![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আবিদের হঠাৎ চিৎকারে ভয় পেয়ে গেলো রুদ্র, ছুটে এলো ছাদের এপাশে। ছেলেটা অনেক চঞ্চল, কোন অঘটন না ঘটিয়ে ফেললো ঘুড়ি উড়াতে যেয়ে, এই ভয়টাই মনে আসছে। না, আবিদের কিছু হয়নি। মিষ্টি হাসলো আবিদ। ‘দাদা ঘূরি উড়াও’, রুদ্রকে কিছু বলতে না দিয়েই নাটাই টা হাতে তুলে দিলো আবিদ।
‘এভাবে কেউ চিৎকার দেয়, কত ভয় পেয়ে গেছিলাম’, মিষ্টি কন্ঠের অনুযোগটা শুনে চমকে উঠলো রুদ্র। পিছনে ফিরে তাকালো, ঝুমার পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে। রুদ্র মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো বোকার মত। কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে যাওয়া পৃথিবীটাকে প্রান দিলো ঝুমা। মিষ্টি হেসে বললো, ‘রুদ্রদা, ও হচ্ছে মায়া, আমার কাজিন। কিছুদিনের জন্য বেড়াতে এলো, পরীক্ষা শেষ তো’। ওরা ছাদে হাটা শুরু করলো। আড়চোখে মায়াকে দেখছে রুদ্র। বাপ্পি ভাইয়ের কাছ থেকে আড়চোখে তাকানোটা ভাল ভাবেই শিখে নিয়েছিলো রুদ্র, বেশ কাজে লাগছে। কারো অজান্তেই তাকে ভাল ভাবে দেখে নেওয়ার সহজ উপায়। কথা বলার সময় অনেক বেশি হাত নাড়ে মেয়েটা।
মায়া আর ঝুমাদের আড্ডায় মাসুম আর তিথিও যোগ দিলো। মাসুম আগে থেকেই মায়াকে চিনতো নিশ্চয়ই। অবশ্য না চিনলেও সমস্যা নেই মাসুমের, পরিচয় ওর জন্য জরুলি না। মেয়ে হলেই হল।
বেশ কয়েকবার সরাসরি তাকালো রুদ্র মায়ার দিকে। এই মেয়ের প্রতি রুদ্র’র আগ্রহটা বোধ হয় চোখ এড়ালোনা মাসুমের। কিছুটা চেচিয়ে রুদ্রের উদ্দেশ্যে বললো, ‘শুনেছিলাম তোমার জ্বর, ছাদে এলে কেন?’ আবিদের দিকে ইশারা করলো রুদ্র, ‘পাড়ায় এমন ছোট ভাই থাকলে, আর কি চাই?’
মাসুমঃ মায়ার সাথে পরিচয় টা কি হয়ে গেছে? আমি তো ভেবেছিলাম ওকে দেখতেই তোমার এত দুর্ভোগ।
মাসুমের কথাটা বুঝতে অসুবিধা হলোনা রুদ্রের। ‘আজকাল দেখছি বেশিই ভাবছো আমায় নিয়ে। তা তুমি এ বাড়িতে থাকতে আমার দুর্ভোগের প্রয়োজন আছে নাকি? দুর্ভোগে তো তারা পড়বে যাদের পরিচয় এই প্রথম তোমার সাথে হল’- কথাটা বলেই ছাদ থেকে নেমে এলো রুদ্র। মাসুম তখনো চেচাচ্ছে, ‘রাগ করলে নাকি রুদ্র, নেমে যাচ্ছো দেখি?’
