![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম,আছে শুধু ২০ টাকার একটা নোট আর ২ টাকার একটা। তা নিয়েই বের হয়ে গেলাম,একটু দেখে বের হলেই মনে হয় ভাল হতো!
কী করবো,এখন কোন মতে যাওয়া যাবে,আসার সময় হেটে আসতে হবে।আর দেখেই বা কী করতাম টাকা তো পকেটেই থাকে আর কোথাও না।
মা থেকে খুজলে হয়তো দিত,কিন্তু এ বয়সে খুজতে লজ্জা হয়।
আজকে ২৬ তারিখ টিউশনির বেতন পেতে আরও ৮ দিন,পরের দিন গুলো কী করবো!! এসব চিন্তা করতে করতে বাসে উঠলো প্রিয়ম।
সে এবার বিবিএ ১ম বর্ষের ছাত্র।দুই একটা টিউশনির টাকাই তার সম্বল,আর তার দুই পা।এসব ছাড়া তার মা ছাড়া কেউ নেই এ পৃথিবীতে।না কোন গার্লফ্রেন্ড ও নেই।
ওর মা একটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। তার বাবা একটা সরকারি চাকরি করতো,২ বছর আগে মারা গেছে।বাবার পেনশনের টাকা আর মার স্কুলের বেতন আর দু একটা টিউশনি দিয়ে চলে মা ছেলের পরিবার।ভালই চলে তাদের পরিবার,কিন্তু প্রিয়মের আত্মসম্মান বেশি,সে তার মা থেকে টাকা খুজেঁ না।তার মা যা দেয় তাও নিতে চায় না। বেশিরভাগ সময় নেয় ও না। এ কারণে তার মার সাথে তার ভাল করে কথা হয় না প্রায় ১ বৎসর।খুব বেশি দরকার না হলে কেউ কারো সাথেই কথা বলে না।তবে তার মা এতে যতটা রাগে ততটাইই গর্ব বোধ ও করে।
প্রিয়ম মাসে ৫০০০ টাকা পায় টিউশনি করিয়ে। তা দিয়ে তার ভালই চলে যায়,কিন্তু এ মাসে ৩০০০ টাকা এ বন্ধুকে ধার দিয়েছে।
বন্ধুর ছোট বোন খুব অসুস্থ,তার চিকিৎসার জন্য।ওর বন্ধুর একটা ছোট বোন ছাড়া কেউ নেই। কিছুদিন আগে মা বাবা গাড়ি এক্সিডেন্ট মারা গেছে। ছেলে মেয়ের জন্য বাড়ী আর কিছু টাকা রেখে যেতে পেরেছেন,তবে সে টাকা ব্যাংকে। মাসে ১০০০০ টাকা সুদ পায়। সে টাকা দিয়ে চলে। কিন্তু বোনের অসুস্থতার জন্য সব টাকাই শেষ।
এখন একটু ভাল আছে তার বোন।
প্রিয়ম বাসের ভাড়া মিটিয়ে টিউশনির জন্য গেল,সে টিউশনি করতেই বেরিয়েছে।সে খুব একটা খারাপ পথে যায় না নেশা জাতীয় কিছু গ্রহণ ও করে না।
মোবাইলে ৪.৩০ বাজে,এসময় তার ১ম টিউশনি।পরেরটা ৬.৩০ থেকে।সে চিন্তা করলো কিছু টাকা অগ্রিম খুজবে স্টুডেন্টর মা থেকে,কিন্তু খুজলো না তার মান কমে যাবে সেই ভয়ে।
সে খুব ভয় পায়,খুব বেশি,নিজের মানসম্মান হারানোর ভয় তার প্রচুর।
পরে চিন্তা করলো মা থেকেই নিবে তবে ধার হিসেবে।
টিউশনি করিয়ে বাসায় আসলো ৮.৩০ এ। সাথেসাথে গালি শুরু কারণ প্রিয়মের মা চায় না ও টিউশনি করুক।
আমি তো কষ্ট করছিই তোর কী দরকার টিউশনি করানোর!!! আরও কত বকা দিল প্রিয়মকে।প্রিয়ম সব শুনে মুখ বুঝে,কিন্তু কিছু বলে না। সে পড়তে বসলো ৯ টায়। এই ৩০ মিনিট বকা শুনে শেষ করলো।
প্রিয়ম খুব খারাপ ছাত্র না আবার খুব ভাল এমন ও না। মাঝামাঝি পর্যায়ের বলা যায়।
