![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এখন সময় এসেছে না বলা কথা গুলো বলে বধীর মানুষের বধীরতা ঘোঁচানো, এখন সময় এসেছে আলোর বাঁধ ভাঙ্গার। যে আলোয় অন্ধকারগামী মানুষ চলতে শিখবে। আমি ভীতু, আমার গলার স্বরও নরম। আমি বলতে সাহস করবনা বললেও কেউ শুনতে পাবেনা। যাদের সাহস আছে, যাদের গলা উঁচু আছে তাদেরকে সমবেত স্বরে বলতে হবে। আলোর বাঁধ ভেঙ্গে দাও! অন্ধকারকে হটাও!
এইরকম একটা পরিস্থিতে মেয়েটির হাসির কারণ ছেলেটি কোন ভাবেই বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ আগে যা ঘটেছে তাতে অপলার কান্নাকাটি করার কথা। মেয়েটি হাসির শব্দে ছেলেটি পুরাটায় কনফিউজ হয়ে গেছে, ছেলেটি বুঝতে পারছে না মেয়েটি অতি শোকে পাথর হয়ে গেছে নাকি অন্য কোন কারণে হাসছে।
মেয়েটি হাসছে, তার হাসির সাথে তার সমস্ত শরীর দোল খাচ্ছে, বিকেলে হালকা বাতাসে কাশফুল যে ভাবে দোল খায়। চিৎকার করে হাসছে, তার স্নিগ্ধ শরীরটাতে কাদা লেগে আছে, প্রচন্ড রকমের বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির তীব্রতা এতটাই যে কয়েক মিটার দূরের বস্তুও বৃষ্টি ভেদ করে ঠিক-ঠাক দেখা যাচ্ছে না। শরীরে কাদাগুলো ধুয়ে যেতে শুরু করেছে। বৃষ্টির তীব্রতায় হয়তো দাগগুলোও ধুয়ে যাবে। বৃষ্টির সাথে প্রচন্ড বেগে বাতাস বইছে, মেয়েটা শীতে কাঁপছে। শীতের কাঁপুনির সাথে হাসির কাঁপুনি একাকার হয়ে দাঁতে দাঁত লেগে অন্যরকম এক শব্দ তৈরী হয়েছে।
বৃষ্টির তীব্রতা একটু একটু করে কমতে শুরু করেছে, মেয়েটি হাসি থেমে গেছে কিন্তু কাঁপুনি বাড়তে শুরু করেছে। ছেলেটির কাছে মনে হচ্ছে মেয়েটি কাঁপতে কাঁপতে ঘাসের উপর পড়ে যাবে। এখন বোধ হয় তাকে ধরে উদ্ধার করা উচিৎ কিন্তু ছেলেটি বুঝতে পারছে না বা সাহস পাচ্ছে না যে উদ্ধার করা উচিৎ কি না।
মেয়েটির উপর আরিকের চরম মায়া লাগতে শুরু করেছে। মেয়েটির প্রতি তার এই মায়ার কারণও সে বুঝতে পারছে না বা বোঝার সময়ও এটা নয়। তার কি এখন উচিৎ হবে? এখান থেকে যত দ্রুত পারে সরে যাওয়া; না কি মেয়েটিকে সাহায্য করার জন্য অনুমতি নেওয়া! ছেলেটি কিছুই বুঝতে পারছে না। বৃষ্টির তীব্রতা কমেছে কিন্তু থামেনি, বৃষ্টির ধারা দেখে মনে হচ্ছে এই বৃষ্টি সহসা থামবেও না।
‘তোমাকে কি আমি সাহায্য করতে পারি?’
ছেলেটি সাহস করে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করেই ফেলল। প্রশ্ন শুনে মেয়েটি আবার হাসতে শুরু করল। হাসির শব্দে ছেলেটির বিভ্রান্তি আরও বেড়ে গেলো।
ছেলেটির বিভ্রান্তি বাড়ার সাথে সাথে মেয়েটির প্রতি তার মায়াও বাড়তেও শুরু করেছে। ছেলেটি বুঝতে পারছে না সে মেয়েটির প্রেমে পড়তে শুরু করেছে কি না। ছেলেটি সাহস করে আবার বলল
‘চল, তুমি আমার গাড়ীতে বসবে।’
মেয়েটি কোন কথা না বলে ছেলেটির পিছে পিছে হাটতে শুরু করল। মেয়েটির এই আচরণে ছেলেটি ভয় এবং মেয়েটির প্রতি ভালবাসা দু’টোই সমহারে বাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টি থেমে গেছে, শহরতলীর এই মেঠো পথটাতে মানুষ আবার চলতে শুরু করেছে।
‘যাও বস’
ছেলেটি মেয়েটিকে গাড়ীর পেছনের দরজা খুলে বসতে অনুরোধ করল। অনুরোধের পর ছেলেটি বিভ্রান্তি আরও বেড়ে গেলো। মেয়েটি কোন কথা না বলে ঈশারায় ড্রাইভিং সীটের পাশের সীটে বসার কথা জানালে ছেলেটি বাধ্য ছেলের মত গাড়ীর দরজা খুলে বসার সুযোগ করে দিল।
বৃষ্টি থেমে গেছে, ভেজা রাস্তায় ধীরে ধীরে গাড়িটি ড্রাইভ করে চলেছে।
‘তোমার নাম কি?’
‘অপলা’, নাম বলেই মেয়েটি আবার হাসতে শুরু করল!
‘তুমি সব সয় হাস কেন? এই পরিস্থিতিতে কোন মেয়ে হাসতে পারে সেটা আমার ধারনা ছিলনা। ’
‘আর কোন মেয়ের সাথে কি আপনি এইরকম পরিস্থিতি ঘটিয়েছেন?’ বলে আবার হাসতে শুরু করল?
‘আমি ধারনা ছিল বলেছি’ ছেলেটি উত্তর দিল।
‘আপনার কি মনে হয়েছিল? ঘটনা ঘটানোর পর আমি চিৎকার করে লোক জড় করব? দৌঁড়ে পুলিশের কাছে যাব? দ্রুত কোন নেতার কাছে গিয়ে বিচার চাইবো?’
