![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
জনমানসে আতঙ্ক ও সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচনী হাওয়া
ফকির ইলিয়াস
-----------------------------------------
ঢাকায় আরেকজন ব্লুগারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার নাম ওয়াশিকুর রহমান বাবু। না আমি তার লেখার সঙ্গে পরিচিত নই। তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে লেখালেখির অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিশ্বে এমন লেখকদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে অনলাইন প্রকাশনার এই যুগে যে কেউ যা ইচ্ছে তাই লিখে বেড়াচ্ছে। তাই বলে তাকে হত্যা করতে হবে? ‘হত্যা’ কোন ধর্ম গ্রাহ্য করে? এই ব্লুগারের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কেউ? তার বিরুদ্ধে কেউ মামলা করেছিলেন? না হয়নি।
বাবুকে হত্যার পরপরই দুজনকে পাকড়াও করেছে জনতা। এরা জানিয়েছে, তারা বাবুকে চিনতো না। ওর লেখাও পড়েনি। এমন কি খুনি যে তিনজন ছিল এরাও একে অপরকে চিনতো না। একজন খুনি এসেছিল চট্টগ্রাম থেকে। কেউ কাউকে না জেনে না চিনেই হত্যা করছে। কী ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের হোতাদের এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। পুলিশ বলছে, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের গাফিলতি পায়নি পুলিশ। তবে একুশের বইমেলার মধ্যে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সময়টাতে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের কাজে সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল- তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন। লেখালেখির জন্য জঙ্গিবাদীদের হুমকির মধ্যে থাকা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর দুই মাস পেরোলেও এখনো কোনো খুনিকে শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
জনমানসে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে এখন বাংলাদেশে। এর মাঝেই ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী হাওয়া বইছে। ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে নির্বাচন হবে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। তারা বলেছিল, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। তাদের বোধোদয় হয়েছে। এটি একটি ভালো লক্ষণ। কারণ নির্বাচনের ফল তাদের অনুক‚লেও যেতে পারে। এতে দেশে বিএনপির শক্তি পরীক্ষা ভালো অবস্থান পাবে। এই বোধোদয় তাদের আগেই হওয়া দরকার ছিল। কারণ জ্বালাও-পোড়াও করে যে মানুষের মন জয় করা যাবে না, তা বেগম খালেদা জিয়ার আগেই জানা উচিত ছিল। বলা দরকার এটি একটি ভালো লক্ষণ। বিএনপির উচিত ছিল এই সুযোগে হরতাল, অবরোধ তুলে নেয়া। তারা তা করছে না।
এদিকে এই নির্বাচনকে ঘিরে বড় দুই দলই মাঠে নেমেছে। নির্বাচনকে দুই দলই মর্যাদার লড়াই হিসেবে নিচ্ছে। নির্বাচনের আগে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে কিছু শর্ত দেবে বলে জানা গেছে। তারা চাইবে সবার জন্য সমান সুযোগ। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান বলেছেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীদের গত তিন মাসে গণহারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে মামলা। যারা মেয়র থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হবেন তাদের বড় একটি অংশ কারাগারে।’ এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, ‘আমরাও চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে, সেটা আমাদেরও দাবি। তা নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে আর বিএনপিকে নাশকতা বন্ধ করতে হবে। নাশকতা করলে পুলিশ ধরবে, মামলা হবে এটাই তো স্বাভাবিক।’ নির্বাচন কেমন হবে, নীতিমালা মানা হবে কিনা- তা নিয়ে অনেক কথা ভেসে বেড়াচ্ছে।
বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চালাতে হচ্ছে অবরোধ-হরতালের মধ্যেই। এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, পরীক্ষা চলাকালে ঘটা নাশকতায় কোনো পরীক্ষার্থীর ক্ষতি হলে তার দায় নিতে হবে বিএনপি জোটকে। পরীক্ষা শুরুর আগের দিন এক বিবৃতিতে মন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমি হরতাল-অবরোধ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনাকারী জোটের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, পরীক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা দিতে দিন। দয়া করে কোনো হটকারী ঘটনা ঘটাবেন না। আমি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, দেশের যে কোনো স্থানে আমাদের একজন পরীক্ষার্থীরও যদি কোনো ক্ষতি হয়, তার দায়দায়িত্ব আপনাদেরই বহন করতে হবে। মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না।’ একটি রাজনৈতিক জোটের বিবেকবর্জিত অব্যাহত হরতাল-অবরোধের কারণে এসএসসির রুটিন অনুযায়ী একটি পরীক্ষাও নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে যে এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হবে না তা আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।
এমন একটি দেশে বসবাস করছে মানুষ যে দেশের ভূমি অফিসে আগুন দেয়া হচ্ছে। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ভূমি অফিসগুলোতে অগ্নিসংযোগের কয়েকটি ঘটনায় স্থানীয় ভূমিদস্যুদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়ে জমি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সারা দেশের প্রায় ২০টি ভূমি অফিসে দুর্বৃত্তদের অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সংরক্ষিত রেজিস্টার-১ বাঁধাই করে সংরক্ষণ করতে সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনের নামে যারা ভূমি অফিসে আগুন দিয়েছে তাদের খুঁজে বের করে বাপ-দাদার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। কোনো জমিতে তাদের অধিকার থাকবে না। তাদের এলাকা ছাড়া করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির পর থেকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা কমে যায়।
এমন আতঙ্কের মধ্য দিয়ে কি একটি দেশ চলতে পারে? কেউ যদি অপরাধ করে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হোক। এমন কি ধর্মের নামে কিংবা ধর্মের বিরুদ্ধে উসকানি দিয়ে কেউ যদি ফায়দা লুটতে চায়, তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। হত্যা কোনো শান্তির বার্তা আনে না। ওয়াশিকুর বাবুকে হত্যার হুকুমদাতা কারা, তা খুঁজে বের করতে হবে। বিশেষ আইনে এমন হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। না হলে সমাজে গোত্রগত কোন্দল, ধর্মের পক্ষে-বিপক্ষে কলহ কেবলই বাড়বে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা- জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সমাজ ও মানবতার জন্য হুমকি হতে পারে না। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের দ্ব›েদ্বর মাধ্যমে সমাজ রক্তাক্ত হবে তা কেউই মানতে পারেন না।
বাংলাদেশ এগিয়েছে এ কথা অনেকেই বলছেন। কোথায় এগিয়েছে? যদি এগোতে তাহলে কি এভাবে বর্বরতম হত্যাকাণ্ড ঘটতো বাংলাদেশে? না, এই তরবারির নিচ থেকে কেউই নিরাপদ নয়। তাই রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে। না হয় কেউই রক্ষা পাবেন না। খুনিরা একে একে অনেককেই তাদের কিরিচের নিচে ফেলবে। আমি আবারো এই প্রজন্মকে জাগ্রত হতে বলি সত্যের পক্ষে। যে সত্য অসা¤প্রদায়িকতার। যে সত্য মানবতার। যে সত্য একাত্তরের মহান চেতনার। যে ঋণ শহীদদের প্রতি- এই আগুয়ান গণমানুষের।
--------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৪ এপ্রিল ২০১৫ প্রকাশিত
©somewhere in net ltd.