![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নীল শাড়ি, চোখে কাজল, আর মুখে এক মায়াময়ী হাসি, পড়ন্ত বেলার মিষ্টি রোদ মায়াকে জড়িয়ে রেখেছে। মায়ার দিকে অপলক চেয়ে রয় রুদ্র, ঈশ্বর যাকে নিজ হাতে সাজিয়েছে, তার দিকে কিভাবে না তাকিয়ে থাকা যায় জানা নেই রুদ্র’র। মায়া কে যতই দেখে ততই অবাক হয় রুদ্র। প্রতিদিন এই মেয়টাকে তার লাগে।
‘রুদ্র’দা কি ভাবছো?’ হঠাৎ প্রশ্ন টা শুনে চমকে যায় রুদ্র। ‘ওহ! রুপু তুই’, বলে রুদ্র।
’আরে মায়া আপু ও দেখি ছাদে আজ। দাদা সুন্দর লাগছেনা আপুকে অনেক?’ জানতে চায় রুপু। ‘নাহ, আমার কাছে তেমন কিছু মনে হচ্ছেনা’, ছাদের অন্য দিকে হেটে চলে যায় রুদ্র। রুপু রুদ্রের আচরনে কিছুটা হতাশ হয়।
‘কি ব্যাপার কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়?’ ‘তুমি কি ভয় পাচ্ছো মায়া, ছাদে নিয়ে যাচ্ছি’, বলে রুদ্র।
মায়াঃ ছাদে কেন?
রুদ্রঃ দেখছোনা বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।
মায়াঃ তো?
রুদ্রঃ আমার অনেক দিনের ইচ্ছে তোমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবো।
মায়াঃ আর কোন ইচ্ছে নেই?
রুদ্রঃ আছে, তমার হাত টি ধরার।
রুদ্র মায়ার দিকে তাকায়, মায়া আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, বৃষ্টির ফোটা ওর চোখে পরছে।
মায়াঃ আমারো বৃষ্টি অনেক ভাল লাগে।
মায়া রুদ্র’র দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়।
রুদ্রঃ তোমার হাত ধরার ইচ্ছাটা আমার সেই............।
‘দাদা কার সাথে কথা বলিস?’ রুপুর কন্ঠ শুনে চোখ খুলে রুদ্র, সন্ধ্যা হয়ে গেছে। ‘সবাই ছাদ থেকে নেমে গেছে, রুপু?’ মাথা নাড়ায় রুপু, “তুই নামবিনা?’ ‘চল’- বলেই সিড়ির দিকে এগোয় রুদ্র।
সকালে গোসল করে ছাদে যায়, রুদ্র। মায়া ছাদে দাঁড়িয়ে, ভেজা চুল, আকাশি রং এর শাড়ি। এই রুপ খোদা নিজ হাতেই দিয়েছেন, এর বর্ননা করা অসম্ভব।
রুদ্র আকাশের দিকে তাকায়, কখন নিজের কল্পনায় হারিয়ে যায়।
‘আমি রোজ স্বপ্ন দেখি।‘- আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে রুদ্র। ‘তাই, কি স্বপ্ন দেখো?’- মায়ার উৎসুক চোখে তাকায়।
রুদ্রঃ কোন এক জোছনা রাতে তোমার হাত ধরে হেটে যাওয়া এই পথ ধরে।
মায়াঃ পুরন হয়ে গেলোতো।
রুদ্রঃ না হয়নি।
মায়াঃ কেন? জোছনা আছে তুমি আছো, হাটছি পাশাপাশি এটাই তো তোমার স্বপ্ন ছিল?
রুদ্রঃ এটাতো প্রকৃতির বর্ননা ছিল, স্বপ্ন তো ছিল তোমার হাত ধরার।
নিরবতা চারিপাশে, মায়া হাটছে কি অপরুপ লাগছে ওকে দেখতে, মায়াবি চোখ, মুখেতে একটু হাসি লেগেই আছে। চাঁদের আলোয় শাড়িটা মাঝেই মাঝেই ঝিকমিক করে উঠছে। খোদা একে গড়েছিলেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতেই। রুপের গুনের কোন কিছুরি ত্রুটি রাখেন নি, ঢেলে সাজিয়েছেন এই দেবিকে, চাঁদ যেন আজ মলিন। মনের দিক থেকে যে যতই দৃঢ় হোক না কেন, এর সামনে মাথা নত করবেই। অনেকটা পথ নিরবেই হেটে চলেছে তারা দুইজন।
মায়াঃ হাত ধরার অতি প্রাচীন পন্থা, তবুও ধরতে পারো কিছুক্ষনের জন্য।
রুদ্র’র মুখের দিকে একবার তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় মায়া।
রুদ্র হাত ধরার জন্য হাত বাড়াতে যেয়ে হঠাৎ করে চমকে উঠে। ‘নিলয় এইখানে? কীভাবে সম্ভব?’ রুদ্র বিস্মিত হয়ে ভাবতে থাকে।
‘কিরে রুদ্র এই রোদের ভিতর একা একা ছাদে কি করিস?’ রুদ্র ভয় পেয়ে যায়। ‘কিরে কি হল? ভয় পেলি নাকি?’ রুদ্র’র দিকে তাকিয়ে থাকে নিলয়। ‘রোদ কথেকে এলো? একটু আগেই তো জোছনা রাত ছিল।‘- ভাবে রুদ্র। নিলয় অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রুদ্র’র দিকে। নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে নেয় রুদ্র, হাসার চেষ্টা করে।
রুদ্রঃ নাহ! ভয় পাইনি, হটাৎ তোকে দেখে চমকে গেছিলাম।
নিলয়ঃ আমাকে দেখেও কেঁউ চমকায়!