‘যেগুলো বল্লেন, সুবিধাজনক যে কোন একটা বেছে নিতে পারতেন’ কেন জানি ছেলেটি যে অপরাধ করেছে তার ফলে তার পাপের যে শাস্তির ভয় তার অনেকটাই কেটে গেছে। মেয়েটির এজাতিয় ঘটনার অব্যবহিত পরে যে জাতীয় আচরণ করার কথা ছিল তা না করায় ছেলেটি ভয় কমে গেছে কিন্তু বিভ্রান্তি বেড়েছে।
‘উপরের যে কোন একটা কিছু করলে আপনার কি মনে হয়, তাতে আপনি আপনার পাপের উপযুক্ত শাস্তি পেতেন?’
ছেলেটি এইবার চমকে উঠলে জিজ্ঞেস করল-.
‘মানে?’
‘মানে, সময় হলেই আপনি বুঝতে পারবেন’
কিছু সময়ের জন্য ছেলেটি মানে আরিকের মন থেকে প্রায় যে ভয়টি চলেই গিয়েছিল তা আবার ফিরে এসেছে, ভয়ের সাথে নতুন এক অজানা আশঙ্কাও তৈরী হয়েছে। ছেলেটি কোন ভাবেই মেয়েটির মনোভাব বুঝতে পারছে না।
মেয়েটি আবার হাসতে শুরু করল, ছেলেটির কাছে কিছুক্ষণ পূর্বে এই হাসির অর্থ যেমন ছিল এখন আর তেমন নেই। ‘উপরের যে কোন একটা কিছু করলে আপনার কি মনে হয়, তাতে আপনি আপনার পাপের উপযুক্ত শাস্তি পেতেন?’ বাক্য দু’টোই দুই মিনিটের ব্যবধানের অপলার হাসির অর্থ সম্পূর্ণ রূপে পাল্টে দিয়েছে।
অরিকের শরীরে কাদা লেগে আছে, তবে গাড়ীর এসি’র বাতাসে শরীরের কাপড়গুলো শুকিয়ে গেছে। অরিক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজাতে প্রচন্ড রকমের সংকোচ ও ভয় পাচ্ছে। অরিক অন্তর্মুখি একটি ছেলে, কম কথা বলায় সবাই ওকে স্নেহ করে। অরিকের শেষ ভরসা বাড়ীর সকলের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা, কিন্তু সেটা কতটুকু কাজ করবে তা বুঝতে পারছে না। তাদের দিকে কাউকে আসতে দেখে অরিক স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করল এবং তাদের ফ্লাটের কলিংবেল চাপল। কেউ একজন কি-হোল দিয়ে দেখলো,
‘ভাইয়া তুমি, তোমার এই অবস্থা কেন? আর উনিই বা কে?’
অরিক কোন কিছু বলার আগেই অপলা দরজার ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল-
‘তোমার নাম কি?’
‘আনিসা’
‘আপনার নাম কি?’
‘অপলা’
‘কিন্তু আপনি কে?’
‘তোমাদের বাসায় এই প্রথম আসলাম, তুমি বাড়ীর দরজায় দাঁড় করিয়ে কথা বলবে?, ভিতরে যেতে বলবে না?’
আনিসা একটু আশ্চর্য হলেও অপলার সাবলিল উপস্থিতি ও উপস্থাপনায় আনিসার বুঝতে কোন সমস্যা হলো না যে, ইনিই সেই ব্যক্তি যিনি এই বাড়ীর একমাত্র পূত্রবধূ হয়েছেন অথবা হতে চলেছেন। কিন্তু আনিসা অনেকবার তার ভাইয়ার কাছে জানতে চেয়েছে, সে কাউকে ভালবাসে কি না, এমনকি গতকাল যখন অরিকের বাবা মা মিলে সবাই ওর বিয়ের বিষয়ে কথা বলছিল তখনও আনিসা অরিক কে জিজ্ঞাসা করেছিলে সে কাউকে ভালবাসে কিনা এবং তখনও অরিক যথারীতি উত্তর দিয়েছিল ‘না’।
‘নিশ্চয়, আসুন, ভেতরে আসুন’ হাসতে হাসতে আনিসা বলল।
আনিসার কথা শেষ হওয়া মাত্রই অপলা চিৎকার করে হাসতে লাগল; আনিসা হাসির শব্দে বিভ্রান্ত হয়ে গেলো; কিছুক্ষণ আগে এই মেয়েটির সাথে তার যে সম্পর্ক সেটা ননদ-ভাবী হতে পারে বলে যে প্রত্যাশা করেছিল এখন তা এক আশঙ্কায় পরিণত হলো।
‘কি ব্যাপার আনিসা! হাসির শব্দে কি ভয় পেয়ে গেলে? ভয় তো পাবেই, তোমার ভাইয়াও যে আজ সারা বিকেল থেকে আমার হাসির শব্দে ভয় পেয়ে আসছে’
আনিসা কোন কথা বলল না, শুধু ভাবতে লাগল এই মেয়েটি হয়তোবা একটু পাগলাটে গোছের হবে অথবা অন্য কোন কারণ আছে? কিন্তু চোখের দৃষ্টি, অঙ্গভঙ্গি ও অঙ্গ বিন্যাস দেখে মনে হয় না তার বুদ্ধি নামক লৌকিকতার এই প্রদর্শনীয় বস্তুর কোন অভাব আছে। ভাবতে ভাবতে আনিসা অপলাকে অরিকের বেডরুমের দিকে নিয়ে গেলো। প্রথমে আনিসা ভাবতে পারছিল না মেয়েটিকে ড্রয়িং রুমে নিবে, নাকি তার রুমে, নাকি তার ভাই অরিকের রুমে নিবে। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে অপলার হাসির শব্দে আনিসা যে বিরক্ত ও বিভ্রান্ত হয়েছে সেই বিরক্ত ও বিভ্রান্তই আনিসার সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভ্রান্তটা কাটাতে সাহায্য করেছে।
‘তুই ওকে আমার রুমে রেখেছিস কেন? একটু বিরক্তির স্বরেই আনিসাকে অরিক জিজ্ঞেস করল।
‘তোমার নির্লজ্জ বউ তোমার রুমে রাখব না, কোথায় রাখব? আনিসাও বিরক্তির স্বরে প্রশ্নের মাধ্যমে উত্তর দিল।
‘ও আমার বউ কে...... বলতে বলতে বাক্যটা শেষ না করেই অরিক বল্লল
‘রেখেছিস ভাল করেছিস’
‘তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন? তোমার বউয়ের কাছে যাও’
অরিক আনিসার কথায় কোন কর্ণপাত না করে, তার বাবার রুমের দিকে তাকালো।
‘তোমার আপাতত কোন ভয় নেই, বাবা বাড়ীতে নেই, বাজার করতে গেছে। আম্মাও বাবার সাথে গেছে’
‘কতক্ষণ গেছে?’
