নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাশ হয়ে পড়ে আছে বিজয় বালিকা

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৩

লাশ হয়ে পড়ে আছে বিজয় বালিকা

ফকির ইলিয়াস

====================================



এই দেশে অনেক কিছুই হতে পারতো। হয়নি। এর প্রধান কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা। এমন অশান্তি এই জাতি চায়নি। তারপরও আজ বাংলাদেশ জ্বলছে। চারদিকে হায়েনার ফণা। হ্যাঁ, দায় নিয়েই চলেছে বাঙালি জাতি। কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে অনেক কথা। অনেক স্মৃতি। তারপর বেইমানি করেছে রাজনীতিকরা। কথা দিয়েও, রাখেনি তারা। বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় গিয়ে অনেক ডকুমেন্টস নষ্ট করেছে। তারা তা করবে এটা অজানা ছিল না। কিন্তু যাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, তাদের পশ্চাৎপদতা ছিল চোখে পড়ার মতো। চৌধুরী মইনুদ্দীন এখন লন্ডনের বাসিন্দা। আশরাফুজ্জামান খান নিউইয়র্কের বাসিন্দা। এই দুজনই বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম সহযোগী। এদের নাম আছে ঘাতক-দালালদের তালিকায়। এরা পালিয়ে এসেছিল। এদের বিচারের রায় হয়েছে। আর রায়ের পর এরা বলেছেÑ তাদের কেউ স্পর্শ করতে পারবে না।

বাংলাদেশের রাজাকাররা তাদের ক্ষমতা পরীক্ষা অতীতে করেছে। এখনো করে যাচ্ছে। তা নতুন কিছু নয়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস পাল্টে দেয়ার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে তাদের। সে লক্ষ্যে তারা কাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক রাজনীতিকদের তারা কাজে লাগিয়েছে নিজেদের প্রয়োজনে। আবার ছুড়ে দিয়েছে। ব্যবহার করে ছুড়ে দেয়াই মওদুদীপন্থীদের হীনকর্ম। যারা ব্যবহৃত হয়েছেন তারা কেউই লজ্জিত হননি। আর সেরা রাজাকার, আল-বদর কমান্ডাররা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এটাই হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশে মহান বিজয় দিবসের প্রকৃত বাস্তবতা। বর্তমান সরকার প্রজন্মের কাছে ওয়াদা করেছিল এদের বিচার করবে। সেই ধারাবাহিকতায় এদের বিচারকাজ চলছে। এদের টুঁটি চেপে অনেক আগেই ধরা যেতো। কিন্তু রাজনীতিকরা তা ধরেননি। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীর সংখ্যা বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১১ হাজারের মতো। অথচ জনসংখ্যা দেশে সাড়ে পনেরো কোটির ওপরে। এদের তো রা করার কোনো উপায় থাকার কথা ছিল না। কিন্তু তারপরও দেশের মহান বিজয়ের তিন দশক পার হওয়ার আগেই তারা মন্ত্রিত্ব পেয়েছে। যারা সরাসরি একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। ভাগবাটোয়ারা করে ক্ষমতায় যাওয়ার এবং টিকে থাকার জন্যও প্রতিযোগিতার ফল এমনটিই হয়। ভাবতে অবাক লাগে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে, ডিসকাশন গ্রুপে রাজাকারপন্থী কিছু কিছু উত্তরসূরি প্রশ্ন তোলে, ‘একাত্তরে আদৌ ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হয়েছিলেন কি না।’ ধৃষ্টতা আর কাকে বলে! তারা বলে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা চাননি, পশ্চিমাদের সঙ্গে সমঝোতা করে ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিলেন। এমন নানা উদ্ভট তথ্যও হাজির করে মাঝে মাঝে। এসবের উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতিকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের রাজাকারী মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা। প্রজন্মের ব্রেনওয়াশ করা। এরা কোনো ইতিহাস, কোনো ডকুমেন্টারি মানতে চায় না। বিদেশের বিভিন্ন আর্কাইভে রাখা তথ্য-তত্ত্বগুলো বিশ্বাস করতে চায় না। না বুঝতে চাইলে তাদের বুঝাবে কে? কিন্তু কথা হচ্ছে আজকে যারা সত্যের অন্বেষণের রাজনীতি উপহার দিতে লেভেল প্লেইং ফিল্ডের জন্য কাজ করছেন, তাদের অভিপ্রায় কী এ ব্যাপারে? খুনিদের বিচার না করে কি সে লেভেল বাংলাদেশে তৈরি হবে?

