নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বনাম ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪৮







প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বনাম ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা

ফকির ইলিয়াস

---------------------------------------



একটি সংবাদ আমাকে নিথর করে দিয়েছে। ব্যথিত হয়েছি, কিন্তু অবাক হইনি। কারণ এ দেশে এখনও এমন কিছু মানুষ আছে যারা মুক্তিযুদ্ধ মানে না। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করে না। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা চালায়। খবর বেরিয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও অসত্য তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন পাঁচ সচিব। দুদকের দীর্ঘ ৬ মাসের অনুসন্ধান শেষে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কী মারাত্মক কথা! এভাবেও মুক্তিযোদ্ধার সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করা যায়?

এ দেশে ৪৪ বছর আগে মুক্তিসংগ্রাম হয়েছিল। আমি সেই মহান মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। তাই জানি কী ভয়াবহ ছিল সেসব দিন। কীভাবে গোলার আওয়াজ স্তব্ধ করে দিয়েছিল আমার মতো লাখো বালক-বালিকার বুকের পাঁজর। সেই মুক্তিসংগ্রামে যারা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা। জীবনবাজি রেখে তারা যুদ্ধ করেছিলেন দেশমাতৃকার জন্য। তাদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। আজ থেকে শত বছর পর এ বাংলাদেশে আর কোনো জীবিত মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমরা এ সত্য জানি ও মানি। তারপরও দেশের রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা সেই মুক্তিসেনানীদের নিয়ে নানারকম ‘কূটচাল’ করছে। দলীয়করণ করছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চাইছে। বিষয়গুলো ভাবতেই কষ্ট হয়।

২০১১ সালে বাংলাদেশের সরকার নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর আগের তালিকা থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে বাদ দেয়াসহ মুক্তিযোদ্ধার তালিকাকে বিতর্কমুক্ত করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি উপজেলা থেকে যাচাই-বাছাই করে ইউএনও’র মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছিল। বলা হয়েছিল, নতুন সফটওয়্যার খুলে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ডেটাবেজ তৈরির কাজ শুরু করবে। এরপর জনসম্মুখে তালিকা প্রকাশ করে তা চূড়ান্ত করা হবে। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে ৯টি সিকিউরিটি কোডমার্ক সংবলিত বিশেষ আইডি কার্ডও দেয়া হবে। তা কতটুকু হয়েছে আমার জানা নেই।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই সরকার অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। যাতে কোনো অমুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান না পায় সেজন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে পাওয়া তথ্য সমন্বয় করে একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে মন্ত্রণালয় থেকে ডেটাবেজের মাধ্যমে এ তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। সরকারি নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, চলমান তালিকায় কোনো অমুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলে তা অবশ্যই বাদ পড়বে।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নির্ণয়ের এ প্রচেষ্টা নতুন ছিল না। তবে সব সময়ই তা করা হয়েছে নিজ নিজ দলীয় আদলে। মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা দেখেছি প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর স্বাক্ষর করা সনদ মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হাতে। এরপর থেকেই তা বদলেছে শাসকগোষ্ঠীর ইচ্ছা অনুসারে। ফলে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ও একেক সময় একেক রকম তথ্য পাওয়া পাওয়া গেছে।

আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধফেরত সৈনিকদের কদর কেমন তা জানি এবং দেখি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ভেটার্নস ডে’ পালন করা হয় শুধু যুদ্ধ প্রত্যাগত সৈনিকদের সম্মাননা জানানোর জন্য। এখানে সৈনিকদের জন্য নির্ধারিত সমাধিস্থলে গেলে মনে হয় কী পরম শান্তি ও শ্রদ্ধা-মমতায় ঘুমিয়ে আছেন তারা। আর জীবিত যুদ্ধ প্রত্যাগত সৈনিকরা যে সম্মান পাচ্ছেন, তা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিদান বলা যায়।

অথচ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা দিন কাটাচ্ছেন অনাহারে-অর্ধাহারে। এখনও অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত। সম্পদ ও কর্মহীন অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার তাদের পরিবারের সদস্যদের খাদ্যের জোগান দিতে এখনও ভিক্ষাবৃত্তি, দিনমজুরি, রিকশা চালানোসহ অনেক কঠোর পরিশ্রমের পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবনযাপন করছেন। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ধ্বংস করে, মনগড়া কল্পিত ও মিথ্যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করে আদর্শহীন, দুর্নীতিবাজ একটি শ্রেণী সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত, নষ্ট ও ধ্বংস হয়েছে এদের হাতেই। অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর নেতারা টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে কিছু মুক্তিযোদ্ধাকেও।

