নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সম্পর্কে: https://t.ly/atJCp এছাড়া, বইটই-এ: https://boitoi.com.bd/author/2548/&

দারাশিকো

লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি

দারাশিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভ্রমণ কাহিনী: রাজশাহী-নাটোরে (৪র্থ পর্ব)

২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২৪



রাজশাহী-নাটোরে (৩য় পর্ব)

বিদিরপুরে

পরিবার নিয়ে রাজশাহী ভ্রমণের উদ্দেশ্য কেবল শোয়াইবের বিয়ে, এমনটি নয়। রাজশাহীতে আমার স্ত্রীর দুজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর স্থায়ী আবাস, রাজশাহীতে গেলে তাদের সাথেও সাক্ষাতের সুযোগ পাওয়া যাবে - এই চিন্তাও আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলেছে।

বান্ধবীদের একজন গ্লোরিয়া। আমার স্ত্রীর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অন্তরঙ্গ বন্ধু। নানা গুণে গুণান্বিত এবং সংগ্রামী নারী। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পরে তার মা-ই নানা প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে সন্তানদের বড় করেছেন, প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মায়ের সেই সংগ্রামী চরিত্র গ্লোরিয়ার মধ্যেও আছে। ঢাকায় থাকতে আমাদের বাসায় এসেছে বেশ কয়েকবার। একবার তার মা-কে নিয়েও এসেছিল। এখন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরীর সুবাদে রাজশাহীতেই কর্মরত। সব কিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন যে, রাজশাহী গিয়ে গ্লোরিয়াদের বাসায় এক বেলা না বেড়ালে গুরুতর অন্যায় হয়ে যাবে।

কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা যে সপ্তাহে রাজশাহী পৌঁছলাম সেই সপ্তাহে এক বান্ধবী অফিসের ট্রেনিং এ ঢাকা আসলো, ফিরলো আমরা চলে আসার পর। তার অনুপস্থিতিতে বাসায় উপস্থিত হয়ে তার মাকে বিড়ম্বনায় ফেলার কোন ইচ্ছেই আমাদের ছিল না, কিন্তু গ্লোরিয়ার একের পর এক ফোনের পরে যখন আন্টি ফোন দেয়া শুরু করলেন, তখন আর না গিয়ে উপায় রইল না। নাটোর থেকে ফেরার সময় কিছু মিষ্টান্ন আর ফলমূল কিনে রাতে হাজির হলাম গ্লোরিয়াদের বাসায়।

গিয়ে দেখি এলাহী কান্ড! আন্টি একাই বিস্তর রান্না বান্না করেছেন। বললেন, রাজশাহীর হোটেলের খাবার কত ভালো তা জানা আছে। উনার বাসায় না উঠার জন্য খুব অনুযোগ করলেন। ভরপেট খাবার আর কথাবার্তায় চমৎকার দুটো ঘন্টা কাটিয়ে তারপর আমাদের আস্তানায় ফিরলাম।

আরেকদিন গেলাম লীনাদের বাসায়। লীনা আমার স্ত্রীর স্কুল জীবনের বান্ধবী। স্বামীর সাথে পাবনায় সংসার করেন। এখন রাজশাহীতে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। থাকেন বিদিরপুরে।

লীনার বাসায় যেতে বেশ এক অভিজ্ঞতা হলো। বাসা কোথায় জিজ্ঞেস করলেই লীনা বলে - আপনার আস্তানা থেকে বের হয়ে অটোতে উঠে অমুক জায়গায় আসবেন। সেখান থেকে আবার অটোতে অথবা বাসে করে আসবেন অমুক জায়গায়। সেখান থেকে অমুক জায়গায় যাওয়ার পথেই আমার বাসা। যতই জিজ্ঞেস করি জায়গার নাম কি - ততই বলে এভাবে এভাবে আসতে হবে। একই ঘটনা গ্লোরিয়ার বাসায় যাওয়ার সময়ও ঘটেছিল। হয়তো রাজশাহীর নিয়ম এটাই।