সে চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে মার্কেটিং এ পড়ে। গত বছর গ্যাপ যায় তার কারণ কোথাও টিকে নি।এজন্য সে একটু লজ্জা নিয়েই চলাফেরা করে।
সে একজনকে ভালবাসতো যখন সে নবম শ্রেণীতে পরে তখন।মেয়েটা খুব সুন্দর ছিল,একেবারে পরীর মত। তবে সামাজিক,ধর্ম এসবের কারণেই তার ভালবাসা মাঠে মারা গেল।তবে মেয়েটাকে পড়ালেখার ক্ষেত্রে সে প্রতিপক্ষ মনে করতো।মেয়েটাও মনে করতো।মেয়েটার প্রিয়মের জন্য কোন ফিলিংস ছিল না এমনটা না ছিল কিন্তু মেয়েটা তার পরিবারের কথা ভেবে আর হাত বাড়ায় নি।মেয়েটার নাম ছিল ঈপ্সিতা।খুব ভাল ছিল মেয়েটা শান্ত,ভদ্র এক কথায় ওর তুলনা শুধু ওই।
একটা সময় মেয়েটা তারা পরিবারের কথা ভুলে প্রিয়মকে নিজের সর্বস্ব দিতে চায়,কিন্তু ১ সাপ্তাহ পরে তার মাথায় আসে সে যা করতে যাচছে তা কখনোই সম্ভব না।তাই তাদের ভালবাসা আর গড়ায় নি।
ঈপ্সিতার এখন বয়ফ্রেন্ড আছে! বয়ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে ওর সাথেই বিয়ে হবে এটা পরিবার থেকেই ঠিক করা।ঈপ্সিতা বাধ্য হয়ে সব মেনে নিয়েছে।সেও বালিশ ভিজিয়েছে কিন্তু আড়ালে,কেউ জানতো না প্রিয়ম ও জানতো না ঈপ্সিতা প্রিয়ম কে ভালবাসে।
কিন্তু সব কষ্ট মনে রেখেও এখন তার হবু বরের সাথে সম্পর্ক করে যাচ্ছে। বুকে পাথর চেপে ভাল থাকার অভিনয় করে যাচ্ছে।তার ইচ্ছা হয় এখনই আত্মহত্যা করি কিন্তু ফ্যামিলির নাম খারাপ হবে এজন্য করতে গিয়েও আটকিয়ে যায়। কী জানি কত দিন পারবে।
প্রিয়ম ঈপ্সিতাকে ভালবাসে খুব ভালবাসে,কিন্তু বয়ফ্রেন্ড থাকতে খুব কষ্ট হলেও বলে ঈপ্সিতাকে ঘৃণা করে।
ভালবাসার মানুষকে কী ঘৃনা করা যায়!!!যায় না কেউই পারে না,এটা কখনোই সম্ভব না।
কিন্তু প্রিয়ম জানে না ঈপ্সিতার বর্তমান অবস্থা!! সেও যে প্রিয়মকে কতটা ভালাবাসে সেটা প্রিয়ম জানেও না।প্রিয়ম মনে করে ঈপ্সিতা তাকে ঘৃণা করে।তাই সেও বলে আমি ঈপ্সিতাকে ঘৃণা করি।ওর পরিস্থিতির কথা জানলে হয়তো প্রিয়ম বুঝতো।
রাত ১২ টা প্রিয়ম ঘুমাতে গেল।ঘুম আসছে না ঈপ্সিতার কথা খুব মনে পড়ছে।ছবিটা দেখেই আাছে,কী এক মায়া লেগে আছে ছবিটাতে।তাদের দেখা হয় না প্রায় ৩ বৎসর।এক শহরেই থাকে তবুও কেউ কাউকে চোখের দেখাটাও দেখে না।
১.৩০ এ গিয়ে কোন মতে ঘুমালো,এদিকে ঈপ্সিতা প্রতিদিন ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমায়।ঈপ্সিতা যে প্রিয়মের চেয়েও ভালবাসে প্রিয়ম কে।ঈপ্সিতার ভালবাসার সামনে তা তেমন কিছু ন আবার কম যে তাও না।রাতে ঘুমের ঔষুধ না খেলে সারারাত তার ঘুম আসে না,কষ্ট হয় চোখ বুজতে।
দু জন দুজনকে এত ভালবাসে কিন্তু প্রিয়ম তা জানে না,ঈপ্সিতা সব আড়াল করে রেখেসে।মেয়েরা পারে ও বটে সব কষ্ট লুকিয়ে রেখে হাসিমুখে সবার সাথে মিশতে।কিন্তু একটা ছেলে পারে না।পারে না তার বিষন্নতাকে দূর করে রাখতে।পারে না হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলতে।
সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠলো পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে।দাঁত ব্রাশ করে নাস্তা করেই ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে পরলো।কিছুটা যাওয়ার পর মনে পরলো তার কাছে তো টাকা নেই,কালকে আসতে তাই দেরি হয়ে গেছে,আর গালি শুনতে হয়েছে মা থেকে। তাই বাসায় গিয়ে মা থেকে ১০০০ টাকা ধার খুজলো। মা রেগেই টাকাটা দিল কারণ ধার হিসেবে খুজেছে তাই।
তারপর আবার ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরলো।আজকে দেরি হয়ে গেছে ট্রেনে যাওয়া হবে না আজ,তাই বাসেই চরে বসলো।
কানের মধ্যে হেড ফোন গুঁজে দিয়ে যেতে লাগলো,কখন যে দু চোখ বন্ধ হয়ে গেল টেরই পায় নি প্রিয়ম।
১নং এসে বাস কন্টাক্টারের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো প্রিয়মের,ভাড়া মিটিয়ে নেমে সিএনজি তে উঠলো। এরপর ক্লাসে গেল এবং ক্লাস শেষ করে বাসায় আসলো ১.৩০ এ।
খেয়ে একটু পড়তে বসলো ৪.০৫ এ বের হতে হবে টিউশনির জন্য।
একটা মোবাইলে কল আসলো আননোন নাম্বার থেকে,কল রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে একটা অপরিচিত কন্ঠ ভেসে আসলো।
হ্যালো কে?-প্রিয়ম
হ্যালো আপনি কী প্রিয়ম বলছেন? -ও পাশ হতে।
হ্যাঁ,কিন্তু আপনি কে? -প্রিয়ম।
আপনি আমাকে চিনবেন না প্লিজ সেন্ট্রাল হসপিটালে আসুন,ঈপ্সিতা সুইসাইড করছে,অনেক কষ্ট বাচানো সম্ভব হয়েছে!! শুধু আপনার নাম নিচ্ছে একটু তাড়াতাড়ি আসুন।
আচ্ছা আমি আসতেসি -প্রিয়ম।
রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পরলো,তবে আদৌ সত্যি কিনা ব কেউ কোন কিছু করার জন্য ডাকছে কিনা এসব চিন্তা করতে করতে কয়েকটা চেড়াগির ফ্রেন্ডদের আসতে বললো,এবং হসপিটালে ঢুকলো।
সত্যিই ঈপ্সিতা সুইসাইড করেছে,ফোন কল টা মিথ্যা ছিল না।ঈপ্সিতা এ অবস্থা দেখে খুব কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে নিল প্রিয়ম!! কারণ তার চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে,চেহারায় শুধু বিষন্নতা!! মায়া ভরা পরীর মত চেহারাটা আজ ম্লান।প্রিয়ম খুব কষ্ট হচ্ছে,বুকের বা দিকটা ব্যথা করছে,সে এতদিন যা ভাবতো আজ সব ভুল প্রমাণ করে দিল ঈপ্সিতা!!নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে প্রিয়মের।
গত ১২ ঘন্টা ধরে প্রিয়ম প্রিয়ম করছে সে কিন্তু তার পরিবারের কেউ প্রিয়মকে ডাকে নি।ঈপ্সিতার পরিবার জানতো প্রিয়ম নামে একটা ছেলে ঈপ্সিতাকে খুব ভালবাসে কিন্তু এটা জানতো না ঈপ্সিতা ও প্রিয়মকে মনে প্রাণে ভালবাসে।
তার পরিবারের লোককে বাসায় পাঠিয়ে শিশির প্রিয়মকে ফোন করে হসপিটালে ডাকে।
শিশির হল ঈপ্সিতার হবু বর।
প্রিয়ম,ঈপ্সিতা একজন একজনের দিকে তাকিয়ে রাইলো প্রায় ২০ মিনিট।
প্রিয়ম বললো কেমন আছ?
