নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পথহারা এক তরীর মাঝি।

ইলিয়াছুর রহমান

সাপে কাটলে সবাই দৌড়ে পালায়,অথচ আমি সাপ দেখলে এগিয়ে যাই।

ইলিয়াছুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিড়ম্বনা !!

১১ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

বাসা থেকে আমার অফিস মিনিট পাঁচেকের পথ। অফিস বলা ঠিক হচ্ছে কিনা জানি না, শুদ্ধ ভাষায় বলতে গেলে এটাকে প্রকল্প বলাই ভালো। প্রকল্পে নির্মাণ কাজের দেখাশুনা করি,সেখানে খেটে মানুষদের কাজের তদারকি করি যেন তারা কাজটা ঠিকঠাক মত করে। তবুও আমি এটাকে প্রকল্প না বলে অফিসই বলি। আমার ভাষায় এটা অফিসই। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত থাকি কর্পোরেট অফিসের মানুষেরাও তাই-ই করে। তাদের কাজকর্ম শুধুমাত্র কাগজে কলমে আর ফোনের মধ্যে সীমাবদ্ধ আর আমার কাজকর্ম শুধু কাগজ-কলম-ফোনে সীমাবদ্ধ নয় শারীরিক পরিশ্রমও করতে হয়।
খেটেখাওয়া-খাটি কিন্তু অশিক্ষিত মানুষগুলোকে সামলানো একেবারে সহজ ব্যাপার নয়। আমার মত যারা শুধুমাত্র নামের ইঞ্জিনিয়ার(সিভিল) তারা ভালো বুঝবেন। সুতরাং আমার কর্মক্ষেত্রকে কোন ভাবেই আমি ছোটভাবে দেখার সাহস পাই না। তাই আমার কর্মক্ষেত্রকে আমি অফিস বলতেই পারি।
যাই হোক যা বলছিলাম...
আমি শুধু মাত্র দুপুরে বাইরে খাওয়ার বিড়ম্বনার জন্যই খরচটা একটু বেশী হলেও সবসময় অফিসের কাছাকাছি বাসা নেয়ার চেষ্টা করি। এই কারণেই ঘন ঘন আমাকে বাসাবদলের অভিযানে নামতে হয়।এক বাসায় ছয়মাসের বেশী থাকা হয় না।কাজকর্ম যেদিকে একটু বেশী আমার বাসাও সেদিকেই!! এ নিয়ে আমার পরিচিত কিছু আপন মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই।
বরাবরের মতই তাদের প্রশ্ন আমার এত ঘন-ঘন বাসাবদলের কারণ কি !!

উত্তরটা তাদের উদ্দ্যেশ্যে "ভাই, সত্য কথা বলতে সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে ঢাকা শহরের রাস্তার জ্যাম ঠেলে অফিস করার চেয়ে একদিন কষ্ট করে বাসা বদল করে নেয়াটাতেই আমি বেশী সুখ পাই,সে জন্যই ঘন-ঘন বাসা বদল !! "
বিগত আট বছর এভাবেই চলছে। আজ অফিস থেকে বাসায় ফিরছি দুপুরে খাবো বলে। অফিসের খুব কাছেই রাস্তায় নেমে দেখি এক কোমর পানি,আপনি ভাবছেন কোন অখ্যাত-গ্রাম্য-নীচূ এলাকায় আমার অফিস?তাহলে আপনার ধারণা পুরোপুরি ভুল।ঢাকা শহরের স্বনামধন্য আবাসিক এলাকা তথা ধানমন্ডির সেন্ট্রাল জোনেই আমার অফিস।

সকালে ১০টার দিকে বড়জোর একঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে পুরো এলাকার পানি এসে জমেছে রাস্তার মাঝে এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল ৩টা। অফিসে যাওয়ার পথে যতটুকু পানি দেখেছিলাম এখনো ঠিক সেরকমই আছে। কিছুটা হয়তো কমেছে তবে সেটুকু এতো বেশী সময়ের তুলনায় না কমে যাওয়ারই সমান । সকালে প্যান্ট তুলেছিলাম উরুতে, হাতে ছিলো পায়ের জুতা আর এখন হাতে জুতার জায়গাটা অক্ষত থাকলেও প্যান্টটা হাঁটুর কিছুটা উপরে তুললেই পানির উপর দিয়ে হেটে বাসায় যাওয়া যাচ্ছে, পার্থক্য এতোটুকুই। অবাক হচ্ছেন জানি !!

ধানমন্ডির মত এলাকায় মেয়রের বাসার সামনে এক কোমর পানি অবাক হওয়ার মতই ঘটনা। আমিও অনেকদিন থেকে অবাকই হচ্ছি।শুধুমাত্র অবাক হয় না ভুক্তভুগী এলাকাবাসী,জনপ্রতিনিধি আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সবাই বুঝি অভ্যস্তই হয়ে গেছে,আপনি আমি অবাক হয়ে কোন ফায়দা আছে? নাই।

পানির উপর দিয়ে হেটে কিছুদুর এগুতেই সামনে একটা মার্সিডিজ, বলা চলে যেখানে শূকনো কাপড়চোপড় বাঁচিয়ে মানুষজন পানি সাতরে পার হবার সংগ্রামে ব্যস্ত সেই পানির মধ্যেই অর্ধডুবন্ত মার্সিডিজের স্পিড চল্লিশ কিঃমিঃ এর উপরে সামনে দিয়ে উত্তাল বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট ঢেউ মত পানির ধারা গিয়ে দুপাশের ওয়ালে গিয়ে আছড়ে পড়ছে ।

কিছু বুঝে উঠার আগেই এতোক্ষন কষ্ট করে ঠিকঠাক মতো গুজিয়ে রাখা আমার কাপড়চোপড় নোংরা-ময়লা পানি দিয়ে ভিজে জুবুথুবু অবস্থা,সাথে আমিও। ঠিক পরক্ষনে মার্সিডিজের মধ্যে বসে থাকা দুই ভদ্রলোকের জ্ঞ্যান-বুদ্ধি-বিবেক নিয়ে আমার মনে বেশ সন্দেহের সৃষ্টি হলো।

মনে চাইলো সামনে পেলে দুই কানে দু-চড় লাগিয়ে দেই।মনে মনে বলে আর লাভ কি !! ততক্ষনে তারা অনেকদুর চলে গিয়েছে,আর সামনে পেলেও হয়তো চড় মারাটা আমার হতোই না...। হয়তো অতোটা অভদ্রও আমরা নই ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.