নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

I am a Mechanical Engineer, worked in different industries, Petro-Chemicals, Rifineries, Gas Plant, Water treatment, Offshore and Onshore Plants, Fertilizers, Olefins, since 2007 working as a Senior Quality Assurance Inspector at Keppelfels Ltd in Singapo

ইন্জিঃ এনামুল হক

ইন্জিঃ এনামুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গর্ভপাতহীন প্রেম চাই ।

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৯

গর্ভপাতহীন প্রেম চাই ।

স্বাধীনতার কয়েক বছর আগে যখন বাড়ী থেকে অন্য বাড়ী যেতে পারি এবং ফিরে আসতেও পারি, তখন এক লোক আমাকে এক টুকরো কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে, একজন মহিলাকে ইঙ্গিত করে, বলেছিলেন উনাকে দিয়ে আসো । মহিলা ছিলেন অন্যের সুন্দরী স্ত্রী । আমি কোনো ঘুষ না নিয়ে কাগজটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছে দিয়েছিলাম । আমি এসব কাগজপত্র লেনদেন তখন বুঝিনি যখন বুঝেছি, ততোদিনে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে মধ্যম সাইজ হয়ে গেছি । "আমার মুরুব্বীর অনৈতিক প্রেম আটকেছিলো উনার মুরুব্বীদের জালে । পরে সবই ঠিক হয়েছিলো লাঠি আর কিলে" । সে প্রেম এক সময় মুরুব্বীগনের নজরে আসে এবং প্রেমিককে ধরে সামাজিক মর্যাদায় উত্তম মধ্যম দিয়ে, ঘটনাটিকে কাত করে, এক সাইডে নিতে সমর্থ্য হয়েছিলেন । পুরুষ লোকটি আজও বেঁচে আছেন । সমর্থ্য আছে কিন্তু হজ্জ করছেন কিনা, জানিনা । আজ বুঝি, সেটি ছিলো পরের স্ত্রীর সাথে নিজকীয়া প্রেম । যা বর্তমানের এলজি, সামসাং, সনি, এইচটিসি, আইফোন এবং নকীয়া প্রেমের সমতূল্য ।

প্রেম ভালোবাসা খায় না মাথায় দেয়, তখনও বুঝিনি কিন্তু দেহটি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বাড়ার সাথে সাথে এ সম্পর্কে বড়দের বিভিন্ন রকম শক্ত, নরম বাণী আসতে শুরু করলো । আমাদের সাথে যারা পড়তো তাদের কয়েকজনের বয়স আমাদের চেয়ে আট নয় বৎসর বেশী ছিলো । সময়মতো পড়ালেখা চালিয়ে গেলে হয়তো ডিগ্রীতে পড়তো, সেখান থেকে উচ্চ ডিগ্রী ফেলে, ডিগবাজী খেয়ে কেমনে ক্লাশ সিক্সে এসেছিলো, তার ইতিহাস ব্যক্তিগত । তারা কেউ ভালো ছাত্র ছিলোনা, দু একজন ক্লাশ সেভেনেই প্রেমের ফাঁদে পড়ে বিয়ের পিঁড়ি ফেলে সরাসরি ছাঁদে গিয়ে বসেছিলো । একই শ্রেণীতে পড়ার কারনে, দুই চারজন বড় ভাইকে এখনও নাম ধরে ডাকি, এতে কেউই মাইন্ড করিনা।

প্রেমের মরা জলে ডুবেনা গান সহ লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, আইউব-রহিমা,ইউসুফ-জুলেখা সব কাহিনী শোনলাম । বড় হয়ে সবগুলো বই পড়েছি । এগুলো শোনে আর পড়ে শেষে জ্ঞান ভান্ডারে শেওলা পড়ছে । শ্রীকান্তের রাজলক্ষীও জীবনে অলক্ষী হয়ে দেখা দিলো । সব জ্ঞান অকেঁজো হয়ে আপাতত কেঁচো সার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে । শোনেছিলাম বিয়েতে নাকি প্রেমের মৃত্যু হয় । বড় জ্ঞানী সমাজ এইসব নানাবিধ জ্ঞান দিয়ে দিয়ে বড় করলেন, সেজন্যে অবশ্যই সহস্র ধন্যবাদ আলাদা করে রেখেছি । পড়ালেখা না করেও বহুবিধ জ্ঞানের ভান্ডারে পরিনত হলাম কিন্তু ডান্ডার ভয়ে ঐ ভান্ডারের জ্ঞান খরচ করলাম না, ব্যাংকের ভোল্টে আবদ্ধ করে রাখলাম । বাঁকী সব কাঁচের দেয়ালে ঢাকা মিষ্টি, চেয়ে চেয়ে দেখলাম । স্পর্শ করলামনা, ঘ্রাণ নিলামনা শুধু নয়ন জুড়াইলাম।

