নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিক্রিয়াশীলদের ঢাল ও কতিপয় প্রগতিবাদীর মুখোশ

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৫৭





প্রতিক্রিয়াশীলদের ঢাল ও কতিপয় প্রগতিবাদীর মুখোশ

ফকির ইলিয়াস

==========================================



মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের কথা আপনারা শুনেছেন? অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তিনি যা বলেছেন, তা খুবই ভয়ানক। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্টরাই লেখক অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে। সিপিবি সভাপতি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অভিজিৎ হত্যার বিরুদ্ধে থাকলে এফবিআইয়ের টিম পাঠানোর দরকার নেই। তারা এ দেশে জামায়াত-শিবির পোষণ বাদ দিলেই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ তারা অভিজিৎকে হত্যা করতে জামায়াত-শিবিরকে মদদ দিয়ে যাচ্ছে, আবার তদন্ত করতে টিমও পাঠাচ্ছে।’



অভিজিৎ হত্যার তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই সদস্যের পাঠানোর সমালোচনা করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ঢাকার বুকে এফবিআইয়ের পার্মানেন্ট অফিস আছে। তাদের বাইরে থেকে টিম পাঠানোর প্রয়োজন ছিল না। আসলে তারা আরেকটু শক্ত করে কামড় দিতে চায়।’



সেলিম এই যে কথাগুলো বলছেন, তা কার স্বার্থ রক্ষা করছে? পক্ষান্তরে কি মৌলবাদী শক্তিই আস্কারা পাচ্ছে না? ঢালাও করে ওরাও বলতে শুরু করেছে, আমেরিকা কেন আসবে এখানে নাক গলাতে? বাংলাদেশের প্রগতিবাদী দাবিদার এমন কতিপয় নেতাদের আমরা চিনি, জানি তাদের সন্তানরা কোথায় পড়ে। তারা কোথায় চিকিৎসা করান। তাদের স্ত্রী-কন্যারা শপিং করতে কোথায় মাঝে মাঝে উড়াল দেন। বাংলাদেশে কতিপয় প্রগতিবাদী, চরম প্রতিক্রিয়াশীলদের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। তারা কার পারপাস সার্ভ করছেন, তা এখন আমাদের আর বুঝতে বাকি নেই। আরেকটা চরম দুঃসংবাদ এখানে শেয়ার করা খুবই জরুরি মনে করছি। এই চরম শঙ্কাজনক সংবাদ ইতোমধ্যে মিডিয়ার কল্যাণে জেনে গেছেন বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট একজন বিশেষ ব্যক্তির সর্বনাশ করার প্লট তৈরি করা হচ্ছিল। এটা মার্কিনি গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়ে যায়। এবং ষড়যন্ত্রটি ফাঁস হয়ে যায়। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে, প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ৮ মার্চ ২০১৫ লেখা এই স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ যা বলেছেন, তা হুবহু এখানে তুলে ধরতে চাই। তিনি লিখেছেন-



‘৪ মার্চ, বুধবার আমি মার্কিন আদালতে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে একটি বক্তব্য পেশ করেছি, যে আদালতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারের সাজা ঘোষণা করা হয়।



বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্ব সিজারকে মাসে ৪০,০০০ মার্কিন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়ে প্রথম দফায় ৩০,০০০ মার্কিন ডলার ক্যাশ প্রদান করে। তদন্ত চলছে তাই আমি তাদের নাম প্রকাশ করতে পারছি না। বিএনপি আমাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের পর হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। আবারো বলছি, এগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের আচরণ হতে পারে না। এগুলো জঙ্গিদের আচরণ। যে দল নিরীহ মানুষ ও শিশুকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারে, তাদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়? লক্ষ করে দেখুন, যেসব পত্রিকা ও ‘সুশীল সমাজ’ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলতে কখনো পিছপা হয় না, তারা এ বিষয়ে একেবারে নিশ্চুপ। বিএনপি অপহরণ ও হত্যা করতে পারে, তারপরও তারা কখনই বিএনপিকে সরাসরি দায়ী করে কিছু বলবে না। তারা সবসময় দুই দলকে দোষী করবে। আমাকে হত্যা করার জন্য বিএনপির এই প্রচেষ্টার সপক্ষে তারা কোন যুক্তি তুলে ধরবে এখন? এই একই ‘সুশীল সমাজ’ দাবি করে যে ব্যক্তিগত রেষারেষির জের ধরেই নাকি বিএনপি নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারে। আমাকে যখন কেউ হত্যার চেষ্টা করছে, সেটিও তখন আমি খুবই ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে নিচ্ছি। যারা এর জন্য দায়ী, তারা বিএনপির যত উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বই হোক না কেন, আমি তাদের হদিস বের করে বিচারের মুখোমুখি করব।’ যে বিষয়ে সজীব ওয়াজেদ বলছেন তার আগের ঘটনা কি? তা দেশ-বিদেশের প্রায় সবাই জানেন। আমেরিকান আদালতে এফবিআই ঘুষ কেলেঙ্কারিতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতার ছেলের ৪২ মাস সাজা হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতির ষড়যন্ত্র হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। এফবিআইয়ের একজন এজেন্টকে ৫ লাখ ডলার ঘুষের প্রতিশ্রæতি দিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এই কাজটি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজার (৩৬)। এ ঘটনায় তাকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। প্রায় দুই বছর আগে এই যড়যন্ত্রটি ধরা পড়ে। প্রাথমিকভাবে জয়কে অপহরণের বিষয়টি জানা না গেলেও তার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা জানাজানি হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে এফবিআইয়ের দায়ের করা মামলায় গত ৪ মার্চ ২০১৫ বুধবার সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে রিজভীকে। এ ঘটনায় অপর অভিযুক্ত ঘুষ লেনদেনে মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জোহানেস থালেরকেও আড়াই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন ফেডারেল আদালতের বিচারক ভিনসেন্ট এল ব্রিকেটি এই দণ্ডাদেশ দেন। মামলার প্রধান আসামি এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের সাজার বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে আগামী ৩০ এপ্রিল ২০১৫। এই লাস্টিকই সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পর্কে এফবিআইয়ের কাছে থাকা তথ্য পাচার করে তাকে ও পরিবারের সদস্যদের অপহরণ ও ক্ষতিসাধনের লক্ষ্যে ৫ লাখ ডলারে চুক্তিবদ্ধ হন। এই যে ঘটনা, এ বিষয়ে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সুশীল সমাজ কি বলছেন? তারা কিছু বলেছেন কি? না এখনো আমরা শুনিনি। এটা খুবই লজ্জার কথা, কিছু মুখোশধারী বাংলাদেশে নিজেদের মতো করে তত্ত্ব বিতরণ করছেন। যা মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পায়ে কুড়াল মারছে।



