![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
খসে পড়ছে মুখোশ, সাবধান হে মানুষ
ফকির ইলিয়াস
==========================================
ক্রমশ খসে পড়ছে মুখোশ। বুঝা যাচ্ছে একটা গভীর চক্রান্ত করেই বাংলাদেশকে অচল করে দেয়ার যড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একজন পাকিস্তানি কুটনীতিক ঢাকার দূতাবাসে থেকে কী করেছিলেন, তা এখন আলোচনার বিষয় দেশে-বিদেশে। খবর বেরিয়েছিল, বাংলাদেশে নাশকতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত পাকিস্তান দূতাবাসের এক ক‚টনীতিক। ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের সহকারী ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজহার খান দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সমন্বয় ও অর্থায়ন করেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসএর অন্যতম সংগঠকও এই পাকিস্তানি। পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম এবং জামায়াত-শিবিরকে। মাজহার খান নামে ওই ক‚টনীতিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশবিরোধী ভয়ঙ্কর সব তৎপরতার তথ্যপ্রমাণ পেয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে শুরু হয়েছিল তোলপাড়। বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন এ ঘটনায় ওই কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার সন্দেহও করছেন কেউ কেউ। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, জঙ্গি তৎপরতাই শুধু নয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মুদ্রাবাজার ধ্বংস করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেন তিনি। এ জন্য পরিচালনা করেন ভারতীয় জাল রুপির এক বিশাল নেটওয়ার্ক। ধরাও পড়েছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। কিন্তু ক‚টনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয় ঢাকার পাকিস্তান দূতাবাস।
দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি দূতাবাস কর্মকর্তার সহযোগী মজিবুর রহমান নামে বাংলাদেশি একজন নাগরিক গ্রেপ্তার হওয়ার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ধারাবাহিক তদন্তের সূত্র ধরেই বেরিয়ে এসেছে জঙ্গি তৎপরতা ও জাল রুপি নেটওয়ার্কে থাকা ব্যক্তিদের কার্যক্রমের ক্রমধারা ও রূপরেখা। পাওয়া গেছে তাদের তালিকা ও কথোপকথনের সারাংশ। ওই প্রতিবেদনে তিনটি সুপারিশ করা হয়েছে। যাতে কড়া ভাষায় পাকিস্তান হাইকমিশনের শিষ্টাচারবহির্ভূত কার্যক্রমের নিন্দা জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভিসা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজহার খানকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসা ব্যক্তিদের ওপর কড়া নজরদারির সুপারিশ করা হয়েছে। জানা যায়, গত ৮ থেকে ১০ বছরে ২২ বার পাকিস্তানে ১১ বার ভারত ও ২২ বার থাইল্যান্ডে যাওয়া মজিবুর রহমানের সঙ্গে মাজহার খানের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মাজহার খানের পূর্বসূরি সহকারী ভিসা কর্মকর্তা।