যাহোক, লীনা যখন তাদের বাড়ির জায়গার নাম বলল, তখন গুগল ম্যাপে সার্চ করে দেখি, সেটা নাটোরের দিকে, প্রায় বিশ কিলো দূরে। এবার লীনা আরও নির্দিষ্ট করে ঠিকানা দিলো - গোদাগাড়ী উপাজেলার বিদিরপুর বারোমাইল। আমারও আর ঠিকানা খুঁজে পেতে অসুবিধা হলো না। মজার ব্যাপার হলো - অটোচালক জিজ্ঞেস করলো, কার বাড়িতে যাবো। অথচ আমরা লীনার বাবার নামও জানি না। লীনাকে ফোন দিয়ে বাবার নাম জানতে চাইলাম, লীনা উত্তর দিয়ে পালটা জানতে চাইল - বাবার নামের কি দরকার। বুঝিয়ে বলার পরে লীনা বলল, অটোচালককে বলতে 'অমুকের বাড়ি'। অটোচালক একবারেই চিনল এবং এক্কেবারে ঠিক বাড়ির দরজায় নামিয়ে দিল। বুঝলাম - এখানে সব বাড়িই অটোচালকদের চেনা।

বেশ আপ্যায়ন হলো। বাহারি পদের নাস্তা। মাছ-গরু-মুরগী-সবজি ইত্যাদি মিলিয়ে বিশাল আয়োজন। ফলমূল। গলা পর্যন্ত খেতে হলো। আবার উপহার! ভালোবাসায় ডুবে মরার অবস্থা আরকি!

লীনাদের বাড়ির রাস্তাটা বাঁধের মতো। ডানদিকে লীনাদের বাড়ি, বামদিকে এক মিনিট হাঁটা দূরত্বে পদ্মা নদী। সবাই যখন গল্পে ব্যস্ত আমি তখন দুইবার নদীর তীরে বেড়িয়ে এলাম।

নদীতে প্রচুর পানি। বড় বড় অনেক গাছের গোড়া পানিতে ডুবে আছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি আর খুলে দেয়া ফারাক্কা বাঁধের পানিতে ডুবে দিয়েছে এসব এলাকা। কিছু নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। নদীতে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ। বাতাস আছে। ছায়ায় বসে থাকলে শান্তি লাগে বেশ।

শেষ বিকেলে লীনা আমাদেরকে ঘুরিয়ে দেখালো। নদী। ক্ষেত। ফল-ফলাদি। গেরস্থ বাড়ি। জানা গেল, এত কাছে নদী আসে না সাধারণত। বহুদূরেই থাকে। নদী পর্যন্ত এই বিশাল চরে চাষবাস হয় ধান, কলাইসহ বিভিন্ন ফসলের। এই জমির কোন সীমানা নেই। প্রত্যেকে তার বাড়ির সামনের জমি চাষ করে। নদী দূরে থাকলে জমির পরিমাণ বাড়ে। নদী কাছে এলে জমি কমে।

রাতে থেকে যাওয়ার জন্য বেশ জোরাজুরি করলো লীনারা। থেকে যেতে ইচ্ছেও করছিল। কিন্তু আমরা এসেছি রাজশাহী ঘুরে দেখার জন্য, এক বাড়িতে এত সময় কাটালে চলবে?

ফেরার পথে মেয়ে আমার বারবার প্রশ্ন করছিল - কেন আমরা চলে যাচ্ছি? কেন আমরা রাতে এখানে থাকবো না? উত্তর দিচ্ছিল ওর আম্মু, সেদিকে আমার মনযোগ ছিল না, আমার মন পড়ে থাকলো বিদিরপুরের নদীর তীরে।

সেই মন এখনও নদীর তীরে পড়ে আছে। হয়তো একারণেই আবারও যেতে হবে লীনাদের বাড়িতে।

পরবর্তী পর্ব - রাজশাহীর খাবার

ই-বুক আকারে সকল পর্ব একসাথে

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:২৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লাগলো। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:১৬

দারাশিকো বলেছেন: ধন্যবাদ আশরাফুল ইসলাম। পরের পর্ব পোস্ট করে দিয়েছি।

ভালো থাকবেন :)

২| ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: এরপর লীনাদের বাড়িতে গেলে আমাকেও সাথে নিবেন।

২৬ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:১৬

দারাশিকো বলেছেন: অকা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.