![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্টিভ জবস্ বড় হয়েছেন পালিত পুত্র হিসেবে পল এবং ক্লারা জবসের সাথে। তাঁর অরিজিন্যাল পিতা-মাতা ছিলেন আব্দুল্লা ফাতা জান্দালি এবং জোয়ান ক্যারল। জবস ছিল তাদের বিয়ের আগের সন্তান। এরপর তারা বিবাহ করেছিলেন, এবং পরে মোনা সিম্পসন নামে একটি কন্যা সন্তানের পিতা-মাতা হয়েছিলেন। উল্লেখ্য, মোনা আমেরিকার একজন খ্যাতিমান সাহিত্যিক।
জবসের কিন্তু ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি ছিল না। তিনি রিড কলেজে ডিগ্রি অসমাপ্ত রেখেছেন, তবে অনেক বিষয়ে কিছুদিন কিছুদিন পড়েছেন। এরমধ্যে ক্যালিগ্রাফি ছিল অন্যতম। পরে তিনি উল্লেখ করেছেন, ঐ ক্লাসগুলোতে যাওয়ার ফলেই তিনি ম্যাকের টাইপফেস এবং সামঞ্জসপূর্ণ ফন্টগুলো তৈরি করতে পেরেছেন।
১৯৭৪ সাল থেকে জবস্ ক্যালিফোর্নিয়াতে চলে আসেন এবং বন্ধু ওজিনিয়াকের সাথে নিয়মিত হোমব্রিড কম্পিউটার ক্লাবের সভাগুলোতে উপস্থিত থাকতেন। এ সময় তিনি মূলত ভারতে যাওয়ার জন্য অর্থ জমাচ্ছিলেন। এর আগে ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে একটি কোম্পানিতে কিছুদিন চাকরি করেছেন।
পরের বছর বন্ধু ড্যানিয়েল কটকের সাথে ভারতে আসেন। আধ্যাত্বিক জ্ঞান অর্জন করেন এবং বৌদ্ধ ধর্মে দিক্ষিত হন।
জবস্ ভারতে ছিলেন সাত মাস। এরপর মুণ্ডিত মস্তকে ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পোশাকে আমেরিকা ফিরে যান।
তবে কিছুদিন না যেতেই তিনি বাস্তব জীবনে ফিরে আসেন। এ সময় জীবীকা নির্বাহের জন্য তিনি সার্কিট বোর্ড তৈরির কাজ নিয়েছিলেন। প্রতিটি চিপের জন্য ১০০ ডলার পাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন অ্যাটারি কোম্পানির কাছ থেকে। কাজটি জবস এবং তার বন্ধু ওজিনিয়াক একসাথে করতেন, তবে কোম্পানি তাদের সাথে প্রতারণা করেছিল, প্রাপ্য ৫০০০ ডলারের বিপরীতে তাদের দিয়েছিল মাত্র ৭০০ ডলার। এর অর্ধেক আবারা ওজিনিয়াকের সাথে শেয়ার করতে হয়েছিল, যদিও ওজিনিয়াকের অর্ধেক প্রাপ্য ছিল না।
তবে এই ওজিনিয়াকই পরবতীতে একটি বিশেষ সুবিধা এনে দিয়েছিলেন। টেলিফোন নেটওয়ার্ককে নিপূনভাবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় টোন উত্পন্ন করতে, ওজনিয়াক একটি কম খরচের “ব্লু বক্স” তৈরি করেন। এতে দীর্ঘ দূরত্বের টেলিফোন কল বিনামূল্যে করা যেত। জবস সিদ্ধান্ত নেন যে তারা এটি বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। তবে ব্লু বক্সটি ছিল অবৈধ। কিন্তু জবস দেখলেন, এ দিয়ে ব্যবসা ভালই চলে। এবং তখনই জবস মূলত সিদ্ধান্ত নেন ইলেক্ট্রনিকসের পণ্যের ব্যবসা করার।
এরপর বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি তারা এ জাতীয় বিভিন্ন সেমিনার সিম্ফোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৭৬ সালে জবস এবং ওজনিয়াক নিজেদের ব্যবসা শুরু করেন। তারা তাদের কোম্পানির নাম দেন “অ্যাপল কম্পিউটার কোম্পানি”। প্রথম দিকে সার্কিট বোর্ড বিক্রয়ের মাধ্যমে তারা এই কোম্পানি চালু করেন।
১৯৭৬ সালে ওজনিয়াক একক প্রচেষ্টায় অ্যাপল-১ কম্পিউটার উদ্ভাবন করেন। ওজনিয়াক কম্পিউটারটি জবসকে দেখালে, জবস তা বিক্রয় করার পরামর্শ দেন। তখন তারা এটিকে বিক্রয়ের জন্য ওয়েন রোনাল্ডকে সাথে নিয়ে জবসের গ্যারেজে অ্যাপল কম্পিউটার প্রতিষ্ঠা করেন। ওয়েন অল্প কিছু দিন ছিলেন। অতঃপর তিনি জবস এবং ওজনিয়াককে ছেড়ে চলে যান। অবশ্য, তিনিও ছিলেন অ্যাপলের প্রাথমিক সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ইন্টেলের তত্কালীন অর্ধ-অবসরপ্রাপ্ত পন্য বিপণন ব্যবস্থাপক মাইক মারকুলা তাদেরকে অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।
১৯৭৮ সালে, অ্যাপল মাইক স্কটকে প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়। ১৯৮৩ সালে, জবস পেপসি কোলার জন স্কালিকে অ্যাপলের প্রধান নিবাহী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের জন্য প্রলুব্ধ করেন। জবস তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “তুমি কি তোমার জীবনের বাকিটা সময় চিনির পানীয় বিক্রয় করে কাটাতে চাও, নাকি আমার সাথে এসে বিশ্বকে বদলে দিতে চাও?”
