নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আগুনমুখার চোখে জল

ওই যে নদী যায়রে বইয়া...

মু. ইশরাত হোসেন লিপটন

মু. ইশরাত হোসেন লিপটন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোমাঞ্চকর আন্ধারমানিক

১৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৪৫

প্রথম আলোর বিশাল বাংলার বিভাগীয় প্রধান তুহিন ভাই (তুহিন সাইফুল্লাহ) ফোন করে কুশল বিনিময়ের পর বললেন, 'আপনাদের ওইখানে কী যেন একটা নদী আছে?'

বললাম- কোন নদীর কথা বলছেন?

তুহিন ভাই বললেন, 'কী যেন, আন্দার মানিক না আন্ধার মানিক নামে?'

বললাম- সে তো কলাপাড়া উপজেলায়।

তিনি জানতে চাইলেন, 'ওই নদীটার নাম আসলে কী হবে?'

বললাম- আন্ধারমানিক।

তুহিন ভাই বললেন, 'আপনাদের কারোই আসলে পটুয়াখালী জেলায় থাকা উচিত না।'

বললাম কেন?

তিনি বললেন, 'আপনি কী ভাবে বললেন নদীটার নাম আন্ধার মানিকই হবে। একজন তো লিখেছেন আন্দার মানিক।'

বললাম- তুহিন ভাই, ওইটা আন্ধারমানিকই হবে। কারণ আাঁধার (অন্ধকার) থেকে আন্ধার শব্দটি এসেছে।

তুহিন ভাই বললেন, 'আপনি নিশ্চিত?'

বললাম- আমি একশ ভাগ নিশ্চিত।

'আচ্ছা ঠিক আছে।' বলে ফোন ছাড়লেন তুহিন ভাই।

রাত ১০টার দিকে বাসায় ফিরছিলাম। কিন্তু মাথা থেকে আন্ধার মানিক সরছেই না। ভাবছি কেন আন্দারমানিক না হয়ে আন্ধারমানিক হওয়া উচিত!

বাসার কাছে বালুর মাঠে পৌঁছে গলা ছেড়ে কয়েকবার পালা করে উচ্চারণ করলাম আন্ধারমানিক / আন্দারমানিক। দেখলাম আন্ধারমানিকই দারুণ যুতসই। গলা ছেড়ে উচ্চারণ করলে কেমন যেন একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি আসে আন্ধারমানিক নামটায়। রয়েছে একধরণের অ্যাডভেঞ্চারও।

বাসায় ফিরে ফোন করলাম আমার শৈশবকালের এক শিক্ষাগুরুর কাছে আন্ধারমানিক রহস্যের সমাধানের আশায়। তিনি বললেন, 'ওই নদীটির (আসলে নদ) নাম আন্ধারমানিক। বঙ্গোপসাগর থেকে উৎপত্তি হয়ে এটি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সোজা পশ্চিমে চলে গেছে। সামনে এগিয়ে বলেশ্বর নদের সঙ্গে মিশেছে এটি।

সাগরের পানির একটি বিশেষত্ব হল এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের বাই-কার্বনেট, ক্লোরাইড এবং সালফেট লবণ দ্রবিভূত থাকে। এ দ্রবণ পানিকে স্ফটিকের মত করে তোলে। এ কারণে জ্যোৎস্না রাতে সাগরের পানিতে নাড়া দিলে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয় নাড়াখাওয়া পানিতে। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, সেখানে হাজারো জোনাকী জ্বলছে।

আন্ধারমানিক নদীতে সরাসরি সাগরের পানি আসে সারা বছর। আর জ্যোৎস্না রাতে যখন নদীর বুকে রাশি-রাশি ঢেউ আছরে পরে তখন মনে হয় অসংখ্য জোনাকী হুমরি খেয়ে পড়ছে নদীর বুকে। জোনাকীর আরেকটি নাম হল আঁধারমানিক। এলাকার জেলেরা ওই নামেই ডাকতে থকলো নদীটিকে। মানুষের মুখে মুখে এক সময় আঁধারমানিক হয়ে গেল আন্ধারমানিক।'

রাতে ইন্টারনেট ঘেঁটে একটি সাইটে আন্ধারমানিক নামকরণ নিয়ে দুলাইন লেখাও পেয়ে গেলাম। ভাবলাম তুহিন ভাইকে ফোন করে এ বিষয়ে আবারো কথা বলি। রাত অনেক হল। তাই ওই ওয়েবসাইটের ঠিকানাটা তুহিন ভাইকে মেইল করে দিলাম।

পরের দিন সকালে (১৬ জুন ২০১৪) অনলাইনে প্রথম আলো দেখছিলাম। বিশাল বাংলার একটি সংবাদে দেখলাম কলাপাড়ার আন্ধারমানিক নদের মোহনায়...। মন ভরে গেল এক ধরণের স্বস্তিতে। যাক, আন্ধারমানিক তাহলে তার নামের ঐতিহ্য হারায়নি। ধন্যবাদ তুহিন ভাইকে। আন্ধারমানিককে বাঁচতে দেওয়ায়।

উল্লেখ্য, ওই দিনেরই (১৬ জুন ২০১৪) প্রথম আলোর বিশাল বাংলায় পিরোজপুর জেলার একটি ইউনিয়নের নাম দেখলাম 'আন্দারমানিক'। সেটার নামকরণ হয়তো ভিন্ন কোনো কারণে হয়ে থাকবে। আমার দাবি হল পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদের নাম কেউ যেন আন্দারমানিক বা আন্ডারমানিক না লিখি। ওটি আমাদের আঁধারের (অন্ধকারের) মানিক, আাঁধারমানিক (জোনাকী) অর্থাৎ আন্ধারমানিকই হয়ে থাক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.