নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোকো কাহিনি || হাসান ফেরদৌস

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৩





কোকো কাহিনি
হাসান ফেরদৌস


দৈনিক প্রথম আলো
আপডেট: ০০:০৬, জানুয়ারি ৩০, ২০১৫ | প্রিন্ট সংস্করণ ৫৭ Like ৮৩


আরাফাত রহমান কোকোর জন্য মায়ের শোকআরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে যে রকম মাতম দেখছি, তাতে রীতিমতো আঁতকে উঠেছি। কোনো পত্রিকায় দেখিনি কেউ দুই লাইন লিখে ব্যাখ্যা করেছেন যে তিনি মালয়েশিয়ায় পড়ে ছিলেন কেন? কী অসুখে কোকো মারা গেলেন, তারও কোনো বিবরণ পড়িনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এই ছেলে যে আইন থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য মালয়েশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, কেউ সে কথা ঘুণাক্ষরেও উল্লেখ করেনি। তাঁর নামে জেলে ঢোকানোর হুকুমনামা ছিল; কই, সে কথাও কেউ সবিস্তারে জানায়নি।
সত্য লুকানোর এ কাজে বিরোধী জোট আগ্রহী হবে তা বুঝি, কিন্তু দেশের পত্রপত্রিকার এতে কী স্বার্থ, তা তো আমার মাথায় আসে না।
যাঁরা জানেন না, তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, কোকো রহমান সম্ভবত বাংলাদেশের একমাত্র ব্যবসায়ী-রাজনীতিক, যাঁর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার নিজ গরজে আদালতে মামলা করেছে এবং সেই মামলার বিবরণ সবিস্তারে সবাইকে জানিয়েছে। অভিযোগ, তহবিল তছরুপ। মার্কিন বিচার বিভাগের করা অভিযোগ অনুযায়ী, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রায় ৩০ লাখ ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন কোকো। ২০০৯ সালে করা এই মামলায় বলা হয়েছে, জার্মানির সিমেন্স এজি ও চীনের চায়না হার্বার ইঞ্জিনিয়ারিং নামে দুটি বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে কোকো তাঁর মায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাজ এ দুই কোম্পানিকে জুটিয়ে দিয়েছেন। চায়না হার্বারের জন্য যে কাজ তিনি জুটিয়ে দেন, সেটি ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন জেটি নির্মাণ। অন্যদিকে, সিমেন্স জুটিয়েছিল মোবাইল টেলিফোনের একটি ব্যবসা।
তারা যে ঘুষের মাধ্যমে সরকারি কাজ জোটানোর চেষ্টা করেছে, সে কথা সিমেন্স এজি ও তার বাংলাদেশি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান স্বীকার করে সব দায়ভার মেনে নিয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগের কাছে তারা স্বীকার করে যে ২০০১ সালের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত তারা মোট ৫৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৩৯ মার্কিন ডলার ঘুষ দিয়েছে। এই ঘুষের টাকা প্রথমে জমা পড়ে একটি মার্কিন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। পরে সেখান থেকে তা পাচার হয়ে যায় সিঙ্গাপুরে কোকোর অ্যাকাউন্টে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে ঘুষ দিয়ে দেশে বা বিদেশে কাজ আদায়ের চেষ্টা অবৈধ। এই মর্মে একটি আন্তর্জাতিক আইনও রয়েছে। টাকাটা যেহেতু মার্কিন ব্যাংকের মাধ্যমে পাচার হয়েছে, ফলে তা মার্কিন এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত। সে কারণেই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এই টাকা পাচারের ঘটনাটি তদন্ত করে।
এই মামলার পুরো বিবরণ যাঁরা পড়তে আগ্রহী, তাঁরা দয়া করে মার্কিন বিচার বিভাগের নিম্নলিখিত ওয়েবসাইট ভ্রমণ করুন: (Click This Link)
বলাবাহুল্য, বুদ্ধি করে টাকাটা যদি মোনাকো, সুইজারল্যান্ড বা সাইপ্রাসের কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে পাচার হতো, কোকো হয়তো বিপদে পড়তেন না। বাংলাদেশ বা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কোকোরা এভাবে নিজেদের গরিব দেশ থেকে বছরে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার বিদেশের ব্যাংকে পাচার করে থাকেন। এই হিসাব আমার মনগড়া নয়, বিশ্বব্যাংকের।