নিলয়ের বিস্ময় আরো বাড়তে থাকে রুদ্র’র কথায়। কিছুটা কন্ঠে স্বাভাবিকতা এনে নিলয় আবার বলে, ‘কোন সমস্যা থাকলে আমাকে বল।‘
রুদ্রঃ না, কোন সমস্যা নেই।
নিলয়ঃ চল, নিচে চল।
কখন দুপুর হয়ে গেছে খেয়ালই করেনি রুদ্র, মায়া অনেক আগেই হয়ত ছাদ থেকে নেমে গেছে, তারপর ও ছাদের ওপাশটায় তাকালো রুদ্র। রুদ্র’র দৃষ্টি অনুসরন করল নিলয়। ‘না, কেঁউ নেই’, বিড়বিড় করে রুদ্র। ‘কি দেখিস?’ নিলয়ের প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে রুদ্র। ‘না, কিছুনা’, বলেই নিচে নেমে আসে রুদ্র, নিজেকে লুকানোর চেষ্টাই করে। নিলয় রুদ্রের এই আচরনের কিছুই বুঝে না। অবাক হয়ে সিড়ির কাছেই দাঁড়িয়ে থাকে।
‘মায়া জানো ঘাসের উপর খালি পায়ে হাটতে দারুন লাগে আমার, সব সময় ভাবি কোন একদিন তুমি আর আমি হাত ধরে হাটবো’।
মায়াঃ তা সেই কোন একদিনটা কবে?
রুদ্রঃ মাঠেই তো আছি, অন্ধকার ও আছে, চল হাটি।
মায়ার দিকে তাকায় রুদ্র, কি রুপ তার এই আধারেও অপরুপা লাগছে, একে ছেড়ে কারো এক মুহুর্ত থাকা সম্ভব কি? এর পুজো যে কোন পুজোরিই করতে চাইবে, নারি বিদ্বেষী কোন ছেলে, কিংবা কোন সংসার ছাড়া সিদ্ধ পুরুষ, সবাই হার মানবে এর সামনে, এর জন্য কোন কিছুতেই না নেই।
মায়াঃ আরে না, এই ঘাস তো ভিজা ঠান্ডা লেগে যাবেতো খালি পায়ে হাটলে।
রুদ্রঃ লাগুক না, তোমার হাতটা একবার ধরতে দিবে?
মায়ার দিকে এক অসীম আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে রুদ্র। মায়ার এই ভাব লেশহীন নিরাবেগ মুখটাও কি অপরূপ, চোখ ফিরানই দায়।
‘রুদ্রদা?’। রুপুর ডাকে চমকে ওঠে রুদ্র, বিকাল পেরিয়ে রাত হয়েছে, খেয়াল করেনি রুদ্র। মায়ার ভাবনায় কখন যে ডুবে যায় রুদ্র নিজেও জানেনা। যেন এই পৃথিবীর সাথে কোন সম্পর্কই থাকেনা রুদ্র’র। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে রুপু’র দিকে তাকায় রুদ্র।
রুপুঃ নিলয় দা এসেছে।
রুদ্রঃ আমার ঘরে আসতে বল।
নিলয় ঘরে ঢুকে। রুদ্র কে দেখছে। ‘কিরে কি দেখিস? আমিতো স্বর্গের পরী না। আমারে দেখে কি হবে?’ অর্থহীন কথা গুলো বলে রুদ্র নিজেও চমকে যায়।
নিলয়ঃ আপনি কে তাই ভাবতেছি, আপনাকে তো চেনা যায়না, বাইরে বেড় হওয়া বন্ধ করলেন, রাতে ঘরে আলো জ্বলেনা, শুনলাম কারো সাথে কথাও বলেন না। কি হয়েছে এখন বলবেন? কোন সেই মহাদেবীর প্রেমে পড়লেন?