আশির দশকের শেষ দিকে, আমরা যখন হাই স্কুল শেষ করে, বের হয়ে আসবো আসবো ভাব ধরছি, (1980) তখন হঠাৎ দশম শ্রেণীর কক্ষে, তাল কাঠের বীমে একটি দাবী লিখা দেখতে পেয়েছিলাম "উচ্চ ফলনশীল প্রেম চাই" অন্য বীমে "Out of sight out of mind" । তখনও এই তীর হারা ঢেউয়ের সাগরের কিনারে দাঁড়িয়ে মুক্ত বাতাস খাওয়া হয়নি । শুধু পুরাতন গান আর মান সম্মান নিয়ে চলি । লেখাপড়াটাই ছিলো আসল । খেলাধূলার ব্যাপারে একেবারে নন্দলাল । হাত পায়ে আঘাত লাগতে পারে এই ভয়ে আজীবন দর্শক । এখনও দর্শক সারীতে বসেই সকল প্রকার খেলাধূলা দেখছি, আর শ্রোতা হিসেবে জারী, সারি, ভাটিয়ালী, মরমী, হাছন, লালন, করিম, নজরুল ও রবীন্দ্রনাথ উপভোগ করছি । কৃষ্ণ লীলার মথুরায় গিয়েছি অন্যের সাথে, রাই বিনোদিনীর বিনোদন উপভোগ হয়নি কখনও, তাই গান আর বইয়ের মাঝেই নিয়েছিলাম ঠাঁই । দু একটা হালকা বাতাস লাগছে কিন্তু কাত করে ফেলে দিতে পারিনি, বলতে পারেন পড়িনি, শক্তভাবে গজারী কাঠের খুঁটির মতো দাঁড়িয়েই ছিলাম ।

তখনকার দিনে এই সব ব্যাপারে বহু গোপনীয়তা রক্ষা করা হতো । আমাদের ছোটো বেলার বন্ধুরা কেউ একটি পাখীর বাসা অথবা মাটির গর্তে মৌচাকের খোঁজ পেলে সহজেই সবাইকে বলতোনা, শুধুমাত্র যে দেখেছে তার আন্তরিক বন্ধুটিই দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে জানতো । এরপরই পারমানবিক চেইন রিয়েকশানের মতো খবর ছড়িয়ে পড়তো সবার নাকে, মুখে ও কানে কানে । প্রেম পিরিতিতেও একই অবস্থা বিরাজমান ছিলো । এমনও দেখেছি দুজন কাছে আসতে পাঁচ বছরও লেগেছে আবার অনেকে সারাজীবনেও পৌঁছতে পারেনি । আমাদের প্রেমিক সমাজ যখন শরীরে পাঁচটন প্রেম নিয়ে চলাফেরা করতো তখন ট্রাকের পিছনে লিখা একশো হাত দূরে থাকুন কথাটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো।

যখন শহরে প্রবেশ করলাম, তখন থেকেই একশো হাতের নিরাপত্তা বেষ্টনী উঠে গেলো । একই পণ্য এক জায়গায় আন্ডা অন্য জায়গায় ডিম হয়ে, কখনও তা দেয় কখনও বাচ্চা ফুটায় । আবার অকালে ঝরেও যায়, মনে হয় কারো কোনো গার্ডিয়ান নেই, সবাই দড়ি ছিঁড়া, সর্বভুক । একদিকে দেখলাম প্রেমের বাজার বড়ই চড়া, অতি সহজেই না মিলে কোনো জোড়া, অন্যদিকে লাজ শরম ছাড়া, চক্ষে ঠুসা পড়া, কেউ খাড়া, কেউ বসা আবার অনেকেই শোয়ে পড়া । কেউ প্রেমের মরা আবার কেউবা প্রেমের আগুনে পোড়া।