আরেকটা বিষয় মনে রাখতে হবে ম্যাকিন্টোশ কিন্তু জবসের উদ্ভাবন নয়। এটি উদ্ভাবন করেছিলেন অ্যাপলের কর্মচারী জেফ রাস্কিন।
এরপর বদমেজাজী জবসের সাথে তারই নিয়োগ দেওয়া স্কালির দ্বন্দ্ব শুরু হয়, এবং দ্বন্দ্বের এক পর্যায়ে জবস্ অ্যাপল ছেড়ে দেন। মহাকাশচারী হিসেবে স্পেস শাটলে চড়ার ব্যর্থ প্রয়াশ চালান। সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়ে নতুন একটি কম্পিউটার কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথাও চিন্তা করেছিলেন তিনি।
২০০৫ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্বাবদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় তিনি বলেন যে অ্যাপল থেকে বহিষ্কারের ঐ ঘটনাটি ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। তিনি বলেন, “সফল হওয়ার ভার, নতুন করে শুরু করার আলোয় কেটে গিয়েছিল, সবকিছু সম্পর্কে কম নিশ্চিত ছিলাম। এটি আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে সৃজনশীল অংশে প্রবেশ করতে সহায়তা করে।” তিনি আরও বলেন, “আমি মোটামুটি নিশ্চিত এর কিছুই ঘটত না যদি না আমাকে অ্যাপল থেকে বহিষ্কার করা হত। এটি ছিল ভয়াবহ ওষুধের মত, তবে আমি মনে করি রোগীর এটি প্রয়োজন ছিল।”
এক বছর পর তার অর্থ সংকট দেখা দেয়, তার কোন পন্যও ছিলনা, ফলে তাকে বিনিয়োগকারীদের স্মরণাপন্ন হতে হয়। তিনি বিলিয়নিয়ার রস পেরটের মনোযোগ আকর্ষণ করেন, যিনি কোম্পানিতে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করেন। নেক্সট ওয়ার্কস্টেশন অবমুক্ত হয় ১৯৯০ সালে, এর মূল্য ছিল ৯,৯৯৯ মার্কিন ডলার। অ্যাপল লিসার মত নেক্সট ওয়ার্কস্টেশনও প্রযুক্তিগত দিক থেকে অগ্রবর্তী ছিল। শিক্ষাখাতের জন্য ডিজাইন করা হলেও, অধিক মূল্যের কারণে এটি বাজারে সুবিধা করতে পারেনি। জবস নেক্সটের পন্য বাজারজাত করেন অর্থনৈতিক, গবেষণা এবং শিক্ষাখাতের জন্য। এতে ছিল নতুন ধরণের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি, যার মধ্যে ম্যাখ কার্নেল, ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসর চিপ এবং বিল্ট-ইন ইথারনেট পোর্ট উল্লেখযোগ্য। টিম বার্নার্স লি গবেষণা কেন্দ্রে একটি নেক্সট কম্পিউটারেই ওয়াল্ড ওয়াইড ওয়েবের উদ্ভাবন করেছিলেন।
১৯৮৬ সালে, জবস লুকাসফিল্মের গ্রাফিক্স বিভাগ হতে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে গ্রাফিক্স গ্রুপ (পরবর্তীতে পিক্সার নামকরণ করা হয়) ক্রয় করেন।
ডিজনির সাথে অংশীদারিত্বের অধীনে প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র হল টয় স্টোরি (১৯৯৫), যেখানে জবসকে নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে দেখানো হয়। মুক্তির পর এটি স্টুডিওর জন্য খ্যাতি এবং সমালোচনা উভয়ই বয়ে আনে। পরবর্তী ১৫ বছরে, পিক্সারের সৃষ্টিশীল প্রধান জন ল্যাসেটারের অধীনে, কোম্পানিটি কিছু বক্স-অফিস হিট চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে: এ বাগস লাইফ (১৯৯৮); টয় স্টোরি ২ (১৯৯৯); মন্সটার্স, ইনক (২০০১); ফাইন্ডিং নেমো (২০০৩); দ্য ইনক্রেডিবলস (২০০৪); কার্স ২০০৬); র্যাটাটুই (২০০৭); ওয়ালই (২০০৮); আপ (২০০৯); এবং টয় স্টোরি-৩ (২০১০)। ফাইন্ডিং নেমো, দ্য ইনক্রেডিবলস, র্যাটাটুই, ওয়াল-ই, আপ এবং টয় স্টোরি ৩ এই প্রত্যেকটি চলচ্চিত্র শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র হিসেবে একাডেমী পুরস্কার পেয়েছে।