দুদিন আর ছাদে যায়নি রুদ্র। ঘরে এমন দম বন্ধ হয়ে আসছিল যে এই দুপুরেই ছাদে উঠলো রুদ্র। উদ্দেশ্যহীন হাটাহাটি কিংবা কারো জন্য অপেক্ষা, মনের কোন ভাবই বুঝা গেলোনা। এমন না যে এই প্রথম দুই-চারদিন ঘর থেকে বের হয়নি রুদ্র। এমন কখনো হয়নি, অন্য কিছুই টানছিল, ঘরের বাইরে এই ছাদটায়। একটা শূন্যতা স্পষ্ট হতে লাগলো রুদ্র’র মুখে।
বিকেল হয়ে গেলো। ছাদে এলো মায়া, তিথি আর মাসুম। রুদ্র কে দেখে যেন একটু অবাক হল মায়া, বললো, ‘কেমন আছো?’। রুদ্র বললো, ‘ভাল’। ‘দেখেতো মনে হচ্ছে...’- মায়া কথা শেষ করার আগেই, মাসুম কথা বলা শুরু করলো, মায়ার হাত ধরে ছাদের অন্য পাশে নিয়ে গেলো। রুদ্র ছাদ থেকে নেমে এলো। মন খারাপ করে বারিন্দায় বসে রইলো অনেকক্ষন। ‘এমন তো হওয়ার কথা না, আমার কি কারনে মন খারাপ! কেন আমি ছাদ থেকে নেমে এলাম। মায়ার উপরই কেন রাগ হলো, মায়ার সাথে তো আমার কোন সম্পর্ক নেই, ও কেনই বা মাসুম কে এড়িয়ে চলবে আমার জন্য। মাসুমের সাথে ওকে দেখে আমি কেন রেগে যাচ্ছি? রাগের তো কিছু নেই।’- নিজেকেই নিজে বুঝানোর চেষ্টা করে রুদ্র।
বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। প্রতিদিনই ছাদে উঠা হয়েছে রুদ্রর। মায়াকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছে সে, মায়া কিছু বললে উত্তর না দিয়েই ছাদ থেকে নেমে এসেছে। কষ্ট হয়েছে কিছুটা, কিন্তু সবসময় ভাল থাকতে, এইটুকু কষ্ট সহ্য করাই যায়।
আবিদ আজ আবার এসে হাজির হলো ঘুড়ি নাটাই নিয়ে। ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো রুদ্র, ‘চল আবিদ’। ছাদে উঠে রুদ্র দেখলো মাসুম আর তিথি দাঁড়িয়ে, তিথিটাকে মাসুম কিছু শিখিয়ে দিচ্ছে। রুদ্র বিরক্ত হল, ভাল কিছু মাসুমের কাছ থেকে আশা করা যায় না। মায়া আর ঝুমা এলো কিছুক্ষন পরে, সাথে আরেকটা আপু ও আছে। আজকের আড্ডাটা বিশেষ কোন বিষয় নিয়ে হবে। বেশ হাসাহাসি হচ্ছে। মায়া একবারের জন্য ও রুদ্রের দিকে তাকায়নি। ঘুড়ি উড়ানোর ছলে আবিদ কে নিয়ে আরেকটু এগিয়ে যাবার চিন্তা করছে রুদ্র এমনি সময় মায়া তিথির পিছনে ছুটা শুরু করলো। তিথি রুদ্র পাশ দিয়ে ছুটে চলে গেলো মায়া পারলোনা। রুদ্রের সাথে ঢাক্কা খেয়ে থমকে দাড়ালো। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আজ ও। পুরো দুনিয়া ভুলে যেন রুদ্রকেই দেখছে। ‘কখন এলে ছাদে?’- মায়ার কন্ঠ শুনে রুদ্র চমকে উঠলো। তিথি পিছন থেকে চেচিয়ে বললো, ‘মাসুম ভাইয়ের বউ থেমে গেলা কেনো?’ তিথির পিছনে মায়ার ছুটার কারনটা বুঝতে পারলো রুদ্র। রাগ আর বিরক্তি নিয়ে ছাদ থেকে নেমে এলো। রুদ্রের রাগটা মায়ার চোখেও ধরা পড়লো।