শহর আর গ্রাম, দুই ভুবনেই একই নাম । যার আছে সরকারী কাম, তাদের বেশী দাম । প্রেম চলে স্বগৌরবে, মনের মাধুরী মিশায়ে স্বসৌরভে, ভয় থাকেনা স্বভাবে, ভাঙ্গে প্রেম অভাবে । এখন চলছে দলে দলে, কার্তিক মাসের কুত্তার হালে । পার্কে, মলে, বিলে কিংবা খালে, সিনেমার হলে, বোটানিকেলে কখনও গভীর জঙ্গলে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা প্রেমের বহু ঘটনাই আজ বিভিন্ন লোকেশনে, চিত, কাত আর শোয়ে থাকা প্রেমই আজকের ডিজিটাল, তাল, বেতাল উচ্চ ফলনশীল ( উফশী ) প্রেম । প্রতিদিন কতো গর্ভপাত হয়, তার হিসেব জানতে আবারও ধারাপাত পড়তে হবে, কিন্তু কিছুই হবেনা শুধু কপালে হাত দিয়ে বসে থাকতে হবে।

বহু খন্ড প্রেম অবশেষে, হঠাৎ সিডরের মতো আঘাত করে সব কিছু লন্ডভন্ড করে ঠাঁই নেয় স্বামীর বাড়ী । বাঁকী থাকে শুধু "গাছ লাগালো কে, আর ফল খায় কে? কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুরো গাছটাই ছাগল মোড়ি দিয়ে খেয়ে ফেলে । এ দুনয়নের সামনে, পিছে, উপরে এবং নীচে, কতোই দেখেছি, শোনেছি । আত্মীক প্রেমের চেয়ে দৈহিক প্রেম হাজারো গুণ শক্তিশালা এবং শালী । আজ উচ্চ ফলনশীল নামে যে প্রেমের চাষাবাদ হচ্ছে তার পুরোটাই GM ( Genetically Modified ) ফসলের মতো, যুগের চাহিদা মিটাতে বিভিন্ন আকার, আকৃতি বিশিষ্ট । আজাইরা প্রেম অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরছে সমাজ এবং পরিবারের নাগপাশ আর তাতেই বন্ধ হচ্ছে কতো শতো জীবনের শেষ শ্বাঁস প্রশ্বাস।

শরৎচন্দ্র বলেছেন "বড় প্রেম শুধু কাছেই টানেনা বরং দূরেও ঠেলে দেয়" । এখনকার বড় ছোটো প্রেমে শুধু কাছেই টানেনা বরং গর্ভধারণ হয়ে গেলে MR, D & C করে গোপনে তাড়াতাড়ি ফেলে দেয় ।

এই অনাকাঙ্খিত অবৈধ দৈহিক মিলন ঘটছে অহরহ । আগের দিনে প্রেম বাসা বাঁধতো হৃদয়ে, এখন সেই প্রেম বাসা বাঁধে অবৈধ জঠরে । দিনে দিনে ভ্রুণ থেকে খুন হয় স্বর্গীয় প্রেমের বাই প্রোডাক্টস্ । আমাদের দশ পাশে কদিন পর পর বিভিন্ন আকারের শিশুর বিভৎস, বেওয়ারিশ মৃতদেহ ভেসে উঠে, যা এ কুলসিত সমাজকে লজ্জায় ভাসায় না হাসায়? এতো সহজে মানুষ হত্যার দায় কি এ সমাজের কারো উপর বর্তায়না? আজ রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার সবকিছুতেই লাগামহীন ভাব কেনো?

সভ্যতার কোন ঐন্দ্রজালিক জালে আবদ্ধ হয়ে গেছি আমরা?আধুনিকতার জোয়াল কাঁধে নিয়ে আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমরা কোন বন্দরে নিয়ে যাচ্ছি? উত্তর জানা নেই, প্রশ্ন দিনে দিনে প্রশ্ন ব্যাংকে পরিনত হচ্ছে ।প্রেম ভালবাসার নামে পৃথিবীর আলো বাতাস পাওয়ার আগেই আর কোনো প্রাণ যেনো নিঃস্প্রান হয়ে ঝরে না যায়, সে আবেদন থাকবে সকল জাত, বজ্জাত প্রেমিকদের কাছে।

সকল পিতা, মাতা, ভগ্নী ও ভ্রাতা
ঠিক করে চলুন নিজ নিজ মাথা
যুগের হাওয়া করোনা গরম,
পাছে সবাই পায় যে শরম ।
বিবেকবোধ জাগাও,
যুগের সাথে আগাও ।

Thanks & best regards
Enamul Haque
Singapore
9/10/2014
Wednesday

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.