নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে পাঁজর একসময় মানুষের ছিল

২৮ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৪১





যে পাঁজর একসময় মানুষের ছিল

ফকির ইলিয়াস

________________________________________________



‘তোমার দিকে আমার তাকাবার সময় না-ও হতে পারে/ ধূসর পৃথিবীর দিকে তাকালে কেবলই দেখবো মৃত আকাশ/ দেখবো- নক্ষত্রগুলো ছাই হয়ে আছে/ এর পাশে/ পড়ে আছে কিছু পাঁজর/ যা একসময় মানুষের ছিল’ । আজ থেকে প্রায় আড়াই দশকের বেশি সময় আগে এই পঙ্ক্তিগুলো যখন লিখি তখনো এভাবে ফ্ল্যাট প্রজন্ম গড়ে ওঠেনি। গড়ে ওঠেনি প্লট বাণিজ্যের অবিন্যস্ত পসরা। ছিল না মোবাইল ফোনের দাপট, কম্পিউটারের সহজলভ্যতা।

আমাদের চারপাশে আরো খোলা বাতাস ছিল। ছিল প্রকৃতির অবারিত কৃপা। তা এখন ক্রমশই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। দেশে-বিদেশে, সবখানেই। মানুষের ব্যস্ততা বাড়ছে। বাড়ছে তাড়না। ধনীরা আরো ধনকুবের হওয়ার সুযোগ পেলেও দরিদ্র শ্রেণী, সীমা অতিক্রম করে উঠে আসতে পারছে না। কেউ কেউ কিছুটা সমিল খুঁজে, নিজে নিজে ধন্য হতে চাইছে। কারো হাতে ব্ল্যাকবেরি, আইফোন, সনি এরিকসন। কারো হাতে নেহায়েত একটি ‘নকিয়া’। মোবাইল তো আমার হাতেও আছে, তা-ই এখন পরম সান্ত¡না! এক ধরনের আত্মতৃপ্তি।

বিদেশের সিংহভাগ মানুষ মোবাইলবিহীন জীবন ভাবতেও পারছে না এখন। পাশ দিয়ে যখন কেউ একা একা কথা বলে রাস্তায় চলে, তখন মনে করার কোনো সুযোগ নেই, লোকটি প্রলাপ বকছে। কারণ হ্যান্ডসেট ফ্রি, আনমনে হেঁটে হেঁটে কথা বলছে। ব্রাউজ করে দেখে নিচ্ছে দূরান্তের ছবিও।

এটা বর্তমান সভ্যতার স্বরূপ। কিন্তু এই স্বরূপের বাস্তবতাকে প্রকৃতি কতোটা সাহায্য করছে? এই সাহায্য পেতে মানুষের করণীয় কী? এই প্রশ্নটি গোটা বিশ্বে আবারো উত্থাপিত হচ্ছে। আবারো ভাবতে হচ্ছে, মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে কিভাবে টিকে থাকবে। কিভাবে এগিয়ে নেবে প্রজন্মের পথ।

নীতিবানদের আয়োজনে বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন শেষ হয় প্রতিবারই। নানা আশা-দূরাশার দোলাচলের মধ্য দিয়ে কথা হয়। তা নিয়ে যুক্তি ওঠে পক্ষে-বিপক্ষে। তারপরও বিশ্বে ঘটে ইতিহাসের নির্মমতম ভূমিকম্প। এসব ভূমিকম্পে কখনো লাখ প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকাজ শেষ হতে কয়েক মাস সময় লাগে। আর যে দেশে তা ঘটে, সেই দেশটির পুনর্নির্মাণে লাগতে পারে কয়েক বছর।

মানুষের প্রতি প্রকৃতির এই বৈরী আচরণ অত্যন্তই বেদনাদায়ক। কারণ নির্বোধ শিশু থেকে নির্বাক বৃদ্ধ- সবাইকেই হরণ করেছে এই ভূমিকম্প। এ থেকে মানুষ কী শিখতে পারে? কী করণীয় আছে তাদের?

সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে একটি ঘটনা বলি। আমাদের মনে আছে, হাইতিতে এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনাকে পুঁজি করে রীতিমতো অমানবিক বাণিজ্যে উঠেপড়ে লেগেছিল একটি মহল। এরা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছিল লাখ লাখ ডলার। পত্র-পত্রিকায় ভুয়া বিজ্ঞাপন, ওয়েবসাইটে প্রচারণা, ব্যক্তিগত ফোনকল কিছুই তারা বাকি রাখেনি।

আমরা প্রায়ই দেখি, যুক্তরাষ্ট্রে এসব প্রতারক চক্র গড়ে ওঠে রাতারাতি। ইউরোপের অন্যান্য দেশেও এমন চক্র বেড়ে ওঠার খবর প্রকাশিত হয় প্রায়ই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী টিভি চ্যানেলগুলো তা নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করে অনেক সময়।

