ্যে কিছু রয়েছে যা হাজার বছরেরও পুরানো।

বরেন্দ্র গবেষনা জাদুঘর বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন। এর প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং দর্শনীয় উপকরণের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা বাংলাপিডিয়ার ওয়েবসাইটে রয়েছে। তথ্যগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিধায় কিছুটা সম্পাদনা করে এখানে তুলে ধরলাম।

নাটোরেরর দিঘাপাতিয়া রাজপরিবারের জমিদার শরৎকুমার রায় এবং তাঁর সহযোগী আইনজীবী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রমাপ্রসাদ চন্দ প্রমুখ প্রত্ন-অনুরাগী এই প্রতিষ্ঠান দুটি গড়ে তোলার জন্য তাঁরা তাঁদের সময় ও শ্রম ব্যয় করেন। তাঁদের সারা জীবনের প্রয়াস ছিল ওই সময়ের টিকে থাকা অমূল্য প্রত্নসম্পদ (বাংলার, বিশেষ করে বরেন্দ্রীর) জনসম্মুখে প্রকাশ করা।

অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে প্রত্নস্থল আবিষ্কারের লক্ষ্যে শরৎকুমার ১৯১০ সালের এপ্রিলে মান্দইল থেকে চন্ডীর কয়েকটি প্রমাণসাইজ মূর্তিসহ প্রায় ৩২টি ভাস্কর্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। রাজশাহীতে ফিরে আসার পর শহরের গণ্যমান্য নাগরিকগণ শরৎকুমার ও তাঁর সহকর্মীদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন এবং রাজশাহীতে প্রত্নসামগ্রী সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সুতরাং প্রয়োজনের তাগিদে রাজশাহী জাদুঘর (পরবর্তীকালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর) গড়ে ওঠে এবং প্রত্নসামগ্রী সংরক্ষণের জন্য শরৎকুমার মাসে ২০০ টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করেন। ১৯১১ সালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে সংগৃহীত সকল দুষ্প্রাপ্য ও অনন্য নমুনা কলকাতার ভারতীয় জাতীয় জাদুঘর দাবি করলে বরেন্দ্র জাদুঘরের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়। বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ১৯১২ সালে রাজশাহীতে এসে সোসাইটির সংগ্রহগুলি দেখে মুগ্ধ হন। এর অল্পকাল পরেই বাংলার গভর্নর ১৯১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির ১১ নং প্রজ্ঞাপন দ্বারা স্থানীয় জাদুঘরগুলির সংগঠকদের প্রত্নসম্পদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সাধারণ্যে প্রদর্শনের অনুমতি প্রদান করেন।

শরৎ কুমার নিজ ব্যয়ে তাঁর বড় ভাই দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমদানাথ রায়ের দানকৃত জমির উপর জাদুঘরের জন্য ভবন নির্মাণ করেন। ১৯১৬ সালের ১৩ নভেম্বর লর্ড কারমাইকেল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

১৯৩০ সালে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এবং ১৯৪৫ সালে শরৎ কুমার রায়ের মৃত্যুর ফলে জাদুঘরের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ জাদুঘরের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলে। ১৯৪৯ সালে জাদুঘরটিকে মেডিকেল স্কুলে রূপান্তর করা হয়। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত জাদুঘরের উত্তরাংশ স্কুলের দখলে ছিল।

দেশ বিভাগের পর থেকে প্রায় ১৯ বছর জাদুঘরটি প্রায় অচল অবস্থায় পড়ে ছিল। ১৯৬১ সালে মেডিকেল স্কুলটি জাদুঘরের উত্তরাংশ জাদুঘরকে প্রত্যর্পণ করলে কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট থেকে প্রাপ্ত ত্রিশ হাজার টাকা অনুদানের অর্থ দিয়ে ১৯৬১ সালে বর্তমান লাইব্রেরি ভবনটি নির্মিত হয়। কিউরেটরের বাসভবন এবং অন্যান্য সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের জন্য জাদুঘরের দেয়াল ঘেরা চত্বরে নির্মিত স্কুলের এনাটমি জাদুঘর ভবনটি বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরকে দেওয়া হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী জেলা প্রশাসন জাদুঘরটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট অর্পণ করার ব্যাপারে প্রাদেশিক সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর এটি আইন সম্মত উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর পরিচালনার সকল আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ করে।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে পাথর ও ধাতুনির্মিত ভাস্কর্য, খোদিত লিপি, মুদ্রা, মৃৎপাত্র ও পোড়ামাটির ফলক, অস্ত্রশস্ত্র, আরবি ও ফারসি দলিলপত্র, চিত্র, বইপত্র ও সাময়িকী এবং সংস্কৃত ও বাংলা পান্ডুলিপিসমূহ।

