নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অলৌকিক দিশারী

www.facebook.com/Dishariofficial

অলৌকিক দিশারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

""অবনীর না পাওয়া গল্প""

০২ রা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:০৬

অবনীর অধির আগ্রহে প্রতীক্ষার পালা শেষ হয়েছে অনেক আগেই । দেখতে দেখতে পাঁচটি বছর পেরিয়েছে অনিরুদ্ধ চলে যাবার । অনিরুদ্ধ নিরবে চলে গিয়েছে আর অবনির জীবনে আজও সেই সন্ধ্যার অন্ধকার ,মধ্যরাতের বাতাস এখন পাতাঝরা হেমন্তের দিনের মতো । মোম জ্বালিয়ে অন্ধকারে ঝরাপাতার শব্দ শোনা । ঐ যে ট্রেন চলে যায় ।

স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই অবনীর জীবনের সাথে জড়িয়েছিল অনিরুদ্ধ । না ; অনিরুদ্ধ কখনো ভালোবাসার প্রস্তাব করেনি অবনীকে । অবনী-ই ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছিল অনির প্রতি ,অনি সেই দূর্বলতাকে প্রশ্রয় দিয়েছিল কেবল । আর প্রশ্রয়টাই অবনীর সেই চাঞ্চল্যকর ,উৎফুল্ল্য জীনটাকে করে দিল এক মুখী । অনিরুদ্ধ তখন-ই গ্রেজুয়েশন শেষ করে কোন এক ছোটখাটো কোম্পানিতে চাকরি করতো । ছোটখাটো কোম্পানি হলেও তো তার হাত খরচ চালাবার মতো যথেষ্ট সক্ষমতা ছিল কিন্তু অবনী কোথায় পাবে সেটা ! তবু কখনো মিস্ হতোনা অনিরুদ্ধ কে টেক্স্ট করা ,ফোনকল করা । তখন মোবাইল বিল টাও ছিল অনেক হাই রেটের । তবুও ক্ষান্ত হয়নি অবনি । সেলফোনে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা না থাকলেও দ্বিতীয় উপায় ছিল ঘরের ল্যান্ডফোনটা । মাস শেষে ল্যান্ডফোনের বিল দেখে বাড়ির লোকেদের মাথায় হাত ! নিশ্চয় লাইনমেনগুলি অন্য কোন লাইনের সাথে আমাদের লাইনের সংযোগ করে দিয়েছে ; তা না হলে এতো বিল আসে কি করে ! তাতে অবনীর কী-ই বা আসে যায় ! অবনী ঘরের মানুষের কথায় কান দেয়না । এভাবেই চলছে অনিরুদ্ধের সাথে অবনীর সম্পর্ক .....।

এস,এস,সি পরীক্ষা তখনো শেষ হয়নি অবনীর ।হঠাৎ করে অবনি অসুস্থ হয়ে যায় ,এক অজানা অসুখে। অবনি কখনো হাসে , হাসতে হাসতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ।আবার যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন শুরু হয় কান্নার রোল । সাথে পরিবারের আরো ছয়টা মানুষের কান্নার রোধন । ঐ সময়টাও অনিরুদ্ধ ভূলে যায়নি অবনীকে ।
অনি ফোন করতো নিয়মিত ,ফোন রিসিভ করতো অবনীর বোনেরা । অবনী তখন তার নিজের আঞ্চলিক ভাষা ছাড়া অন্যভাবে কথা বলতে পারতোনা তাই অনিরুদ্ধের সাথে কথা বলতোনা যদিনা অনি তার কথা নিয়ে হাসে ।পরে এক সময় অবনীর সেলফোনটা বন্ধ করে দেয় অবনীর বাড়ির লোকেরা ,অনিকে দেয়া হয় অবনীর বোনের ফোন নাম্বার আর অনি সেই নাম্বারেই অবনীর খোজ-খবর নিতো । এভাবে প্রায় ছয় মাস চলে তবু অনিরুদ্ধ চলে যায়নি অবনীকে সাগরে ভাসিয়ে ।

এস,এস,সি পাশ করলো অবনী । তখন কলেজে ভর্তির পালা । অবনী বায়না ধরলো ঢাকায় কোন কলেজে ভর্তি হবে ,বাড়ির লোকেরা তাঁকে দূরে কোথাও পড়তে দিতে নারাজ ।অবনী নাছোড়বান্দা ! সে ঢাকার আশেপাশে কোথাও থেকে পড়াশুনা করবেই । অন্য অনেকের মতো অবনীও ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখতো ,কিন্তু মাঝখানে বাঁধা হয়ে দাড়ালো নির্বোধ এক সুপুরুষ , তিন বছরে ডাক্তার হওয়ার পরামর্শ দিল সে অবনীকে । অবনী তখনো জানতোনা যে ঐ নির্বোধ মানুষটা তার সুবিধার জন্যে অবনীকে এই পরামর্শ দিয়েছে । অবনী তিন বছরে ডাক্তার হওয়ার এক বুক আশা নিয়ে ঢাকার পার্শ্ববর্তি এক জেলায় শুরু করলো তার জীবনের পথ চলা ।আর সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য ছিল অনিরুদ্ধের সাথে দেখা হওয়ার মাঝখানে আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকলোনা । কিন্তু এই পথ চলা যে ছিল অবনির জীবনে এক বিশাল অভিশাপ ! অবনির ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল যখন অবনি জানলো যে তিন বছরে ডাক্তার হওয়া আর পাঁচ বছরে ডাক্তার হওয়ার মাঝে বিস্তর ব্যবধান । অবনীর জীবনের লক্ষ্য পূরন হবার নয় তা জেনেও অনিরুদ্ধ ভালোবাসতো অবনীকে ।এ ব্যাপারে অনির কোন মাথাব্যাথা ছিলোনা ।