‘তোমরা আসার কিছুক্ষণ আগেই গেছে, আসতে বেশ দেরী হতে পারে’
অরিক এই দেরীর সুযোগটুকু কাজে লাগাতে চায়, কিছুক্ষনের জন্য হলেও সামান্য স্বস্তি পেল, কিন্তু অতি অল্প সময়ের জন্য। অরিকের মধ্যে প্রচন্ড রকমের অস্থিরতা কাজ করছে, সাধারণত মানুষ খুব অস্থির হলে নতুন কোন ভাবনা সে ভাবতে পারে না, অরিকেরও তাই হচ্ছে, সে কি ভাববে, কি নিয়ে ভাববে, কি করবে, কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল
অরিক এইবার আরও অস্থির হয়ে উঠল ;
‘বাবা তুমি? এত তাড়াতাড়ি ফিরে এলে তোমার বাজার কই?’ আনিসার বাবাকে করা এই প্রশ্নটি অরিকের কানে যাওয়া মাত্রই অরিক দৌঁড়ে তার নিজের রুমে চলে গেলো।
‘মারে, আমার ওয়ালেটটা ফেলে গেছি, তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় তো’
যদিও অরিকের কাছে মনে হলো, বাবা আনিসাকে প্রশ্ন করছে, ওয়ালের পাশে বসে আছে মেয়েটি কে? বাবার প্রশ্নের শ্রবণ বিভ্রমে রুপান্তির অর্থে অরিকের বুক কাঁপনি শুরু হয়ে গেলো।
‘দাঁড়াও বাবা এনে দিচ্ছি’ বলে আনিসা দৌঁড়ে ওয়ালেটটা নিয়ে বাবাকে দিয়ে বলতে গেলো
‘বাবা তোমার সাথে একটা কথা আছে’
‘কি কথা দ্রুত বল মা’
‘বাবা ভাইয়া বাসায় ফিরেছে, তবে...
‘তবে কি’
মূর্হুতের মধ্যে আনিসার তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বলল
‘বাজার থেকে ফিরে এসো, তখন বলব’
‘আচ্ছা ঠিক আছে’ বলে জহুর”ল সাহেব চলে গেলেন।
অরিক তার বাবা ও বোনের শেষে সংলাপটাগুলো শুনে আনিসার প্রতি সে কিছুটা কৃতজ্ঞতাবোধ অনুভব করল।
আনিসা, তার ভাইয়া, মেয়েটি ও পুরো ঘটনার প্রতি স্বাভাবিক ভাবেই একটু বেশিই কৌতুলী হচ্ছে! অতি কৌতুহলের কারণেই অপলার প্রতি বিরক্তির অংশটুকু ভুলে গিয়ে আনিসা অরিকের রুমে গেলো
‘ভাইয়া বলতো আসলে বিষয়টা কি? তুমি কি মেয়েটাকে বিয়ে করেছো? নাকি বিয়ে করার জন্য সাথে করে নিয়ে চলে এসেছো?, তোমাকে তো মেয়েদের দিকে তাকাতেই লজ্জা পেতে দেখি, অথচ তুমি প্রেম করে এতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছো? ব্যাস আমিতো ভাবতেই পারছি না।’
‘আমি তোকে পরে সব খুলে বলবো, আপাতত বিষয়টি তুই একটু সামলে দে’
‘আমি কি ভাবে সামলাবো?’
‘যেহেতু মা এবং বাবা কেউ দেখেনি যে মেয়েটি আমার সাথে এসেছে, সেহেতু তুই বলবি মেয়েটি তোর বান্ধবি, সে পরীক্ষার কারণে কয়েকদিন এখানে থাকবে’
অপলা আবার হাসতে শুরু করলো, জোরে হাসতে শুরু করলো!
‘ব্যাস যথেষ্ট হয়েছে, আর হাসবেন না, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এখানে হাসির কি হলো’
আনিসা চরম বিরক্তির সাথে কথাগুলো শেষ করেই মেয়েটি চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটির দু’চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। আনিসা আবার খুব ভালো করে মেয়েটির চোখের দিকে তাকালো। আনিসার মনে পড়লো, সেই কোথায় যেন পড়েছে, মানুষ মুখ দিয়ে হাজারটা মিথ্যা কথা বলতে পারে কিন্তু তার চোখ কখনও কোন মিথ্যা বলতে পারে না। আনিসার চোখে অপলার চোখ পড়তেই অপলা চোখ ফিরিয়ে নিলো। আনিসা এই প্রথম বুঝতে পারলো মেয়েটি আসলেই কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুব দু:খ পেয়েছে। অপলা হাসি বন্ধ করে দিয়েছে। আনিসা কোন ভাবেই অনুমান করতে পারছে না যে, আসলে কি হয়েছে, মেয়েটি কি বাবা-মাকে ছেড়ে ভাইয়ার হাত ধরে চলে এসেছে বলে দু:খ পাচ্ছে, নাকি অন্য কোন কারণ!
‘কিন্তু ভাইয়া, মা-বাবাকে কি বলবো?’