১নং গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে সিন্ধু সভ্যতার (খ্রি.পূ ২৫০০) প্রত্নসম্পদ, বাংলাদেশের পাহাড়পুরে (৮ম-১২শ শতক) উৎখননকৃত প্রত্নসম্পদ, ফারসি ফরমান ও বাংলা দলিলপত্র, পুরানো বাংলা হরফে সংস্কৃত লিপিসমূহ, চকচকে টালিসমূহ, ইসলামি রীতির ধাতব তৈজসপত্র, হাতে লেখা কুরআন শরীফ, বাংলা ও সংস্কৃত পান্ডুলিপি, মুগল চিত্রকলা, পাথর ও ব্রোঞ্জ নির্মিত বিভিন্ন ভাস্কর্য, বিহারের নালন্দা এবং ভারতের অন্যান্য স্থানে প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শনাবলি। ২নং গ্যালারিতে রয়েছে বৌদ্ধ ও হিন্দু দেবদেবীর প্রস্তর মূর্তি এবং কাঠের আধুনিক ভাস্কর্যসমূহ। ৩নং গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয় হিন্দু ভাস্কর্য: বেশ কয়েকটি সূর্য মূর্তি, শিব মূর্তি, গণেশ মূর্তি এবং বিষ্ণু মূর্তি। ৪নং গ্যালারিতে সাজানো আছে দুর্গা-গৌরী-উমা-পার্বতী, মাতৃকা ও চামুন্ডা মূর্তি। ৫নং গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয় বুদ্ধ মূর্তি, বোধিসত্ত্ব, তারা, জৈন তীর্থঙ্কর এবং হিন্দুধর্মের গৌণ দেব-দেবীর মূর্তিসমূহ। ৬নং গ্যালারিতে সাজানো রয়েছে আরবি, ফারসি, সংস্কৃত এবং প্রাচীন বাংলা প্রস্তর লিপিসমূহ, মুসলিম যুগের খোদিত পাথর, মিহরাব, অলঙ্কৃত চৌকাঠ ও লিন্টেল এবং শেরশাহের আমলে নির্মিত দুটি কামান। বারান্দার উপরের সারিতে পাহাড়পুর থেকে প্রাপ্ত পোড়ামাটির ফলক সাজানো রয়েছে। নিচের সারিতে রয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ ভাস্কর্যরাজি। প্রাঙ্গণে সজ্জিত রয়েছে হিন্দু ও মুসলমান স্থাপত্যনিদর্শন খোদাইকৃত পাথর, পাথরের স্তম্ভ, শিবলিঙ্গ ইত্যাদি”।


সবচেয়ে পুরাতন এই জাদুঘরের বর্তমান অবস্থা মোটেও সুবিধাজনক নয়। অল্প যে কটা কক্ষ ঘুরে দেখা যায় সেগুলো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নয়, একতলা ভবন হওয়ায় ছাদের গরম টের পাওয়া যায়। জাদুঘরে এত বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে যার স্থান সংকুলান হচ্ছে না। ফলে করিডোরে, খোলা আকাশের নীচে রেখে দেয়া হয়েছে প্রচুর নিদর্শন। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে খুব শক্তিশালী মনে হয়নি। এই লেখাটি লিখতে গিয়ে বাংলানিউজের ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের একটি প্রতিবেদন চোখে পড়ল। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশিত জাদুঘরের পূর্ণাঙ্গ ইনভেন্টরি প্রতিবেদন মতে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৮৫টি প্রত্নসামগ্রীসহ প্রায় তিন হাজার দুর্লভ বস্তু হারিয়েছে জাদুঘর থেকে। জাদুঘরে নিবন্ধিত নানা ধরনের প্রত্নসামগ্রীর ১৮৫টির কোনো হদিস নেই। হারিয়ে যাওয়ায় প্রত্নসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে দু'টি ব্রোঞ্জ, দু'টি কপার, দু'টি লিনেন, একটি ব্রাশ, দু'টি সিলভার, একটি ক্রিস্টাল, ৪৭টি বিভিন্ন ধরনের পাথর, ১০১টি টেরাকোটা, ১৩টি কাগজ এবং দুটি প্রাণির চামড়া। এছাড়া পাঁচ হাজার ৯৭১টি নিবন্ধিত মুদ্রার মধ্যে ৩৩টি এবং ১৩ হাজার ৯৩৩টি গ্রন্থের মধ্যে ৮৫টি পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না ১৩ হাজার ৫৭৬টি প্রকাশনার (পুস্তক, পুস্তিকা, গ্রন্থ, জার্নাল ইত্যাদি) মধ্যে তিন হাজার ৫২টি”।

ছোট্ট জাদুঘর। তাই বেশি সময় লাগলো না দেখে শেষ করতে। জাদুঘরের চত্ত্বরটা বেশ চমৎকার এবং গোছানো। ফুলের বাগান রয়েছে, তাই দর্শনার্থীরা ফুলের সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত। আমরা অবশ্য তাদের মত ছবি তোলায় ব্যস্ত হতে পারলাম না। টয়লেটে প্রাকৃতিক কাজ সারা, হালকা নাস্তা করে নেয়া ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত হতে হলো। আর আমি প্রস্তুতি নিলাম পরবর্তী গন্তব্য রেশম চাষ/কারখানা ভ্রমণের জন্য

