নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বড় বেশি আত্মকেন্দ্রিক, আত্মভোলা এবং সাধারণ। সম্ভবত এ নিয়ে আমার “সুখ ও দুঃখ” কোনোটিরই অন্ত নেই।

লোকনাথ ধর

আমার আমি!

লোকনাথ ধর › বিস্তারিত পোস্টঃ

যখন ভোর আসে...

১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৪৮


অন্ধকারে পিটপিট করে চোখ মেললাম। জমাট বাঁধা অন্ধকারে চোখ প্রথমেই সইয়ে নিয়েছি। অন্ধকারে থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে তো... তাই।
ঘরটা সিগারেটের গন্ধে মোহিত। এককালে সিগারেটের ধোঁয়াই সহ্য করতে পারতাম না, আর এখন এটাই আমার সবচেয়ে আপন। আমার জগত এখন সিগারেট, ছোট্ট রুম , বিছানা আর অন্ধকার। রুমে আলো ছিলো বটে, সেই কবে যে লাইট নষ্ট হয়ে গেছে, আর নতুন কেনা হয় নি। কিনেই বা কি লাভ!! যার মনের সবগুলো আলো নিভে যায় তাকে হাজার আলোর মাঝে আনলেও অন্ধকারত্ব ঘুচবে না।

সাধারণত রাতে একবার বেরোই বাসা ছেড়ে, সিগারেট কিনতে ... শালার সরকারও দাম বাড়িয়ে চলেছে। সিগারেটের তৃষ্ণা যখন আঁকড়ে ধরে এবং না পেলে এর কষ্ট ওরা বুঝবে কেন?? জমানোর হাত ছিল বলেই নেহায়েত এখনো বেঁচে আছি, টেনেটুনে চলে যায়। নইলে কবেই আরো গভীর অন্ধকারে পাড়ি জমাতাম!!

হতচ্ছাড়া গেল কোথায় লাইটারটা!! হাতের কাছে সময়মতো কিচ্ছু পাওয়া যায় না। বাজে কয়টা এখন?? দিন নাকি রাত? মা কোথায়?? বাবা?? তনু??
ধুর!! গেল কোথায় সবাই??
ওহহো, মনে পড়েছে!! সবাই চলে গেছে। ওয়ান ওয়ে টিকিট ওরা অনেক আগেই কেটেছে!! ট্রেন ধরে একে একে সবাই চলে গেছে। সবশেষে আমি বাকি রইলাম।

প্রথমে কে গেল? বাবা!! মানিব্যাগটা কোথায়!! ওই তো ...
কোনোরকমে ব্যাগটা খুলে বের করলাম ছবিটা.. বাবা মা দুজনই পাশাপাশি, ছবিটি কত সুন্দর!! স্নিগ্ধতা যেন এখনো ছবি জুড়ে রয়েছে!! কি সৌম্য মূর্তি বাবার.. কি গভীর মায়াময় মায়ের মুখটা ..। বাবা??

নাহ্!! মাথা কাজ করছে না। বাবা মা তো দুজনেই এক্সিডেন্টে মারা গেছেন। আহ্!! একা রেখে আমায়!!

তনু?? ধুর! ওর ছবিটা কোথায় গেল?? কিচ্ছু ঠিকমতো রাখতে পারি না!! এজন্য বোনটা বড্ড বকাঝকা করতো আমায়!! ঠিক বলতো ও!! সত্যিই কিছুই ঠিকমতো রাখতে পারি না, অনেক অগোছালো!!
পাচ্ছি না ছবিটা!! তাতে কি?? আমার হৃদয়ে বোনের মুখটা এমনভাবে গেঁথে আছে যে ছবি না পেলেও চলবে। ছোট্ট বোনটাকে আমি কিভাবে বড় করেছি সে কেবল আমিই জানি!! অথচ চলে গেল সেও!! বেচারীর মনে এত কষ্ট লুকিয়ে ছিলো কে জানতো!! চলে গেল আমার স্নেহের সবটুকু নিয়ে, অভাগা ভাইটাকে পৃথিবীতে একা ফেলে!!

ডুকরে কেঁদে উঠলাম!! জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা রোদে সমতল মাঠ ফেটে চৌচির হওয়ার মত আমার হৃদয় চৌচির হয়ে যাচ্ছে... ইচ্ছে হচ্ছে... ইচ্ছে হচ্ছে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করি.. ভেঙে চুরমার করি সব!!! আমার হৃদয়ের প্রথম তিন আলো!! অবর্ণনীয় কষ্ট.. কাউকে বুঝাতে পারি না আমি!! চোখের জল শুকিয়ে যায় তবু কি করে যেন আবারো বর্ষণ নামায়!! হতভাগা চোখ!