রুদ্র চুপ করে থাকলো। নিলয় নিজেই আবার বলল, ‘চুপ করে থাকাটা সমাধান না তা তো বুঝতেই পারছিস। না বললে সমস্যার গভীরতা আরো বাড়বেই, কমবে না।‘
রুদ্র লুকোতে পারলনা আর, বলা শুরু করল, ‘মায়াকে চিনিসতো? মেয়টাকে ভালবেসে ফেলছি, আগে শুধু ওর কথা ভেবে মন খারাপ লাগত কিন্তু এখন, ২৪ ঘন্টা শূধু ও সব যায়গায়। এমনকি ওকে নিয়ে কখন কল্পনার জগতে চলে যাই নিজেও জানিনা। আমার বাস্তবতা কল্পনা সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কিছুই বুঝিনা, কোথায় আছি, বাস্তবে না কল্পনায়। কি করবো তাও বুঝিনা, মাথায় কিছু কাজ করেনা। কিছু বলতেও পারিনা। জানিস তো সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে ওদের পরিবারের সাথে আমাদের সম্পর্কটা কত খারাপ। যদি মাঝে দেয়াল আর রাস্তা না থাকতো, প্রতিদিন একবার করে আমাকে হয়তো খুনই করতো। একবার ভাবি সব ভুলে বলে দেই মনের কথা, আবার মনে হয় যদি না করে দেয়, প্রতিশোধ ভেবে। যদি পারিবারিক শত্রুতা আরো বেড়ে যায়। তাহলে আমার কল্পনার জগৎটাও এখানেই...............’
রুদ্র চুপ হয়ে গেলো, আর কোন শব্দ খুজে পাচ্ছেনা। নীরবে নিলয়ে দিকে তাকিয়ে রইলো।
নিলয় কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল, ‘ওকে ঐদিন দেখেছিলাম কলেজ মাঠে। মনে হল, তোর নামেই কিছু বলছিল। হয়ত ও তোকে পছন্দ করে, যদি না ও করে তাও কথা বলা উচিৎ ওর সাথে। না জেনে হারানোর চেয়ে, জেনে হারানোটা বেশি সুখের হবে।’ নিলয় কিছুক্ষন ভেবে আবার বলে, ‘আগামিকাল সন্ধার পরে ওকে কলেজ মাঠে ডেকে আনার ব্যাবস্থা করি। কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নে। সে হয় তোর হবে নতুবা ভুলে যাবি।‘ রুদ্র চুপ থেকে বলল, ‘এত সহজ কি হবে ভুলা! প্রেমে পড়েছি বন্ধু, শত্রুতো নয়’।
নিলয় চলে যায়। রুদ্র ভাবে নিলয়কে বলে ভুল করল কি!
বিকালেই কলেজ মাঠে চলে আসে রুদ্র, অপেক্ষা নিলয়ের জন্য। মাঠে ফুটবল খেলা হচ্ছে, মাগরিবের আযান দিতেই মাঠ খালি হয়ে যায়, প্রতিদিনের মত খেলা অসমাপ্ত রেখেই ছেলে মেয়েরা চলে যায়, চারিদিক আধার হয়ে গেছে, আকাশে তারা গুলোর দিকে তাকিয়ে বসে আছে, রুদ্র। অপেক্ষাটা বোধহয় বেশিই দীর্ঘ হচ্ছে, সময় যাচ্ছে অস্থিরতা বাড়ছে। কিছুটা কুয়াশা পরছে, শিশিরে ঘাস গুলো ভিজে গেছে।
‘কি বলবে রুদ্র?’ রুদ্র সামনের দিকে তাকায়। একটু সামনেই মায়া দাঁড়িয়ে, নিলয় আর রুপু গেইটের সামনে দাড়িয়ে আছে। ‘রুপু কে দিয়েই ডাকিয়ে আনলো তাহলে!’ ভাবে রুদ্র।
রুদ্রঃ তুমি ভয় পেয়োনা কিছু কথা বলব।
মায়াঃ তুমি নিশ্চিন্তে বল।
রুদ্র বলা শুরু করে, ‘আমি তোমাকে কবে হৃদয় মাজারে জায়গা দিয়েছি জানিনা, কবে তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি আমি জানিনা। শুধু জানি ভালবেসেছি তোমাকে।‘ কিছুক্ষন থেমে থেকে আবার রুদ্র বলে, ‘তোমাকে ভালবাসতাম, এখনও বাসি। তুমি যদি আজ ফিরিয়ে দাও আমায় তবু তোমাকেই ভালবাসব।‘
মায়াঃ আর কিছু বলবে?
রুদ্রঃ তোমার হাত কি ধরতে দিবে নাকি বাড়ী ফিরে যাবে?
মায়া কিছুক্ষন নিরব দাঁড়িয়ে থেকে, হাটা শুরু করে। রুদ্র দাঁড়িয়ে থাকে, মায়ার চলে যাওয়া দেখে, একটিবার পিছনে ফিরেও তাকালোনা মায়া! কলেজ মাঠটা পুরো খালি রুপু, নিলয় বাড়ি ফিরে গেছে আগেই। হয়তো ভাবেনি মায়া ফিরিয়ে দিতে পারে রুদ্র’কে।
আজ কল্পনা নয়, স্বপ্ন নয়, বাস্তবেই সব হল। রুদ্র’র প্রেম ব্যার্থ। শিশির ভেজা ঘাসের উপর খালি পায়েই রুদ্র হাটছে, একা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১৮
আহসানের ব্লগ বলেছেন: এই লেখা লেখির একটি অনবদ্য জগতে আপনাকে স্বাগতম,

ভালো থাকবেন,
লিখবেন,
পড়বেন
এবং মন্তব্য করে অন্য লেখক দের উৎসাহিত করবেন।