রাজশাহী-নাটোরে (৩য় পর্ব)

ই-বুক আকারে সকল পর্ব একসাথে

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। ঝরঝরে লেখা। পড়ে আরাম পাওয়া যায়।

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৩৫

দারাশিকো বলেছেন: অনুপ্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্য - থ্যাংকস রাজীব নুর :)

২| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:০৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আমি রাজশাহী শহরেই থাকি। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে বেশ কয়েকবার গেছি। আপনার কল্যানে কিছু অতিরিক্ত তথ্য জানতে পারলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৩৭

দারাশিকো বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ আশরাফুল ইসলাম। আপনাদের রাজশাহী শহর আমার বেশ ভালো লেগেছে (অটোচালকদের প্যাঁপোঁ ছাড়া)।
আবারও যেতে চাই।

৩| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৩৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আর একটা কথা। যে কোন জাদুঘর বা সংগ্রহশালায় রক্ষিত প্রত্ন সামগ্রী সংগ্রহের বৃত্তান্ত লিখিত থাকা জরুরী। বরেন্দ্র জাদুঘরে রক্ষিত নবাব সিরাজদ্দৌলার সেনাপতি মোহনলালের তরবারিটির কাসকেটে এরকম কোন বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ নাই। এতে আমি কিছুটা হতাশ হয়েছি।

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪২

দারাশিকো বলেছেন: ওহ। জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে মনে হয়েছে তারা গোডাউন বানিয়েছে। এত এত চমৎকার সব প্রত্নসামগ্রী, অথচ যত্নের চেষ্টাটুকুও নেই মনে হলো। ব্যাপারটা কষ্টদায়ক। আপনার মতো আমিও হতাশ।

৪| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৫৪

নিয়াজ সুমন বলেছেন: বরেন্দ্র গবেষনা জাদুঘর আমি ঈদের ছুটিতে রাজশাহীতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে নাকি জাদুঘর বন্ধ থাকে। এক আজীব দেশ আজীব নীতি। মানুষ কি ইতিহাস ঐতিহ্য ছুটি ছাড়া দেখতে আসতে পারবে দুর দুরান্ত থেকে। এমন নির্দশন গুলো সাধারণত দীর্ঘ ছুটিতে মানুষ দেখার প্লান করে। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যখন মানুষ রাজশাহী ভ্রমনে বেশি মানুষ যায় তখন এই জাদুঘর দেখা থেকে বঞ্চিত হয়। আমার মতো হাজার হাজার মানুষ প্রতি বছর সরকাররি লম্বা ছুটিতে জাদুঘরটি না দেখে রাজশাহী ভ্রমণ শেষ করে আসতে হয়।
জাদুঘর সারা বছর খোলা রাখা উচিত বলে মনে করি।


২৫ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪৪

দারাশিকো বলেছেন: লা জবাব! এই যুক্তিতে তো দেশের সকল জাদুঘরই শুক্র-শনিবার বন্ধ রাখতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ছাড়া আর কিছু এর জন্য দায়ী নয় বলেই মনে করি। এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে একটা চিঠি লিখতে পারেন। সেক্ষেত্রে যদি সারাবছর জাদুঘর খোলা রাখার ব্যাপারে তারা আগ্রহী হয়।

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নিয়াজ সুমন। ভালো থাকবেন।

৫| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৪৫

জোবাইর বলেছেন: চিড়িয়াখানা ও জাদুঘরের বর্তমান অবস্থা ও ইতিহাসের তথ্যসমৃদ্ধ ভ্রমণ কাহিনী ভালো লেগেছে। একটা কথা, প্রথম ছবিটা একদম লেখার শুরুতে দেবেন। ছবি দেখা না গেলে ব্লগের প্রথম পৃষ্টায় এত হাবিজাবি পোস্টের মধ্য থেকে লেখা খুঁজে বের করা সমস্যা। শুভেচ্ছা নেবেন।

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪৬

দারাশিকো বলেছেন: আরও একটি চমৎকার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ প্রিয় জোবাইর ভাই। সামনের পর্বগুলোতে এই পরামর্শ মেনে চলতে চেষ্টা করবো।

ভালো থাকবেন।

৬| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:০৭

আমি সাজিদ বলেছেন: খুব সাবলীল লেখা দারাশিকো ভাই৷ বেশ অনেকবার রাজশাহী ও নাটোর যাওয়া হয়েছে কাজে। বরেন্দ্র জাদুঘর দেখা এক চমৎকার অভিজ্ঞতা ছিল।

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৪৮

দারাশিকো বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ সাজিদ। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.