![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
রাজনীতির মানবিকতা
ফকির ইলিয়াস
==================================
রাজনীতিতে মানবিকতা বলে একটা কথা আছে। আছে সামাজিক জীবনেও। পারস্পরিক হৃদ্যতা সমাজকে এগিয়ে নেয়। রাষ্ট্রকে আশা দেখায়। প্রজন্মকে শাণিত করে। কিন্তু কেউ যদি ন্যূনতম সৌজন্যবোধের ধারও ধারেন না, তাকে কি বলা যায়? কি বলা যায় তার রাজনৈতিক আদর্শকে?
সবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেছেন মালয়েশিয়ায়। খুবই অকাল তার মৃত্যু। খুবই বেদনাদায়ক ঘটনা। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে তার গুলশানের কার্যালয়ে (বর্তমানে আবাসও) গিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া তার দরজা খুলেননি। তার সচিবরা বলেছেন, বেগম জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। কথা হলো, ওই সময় জিয়ার পরিবারের অন্য সদস্যরা তো সেখানে ছিলেন। তারা দরজাটা খুলে দিতে পারতেন। কেন খোলেননি? দেশের প্রধানমন্ত্রী ১০/১২ মিনিট রাস্তায় দাঁড়িয়ে পরে গণভবনে ফেরত গেছেন। বিষয়টি দেশে-বিদেশে তুমুল আলোচনার ঝড় তুলেছে। এটা কেমন রাজনীতি? রাজনীতিতে সামাজিক মূল্যবোধের সামান্য আস্থাও থাকবে না? এই বিষয়ে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, এটা বিএনপি মহাভুল করেছে। যারা বিএনপির রাজনীতিকে তোয়াজ করেন, তেমন ব্যক্তিরাই বলছেন- বিএনপি এটি ঠিক করেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমদ বলেন, এটা খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি কিন্তু আমার মনে হয় এর কারণ হলো ‘ল্যাক অফ কমিউনিকেশন।’ প্রবীণ সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেয়া ঠিক হয়নি। প্রতিক্রিয়া হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও। সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দরজা থেকে ফিরিয়ে বিএনপি আবারো একটি সংলাপ ও সমঝোতার সুযোগ হারাল। তিনি বলেন, …১৫ আগস্ট বিএনপির কেক কাটার অভিজ্ঞতা রয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দেখারও অভিজ্ঞতা আছে তবুও সব কিছু ভুলে প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন মানবতার খাতিরে। কিন্তু বিএনপি যা করেছে তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী গেট পর্যন্ত গেলেন এবং উনি গেট খুললেন না এটা জাতির জন্য খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা মর্মাহত। দেশের মানুষ আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিল, অন্তত দুই নেত্রীর পরস্পরের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ ছিল। খালেদা জিয়া যদি অনুক‚ল সাড়া দিতেন, সারা দেশের মানুষ খুশি হতো। এ থেকে বোঝা গেল বিএনপি রাস্তার শক্তির ওপর তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে চায়। বিএনপির এ আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো ছাড়া আর কিছু বলার নেই। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা হলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ কিছুটা হলেও ভালো হতো। অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই নেত্রীর মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়া শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ হয়েছে।
সব মিলিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, বিএনপি শালীনতা-কুলীনতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে মন গড়া তত্ত্ব দিয়েই গণমানুষের মন জয় করতে পারবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের আহ্বানে লাগাতর অবরোধ চলছে। দেশের সাধারণ মানুষ এখন আর তা মানছেন না। ফলে একটি পেটোয়া-ভাড়াটে বাহিনী নামানো হয়েছে রাজপথে। এরা পেট্রলবোমা মারছে। আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে। এটা কেমন রাজনীতি? সাধারণ মানুষের কি সড়ক দিয়ে চলার অধিকার নাই? পেট্রলবোমার আক্রমণের ভয়ে শিশুরা স্কুলে যেতে চাইছে না। একটা দেশের জন্য এরচেয়ে ভয়াবহ খবর আর কি হতে পারে? ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় বাসে পেট্রলবোমা হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দীর্ঘ ৫৬ দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন পেট্রলবোমায় আহত সিএনজিচালক রুবেল (৫০)। ২৫ নভেম্বর আহত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। এখনো চিকিৎসা চলছে। কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন তার নিশ্চয়তা নেই। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে আর ভালো লাগে না। বাড়ি ফিরে যেতে চান। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় ডাক্তাররা ছাড়ছেন না। এখন পর্যন্ত ২০ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে। আরো দিতে হবে। তার স্ত্রী নাছিমা বেগম মিডিয়াকে জানিয়েছেন, এই দুনিয়ায় আমার নিজের বলতে কেউ নেই। ছেলেমেয়েগুলো একা বাড়িতে পড়ে আছে। তার স্বামীও সন্তানদের কথা মনে করে কাঁদেন। তিনি বলেন, ডাক্তার বলেছেন আরো অন্তত মাস খানেক থাকতে হবে। অপারেশন করতে হবে। আমরা গরিব মানুষ। নিজের সহায় সম্পত্তি কিছুই নেই। এতদিন মানুষের সাহায্য নিয়ে চলেছি। আর কতদিন এভাবে থাকতে হবে জানি না। আমার স্বামীর কিছু হলে আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। রুবেলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। পেট চালাতে অবরোধে বেরিয়ে ছিলেন সিএনজি নিয়ে। কচুয়ার চৌমুহনীতে শিকার হয়েছিলেন দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায়।