অনিরুদ্ধ তখন জগন্নাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাকতোত্তর শেষ করে একটা নামি দামি ব্যংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগদান করলো ।এভাবেই চলছিল অবনীর জীবন । হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই সামান্য একটা কথা কাটাকাকাটির জের ধরে অনিরুদ্ধ যোগাযোগ বন্ধ করে দিল অবনীর সাথে । সেই থেকে আর কখনো অবনির সেলফোনটাতে অনির ফোন আসেনি । সেই রাত জাগা পাখি হয়ে রাতের পর রাত জেগে জেগে অনিরুদ্ধের ফোনে রিং বাজাতো ,সেই ফোনটা কেউ কখনো পিক করেনি । পরিচিত-অপরিচিত অনেক নাম্বার থেকেই ফোনকল করতো অবনী ,অনিরুদ্ধ কখনো ফোনটা পিক করতোনা । ভূল করেও না ,অনির সেলফোনটা কখনো বন্ধ দেখাতোনা ।অবনী ক্ষান্ত হবার পাত্রী না ,সে তাঁর শরীরে যতক্ষণ শক্তি আছে রিং দিয়েই যাচ্ছে অনির সেলফোনে । কতো যে হাজার টেক্সট করতো অবনী ,কিন্তু অনিরুদ্ধের সাড়া পায়নি অবনি ।

কি হয়েছিল অনির ! কী-ই বা অপরাধ ছিল অবনির তার কিছুই জানতোনা অবনি ! একবার বলে গেলেও পারতো অনি ,তাহলে হয়তো অবনির জীবনটা এতোটা হাহাকারময় হতোনা । তাহলে হয়তো অবনির রাত জাগা হতোনা এতোটা ,আর সামান্য একটু ঘুমের আশায় অবনিকে সিডেটিবের উপর নির্ভরশীল থাকতে হতোনা ।শুধু অনিরুদ্ধের একটা ফোনকলের অপেক্ষা করছিল অবনি ,কিন্তু অবনির ফোনে আর কখনো বেজে উঠেনি অনির ফোনকল ।রাত যায় ,দিন আসে অবনি প্রতীক্ষায় থাকে একটা ফোনকলের।

অবশেষে বছর দুয়েক পরে ,অবনির তিন বছরে ডাক্তার হবার শেষ পর্যায়ে এসে একদিন অনিরুদ্ধের এক পরিচিতার কাছ থেকে শুনে অনিরুদ্ধ সুখের সংসার পেতেছে লাবণীকে নিয়ে । কি করে পারলো অনিরুদ্ধ ! আর অনিরুদ্ধকেই বা দোষ দেয় কিভাবে ? লাবণী ! সে খুব ভালো করেই জানতো অনি আর অবনীর সম্পর্কের কথা ! তবু সমস্ত পৃথিবী জূড়ে কোটি পুরুষের মাঝে এই একজনকেই কেন মনে ধরলো তার ! তাদেরকে কোন দিন প্রশ্ন করা হয়নি অবনির । নীরবে দেখে যায় সব অবনি।

তাদের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে আজ সূখের সংসার । আর অবনীর জীবন এখন ভাঙামেলার করুণ দৃশ্যের মতো হাহাকারময় ।বুকের ভেতর এখন শীতকাল-কেবল-ই পাতা ঝরে । আর কিছু শোনা যায়না । সেই বুলবুলি পাখি ,সেই ঘুঘুর ডাক ,সেই ভাঁটফুল ,সেই বাঁশবাগান- কেমন ম্লান ধূসর । আজ আর আগের মতো নাড়া দেয়না । ভালোবাসা এখন কোথায় থাকে কে জানে , অবনি তার ঠিকানা জানেনা ।

আজ আর ভরা জ্যোৎস্নার মধ্যে শিশিরে শরীর ভেজান হয়না । মন বড়ো উড়ু উড়ু করে । বুক ভরে উঠে সেই স্মৃতি স্বপ্ন বেদনায় । হেমন্তের ঝরাপাতার মতো কোথায় হারিয়ে গেলো সেইসব জ্যোৎস্নারাত ,ভালোবাসা ! সেইসব সূখ ,সেইসব দুঃখ ,সেইসব ভালোবাসার দিনগুলির উপর কালি পড়েছ । আজ আর সেই বকুল ফুলের মতো ভালোবাসার মুখ অবশিষ্ঠ নেই ।

অবনি তাঁর ডাক্তার হবার স্বপ্ন পরিত্যাগ করে আজ নতুন স্বপ্নে বিভোর । আর অনিরুদ্ধ সেই ব্যাংকের এ,জি,এম এর দায়িত্বের পাশাপাশি লাবণী এবং একমাত্র সন্তানকে নিয়ে নিয়ে বেশ ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সংসার করছে । লাবনীও কেবল সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ।

আর অবনীও পথ চলছে এক পা দু পা করে তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ।হয়তো অবনীর জীবনেও আসবে নতুন কোন স্বপ্ন নিয়ে আরো কোন এক অনিরুদ্ধ নতুন কোন আশা নিয়ে নতুন কোন নামে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.