আবিদ তখনও ছাদে তাই রুদ্র কে ফিরে যেতে হল, এর মাঝে নিজের টিশার্ট টা বদলে নিলো রুদ্র, যেন রাগের ব্যপারটা কারো চোখে না পরে, বিশেষ করে মায়ার। রুদ্র ছাদে এলো, মায়া বেশ কয়েক বার রুদ্রের দিকে তাকালো। আড্ডায় মায়ার মন নেই। রুদ্রের দিকেই তাকিয়ে আছে। নতুন টিশার্ট খুলে সে একটা ময়লা টিশার্ট পড়ে এসেছে, ব্যপারটা এতক্ষন খেয়ালই করেনি রুদ্র। নিজের উপরই রাগ হল রুদ্রর। ‘এতক্ষনে এই মেয়ে এইটুকু নিশ্চিত বুঝে গেছে টিশার্ট বদলাতে আমি ছাদ থেকে নেমে যায়নি। নিজেকে আর এই মেয়ের সামনে লুকোতে পারলামনা’- মায়ার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে রুদ্র।
গত কয়েকদিনের ব্যস্ততা মায়াকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলাতে পারেনি, কিন্তু যতবার মাসুমের কথা মনে পরেছে, তিথির সেই সস্তা মজার কথা ততবারই রুদ্র বিরক্ত হয়েছে। কোন ভাবেই মায়াকে ভাবনা থেকে সরানো যাচ্ছেনা । আজ আকাশটা সকাল থেকেই মেঘলা করে আছে। মনে হয় এখনি বৃষ্টি নামবে, কিন্তু নামছেনা। রুদ্র যাব না যাব না করেও শেষ পর্যন্ত ছাদে গেলো। ছাদে কেউ নেই, আকাশে ঘুড়ি উড়ছে, রুদ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। ‘ঘুড়ির প্রতি বিশেষ আকর্ষণ আছে মনে হচ্ছে?’- কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো রুদ্র। ‘মায়া আপনি, একা ছাদে যে? বাকিরা কই?’
মায়াঃ মনে হলো তারা সামনে থাকলে কখনই কথা বলবে না আমার সাথে তাই তাদের নিচে রেখে এলাম।
রুদ্র কিছুটা লজ্জিত হল, মাসুম আর তার ঠান্ডা যুদ্ধটা এর ও চোখ এড়ায়নি। মাসুম লম্বা, ফর্সা, দেখতে ভাল। ভাল গান গায়। সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বেড়ায়। আড়ালে সিগারেট খাওয়া, ভাল মন্দ সব গুনই মাসুমের মাঝে আছে। মেয়েদের ব্যপারে ওর ইন্টারেস্ট টা সবচেয়ে বেশি। ওকে স্মার্ট বলবো নাকি চরিত্রহীন জানিনা, কিন্তু ওকে কোন অজানা কারনেই রুদ্র সহ্য করতে পারেনা।
মায়াঃ এত কি ভাবছো?
রুদ্রঃ না, তেমন কিছু না। কেমন আছেন?
মায়াঃ ভালই। তোমাকে কিছু বলার ছিল......
