![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গিলিত চর্বণ ।
( Chewing the Cud )
অকর্ষিত, অরক্ষিত ও অকলুষ মনে ফিরেছি আজীবন কত কিছুই মিলেছে নগদে ও বাঁকীতে নিশিদিন বিরামহীন দর্শনে । সৃষ্টি কুলের অবারিত দ্বার সারাক্ষন উন্মোচিত ছিল জনাকীর্ন ও নির্জনে । ফিরেছি ভাল মন্দের হাজারো দন্ধে মন্দের মাঝে ভাল কিছু পাওয়ার প্রগাঢ় অন্বেষনে । জীবন কখনও হেসে কখনও কেঁদে,কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছে অজানা অন্তহীন অন্তীমের পানে ।
অভিলাষী মনের প্রচ্ছন্ন ভাল লাগাগুলো হাওয়াই মিষ্টির মত মূহুর্তে হাওয়ায় মিশে যায় যোজন যোজন দূরে । কল্পনায় ফুটা ফুল ঝড়ে যায় ঘুমভাঙ্গা অরূণ রাঙ্গা প্রাতে । প্রাণের আকুতি ধূলিমাখা ধূসর পথে প্রতিনিয়ত হয়েছে ধূলিসাৎ । কল্পলোকের নিভৃত কাননের নিকুঞ্জ পথে আনমনে কুড়িয়ে ফিরি প্রস্ফুটিত প্রদীপ্ত রঙ্গীন পুষ্পদলে সদ্য ফুটা গোলাপ । অবশেষে কুড়িয়ে পাওয়া পদ দলিত অবশিষ্ট বকুলই সুগন্ধ ছড়ায় দিনে রাতে ।
জগতের মায়া মমতা মরীচিকাসম সুখের আভাসে, ইথারে ভেসে, অনিলে মিশে সতত ঢেউ খেলে যায় জলে, স্থলে, অন্ত:রীক্ষে ও চীড়ধরা বক্ষে । আশা নিরাশার দোলাচলে জগত সংসারে তৃষিত প্রাণের তৃষ্ণা বাড়িয়েই চলে সারাক্ষণ । গভীর জলধিতে আকন্ঠ ডুবে জল পান না করেই ফিরে আসে জীবনের জয় পরাজয় । হুতাসন বাড়ায় না পাওয়ার ধিক্কার, এ যেন মৃত্যুর মাঝে বেঁচে থাকার অধিকার ।
পরাভূত আত্মা তৃপ্তি খুঁজে, না পাওয়ার মাঝে । হৃতরাজ্যে অস্তীত্বের অস্থি মজ্জা ফুলসজ্জা ছাড়াই বেড়ে উঠে সকণ্টক পালঙ্কে । হাল না ছেড়ে অকুল পাঁথারে সন্ধানীর তীক্ষ্ণ নজরে খুঁজতেই থাকে বিজয়ী স্তম্ভ । এই পথচলাই অন্বেষকের মৃত্যুসঞ্জীবনী সুধা । দগ্ধ প্রাণের বিষাক্ত লহু অলিন্দে নিলয়ে শোধন শেষে স্রোতস্বীনির স্রোতধারায় পুনরায় বয়ে চলে স্নায়ু তন্ত্রের কলা ও কোষে কোষে । অধ্যবসায়ে তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলে পরশ পাথরে, যার স্পর্শে মূল্যহীন পদার্থ ও অপদার্থ পরিনত হয় অমূল্য রত্নে ।
কোন শ্বেত পাথুরে মূর্তির বেদীমূলে প্রদীপ জ্বেলে ফুল চন্দনের অর্ঘ ঢেলে ভক্তি বন্ধনা গীত হয়নি কোনদিন । মনের মাধুরী মিশিয়ে বিনা তারের ছয় রাগ ছত্রিশ রাগীনিতে সেধেছিলাম নাগিন বীন । খেলেছি খেলা বেলা অবেলায় ফণাধারী বিষাক্ত ফণীর সঙ্গে । অমৃত সুধা ঢেলে অঞ্জলি দিয়েছিলাম মনে মনে ফুলে ফুলে তার আঙ্গিক সৌষ্ঠবে ।