আরে এ ছবি কার!! চোখ মুছে পরিস্কার ভাবে দেখার চেষ্টা করলাম। পরক্ষণেই হাসতে লাগলাম , উন্মাদনায়!! হাহাহা, আরে এ তো আমার প্রিয়া, সহধর্মিণী। কবির ভাষায়, ছবির ভেতর হতে চেয়ে আছে নিষ্পলক, নিরভিমান দৃষ্টি ... নেই কোনো রাগ বা অভিমান!! অভাগিনীও চলে গেল আমাকে ছেড়ে। সুখ জোটে নি মেয়েটার কপালে ... এক উন্মাদকে ভালোবেসে ঘর করতে এসেছিল, চেয়েছিল ভালো করতে। চেয়েছিলো আলোর সৃষ্টি করতে...। অন্ধকারে বসত যার, মৃদু আলোতেই তার চোখ ঝলসে যায়, চোখ ঝলসানো আলোতে সে হয় অন্ধ। আর বোধহয় সৃষ্টিকর্তা এ ঝলসানো আলো হতে আমাকে রেহাই দেবার জন্যই ওকেও নিজের কাছে টেনে নিলেন.. বেচারি আমার ভালোবাসা পায় নি কখনোই.. অপ্রকৃতস্থ ছিলাম... চোখটা ভিজে এল, ভালোই হয়েছে। পার্থিব জীবনে ভালোবাসা পায় নি সত্য, কিন্তু পরবর্তী সমগ্র জীবনের জন্য আমার হৃদয়ের একটুকরো জায়গা নিয়ে নিয়েছে ও।

উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকালাম পর্দা সরিয়ে। চাঁদনী রাত। এরকম রাতে তৃষার ছাদে উঠে আমার বুকে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে থাকার বড় ইচ্ছে ছিল। নাহ্! আমাকে যেতে হবে। ওই চাঁদনী রাত তৃষার কন্ঠে যেন ডাকছে আমাকে ...
দ্রুত রুম ত্যাগ করলাম। লম্বা লম্বা পা ফেলে ছাদে উঠে এলাম। চারতলার ওপরে ছাদ। আত্মহত্যার জন্য উৎকৃষ্ট জায়গা। তাছাড়া সময়টাও উপযুক্ত, এধরনের রাতে মৃত্যু হলে ভালোই হবে!!

আমি আসছি!!

লাফ দিতে গিয়েও কিনারে এসে থেমে গেলাম। আচ্ছা, মারা যাবো, তারপর?
তারপর তাদের কারো কোনো অস্তিত্ব থাকবে না!!!
মাথা ঠান্ডা হয়ে এল। পিছিয়ে এলাম। স্বচ্ছ হতে লাগলো সব। উথলে উঠা অদম্য আবেগ স্তিমিত হচ্ছে.. ফিরে এসে নিচে নামতে লাগলাম সিড়ি দিয়ে।

আমি বাঁচবো!!

কেন বাঁচবো?? বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাঁচবো!! হ্যাঁ!! আমার মধ্যেই তো চারজন বাস করছে!!! ওরাই তো আমার ভালোবাসা!! আমার ভালোবাসা মারা যায় নি!!
হ্যাঁ! ওরা কেউ মারা যায় নি! আমার ভালোবাসা বেঁচে আছে, আমার ভালোবাসায় ওরাও বেঁচে আছে!! আমি মারা গেলে আমার সাথে আমার ভালোবাসার মৃত্যু ঘটবে, একইসাথে মরবে বাকি সবাই!! আমার সাথে আমি ওদেরও মরতে দিতে পারি না!!

আমি বেঁচে থাকবো ...

আমি বেঁচে থাকবো ওদের জন্য, আমি যতদিন বাঁচবো, ততদিন এই দুনিয়ার এককোণে শক্তিশালী এক ভালোবাসা বাঁচবে... যা উপেক্ষা করার শক্তি স্বয়ং স্রষ্টারও নেই!!

নিশ্চয়ই পরম করুণাময় তিনি.. এর অগ্রাহ্য তিনিও করবেন না...

ধীর পায়ে রুমে ঢুুকে বারান্দায় বেরিয়ে এলাম। আকাশের বুকটা কত বিশাল, আমি অতি ছোট। আকাশে যেমন শীতল জ্যোৎস্না ছড়িয়ে পড়ছে এপাশ থেকে ওপাশে... তেমনি আমার বুকেও শীতলতা ছড়িয়ে যাচ্ছে...

হঠাৎ শরীরে কাঁপুনি দিয়ে উঠল। ঝট করে বারান্দার রেলিং শক্ত করে চেপে ধরলাম। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বললাম, “হ্যাঁ, আমি বেঁচে আছি।”

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.