মুক্তিযুদ্ধে একটি বিশেষ অংশগ্রহণ ছিল নারী সমাজের। পরিসংখ্যান অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধে দেশের ৩০ লাখ মানুষ গণহত্যার শিকার হয়, যার অন্তত ২০ শতাংশ নারী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সরকারি নথিপত্রে এর কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। বিভিন্ন ভাষ্যমতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ২ লাখ মা-বোন নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু মাঠভিত্তিক গবেষণা চালাতে গিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের গবেষণা কর্মীদের মনে নিশ্চিত ধারণা জন্মেছে, মুক্তিযুদ্ধকালে নির্যাতিত নারীর সংখ্যা যা এতদিন বলা হয়ে আসছে, আসলে তা এর চেয়ে অনেক বেশি।

তবে এতদিন পর তথ্য-প্রমাণ দিয়ে হয়তো এসব প্রমাণ করার সুযোগ কম। তাছাড়া নির্যাতিতরা সামাজিক সম্মান ও নিরাপত্তার কারণেই চান না এতদিন পর এসব নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি হোক। এসব কারণেই অনেক নির্যাতিত নারী তাদের ওপর নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী গবেষণা কর্মীদের কাছে মুখে মুখে বললেও তা টেপরেকর্ডারে রেকর্ড করতে বা লিপিবদ্ধ করতে দিতে চাননি।

এ প্রসঙ্গে একটি সাম্প্রতিক ঘটনা বলা যেতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ওপেনিং স্টেটমেন্ট শেষ হয়েছে। প্রসিকিউশন তাদের স্টেটমেন্টে বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতা সাঈদী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাড়েরহাট বন্দরের বিপদ সাহার মেয়ে ভানু সাহাকে নিয়মিত যৌননির্যাতন করতেন। বিপদ সাহার বাড়িতেই আটকে রেখে অন্যান্য রাজাকারসহ ভানু সাহাকে নিয়মিত ধর্ষণ করতেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। একসময় ভানু সাহা দেশত্যাগে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন।

স্টেটমেন্টে আরও বলা হয়, সাঈদী একাত্তরে অসংখ্য হিন্দুকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করেছিলেন, নামাজ পড়তেও বাধ্য করেছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বধর্মে প্রত্যাবর্তন করেন এবং কেউ কেউ ভারতে চলে যান।

এটি হল আমাদের মুক্তিসংগ্রামের একটি খণ্ডচিত্র। কী মূল্য দিয়ে কেনা আমাদের স্বাধীনতা! অতীতে যে তালিকাগুলো হয়েছে সেগুলো কি স্বচ্ছ ছিল? একটা উদাহরণ দেয়া যাক। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অনেক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকলেও তাতে ঠাঁই হয়নি কুড়িগ্রামের বীরপ্রতীক তারামন বিবির নাম।

আমরা জানি, মুক্তিযোদ্ধারা চিরদিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন না। কিন্তু তাদের কর্ম, তাদের স্বপ্ন, তাদের গৌরবগাথা আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। জাগ্রত থাকবে তাদের চেতনা। থাকতেই হবে। না থাকলে বাংলাদেশ থাকবে না। বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব থাকবে না। সেই প্রত্যয় ও ঐতিহ্যের শক্তিই প্রজন্ম ধরে রাখতে চায়।

তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। আমরা দেখছি, আজ রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়ার চেষ্টা করছে। বোল পাল্টে হতে চাচ্ছে মুক্তির নিয়ামক। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সম্মান চান। যে দেশে কোটি কোটি টাকা লুটেরা শ্রেণী প্রতিদিন লুটপাট করে, সেই দেশে একজন মুক্তিযোদ্ধা মাসে ৫ হাজার টাকা সম্মানী ভাতা পাবেন না, তা মেনে নেয়া যায় না। তাই হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়, রাষ্ট্রীয় সম্মান, রাষ্ট্রের মানুষের সম্মান বাড়ানোর জন্যই জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক পুনর্বাসন দরকার। দরকার পরলোকগত মুক্তিযোদ্ধদের পোষ্য, সন্তান, পরিবারকেও সার্বিক সহযোগিতা করা। কারণ একাত্তরের বীরসেনানীরা বারবার জন্ম নেবেন না। আর যারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, প্রকারান্তরে তারা আসল মুক্তিযোদ্ধাদের সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন।

-------------------------------------------------

দৈনিক যুগান্তর ॥ ঢাকা ॥ প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রোববার





মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:০৩

হরিণা-১৯৭১ বলেছেন:
তাজুদ্দিন সাহেবের উচিত ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্নয়ে সরকার গঠন করা; মুক্তিযোদ্ধাদের বন্চিত করতে গিয়ে তাজুদ্দিন সাহেব ও শেখ সাহেব মহা ভুল করেছিলেন।

২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৫৪

ইমরান আশফাক বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.