এরকম ঘটনা ঘটলে আমি প্রায়ই দশ-বারোটির মতো ফোনকল পাই। একবার ‘চ্যারিটি গিল্ড অফ আমেরিকা’ নামধারী একটি সংস্থার পক্ষ থেকে আমাকে ফোন করার পর আমি বললাম, ‘আমি কি তোমাদের ট্যাক্স আইডি নম্বরটি পেতে পারি?’ অপরপ্রান্ত থেকে মহিলা হেসে দিলেন। বললেন- ‘তুমি বেশি জানো’ (ইউ নো টু মাচ)। বলেই আমার মুখের ওপর ফোন লাইনটা কেটে দিলেন। কিছুটা রাগ হলো আমার। কলার আইডি দেখে ফোন করলাম। মেশিনে বেজে উঠলো ‘ইওর কল ক্যান নট বি রিচডৃ.’।

এরা সবই প্রতারক। প্রতারকদের চিনতে ‘টু মাচ’ জানতে হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি নন প্রফিট অর্গানাইজেশন, আয়কর বিভাগ, সিটি সরকারের কাছে নিবন্ধনকৃত। রয়েছে ফেডারেল সরকারের তদারকিও। তাই ভুয়া চাঁদা কিংবা ডোনেশন আদায় সহজ কাজ নয়। তারপরও যে চুরি-চামারি হচ্ছে না, তা আমি বলছি না। হচ্ছে। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলোও এদের ধরতে চালিয়ে যাচ্ছে নানা তৎপরতা। সাঁড়াশি অভিযান। ফলে সেসব অবৈধ কর্মতৎপরতা সরকারি ম“ পাচ্ছে না। আর সচেতন মানুষজন তো রয়েছেই। যারা এর প্রতিবাদ করছে। প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। রয়েছে মিডিয়াগুলোর সাহসী ভূমিকা।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশ বিপন্নতা বর্তমান বিশ্বের একটি চরম সংকট। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, সাউথ ক্যারোলিনা, নর্থ ক্যারোলিনা, আরিজোনা, লুজিয়ানা, ফ্লোরিডা প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে বিভিন্ন সময়ে ভয়াবহ দুর্যোগের ঘটনা আমরা দেখেছি। আগ্নেয়গিরির লেলিহান শিখা প্রায়ই পুড়িয়ে দেয় ক্যালিফোর্নিয়ার জমি-বৃক্ষ-গাছগাছালি। তা রোধের উপায় যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার খুঁজছে না, তা নয়। তারা চেষ্টা করেই যাচ্ছে। চলছে নানা গবেষণা। মোট কথা মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করেই বাঁচতে হবে। রক্ষা করতে হবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য।

এই যে, প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম, তা করার জন্য বাংলাদেশ কতোটা প্রস্তুত? এই প্রশ্নটি আসছে খুব সঙ্গত কারণে। কোপেনহেগেন পরিবেশ সামিটে বাংলাদেশ আগেও বলেছে, আমরা ভুক্তভোগী-ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। কিন্তু এটাই তো শেষ কথা নয়।

ভূমিকম্পের দিক দিয়ে বাংলাদেশ একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। একথা সব বিশেষজ্ঞই বলছেন সমস্বরে। কিন্তু বাংলাদেশ, এই ২০১৪ সালে তা মোকাবেলার জন্য কতোটা প্রস্তুত? বাংলাদেশে প্রথম ও প্রধান সমস্যাটি হচ্ছে, অপরিকল্পিত নগরায়ন। এর কারণে যত্রতত্র গড়ে উঠছে ইমারত। বৃক্ষনিধনও হচ্ছে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায়। একটি বড় ধরনের বহুতল ভবন হবে, আর তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অগ্নিপ্রতিরোধক ব্যবস্থা থাকবে না- তা কি মানা যায়? রানা প্লাজার ঘটনা আমরা ভুলে যাইনি।

লেখার শুরুতেই আমি ফ্ল্যাট প্রজন্মের কথা বলেছি। এই প্রজন্ম বড় হচ্ছে, তারা কী তাদের প্রাপ্য প্রাকৃতিক বিনোদনটুকু পাচ্ছে? না, পাচ্ছে না। বরং মাথা গোঁজার ঠিকানাই হয়ে উঠছে এখন আরাধ্য বিষয়। যারা ধনকুবের, যারা বহু রঙবিশিষ্ট বাংলা বাড়ি বানাবার জন্য বিভোর তারাও নিরাপদ নয়। কারণ তার প্রতিবেশ দূষিত হচ্ছে আবর্জনায়। ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ’- এমন আপ্তবাক্যটিকেও চরমভাবে অপমান করছে একশ্রেণীর মানুষ।