কোকোর পাচার করা টাকার কিয়দংশ পরে বাংলাদেশ সরকার সিঙ্গাপুর সরকারের সহায়তায় উদ্ধারে সক্ষম হয়। উদ্ধারকৃত অর্থের মোট পরিমাণ ২৬ লাখ ৬১ হাজার ৭০ ডলার। কোকোর বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছিল সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিশেষ আদালত কোকোকে তাঁর অনুপস্থিতিতে ছয় বছরের জেলসহ তাঁর পাচার করা ২০ কোটি টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। এই মামলা যখন আদালতে ওঠে, বিএনপির তরফ থেকে যথারীতি বলা হয়েছিল, এ সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই তাঁর বিরুদ্ধে কেন মামলা করবে, আর সিঙ্গাপুরই বা কেন অন্যের পাচার করা টাকা বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে, তার কোনো ব্যাখ্যা দলের কর্তাব্যক্তিরা দেশের মানুষের জ্ঞাতার্থে হাজির করেননি।
বাংলাদেশের বিশেষ আদালত যদিও কোকোকে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সরকার যে সেই চেষ্টা আন্তরিকভাবে করেছে, তারও কোনো প্রমাণ নেই। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাদের অনুমতি নিয়েই কোকো চিকিৎসার নামে প্রথমে আসেন থাইল্যান্ডে। অনুমান করি, পাচার করা টাকা ফেরত দেওয়ার পরও তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিস্তর রেস্ত/ জমা ছিল। থাইল্যান্ডে তাঁকে যে জামাই আদরে বিনা মূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে, সে কথা মনে হয় না। থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ায়। বউ-বাচ্চা নিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে দেশে তিনি বহাল তবিয়তেই ছিলেন। মোটেও লুকিয়ে-ছাপিয়ে থাকেননি। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নিয়ে তাঁর তবিয়তের সর্বশেষ বুলেটিন দেশবাসীকে জানিয়েছেন।
এ তো গেল হাতেনাতে ধরা পড়া এক অপরাধ। কোকোর অন্য কম প্রকাশিত ও প্রচারিত অপরাধ ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে ঘিরে। এই ভদ্রলোক জীবনে পেশাদারি ক্রিকেট খেলেননি, কিন্তু ক্রিকেট ব্যাপারটা যে টাকা বানানোর একটা কারখানা, তিনি সেটা বেশ ভালো বুঝতে পেরেছিলেন। মায়ের দোয়া নিয়ে তিনি এই বোর্ডের অবৈতনিক উপদেষ্টার পদটি অলংকৃত করেন এবং পরে সেই বোর্ডের ‘ডেভেলপমেন্ট কমিটি’র প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যে কয়েক বছর কোকো ও তাঁর বান্ধবেরা এখানে ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ পান, সে সময় ক্রিকেট বোর্ড হয়ে উঠেছিল তাঁদের খাস তালুক।
এহেন কোকোর মৃত্যুর পর ঢাকায় তাঁর জানাজায় মানুষের ঢল নেমেছে। পত্রিকায় ও টিভির পর্দায় সেই ঢল দেখেছি আমি। একজন প্রমাণিত অর্থ পাচারকারী ও জেল পলাতক আসামি, তাঁকে মহানায়কের সম্মানে চিরবিদায় জানাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। মৃত মানুষের নামে নাকি মন্দ বলতে নেই। কিন্তু সত্য কীভাবে লুকিয়ে রাখা যেতে পারে, সে বুদ্ধি তো আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে আসছে না।
বস্তুত, কোকোর এই মহানায়কসুলভ সম্মানে বিস্মিত হওয়ার কিছুই নেই। দুর্নীতিকে আমরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ হিসেবে মেনে নিয়েছি। আমরা ধরেই নিয়েছি, যাঁরা ক্ষমতায় বসেন, তাঁরা ও তাঁদের বশংবদেরা ইচ্ছেমতো গৌরী সেনের মাল পকেটে ঢালবেন, আমরা দেশের মানুষ স্মিত হেসে তা দেখেও না দেখার ভান করব। নির্বাচনের সময় এলে সেই তস্করদেরই ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাব।
কথায় বলে, যেমন দেশ তেমন তার নেতা। আমার তবু ভাবতে ইচ্ছা করে, এমন একটা সময় আসবে, যখন চোরকে আমরা জেলে ঢোকাব, মসনদে বসাব না। যত দিন তা না হচ্ছে, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে বিশ্বসভায় আমাদের স্থান মিলবে না।
হাসান ফেরদৌস: যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৫৫