‘আমি জানি না তুই কি বলবি, তবে যা বলে পারিস তাই বলে রাখবি, আমি কিছু বলতে পারবো না’
কথা শেষ হওয়া মাত্রই অরিক হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো
আনিসা এইসব কান্নাকাটির কোন অর্থই বুঝতে পারছে না, তবে এইটুকু বুঝতে পারছে, তার ভাইয়া কোন মেয়ের সাথে প্রেম করে তাকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে তুলেছে বিষয়টি এত সহজ নয়। এই পরিস্থিতে মেয়েটিকে ও তার ভাইয়াকে সে কিছুই বলতে চায়না, আনিসাকে শুধু পুরো ব্যাপারটা সামলাতে হবে। ভেতরে ভেতরে আনিসার কাছে নিজেকে বেশ সিনিয়র মনে হতে লাগলো, তার কাছে মনে হলো তার এখন অনেক দায়িত্ব, তার প্রথম কাজ হলো, তাদের বাড়ীতে মেয়েটির স্বচ্ছন্দ অবস্থান নিশ্চিত করা, দ্বিতীয় দায়িত্ব হলো ভাইয়া ও মেয়েটির প্রকৃত সত্য ঘটনা আবিস্কার করা অত:পর সমস্যার সমাধান করা।
‘চল, আমার রুমে চল’
আনিসা মেয়েটিকে তুমি বলতে শুরু করেছে; তার কারণ হতে পারে মেয়েটির প্রতি মায়া হতে শুরু করেছে। আনিসা যখন মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিল তখন সে খেয়াল করে দেখেছিল মেয়েটির চোখের দিকে তাকালেই এক ধরনের মায়া হয়। মেয়েটির গায়ের রং শ্যামলা তবে উজ্জল শ্যামলা নয়, লম্বায় পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চির মত হবে, চোখ দু’টো বড় বড়, মুখাকৃতি গোলাকার। শারিরীক গঠন আকর্ষনীয় বলার জন্য ভাবতে হয়না।
মেয়েটি কোন কথা না বলে আনিসার পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করলো।
‘বাবা যশোর থেকে আমার এক বান্ধবী এসেছে’
‘যশোর তোর কোন বান্ধবী আছে বলে তো আমি কখনও শুনিনি’
‘আমার সব বান্ধবীর গল্প কি আমি তোমাকে বলেছি?’
‘যশোর ওত দূরে তোর বান্ধবী কি করে হলো?’
‘কি যে বলনা বাবা, এখন ফেসবুকের যুগ, এখন দুর নিকট এসব কোন ব্যাপার নাকি, এখন ধানমন্ডি থেকে উত্তরা যাওয়া যা, ধানমন্ডি থেকে নিউওয়র্ক যাওয়াও সে কথা’
‘তা যা বলেছিস মা কিন্তু এখন যুগ যা হয়েছে তাতে স্বল্প পরিচিত কাউকে বাসায় রাখতে হলে ভেবে চিন্তে রাখিস, আর তাছাড়া যে বাড়ীতে উপযুক্ত ছেলে আছে সেই বাড়ীতে একটি মেয়ে রাখতে হলে একটু ভেবে চিন্তে রাখাই উচিৎ’
‘তুমি ওতো সব ভেবো নাতো বাবা, তুমি ভাইয়াকে দেখেছো কখনও কোন মেয়ের চোখের দিকে তাকায়? আর মাকে তুমিই সামলিও’
ভোর সাড়ে পাঁচটার মত বাজে, অরিক সাধারণত সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ঘুম থেকে উঠে। সরকারী চাকুরী থেকে রিটায়ার করার পর অরিকের বাবা রিটায়রমেন্টের টাকা দিয়ে মিরপুর দুই এ চার কাঠার উপর ১০ ইউনিট সমৃদ্ধ পাঁচ তলা একটি বাড়ী করেন এবং তার স্ত্রীকে নিয়ে হজ্জ্ব করে আসেন। তার পর থেকেই এ বাড়ীর সবাইকে মোটামুটি ভাবে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হয়। বাবার এই বাধ্য করা নামায সাধারণত দুই বা তিন ওয়াক্ত এর বেশি পড়া হয় না।
অরিককে কখনই ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামায পড়তে দেখা যায়নি। তবে আজকে পাশের মসজিদে ফজরের নামায পড়তে গেছে। মসজিদে ঢোকার প্রবেশ পথেই একটি মাঝারি সাইজের আম গাছ রয়েছে, গাছটিতে কিছু পাখি কিচির মিচির করে ডাকা-ডাকি করছে, অরিক কখনও ভেবে দেখেনি পাখির ডাক শুনতে কেমন লাগে, তবে যেমনই লাগুক আজকে অরিকের কাছে পাখির ডাক শুনতে খুব বাজে লাগছে। পাখির ডাকে অরিক খুবই বিরক্ত হচ্ছে। পাখির ডাকে বিরক্ত হয়েই অরিক আবার মসজিদে প্রবেশ করলো, দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে মোনাজাত করতে করতে চোখের পানি ফেলতে লাগল।
‘মা আনিছা অরিক কি ঘুম থেকে উঠেছে?’
‘জ্বি বাবা, ওতো বাইরে গেছে’
‘এত সকালে বাইরে কি করতে গেছে?’
‘জানি না তো বাবা, কেনো? ভাইয়াকে কি কিছু বলবে, বাবা?’
‘হ্যাঁ মা, শুধু তোর ভাইয়াকেই নয়, তোর সাথেও কথা আছে’
‘কি কথা বাবা? এখনই বলবে?’
‘আগামীকাল আমার এক পরিচিতজন একটা মেয়ে দেখার কথা বলছিল, ধানমন্ডির কোন এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে তুই ও তোর ভাইয়া মেয়েটিকে দেখে আসবি’
‘বাবা, মেয়েটা কালকেই দেখতে যেতে হবে’
‘কেন, তোদের মানে তোর ভাইয়ার কি কোন সমস্যা আছে?’
‘আছে বা নেই কোনটাই আমার জানা নেই বাবা, তবে ভাইয়ার সাথে কথা বলে চূড়ান্ত করলে ভাল হতো না’
‘তাহলে তুই তোর ভাইয়ার সাথে কথা বল’
‘ঠিক আছে বাবা’
এমন সময় কলিং বেল বাজতে শুরু করলো
‘তুমি অনেকদিন বাঁচবে ভাইয়া, আমি আর বাবা তোমার কথাই বলছিলাম’
‘অনেক দিন দুনিয়াতে বেঁচে কি লাভ? যতদিন বাঁচবি ততই পাপ করবি’
‘তোমার কি হয়েছে ভাইয়া?’