১৯৯৬ সালে, অ্যাপল নেক্সটকে ৪২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ক্রয়ের ঘোষণা দেয়। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে লেনদেন চূড়ান্ত হয়।এর মাধ্যমে অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জবসের কোম্পানিটিতে প্রত্যাগমন ঘটে। ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে, অ্যাপলের তত্কালীন প্রধান নির্বাহী গিল আমেলিওকে উচ্ছেদ করা হলে জবস কার্যত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।
নেক্সটকে কিনে নেওয়ার ফলে, এর অনেক পণ্য অ্যাপলের পণ্যে পরিণত হয়, যেমন নেক্সটস্পেপ হয়ে যায় ম্যাক ওএন এক্স। জবসের নির্দেশনার অধীনে, আইম্যাক এবং অন্যান্য নতুন কিছু পণ্য প্রবর্তনের পর কোম্পানিটি উল্লেখযোগ্যভাবে বাজারে জায়গা করে নিতে শুরু করে। এরপর থেকে, আকর্ষণীয় ডিজাইন এবং শক্তিশালী বিপণন ব্যবস্থা অ্যাপলের জন্য খুব ভালোভাবেই কাজ করতে থাকে। ২০০০ সালে ম্যাকওয়ার্ল্ড আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে জবস দাপ্তরিকভাবে তার পদ থেকে “অন্তবর্তীকালীন” শব্দটি উঠিয়ে দেন এবং অ্যাপলের স্থায়ী প্রধান নির্বাহীতে পরিণত হন। জবস সে সময় ঠাট্টা করে বলেন যে তিনি “আইসিইও” শিরোনামটি ব্যবহার করবেন।
২০১১ সালের আগষ্টে, জবস অ্যাপলের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে তিনি কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বহাল ছিলেন।ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই শেয়ার বাজারে অ্যাপলের পাঁচ শতাংশ দরপতন ঘটে। এই দরপতন অ্যাপলে জবসের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত বহন করে।
বিগত কয়েক বছর ধরে তার স্বাস্থ সমস্যা খবরের শিরোনাম হয়ে আসছিল এবং তিনি ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে চিকিত্সার জন্য ছুটিতে ছিলেন।
এসময় ফোর্বস কর্তৃক প্রকাশিত হয় যে জবসের পদত্যাগ অ্যাপলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং সেই সাথে দ্য ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটতে পারে, যেখানে তিনি পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। তার পদত্যাগের ঘোষণার দিন ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানির শেয়ারেও ১.৫ শতাংশ দরপতন ঘটে।
অক্টোবর ২০১১ পর্যন্ত স্টিভ জবসের নামে ৩৪২টি আমেরিকান উদ্ভাবনের স্বত্ত্ব অধিকার রয়েছে। উল্লেখ্য, প্রধান নির্বাহী হিসেবে জবস অ্যাপল থেকে মাত্র ১মার্কিন ডলার বেতন নিতেন।
অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে ভুগে ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর স্টিভ জবস মৃত্যুবরণ করেন।
বিদ্র: এটি কোন মৌলিক লেখা নয়, সম্পাদিত লেখা, পাশাপাশি অনেক অংশ সরাসরি উইকিপিডিয়া থেকে কপি করা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:৩৩
তানভীরএফওয়ান বলেছেন: thanks