যখন সে অজ্ঞাত, অচেনা আকস্মিক এসেছিল নজরে, জানি না কি এক আকর্ষিত চৌম্বিক ক্রিয়া বিক্রিয়ায় বিষক্রিয়া সক্রিয় হয়েছিল সদরে অন্দরে । সে অঙ্গ জল তরঙ্গে তরঙ্গায়িত হয়ে অহরহ মৃদু মন্দ আঘাত প্রতিঘাতে উষ্ণ শিহরণ জাগিয়ে চলে উদাসী পথিকের ব্যথাতুর প্রাণে । সে লাবণ্য প্রভা শোভা ছড়িয়ে বিষবাণে, অবাধ্য শাসনে,দিবস যামিনী সীমা লঙ্গনে উল্টো স্রোতে উজানে বহমান পানসীতে বসে শুনিয়েছিল ঋতুরাজ কুকিলের নিরন্তর কুহুতান । মুগ্ধতার নিবিড় পর্যবেক্ষণ নীরিক্ষনে নীরব, নির্বাক বদনে অনিমেষনেত্রে ফুটেছিল পারিজাত নিষিদ্ধ কাননে ।
ভেবেছিলাম যে রূপে গড়েছেন ঈশ্বর তা খাঁটি দুধের মত শতভাগ নিখাদ, নিদাগ ও নির্ভুল । প্রাক্কলিত বিশ্বাসের প্রাচীন প্রাচীর ভেঙ্গে সে অঙ্গ শত রঙ্গে রাঙিয়ে দু'কুল ছাপিয়ে আজও কুল কুল রবে বয়ে যায় অকুলের পানে, নদী সাগর পাড়ি দিয়ে মহাসাগরের উজান ভাটির টানে । সে দুধেও কাঁটা ছিল কল্পিত বেষ্টনীর বাহিরে প্রমানিত নির্মম সত্যের বিধানে । সে কাঁটা খুলেছিল দীর্ঘ নি:শ্বাসে নিরেট বিশ্বাসের তিরোধানে ।
সুহৃদের সুললিত কন্ঠে, সুশ্রাব্য কথার যাদুর অব্যর্থ বানে হেরেছিলাম অজানা মোহে । লতানো সে মেহেদী রাঙ্গা হস্ত ব্যস্ত তটস্থ ক্ষনে ক্ষনে কথাচ্ছলে মুখ ঢেকে লজ্জায় লুকিয়ে সাজত নতজানু নববধু । সে মনোহর আকর্ষিতে আঁটসাঁট জড়িয়ে আঁচড় কেটে নিমেশে ডুবিয়েছিল কালজয়ী সাম্পান । প্রচন্ড বজ্রাঘাতে অবোধের অব্যক্ত বোধের হয়েছিল পক্ষাঘাত । অশান্ত, চঞ্চল, চপলের সেখানেই হয়েছিল অপঘাত ।
উড়ন্ত মেঘমালার মত ঢেউ খেলানো কালো দীঘল কেশের কবরীতে গেঁথে দিয়েছিলাম ফুল । সে অর্ঘ আত্মাহুতি শেষে আপনি ঝরে পড়েছিল বিষাদে । সে উচ্ছল মূহুর্তগুলো আজ বিবর্ণ, নীরস, ফেনিল, পান্ডুর ফ্যাকাশে । এক কদমের সামনে চলা স্মৃতি রোমন্থনে দশ কদম পিছনে টানে । শ্রবণেন্দ্রীয়ে আজও বাজে চাপা কন্ঠে সায়াহ্নে বিদায়ের অশ্রুত বাণী । ফিরে এসো ঝড় ঝঞ্ঝার বিপরীত স্রোতে বদ্ধ দুয়ারে আঘাত হানী । দিগন্তে বিস্তৃত মুক্ত মেঘমালায় ভর করে শরতের কোন অবসরে । সে গহীন গতিশীল ভাবনার নদীও জল শুকিয়ে গতিহীন নিথর দেহে ঠেকেছে মরুময় বালুচরে । বেঁধেছি ঘর শুকনো নদীর কুল ভাঙ্গা পাড়ে ।
