নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুদ্ধকৌশল ও মানবতার বৃত্তরেখা

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৫৪

যুদ্ধকৌশল ও মানবতার বৃত্তরেখা
ফকির ইলিয়াস
=======================================

একটি ঘটনা এখন বিশ্বমিডিয়ায় আলোচিত বিষয়। তা হলো, বন্দিদের কিভাবে নির্যাতন করেছে মার্কিনি গোয়েন্দা সংস্থা। মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বন্দি মার্কিন সেনাদের ওপর ওয়াটারবোর্ডিং পদ্ধতিতে নির্যাতন চালানোর দায়ে এই আমেরিকাই জাপানি সেনাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের নামে বন্দিদের ওপর সিআইএর পাশবিক নির্যাতনের প্রতি সমর্থন দেয়ায় বুশ প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে তারা মার্কিন ইতিহাসকে নতুনভাবে তুলে ধরল।

এদিকে আমেরিকার সাবেক যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের ডান হাত হিসেবে পরিচিত ডিক চেনি বলেছেন, ‘সুযোগ পেলে আমি আবার মিনিটের মধ্যে ওই একই কাজ করতে বলব।’ ডিক চেনি এসব পদ্ধতিকে নির্যাতন বলতে অস্বীকার করলেও ম্যাককেইন তার বিরোধী। বন্দি নির্যাতনকারী সিআইএ সদস্যদের হিরো বলে আখ্যায়িত করছেন সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি। একই সঙ্গে তিনি সিআইএর বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে তথ্য আদায় ও জিজ্ঞাসাবাদের কর্মসূচিকে সর্বাত্মকভাবে সমর্থন করেছেন। ডিক চেনি এনবিসি টেলিভিশন চ্যানেলের মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আমি তাদের হিরো বলতে একটুও কুণ্ঠাবোধ করব না এবং তারা অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার কাজ করেছেন। তাদের সম্মানিত করা উচিত।’

ডিক চেনি বলেছেন, ১১ সেপ্টেম্বর যে হামলা হয়েছে এবং যেসব মানুষ মারা গেছে তাদের সঙ্গে এ নির্যাতনের কোনো তুলনা চলে না। তিনি আরো বলেন, ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় মারা যাওয়া ৩,০০০ মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে আলকায়েদার সন্ত্রাসীরা যে আচরণ করেছে সেটাই হচ্ছে প্রকৃত নির্যাতন।

ডিক চেনি আরো বলেছেন, নাইন-ইলেভেনের ঘটনায় বন্দি সন্দেহভাজন আলকায়েদা সদস্যদের ওপর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর জিজ্ঞাসাবাদ ও এর ধরন সম্পর্কে সবকিছুই জানতেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ।

সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি আরো বলেছেন, সিআইএর জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে সিনেট কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ‘অত্যন্ত নিম্নমানের’ ও ‘খুবই ত্রুটিপূর্ণ’।

মার্কিন সিনেট সিআইএর জিজ্ঞাসাবাদের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে অতিসম্প্রতি। প্রতিবেদনটি মূলত ৬,২০০ পৃষ্ঠার, তবে সংক্ষেপে তার সারকথা টানা হয়েছে ৪৮০ পৃষ্ঠার মধ্যে। এই প্রতিবেদনে নাইন-ইলেভেনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বন্দিদের ওপর সংস্থাটির চালানো যৌন নির্যাতনের ভয়াল চিত্র উঠে এসেছে। পাশাপাশি প্রতিবেদনটি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন তদানীন্তন প্রেসিডেন্টকে বিষয়টি জানানো হয়নি এবং ঊর্ধ্বতন রাজনীতিবিদদের ওই তদন্ত সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল বলে সিনেট দাবি করেছে।

আমরা অতীতের দিকে ফিরে তাকালে দেখব, ২০১১ সালেই বন্দিদের ওপর ওয়াটারবোর্ডিংসহ বর্বর নির্যাতন কৌশলের পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের প্রশাসনের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা। আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধের অন্যতম রূপকার এই দুজন হলেন মার্কিন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড। ডিক চেনি বলেছিলেন, ‘ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পেতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে ওয়াটারবোর্ডিংয়ের (পানিতে চুবিয়ে নির্যাতন) মতো কৌশল।’ আর রামসফেল্ড ওয়াটারবোর্ডিং আবারো চালু করার পক্ষে।