এ মার্ডার ইন বাংলাদেশ- শিরোনামে প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস যা বলেছে, তা পড়েননি বাংলাদেশের কতিপয় বুদ্ধিজীবী? ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে- লেখকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে। একই সঙ্গে একটি পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে যে, হত্যা করার মাধ্যমে বাক-স্বাধীনতার কণ্ঠ রোধ করা যাবে না। দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক সম্পাদকীয়তে ব্লুগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে একটি বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যকার রাজনৈতিক মেরুকরণ এ সংকটের নেপথ্যে অবদান রাখছে।



এ মার্ডার ইন বাংলাদেশ শীর্ষক ওই সম্পাদকীয়তে বলা হয়, এটা ছিল একের ভেতরে দুইয়ের মতো। অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার পর চরমপন্থী গ্রুপ আনসারুল্লাহ বাংলা-৭ টুইটারে লিখেছিল- টার্গেট ছিল এক মার্কিন নাগরিক। একের ভেতর দুই। একের ভেতর দুই- কারণ, ব্লুগার অভিজিৎ রায় ছিলেন একাধারে স্বীকৃত নাস্তিক ও মার্কিন নাগরিক। ওই টুইটে আরো লেখা ছিল রিভেঞ্জ প্লাস পানিশমেন্ট (প্রতিশোধ ও শাস্তি)। সম্পাদকীয়টিতে বলা হয়েছে, অভিজিৎ রায় দৃশ্যত খুন হয়েছেন শুধু একজন মার্কিন নাগরিক হওয়ার কারণে। কথা হলো, অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড বিষয়ে বাংলাদেশের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী-লেখকরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলেন না কেন? কেন তারা একটি জোরালো বিবৃতি পর্যন্ত দিলেন না? মনে রাখতে হবে যে বিষধর সাপ আজ বাংলাদেশে ফণা দেখাচ্ছে, তার বিষদাঁত উপড়ে ফেলতে না পারলে কেউই রক্ষা পাবেন না। এরা আবার সুযোগ পেলে আরেকটি ১৪ ডিসেম্বর ঘটাতে মোটেও দেরি করবে না। বিষয়গুলো আজ সরকার, রাষ্ট্র, জনগণ সবারই ভাবা দরকার। বাংলাদেশের রাজনীতি আজ একটি ষড়যন্ত্রের কাছে জিম্মি। যারা আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারছে, তাদের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ এই কাজে প্রাণের তাগিদ অনুভব করছেন না। তারপরও শুধুমাত্র শীর্ষ নেত্রীর ছেলে ও নিজেকে বাঁচানোর জন্য গুহা থেকে এমন আদেশ দেয়া হচ্ছে। ‘মানুষের অধিকার’ প্রতিষ্ঠার নামে কায়েমি স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকার পতনের মতো রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধে মদদ দেয়া হচ্ছে। এটা কোনো সভ্য রাজনীতির লক্ষণ হতে পারে না।



বিশ্ব ইজতেমা হয়েছে, অবরোধ বাতিল করা হয়নি। পরীক্ষায় হরতাল-অবরোধ দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারিতেও অবরোধ বাদ দেয়া হয়নি। ক্রিকেট জয়ের পর বারো ঘণ্টা হরতাল তুলে নেয়ায় মানুষজন ঠিকই রাস্তায় নেমে এসে উল্লাস করেছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে এ হরতাল-অবরোধে সাধারণ মানুষের সায় নেই। আন্দোলনটা তবে কার জন্য করছেন খালেদা জিয়া? এ ছাড়া বিদেশে-স্বদেশে তারা যে ষড়যন্ত্র করছেন, তা ক্রমশ বের হয়ে আসছে থলের বেড়ালের মতো। সময় এসেছে, এসব বিষয়ে সরকারের জবাবদিহিতার। সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা এই ‘অসময়’ কিভাবে মোকাবেলা করবে। দেশে যে আইন আছে, তা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হোক। লেবাসধারী সুশীলদের কেউ কেউ মাঝে মাঝে গর্ত থেকে বের হয়ে যে নীতিবাক্য শোনাচ্ছেন- তাদের পরিচয় আমরা ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেখেছি। দেখেছি এর আগেও। তাই তাদের বাণী থেকে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত না হলেই উপকৃত হবেন।

---------------------------------------------

দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৪ মার্চ ২০১৫ প্রকাশিত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.