![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৩রা নভেম্বর ১৯৭৫ এর প্রথম কয়েকটি প্রহরে বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেয়ার মতো দুটি ঘটনা ঘটে, একটি অভ্যুত্থান এবং ঢাকা কারাগারে একটি হত্যাকাণ্ড । বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের উৎখাত করার জন্য সরাসরি একটি সামরিক পদক্ষেপ প্রথম নেওয়া হয় ১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর দিবাগত রাতে, সেনা এবং বিমান বাহিনীর মূলত মুক্তিযোদ্ধা অফিসাররা এই অভিযানে খালেদ মোশাররফ-শাফায়াত জামিলের পক্ষে থাকেন । ৩ নভেম্বর সেনাবাহিনীর সিজিএস (চিফ অব জেনারেল স্টাফ) ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) এবং ঢাকা সেনানিবাসের ৪৬ ব্রিগেডের অধিনায়ক কর্নেল শাফায়াত জামিলের (বীর বিক্রম) নেতৃত্বে ঢাকাস্থ পদাতিক রেজিমেন্টগুলোর মাধ্যমে এবং বিমানবাহিনীর একটি অংশের সক্রিয় সমর্থনে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অবস্থানরত ফারুক-রশিদ-ডালিম-নূর চক্রের বিরুদ্ধে সামরিক অবস্থান গ্রহণ করা হয় । ৩ নভেম্বর ভোরে, খালেদ মোশাররফ-শাফায়াত জামিলের পক্ষ নিয়ে ঢাকার আকাশে এবং বঙ্গভবনের ওপর উড়তে থাকে ট্যাংকবিধ্বংসী রকেট-সজ্জিত মিগ-২১ জঙ্গী বিমান ও এম আই ৮ হেলিকপ্টার । পদাতিক বাহিনী বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন স্থানে রোডব্লক স্থাপন করা হয় ট্যাংকের হামলা প্রতিহত করার জন্য । ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বঙ্গভবন ঘেরাও করার জন্য যায় একটি ইনফ্রেন্টি ইউনিট, রেডিও স্টেশন দখল করে নেয় আরেকটি সেনাদল । "বঙ্গভবন ঘিরে তখন এত বেশি সেনা সমাবেশ হয়েছিল যে ভেতরে থাকা মেজর ডালিম এবং মেজর নুরসহ সেনা কর্মকর্তারা আর পাল্টা কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি । আর এরই মধ্যে আকাশে যুদ্ধবিমানও উড়তে দেখা যায়" -- ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন । এই অভ্যুত্থানের শুরুতেই সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করা হয় । বঙ্গভবনে অবস্থানরত জুনিয়র অফিসাররা পরাজয় মেনে নেয়, তাদের অনুগত ট্যাংক ও আর্টিলারির ইউনিট দুটি বিমানবাহিনী আর পদাতিক বাহিনীর অবস্থানের সামনে নিষ্ক্রিয় থাকে ।
বিমানবাহিনীর মহড়ায় ভীত হয়েই মূলত বঙ্গভবনে মোশতাকের সঙ্গে অবস্থানরত ফারুক-রশিদ চক্র পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয় । খালেদ মোশাররফের সামরিক শক্তিকে পরাজিত করতে পারবে না বুঝেই খুনি মেজররা দেশত্যাগের জন্য দেনদরবার শুরু করে । মোশতাকও তার অনুসারীদের দেশত্যাগের সুযোগ দেওয়ার জন্য খালেদ মোশাররফকে অনুরোধ করেন । এই অবস্থায় খালেদ মোশাররফ খুনি মেজরদের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালিয়ে তাদের পরাজিত করার চেষ্টা করতে পারতেন । সে ক্ষেত্রে জঙ্গি বিমান ব্যবহার করতে হত । তাহলে একদিকে বিমান হামলা অন্যদিকে ফারুক-রশিদের অধীনে থাকা ৩০ টি ট্যাংক আর ১৮ টি কামানের গোলাবর্ষণে একটি ধ্বংসযজ্ঞ তৈরি হত । শাফায়াত জামিল লিখেছেন, “সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ, রক্তক্ষয় ও বেসামরিক নাগরিকের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাদের দেশত্যাগের সেফ প্যাসেজ দিতে রাজি হলাম আমরা । সে সময় এটা আমাদের মনে ছিল যে, বিদেশে চলে গেলেও প্রয়োজনে পরে ইন্টারপোলের সাহায্যে তাদের ধরে আনা যাবে ।” ৩ নভেম্বর সকাল থেকেই একটি সমঝোতার চেষ্টা চলছিল । মেজর ডালিম এবং মেজর নুর বেশ কয়েকবার ক্যান্টনমেন্টে এসে খালেদ মোশারফের সাথে দেখা করেন । দিনভর নানা দেন-দরবারের পর সন্ধ্যায় ঠিক হলো তাদেরকে দেশ থেকে চলে যেতে দেয়া হবে । খুনি মেজরদের অনুগত ট্যাংক আর গোলন্দাজ ইউনিট দুটিকেও সেনানিবাসে ফিরে আসতে বাধ্য করা হয়েছিল । সেদিনই রাতে একটি এয়ারক্রাফ্টে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার সাথে জড়িত কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাদের একটি বিমানে থাইল্যান্ডে চলে যেতে দেয়া হয় । কিন্তু তাদের দেশত্যাগের পূর্বেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয় । কয়েকজন সেনাসদস্যের হাতে খুন হন ১৯৭১ সালের প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, তৎকালীন সরকারের অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান । এই রাজনৈতিক নেতারা সবাই ছিলেন মোশতাক-বিরোধী । আর এই সংবাদ খালেদ মোশাররফ-শাফায়াত জামিলরা জানতে পারেন মেজররা দেশত্যাগ করার পর ।