‘ফক্স নিউজ সানডে’ অনুষ্ঠানে ডিক চেনি বলেছিলেন, ‘শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে লাদেনের অবস্থান নিশ্চিত হতে আগের তথ্য তাদের সহায়তা করেছে। সন্দেহভাজন বন্দিদের নিষ্ঠুর প্রক্রিয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের সুফল মিলেছে।’ বন্দিদের নিষ্ঠুর নির্যাতন করে জিজ্ঞাসাবাদের পন্থা আবারো চালু করা উচিত কিনা জানতে চাইলে চেনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে এর সমর্থন করি।’

সিবিএস টেলিভিশনের ‘ফেইস দ্য নেশন’ অনুষ্ঠানে রামসফেল্ড বলেছিলেন, সিআইএর সাবেক তিন পরিচালক তাকে জানিয়েছেন, বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদে ওয়াটারবোর্ডিং পন্থা অবলম্বনের ফলেই তারা আলকায়েদা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান। ওই তথ্য পরেও সুফল বয়ে এনেছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, সিআইএ যে ধরনের পথ অনুসরণ করেছিল, তা কাজে দিয়েছে। সন্দেহভাজন বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদে ওই ধরনের কৌশল রদ করা ভুল হবে’।

সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনামলে কিউবায় মার্কিন বন্দিশালা গুয়ানতানামো বে’তে বন্দিদের ওপর বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। পরে ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দায়িত্ব নেয়ার পর বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধের নির্দেশ দেন। তখন ওবামা বলেছিলেন, বুশের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ের সময় বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদে যে ধরনের নির্যাতন করা হয়েছিল সেগুলো ভুল ছিল। কয়েক মাস আগে ডিক চেনি আরো একটি বক্তব্য দিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমেরিকায় পরবর্তী সন্ত্রাসী হামলা হবে পরমাণু বোমা দিয়ে এবং তা হবে ৯/১১ হামলার চেয়ে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী।

২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জর্জ ডব্লিউ বুশের আমলে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা ডেক চেনি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন চলতি দশক শেষ হওয়ার আগেই আমেরিকায় বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হবে। তার মতে, সে হামলা হবে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ।

আমরা বিভিন্ন মিডিয়ায় ইতোমধ্যে দেখছি, ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের হামলাকে অনেক পর্যবেক্ষক মনে করে একটা মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত ঘটনা। শুধু তাই নয় অনেকেই এও মনে করেন যে, ওই ঘটনার সঙ্গে সেই সময়কার মার্কিন প্রশাসনের কেউ কেউ জড়িত ছিলেন। একই ধরনের কথা বলেছেন বহু মার্কিন বিশ্লেষকও। এর মধ্যে ২০১৪-এর এপ্রিলে ইরানের প্রেস টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন শিক্ষাবিদ ড. কেভিন ব্যারেট বলেছিলেন, ১১ সেপ্টেম্বরের হামলা সংঘটিত করতে আমেরিকা, ইসরায়েল ও সৌদি আরবের গোয়েন্দা সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তিনি পরিষ্কার করেই বলেছেন, ৯/১১ কোনো দুর্ঘটনা ছিল না বরং ছিল সামরিক হামলা। রেডিও তেহরানের ওয়েবসাইটে এটা নিয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়েছিল। গোটা বিশ্বের মানুষের জন্য একটি ভয়াবহ সংবাদ হচ্ছে, বদলে যাচ্ছে যুদ্ধকৌশল। গত কয়েক সপ্তাহ আগে প্রকাশিত একটি সংবাদ আমাদের আরো ভাবিয়েছে।

ইহুদিবাদী ইসরায়েলের কাছ থেকে যুদ্ধকৌশল শেখার জন্য তেলআবিবে মার্কিন সেনা পাঠিয়েছে আমেরিকা। এ কথা জানিয়েছেন মার্কিন সেনাপ্রধান জেনারেল মার্টিন ডেম্পসি। তিনি তার ভাষায় বলেছেন, কিভাবে কম ক্ষতির মাধ্যমে যুদ্ধে জয়লাভ করা যায় তার কৌশল ইসরায়েলের কাছ থেকে শিখতে হবে। গাজায় ইসরায়েলের সা¤প্রতিক বর্বর আগ্রাসনে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির পর বিশ্বব্যাপী যখন তীব্র প্রতিবাদ ও সমালোচনা চলছে তখন মার্কিন সেনাপ্রধান এ কথা বললেন।