‘কি বলতে চাইছিলি তাই বল’
‘বাবা তোমাকে পাত্রী দেখতে যেতে বলছেন, বাবা তো আর জানেন না যে পাত্রী দেখতে যাওয়ার কোন দরকার নেই, বরং পাত্রীই তার বাড়ীতে এসে বসে আছে, এখন বল ভাইয়া আমি বাবাকে কি বলব?’
‘পাত্রী দেখতে যেতে বলেছেন দেখতে যাব’
‘তাহলে যাকে নিয়ে এসেছো তার কি হবে?’
‘সেটা পরে দেখা যাবে’
‘আনিসা তোমার ভাইয়ার পাত্রী আমিও দেখতে যাব, আমাকে তোমরা সঙ্গে নেবে?’
অপলা ও অরিকের কথোপকোথনে আনিসার বিভ্রান্ত বেড়েই চলেছে। আনিসা বুঝতে পারছে না তারা দুজন তার সাথে রসিকতা করছে কি না। আনিসা তার ভাইয়াকে কখনও কারও সাথে রসিকতা করতে দেখেননি। এবং আনিসার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ওর ভাইয়ার রসিকতা করার জ্ঞান না থাকার কারণেই ও কখনও কোন মেয়ের সাথে প্রেম করতে পারতো না।
অরিক শুধু নামাজ পড়া ছাড়া আজকে অন্য কোন কারণে বাড়ীর বাইরে যায়নি। এখন বিকাল হয়ে গেছে, গ্রীষ্মের এই সময়টাতে সাধারণত কালবৈশাখী ঝড় দেখা যায় কিন্তু খুব একটা বৃষ্টি হতে দেখা যায় না। তবে এইবার ব্যাপক বৃষ্টি ও বজ্রপাত হচ্ছে। গতকাল বিকালের সময়টাতে আকাশে প্রচুর পরিমাণে কাল মেঘ জমে গিয়েছিল এবং তার তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে তখন চারিদিকে ভরা সন্ধ্যা নেমে এসেছিল আর বিপত্তিটাও ঘটেছিলও তখন। অরিক সে সব কথা কোন ভাবেই ভাবতে চায় না। কিন্তু অরিক যতবার ভাবছে সেই ঘটনাটা আর ভাববে না ততবারই তার মাথায় ঘটনা চেপে বসছে।
অরিক তার দুই হাতের দুই কনুই হাটুর উপরে রেখে দুই বন্ধনীর উপর থুতনি রেখে কি যেন ভাবছে।
অপলা বেলকনির গ্রীল দিয়ে আকাশের দিক তাকিয়ে আছে, এমন সময় অরিকের চোখ পড়ে অপলার চোখের দিকে। অপলার দু’চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরছে। অরিকের কাছে মনে হচ্ছে, সে জীবনে কখনও শ্যামবর্নের এত সুন্দরী মেয়ে তার চোখে দেখেনি।
অরিক কিছু একটা ভেবে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো।
‘আমি পাত্রি দেখতে যেতে চাই না’
‘কেন, যেতে চান না?
‘আমি প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই ’
‘আপনার কি মনে হয় আমাকে বিয়ে করলেই আপনার এতবড় পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে? আর আপনার কেন মনে হলো আমাকে বিয়ে করলেই আমি আপনাকে ক্ষমা করে দেব’
‘তাহলে তুমি আমাকে শাস্তি দিচ্ছ না কেন বা শাস্তি দেওয়ার আয়োজন করছো না কেন?’
‘আপনি আমাকে কেন তুমি করে বলছেন?’
‘সরি, আপনি করেই বলব’
‘আপনার কেন মনে হলো যে, আমি আপনাকে শাস্তি দেব না, আপনার কি মনে হয় থানায় গিয়ে পুলিশকে বলে আপনাকে ধরিয়ে দিয়ে বিচারের মাধ্যমে পাঁচ দশ বছরের শাস্তি দিলেই আপনার পাপের উপযুক্ত শাস্তি হয়ে যাবে? আপনার পাপের আরও বড় শাস্তি দিতে চাই, আপনাকে আমি প্রায়শ্চিত্ত করার কোন সুযোগ দিতে চাই না ’
‘আপনি আমাকে পুলিশে দিবেন না, প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিবেন না আবার পাত্রী দেখতে যেতে বলছেন, তাহলে আপনি আমাকে শাস্তিটা দিবেন কি ভাবে’
‘আপনাকে কিভাবে শাস্তি দেব, এনিয়ে টেনশনে রাখাটায় আপনার শাস্তি দেওয়ার প্রথম পর্বটা শুরু, শোনেন আগামীকাল বিকালে ধানমন্ডি সাতাশে Pita Pan নামে একটি রেস্টুরেন্ট আছে, ওখানে আপনি পাত্রী দেখতে যাবেন’
অরিক অপলার মেজাজ ও অভিব্যক্তি দেখে আর কিছু বলার সাহস করল না, শুধুমাত্র মাথা নেড়ে সম্মতি জ্ঞাপন করলো।
অরিককে প্রচন্ড রকমের বিদ্ধস্ত লাগছে, তার দিকে তাকালে মনে হচ্ছে সদ্য যুদ্ধ শেষ করে ব্যারাকে ফিরে বিশ্রাম নিচ্ছে, চোখে মুখে পরাজয়ের ছাপ লেগে আছে। কিন্তু অরিকের এই পরাজয়ে গল্প পৃথীবির চারজন মানুষ ছাড়া আর কেউ জানে না, একজন অরিক নিজে, দ্বিতীয় জন অপলা নিজে তৃতীয় ও চতুর্থজন পাঠকের সামনে পরে তুলে ধরা হবে।
প্রায় সন্ধ্যা শুরু হয়েছে, এই সময়টাতে ধানমন্ডির রাস্তাগুলোতে প্রচন্ড রকমের জ্যাম থাকে, চারিদিক থেকে শুধু মানুষের কোলাহল ও গাড়ীর বিপ শব্দ শোনা যায়। রেস্টুরেন্টটি রাস্তার ধারে হওয়া সত্ত্বেও সাউন্ড প্রুফ ব্যবস্তা থাকায় বাইরে শব্দ আসছে না। Chandeliers এর হালকা আলো অরিকের অসহ্য লাগছে। প্রত্যাশীত পাত্রি এখনও এসে পৌঁছায়নি। অরিকের নানান চিন্তার পাশা-পাশি মেয়েটি কেমন হতে পারে সেই চিন্তা কখনও সখনও উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে কিন্তু ঘুরপাক খাচ্ছে না। যতুটকু উুঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে অরিকের চোখে একটা কাল স্বাস্থ্যবতী মেয়েই ভেসে উঠছে। অরিকের ডান পাশে আনিসা ও তার বাম পাশে অপলা বসে আছে। সবাই চুপচাপ বসে আছে।
আনুমানিক পঁচিশ বছরের একটি লম্বা গড়নের সুন্দরী মেয়ে চল্লিশোর্দ্ধ এক ভদ্রলোকসহ অরিকের চেয়ারে সামনে বসে পড়লো। এই প্রথম বিগত তিন দিন ধরে অরিকের কোন একটি ঘটনা ঘটল যাতে অরিকের বিরক্ত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু অরিক তা হলো না।
‘আপনি ভাল আছেন অরিক সাহেব?’ সদ্য আবির্ভূত হওয়া মেয়েটি অরিককে জিজ্ঞেস করলো অত:পর তৎক্ষণাত জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো। অরিকের কাছে মনে হলো অপলার কাছ থেকে এই হাসিটা কপি করা হয়েছে।
‘জ্বি ভাল আছি, আপনি কি আমাকে চেনেন?’