এই দাবি এদেশের মানুষ অনেক আগে থেকেই করে আসছে। ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এদেশের মানুষকে ডাক দিয়েছিলেন। তার সেই ডাকের পথ ধরেই আজো চলছে এই আলোকিত প্রজন্ম। আমরা দেখছি ইউরোপ-আমেরিকায় এখনো নাৎসিবাদের গন্ধ পাওয়া গেলে সেখানে কামান দাগাবার চেষ্টা করে সরকার পক্ষ। এটি হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিকত্ব রক্ষার প্রশ্ন। এ প্রশ্নে আপোস করলে রাষ্ট্র বিপন্ন হতে পারে। আমরা তা হতে দিতে পারি না। আর পারি না বলেই বিষয়টি জিইয়ে রেখে শুধুই রাষ্ট্রের ক্ষতি করা হবে। একটা বিষয় আমরা লক্ষ করছি। আজ যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলছে তখন বিশ্বের কোনো কোনো সংস্থা ‘মানবাধিকার’-এর কথা বলছেন। আমার প্রশ্ন হলো একাত্তরে যখন বাংলাদেশে গণহত্যা হয়, তখন তাদের এই দাবি কোথায় ছিল? আমরা দেখেছি, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোর ঢাকায় অবস্থান করছেন। এই সময়েই যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদ- স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনার নাভি পিল্লাই। তার এই চিঠি পাঠানোর মধ্যেই জামাতে ইসলামী নেতার ফাঁসি বুধবার সকাল পর্যন্ত স্থগিত রাখতে আদালতের আদেশ হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতিসংঘ যে কোনো মৃত্যুদ-ের বিরুদ্ধে, সেটা যে পরিস্থিতিতে হোক না কেন, এমনকি সবচেয়ে জঘন্য অপরাধের ক্ষেত্রে হলেও।’ এর মধ্যেই কাদের মোল্লার জন্য শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠানোর তথ্য বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে তুলে ধরা হয়েছে। একাত্তরে খুন-ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত কাদের মোল্লাকে মঙ্গলবার ফাঁসিতে ঝোলানো হবে বলে তার দল জামাতে ইসলামীর আশঙ্কা প্রকাশের মধ্যে সোমবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের স্বাধীন দুই বিশেষজ্ঞ এই মৃত্যুদ- কার্যকর না করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। কাদের মোল্লা ন্যায়বিচার পাননি অভিযোগ তুলে গাব্রিয়েলা নাউল ও ক্রিস্টফ হেইন্সের বিবৃতি দেয়ার এক দিনের মাথায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের ‘শেষ মুহূর্তের আহ্বান’ এলো, যাতে তিনি কাদের মোল্লাকে একজন রাজনীতিক হিসেবে উল্লেখ করে তাকে এখনি ফঁাঁসিতে না ঝোলানোর অনুরোধ করেছেন। কারা একাত্তরে গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য পাকিদের শলাপরামর্শ দিয়েছিল, তা কিছুই লুকানো নয়। এসব বিষয়ে সে সময়ের দলিলপত্র দেশে-বিদেশে এখনো সংরক্ষিত আছে। কথা হচ্ছে, নানা রাজনৈতিক ছলচাতুরী সুবিধাভোগের ফন্দিফিকিরের নামে রাজনীতিকরা বেহুঁশ থাকায় ঘাতক দালালদের বিচার করা যায়নি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে এদের বিচার কোনো দিনই করা যাবে না। কিংবা কেউ করতে পারবে না। ঘাতক-দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তুলতেই বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রশ্ন, শঙ্কার কথা তোলা হয়েছে শুরু থেকেই। এর নেপথ্য কারণ কী? যারা যুদ্ধ চলাকালে সুস্থ মস্তিষ্কে গণহত্যা করে কিংবা ম“ জোগায়, তারাই যুদ্ধাপরাধী। এসব যুদ্ধাপরাধীদের অবস্থান একাত্তরে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিল তীব্রভাবে। তাই এই ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রটিকেই বিচার চেয়ে বাদী হতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যুগে যুগে যেমনটি বিচার চাওয়া হয়েছে। এবং রাষ্ট্র সেসব বিচারের ব্যবস্থাও করেছে। একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে সত্যের পক্ষে মানুষ যে কোনো সময়, যে কোনো দেশে দাঁড়াতে পারে।

একটি কথা খুব গুরুত্বের সঙ্গে বলতে চাই। আর তা হচ্ছে, এ দেশে যদি কোনোভাবে রাজাকারদের পক্ষপাত করা হয়, তবে কারো রাজনৈতিক ভবিষ্যৎই শুভ হবে না। কারণ রাজাকাররা এমন এক অশুভ শক্তি, যারা সময় সুযোগ পেলেই ছোবল দেয়। অতীতে দিয়েছে। ভবিষ্যতেও দেবে। দেশের আপামর জনগণ জানেন এরা কতো জঘন্য মানসিকতা সম্পন্ন। তাই এদের বিচার আজ রাষ্ট্রীয় দাবি। বর্তমান সরকার এদের বিচার না করলে কালের আবর্তে এই দেশ আবারো ওয়ান-ইলেভেন পূর্ববর্তী পর্যায়ে ফিরে যেতে পারে। রাষ্ট্রের বুকে সৃষ্ট ক্ষত আরো বিশাল আকার ধারণ করতে পারে। জাতিকে এদের রাহুগ্রাস থেকে বাঁচাতে বর্তমান সরকার বিহিত উদ্যোগ নেবেন বলেই জাতির প্রত্যাশা। বাংলাদেশ আজ চরম সংকটে। কে কোন দিকে চাল দিচ্ছে তা বুঝা ও বলা মুশকিল। আমাদের মনে রাখতে হবে, অর্জন পূর্ণতা না পেলে সে বিষয়ে আগাম লম্পঝম্প করার কোনো অর্থ নেই।

স্বদেশ এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আমাদের সড়কের পাশে পড়ে আছে বিজয় বালিকার লাশ। যা আমরা প্রতিদিন দেখছি। আর কতো কতো প্রাণ ঝরবে? এদেশের মানুষ কি এই হায়েনাদের প্রতিরোধ করতে পারবে না?

-------------------------------------------------------------

দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৩

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.