‘কি রুদ্র শুনেছিলাম তুমি নাকি মেয়েদের সাথে কথা বলনা, একলা পেলে তো তুমিও.........’ রুদ্র ফিরে তাকালো, মায়াও। মায়ার দিকে তাকিয়ে মাসুম থমকে গেলো, তার কথা সম্পূর্ণ করলো না। মায়ার এ রুপ, এ দৃষ্টি আর দেখেনি মাসুম। রুদ্র একবারের জন্যও মায়ার দিকে আর তাকায় নি, নয় তো অনেক কিছুই হয়তো বুঝতে। ঝুমাও ছাদে উঠে এসেছে, মাসুম ঝুমাকে নিয়ে ছাদের অন্য পাশে গিয়ে দাড়ালো। রুদ্র মায়ার দিকে না তাকিয়েই বললো, ‘দুঃখিত, আপনার কথা এখন শুনতে পারবোনা’। রুদ্র সিড়ি ঘরের দিকে হাটা শুরু করলো, মায়া বেশ কয়েকবার পিছন থেকে ডাকলো, রুদ্র ফিরে গেলো না, তাকালোও না। ‘মাসুমকে কিছু বলছে, সিড়ি থেকে শোনা যাচ্ছেনা। সম্ভবত মাসুমের উপর বিরক্তই হয়েছে মায়া’- রুদ্র নিজ মনেই হাসলো।
বিকেলে মাসুমের বলা কথাটা মনে পড়তেই নিজের উপরই রাগ হল রুদ্রর। ‘কি দরকার ছিল ঐ মেয়ের সাথে কথা বলতে যাওয়া, অকারন অপমান হতে হলো। এই কথাটা মাসুম দু’কান অবশ্যই ছড়াবে’- ভাবতেই খারাপ লাগছে রুদ্রর। ঘুম আসছেনা, ছাদে উঠে এলো রুদ্র। আকাশে একটা চাঁদ আছে, অস্পষ্ট। চুপ করে বসে রইলো। ‘মাসুমের কথায় এত মন খারাপ হবার কিছু নেই, মন তো অন্য কারনেই খারাপ। মায়া ডাকার পরেই কেন ফিরে গেলাম না। কি বলতে চেয়েছিল ও? কি দরকার ছিল ওভাবে ওখান থেকে চলে আসা! এখন যদি মায়া আর আমার সাথে কথা না বলে। কি বলতে চেয়েছিল কে জানে?’ ভাবতে ভাবতে নিজের উপরই বিরক্ত হল রুদ্র। সারা রাত আর ঘুম হল না, নানা ভাবনা ঘুরে বেড়ালো রুদ্রের মাথায়। হয়তবা মন খারাপ করেই বসে রইলো রাতের আধারে।
ভোরে ঘরে ফিরে রুদ্র নিজের কাজে মনযোগ দিল। খাওয়া দাওয়া করে, ছোট খালার সাথে একবার দেখা করে এলো। কিছু বন্ধুর সাথে দেখা করার কথা ছিল, দেখা করে এলো রুদ্র। সব কাজ শেষ করতে করতে দুপুর হয়ে গেলো। ক্লান্তি আর সারা রাত না ঘুমানোর ফল, বিছানায় শোওয়ার পরই ঘুমিয়ে পড়লো রুদ্র। রুদ্রের ঘুম ভাঙলো মাগরিবের আযানের কিছু আগে, দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে দরজা খুললো রুদ্র। মায়া নেমে আসছে ছাদ থেকে। মাসুম ও সাথে থাকবে হয়তো ঘরে ঢুকে যাবে কিনা ভাবলো রুদ্র।
‘রুদ্র তোমার দেখা পেলাম এত দেড়িতে, সারাটা বিকেল তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, অনেক কথা বলার ছিল, অনেক কিছু জানার ছিল, এখন আর সময় নেই, একটু পর আমরা চলে যাচ্ছি। আর দেখা হবে হয়তোবা, যদি তুমি চাও। ঝুমা সব জানে, কখনো মনে পড়লে জানিও আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো’। রুদ্র চুপ করে দাড়িয়ে রইলো। নড়াচরা করতে পারলো না, কিছু বলতেও পারলোনা। গলাটা এত শুকিয়ে গেছে, একটু জল খেয়ে নিলে, কিছু হয়তো বলতে পারতো। মায়া সিড়ি ঘরের দরজার তালাটা লাগালো। চাবিটা রুদ্রের হাতে দিলো নাকি শুধুই রুদ্রের হাত স্পর্শ করলো একটিবার, তা অজানাই রইলো।
মায়া সিড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে। রুদ্র নীরব দাঁড়িয়ে রইলো, মায়ার চলে যাওয়া দেখতে। প্রথম দেখার প্রথম প্রেম।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:৫৯
অপ্রতীয়মান বলেছেন: প্রথম দর্শনেই ভালোলাগা আর সেই ভালোলাগায় অন্য কারো জন্যে দূরত্বের বলয় তৈরি করে থাকা।

ভালো লিখেছেন