জেনারেল ডেম্পসি জানান, তিন মাসে আগে আমেরিকা সিনিয়র সামরিক ও নন-কমিশন্ড অফিসারের সমন্বয়ে একটি টিম পাঠিয়েছে ইসরায়েলে। এ টিম সরজমিন দেখবে যে, যুদ্ধের সময় ইসরায়েল কিভাবে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমায় এবং তারা সুড়ঙ্গ নিয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে।

মার্কিন সেনাপ্রধান দাবি করেন, এবার ৫০ দিনের যুদ্ধে ইহুদিবাদী ইসরায়েল অসাধারণভাবে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে এনেছে। অথচ বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ৫০ দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল ছিল খুবই আগ্রাসী। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হামলা চালিয়ে নিরীহ ও সাধারণ মানুষ হত্যায় একবিন্দু দ্বিধা করছে না ইসরায়েলি আগ্রাসী বাহিনী। যদিও তারা অভিযোগ করেছিল, হামলা থেকে বাঁচতে হামাস বাহিনী ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এসব এলাকায় তারাও তাই হামলা করতে বাধ্য হচ্ছে। জাতিসংঘের আশ্রয় শিবিরগুলোও ইসরায়েলের বর্বর হামলার হাত থেকে রেহাই পায়নি। ৫০ দিনের ইসরায়েলি আগ্রাসনে বেশ কয়েকবার জাতিসংঘ পরিচালিত আশ্রয় শিবিরগুলো বোমা হামলার শিকার হয়েছে। অভিযোগ ছিল সেই একই, জাতিসংঘের ভবনসহ হাসপাতাল, এম্বুলেন্স, স্কুল, এমনকি মসজিদেও ওঁৎ পাতছে হামাসের যোদ্ধারা। তাই ইসরায়েল বাধ্য হচ্ছে হামলা চালাতে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার অভিমত যত ভিন্নই হোক না কেন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমন নির্মম প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের ফলে ইসরায়েল ও হামাসের অত্যন্ত অমানবিক যুদ্ধকৌশল নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে ওই সময়ে। যদিও বিশ্ব এখন তা ভুলে যেতে বসেছে। জাতিসংঘ পরিচালিত জাবালিয়া শরণার্থী ক্যাম্পের হামলা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির মহাসচিব বান কি মুন বলেছিলেন, কোনোকিছুই এই ভয়ঙ্কর অমানবিক হামলার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে পারে না। জাতিসংঘের পরিচালিত জাবালিয়া উদ্বাস্তু শিবিরের স্কুলটির কক্ষগুলোতে এখন রক্তভেজা নেকড়ায় মোড়ানো ছিন্নভিন্ন দেহগুলো ছড়িয়ে ছিল। জাতিসংঘের ওই ভবনটিতে ৩ হাজারের বেশি সাধারণ নিরীহ বেসামরিক নিরাশ্রয় গাজাবাসী আশ্রয় নিয়েছিল। হামাস নিধনের নামে ইসরায়েলের প্রায় একতরফা ও ভয়ঙ্কর হামলায় এসব মানুষ ঘর ছেড়ে হাতে প্রাণ নিয়ে কোনোরকমে এই স্কুলটিতে ছুটে এসেছিল। ‘একটি সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে বর্ণনা করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ ঘটনার স্বাধীন ও পৃথক তদন্ত দাবি করেছিল সেই সময়ে। বন্দি নির্যাতন একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। সেই কাজটিই যুক্তরাষ্ট্র করেছে বলে এখন সংবাদ বেরুচ্ছে। কথা হচ্ছে, মানবতার বৃত্তরেখা কি এভাবেই সীমাবদ্ধ থাকবে পরাক্রমশালীদের হাতে! মুখে বলা হচ্ছে এক কথা। কাজ করা হচ্ছে অন্য রকম। হাতে ক্ষমতা থাকলেই এর অপব্যবহার করলে, তা মানবতাবাদের নিয়মনীতিকে লঙ্ঘন করে। বিশ্বকে তাকিয়ে আর কি দেখতে হবে, তা সময়ই জানে।
-----------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ প্রকাশিত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.