সংবাদ মাধ্যমে, বাংলাদেশের এখন একটি অন্যতম খবর ‘ভূমিখেকোদের দৌরাত্ম্য’। এরা কারা, কী তাদের পরিচয়? দেশের ভূমিমন্ত্রী যখন বলেন, ভূমিখেকোদের শিকড় বড় বেশি শক্ত, তখন সাধারণ মানুষের আর কোনো ভরসাই থাকে না।

দেশের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব যখন বলেন, সরকারি বনাঞ্চল দখলদাররা দখল করে নিয়েছে, তখন আমাদের লজ্জায় মুখ ঢাকতে হয়। এসব তো প্রকৃতির পরিহাস নয়। এগুলো হচ্ছে-মানব শক্তি নির্মিত অপপ্রয়াস। সমাজ, প্রজন্মকে ধ্বংস করে দেয়ার অপচেষ্টা।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল, নদী দখলের ওপর ইতোমধ্যে সচিত্র প্রতিবেদন দেখাচ্ছে। বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে নানা মিডিয়ায়। তারপরও এসব ভূমিখেকো দখলদার, বৃক্ষনিধনকারী, দুষ্টুচক্র নানাভাবে সরকারি ম“ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে যে সব নতুন বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, তারা রাষ্ট্রীয় ধারা অনুযায়ী ‘বিল্ডিং কোড’ মানছে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এরা একটিবারও ভাবছে না, এই অপরিকল্পিত নির্মাণ স্থাপনা একদিন তাদের মাথার ওপরই ভেঙে পড়তে পারে। এরা তাৎক্ষণিক সুবিধাদিকে, মুনাফার লুটপাটতন্ত্রকে ধারণ করছে। স্থায়ী পরিশুদ্ধ পরিকল্পনাকে ধারণ করছে না।

ভূমিকম্পসহ সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার ও জনগণ প্রতিটি শক্তিকেই সচেতন হতে হবে। কয়েক কোটি মানুষের জীবন ধারণকারী শহর ঢাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ফায়ার ব্রিগেড স্টেশন এবং ফায়ার ফোর্স নেইÑ তা ভাবতেও কষ্ট হয়। এই মানসিকতা নিয়ে তো ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর স্বপ্ন আমরা দেখতে পারি না।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকে কারোরই সহজে রক্ষা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই শক্ত প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে শক্তিশালী ফায়ার ব্রিগেড স্টেশন স্থাপনে সরকারকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর যে সুনাম রয়েছে, তাকে আরো পরিপূর্ণ করতে ‘তাৎক্ষণিক সাহায্য টিম’ গড়ে তুলতে হবে তাদের মধ্য থেকেই। যেভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্পেশাল উদ্ধারকারী টিম থাকে। পৃথিবী কাঁপছে। আমরা এর মুখোমুখি দাঁড়িয়েই করছি সব জৈবিক লেনাদেনা। তাই সব প্রতিকূলতাকে ডিঙিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি আমাদের থাকতেই হবে।

আমরা জানি মানুষের পাঁজর একসময় সম্প্রীতিতে ভরপুর ছিল। এখন সেই পাঁজরের ওপরই গুলি চালাচ্ছে কেউ কেউ। কুড়াল দিয়ে গাছ কাটছে। আর হত্যা করে মানুষ ভাসিয়ে দিচ্ছে নদীতে। এর সুবিচার হচ্ছে না। অথচ আমরা মুক্তিযুদ্ধের মানচিত্র দেখে যে বাংলাদেশ চেয়েছিলাম সেই বাংলাদেশ আজ কোথায়? এদেশে কি কোনো শাসনতন্ত্র নেই? সংবিধান নেই? শাসকগোষ্ঠী নেই? এভাবে কি একটি দেশ চলতে পারে? না পারে না। রক্ষক যখন ভক্ষকের চরিত্রে অবতীর্ণ তখন রাষ্ট্রে ভৌতিক দখলদারেরা মাথাচাড়া দেয়। বাংলাদেশ কি এই রাহুগ্রাস থেকে আদৌ মুক্তি পাবে না?

-----------------------------------------------

দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : ২৮/ জুন /২০১৪ শনিবার

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:০৫

কোবিদ বলেছেন:
ধন্যবাদ আ্পনােকে ফকির আশরাফ

২| ২৮ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:২৯

ডি মুন বলেছেন: প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম, তা করার জন্য বাংলাদেশ কতোটা প্রস্তুত? এই প্রশ্নটি আসছে খুব সঙ্গত কারণে। কোপেনহেগেন পরিবেশ সামিটে বাংলাদেশ আগেও বলেছে, আমরা ভুক্তভোগী-ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। কিন্তু এটাই তো শেষ কথা নয়।

ঠিক বলেছেন।

পোস্টে ভালোলাগা রইলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.