![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খুব সিরিয়াসলি পার্শি বিসি শেলির পত্নী মেরি শেলি বইটি লিখেছিলেন, এমন নয়, বরং লিখতে লিখতে সিরিয়াস হয়েছিলেন। পার্শি, মেরি এবং বায়রন গ্রীষ্মের ছুটি কাটাচ্ছিলেন জেনেভাতে। এ সময় কিছু জার্মান ভূতের গল্প পড়ে বায়রন প্রস্তাব করেন- সবাই একটা করে ভূতের গল্প লিখবে। অন্যদেরটা পাওয়া যায়নি, তবে মেরি শেলির লেখটা পরবর্তীতে ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়েছে।
ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে মেরি দেখিয়েছেন কীভাবে সৃষ্টি স্রষ্টার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বইটিতে স্রষ্টার অসহায়ত্ব চিত্রিত হয়েছে মূলত। ফ্রাঙ্কেনস্টাইন নামক একজন বিজ্ঞান গবেষক মৃতকে প্রাণ দিয়ে অতিমানব তৈরি করতে গিয়ে যে বিপত্তি বাধায়, সেটিই মূলত বইটির উপজীব্য, তবে আড়ালে ভিন্নসুর রয়েছে। ইঙ্গিত রয়েছে সর্বশক্তিমান হিসেবে বিবেচিত ঈশ্বরের প্রতি।
স্রষ্টার অবহেলায় সৃষ্টি কীভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে, সেটি তিনি দেখাতে চেয়েছেন। লিখেছেন,
“এবারে দৈত্যটি যেন সত্যিই কেঁদে ফেলল, বলল—আমি জানি, আমার জীবনের সমস্ত দুঃখময় কাহিনী শুনলে তুমি আমাকে নিশ্চয়ই ক্ষমা করবে। তুমি আমার স্রষ্টা, কিন্তু তুমিই আমার সমস্ত দুঃখের কারণ। তাই আজ তোমাকেই আমি শুধু বলতে চাই, কেন আমি হিংসাবৃত্তি নিলাম। তুমি ততটুকু শুধু ধৈর্য ধর। তারপর তোমার যা খুশি তাই করো। শুধু আজ আমার একটা কথা শোনো—”
মৃতদেহ প্রাণ পাওয়ার পর ফ্রাঙ্কেসস্টাইন দেখলেন যে, সেটি অতিমানব হয়নি, হয়েছে অতিকায় এক দৈত্য। আসলে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের ভুল হয়েছিল। চেহারা এবং আকার আকৃতি দেখেই তিনি তাঁর সষ্টিকে দৈত্য জ্ঞান করেছিলেন, এবং শুরু থেকেই ঘৃণা করেছিলেন। ফলে ‘দৈত্যটি’ হয়ে ওঠে প্রতিশোধপরায়ন। একে একে ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের পরিবারের সকলকে হত্যা করে।
পরে ফ্রাঙ্কেস্টাইনের সাথে দেখা করে দৈত্যটি আত্মপক্ষ সমর্থন করে উপরের কথাগুলি বলে।
দৈত্যটি আরো বলে-
“কিন্তু এই কুৎসিত কদাকার ভীষণ মূর্তি দেখে কেউ ভালোবাসে না, কেউ কাছে আসতে চায় না—দূরে সরে যায়। আমি একলা, একেবারে নিঃসঙ্গ। তুমি আমার প্রাণ দিয়েছ, কিন্তু রূপ দিলে না কেন? কেন আমায় এত কুৎসিত করে গড়ে তুললে? আর কেন তুমি তোমার সৃষ্টিকে ভালবাসতে পারলে না? প্রাণ দিলে, রূপ দিলে না। প্রাণ দিলে, সঙ্গী দিলে না। এই বিরাট পৃথিবীতে সকলে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে আনন্দ করছে—আমি শুধু একা আমার দুঃখের বোঝা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। তুমি কি বুঝতে পারো না যে, তুমিই তোমার সৃষ্টির উপর মর্মান্তিক অবিচার করেছ?”
লেখিকা বইটিতে দৈত্যটিকে দায়ী করেননি, দায়ী করেছেন দৈত্যটির স্রষ্টাকে, স্রষ্টার অবহেলাতেই সে দানব হয়েছে, নইলে আকৃতি যাই হোক, দেখতে যেমনই হোক দৈত্য হওয়ার কোন ইচ্ছে তার ছিল না।
এরপর দৈত্যটি বাঁচার আঁকুতি জানিয়ে তার স্রষ্টাকে বলছে-
“হে আমার প্রভু, আমি একজন সঙ্গী চাই, আমি চাই ভালবাসা। আমি জানি কোন মানুষই আমার সঙ্গে মিশবে না। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমার মতো আরেকটি কদাকার কৃৎসিত দানব সৃষ্টি করো—সে আমার সঙ্গী হবে। সে আমাকে ঘৃণা করবে না। আমরা পরস্পরকে ভালবাসব। এই দুর্বিসহ জীবনে তবেই পাব শান্তি।”
এই বলে দৈত্যটি ফ্রাঙ্কেনস্টাইনকে হুমকি দেয়। যদি সে আরেকটা ওরকম দানব তৈরি না করে, তাহলে সে সারা পৃথিবী কান্নায় ভরে দেবে এবং তার জন্য দায়ী থাকবে তার স্রষ্টাই।
[সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বইটি প্রকাশ করেছে। ]
Frankenstein
Frankenstein as PDFview this link
Frankenstein (film)
©somewhere in net ltd.