কপোতাক্ষের তীরে এক অসামাজিক বলেছেন: বাকশালীদের জ্বলে গিয়েছে বোঝা যায়।

আর কি লেভেলের বেহায়া আর ছোটলোক হলে, মারা গিয়েছেন এমন লোকদের নিয়ে কুৎসা লেখা লিখতে পারে।

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৮

ঢাকাবাসী বলেছেন: আম্লীর পক্ষ থেকে তাকে মোটা টাকা মাইনে দেয়া হয়!

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫

পালের গোদা বলেছেন: "আর কি লেভেলের বেহায়া আর ছোটলোক হলে, মারা গিয়েছেন এমন লোকদের নিয়ে কুৎসা লেখা লিখতে পারে।"

কতটা নির্লজ্জ, বেহায়া আর ছোটলোক হলে মানুষ একটা আন্তর্জাতিক ভাবে প্রমানিত পুকুরচোর, ঘুষখোর এবং দুর্নীতিবাজ এর সমালোচনার বিপখ্খে বলতে পারে।

আপনারা কুৎসা কোনটাকে বলছেন? আপনাদের প্রানপ্রিয় নেতার মহান কীর্তিকলাপ নিচে দেয়া লিংকসমূহ থেকে দেখে এসে তারপরে কথা বলুন দয়া করে।

FBI: Click This Link
Library Of Congress: Click This Link
U.S. Justice Dept: Click This Link
U.S. Justice Dept: Click This Link

তারপরও বলবেন কুৎসা। সিমেন্স এবং চায়না হারবাল এর মত প্রতিষ্ঠান নিজেরা স্বীকার করেছে কোকো কে ঘুষ দেয়ার কথা। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিজ উদ্যগে তার নামে মামলা করেছে এবং তা বাংলাদেশের বাইরের একাধিক দেশের কোর্টে প্রমানিত হয়েছে। এরা সবাই মিথ্যা বলছে? দুনিয়ার সবা্ই মিলে মিথ্যা বলছে একমাত্র আপনাদের বিএনপি নেতারা সত্যি বলছে তাইনা? আর কি কি হলে আপনারা বিশ্বাস করবেন যে তিনি একজন পুকুরচোর, ঘুষখোর এবং দুর্নীতিবাজ ছিলেন? আপনাদের কথাবার্তায় তো মনে হচ্ছে আসমান থেকে সয়ং গড নেমে এসে কোকো কে চোর বললেও বিশ্বাস করবেননা। এইরকম অন্ধবিশ্বাসই দেশের এই অবস্থার জন্য দায়ী। এরকম অন্ধবিশ্বাস এর কারনেই খমতায় থাকা ব্যক্তিরা দুর্নীতি করতে উতসাহিত হয়। কারন তারা জানে, যতই চুরি করুক না কেন প্রমানসহ ধরা পড়ার পরেও আপনাদের মত দলান্ধ লোকজন তাদের সাফাই গেয়ে যাবেন, এবং তাদেরকে ভোটও দেবেন।

আর কেউ মারা গিয়েছেন বলে তার ব্যাপারে সত্য বলা যাবে না? আপনাদের মা বোন কে ধর্ষন করার পরে আমি মারা গেলে কি আমাকে ধর্ষক বলা থেকে আপনারা বিরত থাকবেন?

৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২৯

বেসিক আলী বলেছেন: আচ্ছা এত মানুষ উনার জানাজা পড়লো তাইলে কি তিনি ডাইরেক্ট বেহেস্তে যাবেন? যদি যায়। একজন অপরাধীর জানাজা যারা পড়ছে তারা কি তার কু-কর্মের পাপের ভাগ নিবেন?

৫| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৪

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: মার্কিন বিচার বিভাগের নিম্নলিখিত ওয়েবসাইট ভ্রমণ করে কোকোর নাম পেলাম না!

৬| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:১৮

ফকির ইলিয়াস বলেছেন: The forfeiture action was filed Jan. 8, 2009 , in U.S. District Court in the District of Columbia against funds located in Singapore held by multiple account holders. The forfeiture complaint relates primarily to alleged bribes paid to Arafat "Koko" Rahman, the son of the former prime minister of Bangladesh , in connection with public works projects awarded by the government of Bangladesh to Siemens AG and China Harbor Engineering Company. According to the forfeiture complaint, the majority of funds in Koko’s account are traceable to bribes allegedly received in connection with the China Harbor project, which was a project to build a new mooring containment terminal at the port in Chittagong , Bangladesh .

দেখেন তো এখানে কোকোর নাম আছে কি না !!! @ ক্ষতিগ্রস্থ

৭| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:১৩

রাফা বলেছেন: কোন কুখ্যাত অপরাধী মারা গেলে কি সে পুতপবিত্র হয়ে যায় ! গো. আজমের কুকর্ম কি তাহোলে আমরা ভুলে যাবো ?

স্বয়ং খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াও জানতো কোকো কাহিনি ,কাজেই তারা নিশ্চুপ।

দলকানাদের হুস আসলে কখনই ফিরবেনা।

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.