‘চিনবো না মানে, চিনি এবং সারা জীবন ধরে চিনব ও চেনাবো, যদি চেনার সুযোগটা আমাকে দেন’
‘মানে?’ অরিক কিঞ্চিত কিংকর্তব্যমূঢ় হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
‘আপনি পাত্রী দেখতে আসছেন না? আমি সেই সু-পাত্রি’
অরিক সংকোচ, দ্বিধা ভয় ইত্যাদি কণ্ঠে জড়িয়ে বললো
‘বসেন প্লিজ’
অরিকের অনুমান সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করে যে মেয়েটি তার সামনে বসে আছে, তাকে সুন্দরী বলতে একটুও ভাবতে হয় না। উচ্চতায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির মত হবে, গায়ের রং গৌরবর্ণ, চোখ দু’টো দেখে মনে হচ্ছে বিধাতা শিল্পি দিয়ে স্পেশাল কেয়ার নিয়ে তৈরী করেছেন।
পাত্রী-পাত্র দেখার ক্ষেত্রে সাধারণ মধ্য-বিত্ত বাঙালিরা একটি নির্দিষ্ট সিলেবাস অনুসরণ করে থাকে, সাধারণ এক্ষেত্রে তাই হলো। খুব সামান্য কিছু নাটকীয়তা ছিল বটে। কিন্তু অরিকের কাছে মনে হলো Pita Pan -এ যে অতি সাধারণ নাটকটি আজ মঞ্চয়ান করা হলো তা কোন এক অসাধারণ গল্পকারকে দিয়ে লেখানো হয়েছে।
নানা সংকোচ, শঙ্কা আশঙ্কা থাকলেও অরিককে অদৃশ্য একচাপে বিয়ের পিড়ীতে বসার সুযোগটা নিতেই হলো।
ঘরোয়া ভাবেই অতি নিকট কিছু আত্মিয় ডেকে অরিকদের মিরপুরের এই বাড়ীর তিন তলাতেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হলো। অরিকের মা ও বাবাকে খুবই চিন্তিত মনে হলো। তাদের কাছে মনে হলো কালো পথারের এক জগদ্বল পাহাড় তাদের মাথার উপর চাপিয়ে দেওয়া হলো।
সংক্ষিপ্ত সময়ের আয়োজনে কোন রকম পেশাদার মানুষ ছাড়ায় অরিকের বাসরঘরটি সাজানো হয়েছে, সেই অরিকের স্ত্রী তনিমাকে অরিকের কোন এক ইয়ার্কি সম্পর্কের আত্মীয়া এসে অরিকের কাছে দিয়ে গেছে।
‘কি ব্যাপার আপনাকে এত বিমর্ষ মনে হচ্ছে কেন? শুনেছি বাসর ঘরে ছেলেরা মেয়েদের কি সব প্রশ্ন করে, আপনি সে সব প্রশ্ন আমাকে করবেন না?’
‘কি প্রশ্ন করে?’
‘এই যেমন ধর”ন, আমি প্রেম করেছি কিনা, করলে কয়টা প্রেম করেছি, আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে চুমো খেয়েছে কিনা, চুমো খেলে কি ভাবে খেয়েছিল, কবে খেয়েছিল, তার কথা এখন মনে পড়ছে কি না, এই সব নানান প্রশ্ন’
‘তুমি জানলে কি করে? বাসর ঘরে জামাইরা এই সব প্রশ্ন করে’
‘কি বলেন আমার বান্ধবীদের বিয়ে হয়েছে না, ওরা বলেছে, ওরা আরও বলেছে বিয়ের আগে যাই হোক না কেন বাসর ঘরে বরকে একটাও সত্যি কথা বলবি না, বলেছে, বলবি যে, আমি কোন দিন কোনে ছেলের সাথে সেই ভাবে কথাই বলিনি! কিন্তু আমি কোন মিথ্যা টিথ্যা বলতে পারবনা, আমি যা যা করেছি সব আপনাকে বলে দেব, যদি আপনি জানতে চান অবশ্যই এমনকি না জানতে চাইলেও বলব,’
‘আমি সব ছেলেদের থেকে তো আলাদা কেউ নই, তাহলে আমি জানতে চাইবো না কেন? তবে আমি বিশ্বাস করি যে, আমি যেহেতু বিয়ের আগে কখনও প্রেম করিনি আমার যে স্ত্রি হবে সেও কখনও প্রেম করবে না’
‘এগুলো আপনার বিশ্বাস না প্রত্যাশা, আর তাছাড়া ঈশ্বর এইরকম কোন কন্ডিশনে পাত্র-পাত্রী মিলিয়ে দেয় বলে আমার জানা নেই’
‘ধর্ম সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তাই তুমি এসব বুঝবে না’
‘তবে আপনি বিশ্বাসের ফর্মে যে প্রত্যাশার কথা বলেছেন, তার ফলাফল কিন্তু খুবই হতাশাব্যঞ্জক’
‘মানে?’