সাগর মৌথনে ঝিরিঝিরি মৌসুমী বায়ু বদ্ধ বুকের কপাটে আঘাত হেনে যেমনি খুলে নিত শার্টের বোতাম । তেমনি অনায়াসে অনুপ্রবেশ থেকে তিলে তিলে বিনা অনুমতিক্রমে রুদ্ধ দ্বারের আগল খুলে করেছিল প্রবেশ । ছোট ছোট কথার সুখ ও ব্যথার গাঁথুনীতে গাঁথা মালা স্ফীত হয়ে উঠেছিল শীর্ষ চুড়ায় । উপরে উঠার রাস্তা ছিল না বলেই নিম্নাভিমুখেই অবশেষে পথচলা । এভাবেই গড়ে উঠেছিল আরেকটি সুদৃশ্য সুউচ্চ ইমারত । সেই আকাশচুম্বী অদৃশ্য ইমারতের প্রতিটি পোড়া ইষ্টকখন্ডের গায়ে ক্ষোদিত নামের পাশে বাসা বেঁধেছে ক্ষুধিত পরজীবি ছত্রাক ।
দুটি আনত লোচনের মোহিনী চাহনী আঁধার ভেদিয়া আলোকিত করতো পূর্ন শশীর রজনী । দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়ার আগেই, আঁখি যুগলের ভেজা সুর, কাছে নিত টানি । কাজল শোভিত যুগল নেত্র, ছিল ভাবনার কুরুক্ষেত্র । আজও কান পেতে শোনি সেই বেদনা বিঁধুর ধ্বনি । খুশির জোয়ারে পড়েছে ভাটা বেদনার ঐশ্বরিক বাণে । দৃষ্টির অন্ধকূপে বৃষ্টি ঝড়িয়ে পূর্ণ করেছিলাম হৃদয়ের সকল খাদা খন্দ, সে কন্টকাকীর্ণ পথও চীরকালের জন্যে হয়েছে বন্ধ ।
নিশি দিন বারকোশে অঙ্গার জ্বেলে কালিমাকে রূপান্তরিত করেছিলাম হীরকে । সে স্বচ্ছ স্ফটিকের মসৃণ তলে প্রতিফলিত আলোক রেখা আজও ইথারে ঢেউ তুলে ঝিলমিলিয়ে চমক দিয়ে যায় সামনে ও পিছে । মনের অজান্তে উল্কা বেগে ছুটে আসা চমকিত স্ফুলিঙ্গে অগ্নিদগ্ধ হই বেদনার তিক্ত রসে ছয় ঋতুর বারমাসে ।
ভাবনার আকাশে আলোহীন তারারা জমে আছে কৃষ্ণ গহ্বরে । শূন্য মাঠের পরিত্যক্ত, সে শত্রু সম্পত্তিতে আজ ঘুঘু চড়ে । ঝড় জলোচ্ছ্বাসের বেগে আজো শোনি তার শন শন আগমনী ধ্বনি । স্মৃতিগুলো তীর বেগে আজও অপ্রকৃস্থিত করে চলেছে । পোড়া কংকাল জমে আছে আগ্নেয়গীরির উৎগীরিত তপ্ত লাভার ধ্বংসাবসের নীচে ।
অতলে ডুব দিয়েছিলাম শঙ্খ ও ঝিনুকে মজুত মুক্তার খুঁজে । কানপেতে শুনতে চেয়েছিলাম জল প্রবাহের কুলকুল ধ্বনি, পাইনি তা বুঝে । ভেবেছিলাম ঝড়ের বেগে আঘাত হেনে ভাঙ্গতে পারে দু'কুল । সাঙ্গ হলে খেলা বুঝতে পেরেছি সবই ছিল ভুল । কুল ভেঙ্গে কুলাঙ্গার তৈরী করতে পারেনি বলে জলের চার ভাগের তিন ভাগে নিয়েছি ঠাঁই । উচ্ছেদ, ব্যবচ্ছেদে নিজেরে খোঁজে পাই ।
কত নির্ঘুম শর্বরী কেটেছে নীলিমার নীলে তারা গুনে গুনে । বিনা স্পর্শে স্পর্ধা দেখিয়েছিলাম নিষিদ্ধ আলিঙ্গনে । চাতক তৃষা লয়ে ছলছল নয়নে গড়েছি বেদনার বিষাদসিন্ধু । রিক্ত জীবনে সিক্ত হৃদয়ের চীড় ধরা রক্তরেখায় ঝরে, রক্ত শিশির বিন্দু ।
এনামুল হক
সিংগাপুর
১৮/১০/ ২০১৫
রবিবার
©somewhere in net ltd.