ঈপ্সিতা -যেমন দেখছো!!
প্রিয়ম - এমনটা কেন করলে?একটা বার জানতে দিলে না আমাকে তুমি কষ্টে আছ,আমাকে ভালবাস এতটা।কেন এমন করলে!!!
ঈপ্সিতার চোখ থেকে শুধু কয়েক ফোটা নোনতা জল পরলো আর কিছুই না।
প্রায় ১ ঘন্টা কেউ কাউকো কিছু বললো না,শুধু দেখে থাকলো।চোখের ভাষায় বুঝে নিচ্ছে কে কী বলতে চাচ্ছে। নিরবতায় তাদের ভালবাসা প্রকাশ পাচ্ছে।
অনেক কথাই একজন একজনকে বলবে দেখা হলে বলে ঠিক করে রেখেছে,কিন্তু হচ্ছে না,একটা শব্দ ও হচ্ছে না।
প্রিয়মের হাতটা ধরলো ঈপ্সিতা।
এবার প্রিয়মকে যেতে হবে কারণ ভিজিটিং আওয়ার শেষ।
আসার সময় নাম্বাটা নিয়ে আসলো প্রিয়ম।
শিশির বাইরে দাড়িয়ে আছে,প্রিয়ম বের হতেই তাকে জিজ্ঞাসা করলো ঈপ্সিতা কেমন আছে?কী বলেছে? প্রিয়ম শুধু চেয়ে রইলো।কিছু বললো না।
কারণ প্রিয়মের বলার ভাষা নেই।প্রিয়ম শিশিরকে চিনে আগে থেকেই তবে ঈপ্সিতার হবু বর হিসেবেই।
বের হয়ে টিউশনিতে গেল প্রিয়ম,না আজ মন নেই তার পড়ানোতে।ভাল করে পড়াতে পারছে না।কোন মতে পরিয়ে বের হয়েই ফোন দিল ঈপ্সিতার নাম্বারে!
ফোন রিসিভ করলো না ঈপ্সিতা প্রথমে,দ্বিতীয় বার ধরলো।
কে?
ও পাশ হতে কোন আওয়াজ নেই। ঈপ্সিতা বুঝে গেল এটা প্রিয়ম!
প্রিয়ম প্রিয়ম কেমন আছ? -ঈপ্সিতা ভাল,তুলি কেমন আছ? ঔষুধ খেয়েছ?-প্রিয়ম।
হ্যাঁ -ঈপ্সিতা।
আবার দুইজনই চুপ,কেউ কিছু বলছে না।
আচ্ছা ঈপ্সিতা এখন রাখি তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে যাও। আমি কাল সকালে কল দিব।
আজ প্রায় ৪ বৎসর পর ঈপ্সিতা ঘুমের ঔষুধ না খেয়ে ঘুমিয়ে গেল,প্রিয়ম ও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেল আজ শোয়ার সাথে সাথে।
আজ তারা ঘুমাবে,খুব বেশি করে ঘুমাবে। এ ঘুমটা দরকার খুব দরকার,অন্তত আজ কোন কষ্ট নেই তাদের,ঘুমাবে না তারা!!!
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফোন দিল প্রিয়ম,ফোন রিসিভ করলো ঈপ্সিতা!কথা হলো তাদের।
খুব তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যাচ্ছে ঈপ্সিতা,যেখানে তার অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল সেখানে সে ৩ দিনেই সেরে উঠেছে।
তাদের দিন যাচছে, তেমনি যাচ্ছে একটা ভবিষ্যৎহীন ভালবাসার সম্পর্ক।
সব ভালবাসায় মিলন হয় না,তাই বলে যে সব ভালবাসার মিলন হয় না সেগুলো কী ভালবাসা হয় না!!!
হয় হয়।
ভবিষ্যৎ কেই বা জানে কী হবে,সবই অনিশ্চিত।তাদের ভালবাসাটাও না হয় থাকবে এমন অনিশ্চিত।
২| ৩১ শে মে, ২০১৬ সকাল ৯:১২
Nayan Singha বলেছেন: ধন্যবাদ গেইম চেঞ্জার ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ১:১২
গেম চেঞ্জার বলেছেন: সাবলীল ও সুন্দর!! ট্রাজ্যাডির দিকে মোড় নিয়েও ফিরে এসেছে!!
ব্লগে পথচলা শুভ হোক আপনার।