‘মানে হলো, আপনি প্রেম না করলেও আমি কিন্তু করেছি, আবার বিয়ের আগে আপনি এমন কিছু ঘটিয়েছেন যা আমার জীবনে ঘটেছে’
‘মানে, তুমি কি বলছো?’
‘কি ব্যাপার আপনি চমকে উঠলেন কেন? রিতীমত বিশ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এসি চলছে, ঠান্ডা দেখে মনে হচ্ছে এসিতে ঠিক-ঠাক কাজও করছে, কিন্তু আপনি ঘামতে শুর” করেছেন, ব্যাপারটা কি বলেন তো,? শুনেন মি. অরিক আমি একটা ছেলেকে ভালবাসতাম, ভীষণ ভালবাসতাম’
‘ভাল বাসতে তাহলে তাকে বিয়ে করতে, আমাকে কেন বিয়ে করতে আসলে’
‘ঐ যে বল্লাম ভালবাসতাম, এখনতো বাসি না, এখন যেহেতু বাসিনা তাই বিয়ে করিনি’
‘কিন্তু আমি তো কাউকে ভালবাসতাম না, আর কাউকে ভালবাসলে আমি তাকেই বিয়ে করতাম, তুমি আমাকে কেন বিয়ে করতে এসেছো?,’
‘কি ব্যাপার আপনি ঘেমে যাচ্ছেন কেন, আর সামান্য প্রেম-ট্রেম নিয়ে এত উত্তেজিতই বা হচ্ছেন কেন? এতো শুধু প্রেমের কথাই বল্লাম, আর অনেক কিছু থাকতে পারে; বিয়ের আগে বউয়ের প্রেম ট্রেম নিয়ে তো এযুগের স্মার্ট ছেলেদের তো এত টেনসান করার কথা না’
‘আমি বিয়ের আগে প্রেমে বিশ্বাসি নই, এগুলো আমাদের ধর্ম এ্যালাউ করে না’
‘এর মধ্যে আবার ধর্ম নিয়ে আসছেন কেন?; ’
‘আচ্ছা প্রেম না হয় মেনে নিলাম, আর কিছু করনি তো?’
‘কেন করব না, প্রেম হলে মানুষতো অনেক কিছুই করতে পারে, আমি সেসব করেছি, সেই ছেলেটি আমাকে চুমো খেয়েছে, গায়ে হাত দিয়েছে, আরও......’
‘আমি তোমার সাথে ঘর সংসার করতে পারব না, তুমি একটা অপবিত্র মেয়ে, কালকেই তোমাকে, কালেকেই তোমাকে....’
‘কালকেই ডিভোর্স দিয়ে দেবে?, আচ্ছা দিও, কিন্তু রাতটাতো কাজে লাগাও’
‘কাজে লাগাও মানে? কি বোঝাতে চাইছো?’
‘মানে, সংসার কর বা না কর সেক্সতো করতে পার, আজকের রাতটাই তো তোমার হাতে আছে’
‘তোমার মত অসভ্য, চরিত্রহীন মেয়ের সাথে সেক্স করতেও আমার ঘৃণা লাগবে’
‘সংযত হোন মি. অরিক, চরিত্র বলতে কি বোঝায় আপনাদের মত পুরুষদের কাছে? প্রেম করে একটু চুমো খেলে চরিত্র নষ্ট হয়, তাই না, প্রেম করে প্রেমিকার একটু আদর নিলে মেয়েরা চরিত্রহীন হয়, তাই না? ’
‘হ্যাঁ হয়, তোমার মত চরিত্রহীন মেয়ের সাথে ঘর সংসার করার চেয়ে আত্মহত্যা করা অনেক ভাল, কালকে সকালেই তোমাকে ডিভোর্স দেব, আর না দিতে পারলে আমি এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাব’
‘তাহলে পরের অংশটুকু শুনলে তো এখনই আত্মহত্যা করবেন মি. অরিক’
‘পরের অংশটুকু কি হতে পারে সেটা আমি বুঝতে পারছি, তবে ওতো বুঝে আমার কাজ নেই, সকালটা হোক, তারপর আমি দেখছি’
‘আমার সকল কথা আপনাকে বলব কিন্তু কাল সকালে আমাকে আপনি কিছুই করতে পারবেন না, আমি যত দিন চাই ততদিন আপনাকে আমার সাথে ঘরসংসার করতে হবে, আপনি কিচ্ছুটি করতে পারবে না’
‘আমি আইনের আশ্রয় নেব’
‘অপরাধি কখনও আইনি আশ্রয় নিতে পারবে না’
‘মানে?’