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তৎকালীন জেলার আমিনুর রহমান বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, রাত একটা থেকে দেড়টার দিকে একটি পিকআপে করে কিছু সেনাসদস্য জেলগেটে উপস্থিত হন । এসময় আইজি প্রিজনের ফোন পেয়ে তিনিও সেখানে যান । এর কিছুক্ষণ পর তার কার্যালয়ের টেলিফোনটি বেজে ওঠে । "টেলিফোন ধরলেই বললো যে প্রেসিডেন্ট কথা বলবে আইজি সাহেবের সাথে । কথা শেষ করার পরই আইজি সাহেব বললেন যে প্রেসিডেন্ট ফোন করেছিলো । বললো যে আর্মি অফিসাররা যা চায় সেটা তোমরা করো" । এরপর কারা মহাপরিদর্শক আমিনুর রহমানের হাতে চারজনের নাম লেখা একটি চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বলেন এদেরকে এক জায়গায় করো । "সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন সাহেব ছিলেন এক রুমে আর অন্য দুজন ছিলেন অন্য রুমে । তো অন্য রুম খুলে আনলাম" । "আমি ভাবলাম কথাবার্তা বলবে তো পরিচয় করিয়ে দিই । মনসুর আলী সাহেব ছিলেন সর্বদক্ষিণে । তাকে পরিচয় করানোর জন্য মাত্র ম.. বলা শুরু করার সাথে সাথেই গুলি করে দিলো । গুলি করেই তারা খোলা গেট দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলো" । ঐ জেলহত্যার ঘটনাটি তাৎক্ষনিকভাবে জানাজানি হয়নি । ঘটনাটি সেনা অফিসারদের কাছে পৌঁছে, ৪ নভেম্বর সকালের দিকে । খন্দকার মোশতাককে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে গৃহবন্দি করা হয়, প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ সায়েমকে দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব এবং সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পেয়ে নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন । এই ঘটনাগুলো ঘটে চললেও এই অভ্যুত্থানের প্রধান ব্যক্তি খালেদ মোশাররফ দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে কোনো বক্তব্য রাখেননি । ফলে দেশের মানুষ এবং বিভিন্ন সেনানিবাসের সাধারণ সৈনিকদের কাছে এই অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তৈরি হয় অস্পষ্ট ধারণা । শাফায়াত জামিল এবং অন্য অফিসারদের অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও খালেদ মোশাররফ রেডিও-টেলিভিশনে ভাষণ দিতে অনীহা প্রকাশ করেন । তাঁর মত ছিল, কেবল নতুন প্রেসিডেন্টই এই দায়িত্বটি পালন করতে পারেন । খালেদ মোশাররফ তাঁর এই সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন । খালেদ মোশাররফ-শাফায়াত জামিলদের অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর ৪ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্যোগে ঢাকায় একটি মিছিলের আয়োজন করা হয় । মিছিলটি বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ফুল দেয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় । এই মিছিলে অনেকের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন খালেদ মোশাররফের মা এবং ভাই আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ মোশাররফ । ১৫ আগস্টের পর এটিই ছিল ঢাকার প্রথম মিছিল ।
--- EMON RAHMAN.
তথ্যসূত্র:
বাংলাদেশ ফোর্সেস হেডকোয়ার্টার, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ মুজিবনগর সরকার, Sector Boundaries সংক্রান্ত পত্র ৷
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর - কর্নেল শাফায়াত জামিল (অব) (বীর বিক্রম) ৷
৩ নভেম্বর: প্রথম প্রতিরোধ - ক্যাপ্টেন হুমায়ুন কবির (অব) ৷
এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক - মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব) (বীর বিক্রম) ৷
বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৭৫-৮১ -ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অব) ৷
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানে কর্নেল তাহের - ড.মো আনোয়ার হোসেন ৷
৭ নভেম্বর: এক অভ্যুত্থানকারীর জবানবন্দি - হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার ৷
তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা - লে: কর্নেল (অব) এম. এ. হামিদ ৷
মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর - গোলাম মুরশিদ ৷
রক্তঝরা নভেম্বর, ১৯৭৫ - নির্মলেন্দু গুণ ৷
বি বি সি বাংলা ৷
দৈনিক আজকের কাগজ ৷
দৈনিক প্রথম আলো ৷
The Daily Star.
Wikipedia.
Bangladesh: A Legacy of Blood - Anthony Mascarenhas.
Bangladesh: The Unfinished Revolution - Lawrence Lifschultz.
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৬
বাংলার জামিনদার বলেছেন: এদেশ ফাকিস্তান বানানোর চেষ্টার অন্যতম মাইলষ্টোন হলো এইসব মহান লোকদের নির্মম ভাবে হত্যা।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: তাজউদ্দিন আহমেদ একজন গ্রেট নেতা।
তার সমতুল্য কেউ নেই।