মিডিয়ায় এ ঘটনা বিশদভাবে প্রচারিত হওয়ার পর সন্ত্রাসে অর্থায়নসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা এই ব্যক্তিকে ঢাকার হাইকমিশন থেকে ফিরিয়ে নিয়েছে পাকিস্তান। মাজহার খান পরিবার নিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকা ছাড়েন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মাজহার খান ও হাইকমিশনের কয়েকজন সহকর্মী মুদ্রা পাচারে জড়িত ছিলেন, যে অর্থ হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও জামায়াতে ইসলামীর পকেটে যেত। ঢাকায় দুই বছরেরও বেশি সময় অবস্থানকালে আইএসআই-এর চর হিসেবে তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কথা হচ্ছে, পাকিস্তান বাংলাদেশে কোন বিষের ফণা ছড়াতে চাইছে? তাদের প্রকৃত মতলব কি? কি চায় তারা? এর আগেও আমরা দেখেছি পাকিস্তান বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে। তারা বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে প্রকাশ্যে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। বাংলাদেশ নিয়ে পাকিস্তান এই কুমতলব আঁটছে কেন? এটা খুবই দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দল সেই গাদ্দার পাকিস্তানিদের করুণা পেতে উদগ্রীব হয়ে থাকে। তারা মনে করে বাংলাদেশ এখনো পাকিস্তানেরই অংশ। যা এ দেশের মানুষ ক্রমশ অনুধাবন করতে পারছেন। বাংলাদেশকে চরম সংকটের মুখোমুখি ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াত জোট। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নৃশংসভাবে সাতজনকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে বাসে আগুন দিয়ে। বাসের ভেতরে ঢুকে আগুন দেয়া হয়েছে।
এটা অনেকেই দেখেছেন-শুনেছেন ‘বাংলালীকস’ নামে একটা আইডি থেকে ইউটিউবে খালেদা জিয়ার বেশ কিছু কথোপকথন এখন আলোচনার বিষয় হয়েছে। বেগম জিয়ার কিছু কথোপকথন এখানে উল্লেখ করা দরকার। ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে সারা দেশ থেকে জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছিল বিএনপি। অনুষ্ঠানস্থল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সকালে আগতদের পুলিশ লাঠিপেটা করে বের করে দিলে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ বাধে এবং তা ছড়িয়ে পড়ে অন্য জেলাগুলোতেও। ঢাকায় বোমা বিস্ফোরণে একজন মারা যায়, পোড়ানো হয় কয়েকটি গাড়ি। সিলেটে বাসে আগুন দেয়া হলে পুড়ে মারা যান এক যাত্রী। ‘বাংলালীকস’ খালেদার যে পাঁচটি কথোপকথন প্রকাশ করেছে, তার চারটিই ওই সমাবেশ শুরুর আগে কয়েকজন নেতার সঙ্গে খালেদার কথোপকথন শোনা যায়। প্রথম টেপটিতে অন্য প্রান্ত থেকে খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়- ‘ম্যাডাম, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রোগ্রামটা কি অন থাকবে?’ তখন খালেদাকে বলতে শোনা যায়- ‘এখন পর্যন্ত অন থাকবে। কিন্তু ওখানে কেউ থাকবে না। ছেলেপেলেরা সব রাস্তায় থাকবে। ভেতরে কাউকে আমি দেখতে চাই না। ছেলেরা সব রাস্তায় যাবে।’ ঢাকা মহানগর বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামকে ‘লোক নামানোর’ নির্দেশও দিতে শোনা যায় খালেদাকে। ‘খোকা আর সালামকে বলে দেন, বেশি করে লোক নামাতে। ওরা যদি লোক নামাতে না পারে, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিক। আমি রাস্তায় লোক দেখতে চাই।’ এরপর খালেদাকে বলতে শোনা যায়- ‘আপনি কি ওদের সঙ্গে কথা বলেছেন।’ অন্য প্রান্ত থেকে যখন ‘জি’ বলে আরো কিছু বলা শুরু হয়, তখন তাকে থামিয়ে দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ‘না, না, ওই যে, অন্যদের, আপনি যাদের সঙ্গে কথা বলেন। ওরা এখনো নামেনি কেন?…আরো নামাতে বলেন।… আমাদের লোকজনদের বল, সব প্রেসক্লাব ও ইঞ্জিনিয়ার (ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন) ছেড়ে রাস্তায় চলে যাও। কাউকে আমি ওখানে দেখতে চাই না। ওখানে শুধু মুক্তিযোদ্ধা যেগুলো আসছে, ওগুলো থাকবে। আর সব রাস্তায়।’