‘মানে অনেক হয়েছে, এইবার আপনাকে খুলে বলি, একদিন অফিস থেকে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়, সেই সন্ধ্যায় আমি ঝড় বৃষ্টির মধ্যে পড়ি, রাস্তার ধারে অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থেকে বৃষ্টিতে আমার সমস্ত শরীর ভিজে যায়, গাড়ির জন্য অপেক্ষা করি কিন্তু কোন গাড়ি পাইনা, অবশেষে একটি প্রাইভেট কার আসতে দেখি, হাত উচু করলে গাড়ী থামায়, আমি সেই গাড়ীতে উঠি, অত:পর কোন এক নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে আমাকে শ্লীলতাহানী করা হয়’ আমার অফিসে ঘটনাটা খুলে বলি, অফিস থেকে আমাকে দার”ন সহযোগিতা করে, আইনের আশ্রয় নেই, সেই র্যাপিস্টগুলোর শাস্তিও হয়, এখনও তারা জেলে আছে; কিন্তু আপনাদের মত তথাকথিত পুর”ষের কাছে আমি অপরাধ না করেও অপারাধি হয়ে গেলাম, আমি একটা ছেলেকে ভালবাসতাম, ছেলেটিও আমাকে প্রচন্ড ভালবাসত, আমাদের বিয়ের দিন তারিখও ঠিক হয়ে ছিল, কিন্তু ছেলেটি আমাকে বলে যেহেতু আমরা দুইজন একই অফিসে চাকুরী করি এই ঘটনার পর আমি যদি তোমাকে বিয়ে করি তাহলে আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারব না, ছেলেটির এই কথা শুনে তার প্রতি আমার প্রচন্ড ঘৃণা হয়! আমি ক্ষোভে, দু:খে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম, একদিকে ধর্ষিতা হবার মানুষিক যন্ত্রণা, অন্যদিকে যার সাথে বিয়ে ভেঙ্গে গেলো তার সাথে অফিস করতে হচ্ছে সেটাও আর এক যন্ত্রণা সব মিলিয়ে চাকুরীটাও ছেড়ে দিলাম; আমার চাকুরীটা ছাড়তে দেখে ছেলেটিকে খুব খুশি হতে দেখেছিলাম, সেটা আমাকে আরও যন্ত্রণা দিতে লাগল।
আপনি কি ভেবেছেন আপনি যে অপলাকে শ্লীলতাহানী করেছেন তা কেউ জানে না? সবাই জানে আপনার মা বাবা সবাই জানে। অপলা ও তার আত্মিয় স্বজন মিলে আপনার বাবাকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে আমার এবং অপলার বষয়ফ্রেন্ডের ষঢ়যন্ত্রে বলতে পারেন আপনার সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। অবশ্যই একের এক আমার বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ায় আমিও প্রচন্ড হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ি, তাই আপনাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আমরা এই আয়োজন করি কিন্তু সব কিছু করা হয় আপনার অগোচরে যাতে আপনি কোথাও পালিয়ে যেতে না পারেন।’
‘কিন্তু তনিমা, আমি তো অপলাকেই বিয়ে করতে চাইছিলাম’ অরিক চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে তনিমাকে বলল।
‘অপলাও প্রথমে তাই চেয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে অপলার বয়ফ্রেন্ডের ইচ্ছেতে অপলা আপনাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে চাইছিলো’
‘অপলার বয়ফ্রেন্ড আমার একজন ভাল বন্ধু আমি তার সাথে দেখা করে, আপনার এই শাস্তির ব্যবস্থা করি’ লাকিলি অপলার বয়ফ্রেন্ড আমার বয়ফ্রেন্ডের মত নয়। অএতব মি. অরিক এখন আপনিই সিদ্ধান্ত নেন আপনি আত্মহত্যা করবেন নাকি শাস্তি ভোগ করবেন! বলে তনিমা কাঁদতে লাগল..............।
০১ লা জুন, ২০১৮ সকাল ৯:০৩
আলোর_পথিক বলেছেন: একজন অন্তর্মুখী ও চরম রক্ষণশীল মানুষ হিসাবে এই শাস্তি তার জন্য কম নাও হতে পারে, তবে ছোট শাস্তির মাধ্যমে তনিমাকে পূর্নবাসিত করা হয়েছে’ তাই বড় শাস্তির চেয়ে এই ছোট শাস্তি শ্রেয়তর বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। লেখাটা ভালভাবে পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
২| ০১ লা জুন, ২০১৮ সকাল ১০:১৫
প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল।
০১ লা জুন, ২০১৮ সকাল ১০:২৫
আলোর_পথিক বলেছেন: অনেকদিন পরে আপনার টাচে পৌঁছাতে পারলাম, ধন্যবাদ আপনাকে
৩| ০১ লা জুন, ২০১৮ দুপুর ১:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: তেল জলে মেশে না সবাই বলে,
তবু তেল জলেই রন্ধন চলে!
০১ লা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:২৬
আলোর_পথিক বলেছেন: আপনার তেল ও জলের গল্পটা জলের মত পরিস্কার বুঝলাম না, তৈলাক্ত মাছের মত ফসকে গেলো। ধন্যবাদ, আপনাকে!
৪| ০১ লা জুন, ২০১৮ রাত ৮:৫৭
সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: গল্পটি পড়তে পড়তে অরিকের এবং তনিমার বয়ফ্রেন্ডের ওপরে ঘেন্নায় গা গুলাচ্ছিল। কি হিপোক্রেট দুজনে! পুরুষশাসিত সমাজের সকল বিষাক্ত ভাবনা দুজনের মগজে ভালোই ঘর করেছে। ছি!
আমি যে চরিত্রগুলোর ওপরে এত বিরক্ত হয়েছি এবং প্রতি মুহূর্তে সামনে কি হবে জানার আগ্রহে গল্পটি আমাকে ধরে রেখেছিল তা হয়েছে আপনার লেখনী গুণে। অসাধারণ।
ভালো থাকবেন।
০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:০৫
আলোর_পথিক বলেছেন: চারপাশের চরিত্রহীন চরিত্রগুলোই আমাদেরকে নানান ভাবে অভাবিত করে বা প্রভাবিত করে, চমৎকার মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ.
৫| ০২ রা জুন, ২০১৮ সকাল ৮:৩৮
শায়মা বলেছেন: বাপরে!
খুঁজতে খুঁজতে রহস্যের তল পাওয়া গেলো।
০২ রা জুন, ২০১৮ দুপুর ২:০৬
আলোর_পথিক বলেছেন: কোন রহস্যই তো তল বিহীন হতে পারে না, এখানে কোন এক অতলে তল আছে. ধন্যবাদ শায়মা.
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা জুন, ২০১৮ ভোর ৪:০৩
অর্থনীতিবিদ বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে। অরিক যে অপরাধ করেছে তার তুলনায় শাস্তিটা কমই বলা যায়। অপলা এখানে অনেক বড় মনের পরিচয় দিয়েছে। তনিমা শেষে কাঁদতে লাগলো। এই কান্না যেন শেষ পর্যন্ত সুখের কান্না হয় এই কামনা করি।