রুবেলের মতো আরো অনেকেই এখনো কাতরাচ্ছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। তাদের আর্তনাদ যেন থামছে না। হরতাল-অবরোধে পেট্রলবোমায় আহত হয়েছেন এমন ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ২ জন, এইচডিইউতে ৭ জন, পেইং ওয়ার্ডে ৯ জন এবং কেবিনে আছেন দুজন এ পর্যন্ত। এর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। পেইং ওয়ার্ডে আহত শাহাদাত (৩৫) আর্তনাদ করে বলেন, আমি আর যন্ত্রণা সইতে পারছি না। প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। আমাকে একটু ওষুধ দেবেন যাতে আমার যন্ত্রণা সেরে যায়? কেরানীগঞ্জে ফল বিক্রি করতেন শাহাদত। ৭ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের আলম মার্কেটের ফুটপাতে ফল বিক্রির সময় হঠাৎ তার সামনে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে তার শরীরের প্রায় ৩৫ শতাংশ ঝলসে যায়। ককটেল বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে দোকানে ছেলে বসে ছিল। ছেলেকে বাসায় পাঠানোর পরপরই ককটেল বিস্ফোরিত হয়। শাহাদাত বলেন, সেদিন যদি ছেলেকে বাসায় না পাঠাতাম তাহলে তাকে হারাতে হতো। এক ছেলে আর তিন মেয়ে নিয়ে শাহাদাতের সংসার। পরিবারে উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই। বলেন, আমার কিছু হলে ছেলেমেয়েগুলো কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? পেশায় সিএনজি চালক রিপন (৩৫)-এর গ্রামের বাড়ি ফেনীতে। দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রলবোমায় আহত হয়ে গত ৭ ডিসেম্বর তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেলে। শুধু আগুনে শরীরই পুড়ে যায়নি তার, হারিয়েছেন ডান চোখ। কিছুই দেখতে পান না সেই চোখ দিয়ে। বারবার একটা কথাই জানতে চাচ্ছিলেন তিনি, আমি কি আর এই চোখ দিয়ে দেখতে পারব না? আমার চোখ কি কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন না? আমি যদি দেখতে না পাই তবে আমার সংসার কিভাবে চালাব, আমার তো আর কেউ নেই? প্রশ্ন একটাই।
এই মনুষদের কি কেউ নেই এই বাংলাদেশে? স্বাধীন বাংলাদেশে এরা খেটে খেতেও পারবেন না? ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কিছু মতলবী রাজনীতিবিদ এভাবে পুড়িয়ে মারবে মানুষ? দেশ এ জন্য স্বাধীন হয়েছিল?
বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন দগ্ধ ৫১ জনের মধ্যে যাত্রাবাড়ীর ৯ জনসহ ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও জানিয়েছেন তিনি। দেশে এই যে মানুষ পোড়ানোর উৎসব করছে কেউ কেউ, এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? সরকার কি ভাবছেন এই বিষয়ে? দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে কি? এমন অনেক প্রশ্ন আসতে পারে। আমরা দেখছি, দুর্বৃত্তদের ইতোমধ্যে গণধোলাই শুরু হয়েছে। হুকুমদাতা হিসেবে খালেদা জিয়াকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাসে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারার একটি ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনায়’ তাকে হুকুমদাতা হিসেবে আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলাটি করা হয়েছে। একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জন্য রাজনৈতিক অরাজকতা সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে। রাজনীতিতে মানবিক বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। এই দেশটিকে সবাই যদি নিজের বাসভূমি মনে করেন- তাহলে দেশের স্বার্থ রক্ষাই মূল উদ্দেশ্য হতে হবে। কারণ মানুষ যদি মাটিকে ভালো না বাসে, এই মাটি কখনই মানুষকে ভালো ফসল দেয় না।
------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ প্রকাশিত
২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৫৭
খেলাঘর বলেছেন:
পানি
৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:০১
তাহের অন্তরা বলেছেন: আমাদের জীবনের কোন মূল্য নেই এদের কাছে। এখন আমি এখানে মন্তব্য লিখছি,হয়তো এই আমিই হতে পা্রি ককটেল বোমার শিকার।বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ জীবন কে হাতের মুঠোয় করে ঘর থেকে বের হয়। মুঠো খুললেই হয়তো পুড়ে মরতে হবে।
৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:২০
মিতাহামিদা০০৭ বলেছেন: আপনি তো আওয়ামী লীগের হয়ে জাবর কাটলেন! কিন্ত এই সন্ত্রাসী কর্ম যে বি এন পি কে বা ২০ দলকে দোষারোপ করার জন্য আওয়ামী লীগ করছে ,তারও তো প্রমাণ পাওয়া গেছে ! সুতরাং এর দায় দায়িত্ব সব সর্কারের! কারণ প্রলুরকারের ই দায়িত্ব জনগণের জান মালের নিরাপত্তা বিধান করা! এ ক্ষেত্রে সরকার ব্যর্থ হয়েছে!
যে কারণে আন্দোলন সেটা তো সরকার মেনে নিলেই আর জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হয় না! জনগণের এই ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে , বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা এখন সরকারের প্রথম কাজ! দেশকে নিরাপদ রাখা নসরকারের জপ্রধান ও অন্যতম দায়িত্ব!
সুতরাং এই ব্যর্থ ও অবৈধ সরকার কে ক্ষমতা ছাড়তে হবে!
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:২৫
এম. রহমান বলেছেন: বিএনপিকে এখন আর রাজনৈতিক দল বলা যায় না। ভাড়াকরা সন্ত্রাসী জামাত-শিবির দিয়ে চলছে বিএনপি।