দ্বিতীয় কথোপকথনে তৎকালীন মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালামকে খালেদা বলেন, ‘তাড়াতাড়ি করে যত পার পাঠাও লোক। দেরি কর না, দেরি করলে অসুবিধা হয়ে যাবে। বুঝছ।’
তৃতীয় কথোপকথনে বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতকে সক্রিয় করতে একজনকে নির্দেশ দেন খালেদা। ‘জামায়াতকে বলেন, ওদের লোকজন নামিয়ে দিতে বলেন। শুধু ঢাকায় না, সব জায়গায়।… আর মৃদুলকে বলেন যে ও ওর জায়গাটা ভালো করে করতে।’ চতুর্থ কথোপকথনটি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাদেক হোসেন খোকার। খালেদা বলেন, ‘আপনার কমিশনারদের বলুন, যার যার এলাকায় নিয়ে যাক। রাস্তাগুলো ব্লুক করে দিক আর কী। …এলাকাভিত্তিক।”
পঞ্চমটিতে চট্টগ্রামের গোলাম আকবর খন্দকারের সঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি নিয়ে কথা বলেন, যাতে নগর বিএনপির সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেনের নাম এসেছে। খালেদাকে বলতে শোনা যায়, ‘শাহাদাতকে বলেছি, একটা কাজের দায়িত্ব দিয়েছি। খসরু যেন কোনো কাজে বাধা না দেয়, তাকে এই মেসেজ দেন।’ অন্য প্রান্ত থেকে কিছু বলতে চাইলে খালেদা বেশ জোরের সঙ্গে বলেন, ‘সে বাধা দিচ্ছে, আপনি তাকে বলে দেন। বলে দেন যে কোনো কাজে বাধা দেবে না। বাধা দিলে আমি ইমিডিয়েটলি রিমুভ করব তাকে। …’
এই হলেন বেগম খালেদা জিয়া। যিনি এমন নির্দেশ মাঝে মাঝেই দিয়ে থাকেন! তাহলে কোথায় যাচ্ছে দেশ? কোথায় যাচ্ছে বিএনপির রাজনীতি? খালেদা জিয়া দেশের ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেন না। অথচ তার নাতনিরা পড়ালেখার প্রয়োজনে, পরীক্ষার প্রয়োজনে মালয়েশিয়ায় উড়াল দিয়েছে ঠিকই! কি বিচিত্র এই দেশ! কি বিচিত্র এ দেশের রাজনীতি!
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আরাফাত রহমান কোকোর দুই মেয়ের পরীক্ষা থাকায় মায়ের সঙ্গে তারা মালয়েশিয়া চলে গেছে। এ বিষয়টির উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এতে আমরা খুবই খুশি হয়েছি, তারা পরীক্ষা দিক’। তিনি বলেন- ‘অন্যের সুযোগ করে দেয়ার জন্য যদি মনে এই জাগরণটা আসে… আমি আশা করি, ১৫ লাখ ছেলেমেয়ের জন্য এই চিন্তাটা আসতে পারে। এই আশাতেই আমরা আবেদন জানাচ্ছি।’ ২০ দলীয় জোটের নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি শিক্ষামন্ত্রী আবেদন করে বলেন, ‘২০ দলের সবার সহযোগিতা চাই। আপনারা সবাই সাহায্য করেন যেন সবাই নিরাপদে পরীক্ষা দিতে পারে।’
বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির মুখোশ খুলে পড়ছে ক্রমশ। দেশের মানুষকে বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। আর সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে দুর্বৃত্তদের কঠোর হাতে দমন করা। এ জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি। মানুষ রাস্তায় হাঁটতে পারবে না- বাস, ট্রাক চলবে না, এটা তো হতে পারে না। কারা টাকা দিয়ে সন্ত্রাসী উসকে দিচ্ছে- তা দেশের মানুষকে বুঝতে হবে। যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, আজ সময় এসেছে আবার সেই চ্যালেঞ্জের শক্তি পরীক্ষার। একাত্তরে পরাজিতদের হাতে দেশকে ধ্বংস হতে দেয়া যায় না। এই প্রজন্ম বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। আজ তাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে সব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।
-------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ প্রকাশিত
©somewhere in net ltd.