নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কে বিজয়ী, কে পরাজিত

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৩৩




কে বিজয়ী, কে পরাজিত
ফকির ইলিয়াস
--------------------------------------------

খালেদা জিয়া নিজের বাড়িতে ফিরেছেন। তিনি আদালতে গিয়ে হাজিরা দিয়েছেন। তারপর সেখান থেকে নিজের বাড়িতে। প্রায় তিন মাস সময় চলে গেল। নিজ অফিসেই ছিল তার অবস্থান। অবরোধ, হরতাল অনেক কিছুই হয়েছে এই সময়ে। কী পেলেন ম্যাডাম জিয়া? কিছু পেয়েছেন কি? তার বিজয় কি সুনিশ্চিত হয়েছে? এর মাঝে প্রাণহানি হয়েছে ১৫৬ জনের। আহত হয়েছেন প্রায় এগারোশ মানুষ। ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ৩৩ জন। যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে ৭৩৮টিতে। ভাঙচুর হয়েছে ৬৬১টি যানবাহন। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশের জিডিপির দশমিক ৫৫ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। অর্থাৎ এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি যা হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে তার চাইতে দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি হতে পারত। গত জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ১১টি খাতের মধ্যে কৃষি খাতে ৩৯৮ কোটি, পোল্ট্রি খাতে ৬০৬ কোটি, চিংড়ি খাতে ৭৪১ কোটি, গার্মেন্টস খাতে ১৩১৮ কোটি, প্লাস্টিক খাতে ২৪৪ কোটি, পরিবহন খাতে ৮২৯ কোটি, ট্যুরিজম খাতে ৮২৫ কোটি, ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স খাতে ১৫৬ কোটি, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ে ৪৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। খালেদা জিয়া বাড়িতে ফেরায় দেশ কি শান্তির দিকে এগোচ্ছে? এমন প্রশ্ন আসছে।

এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাচ্ছে। যে কোনো অজুহাতে স্বস্তি ফিরে এসেছে জনজীবনে। দীর্ঘদিনের অস্থিরতা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। আশা করি আরো ভালোর দিকে যাবে দেশ। মানুষ স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এটা একটা ভালো দিক। সরকার সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে বিরোধসহ সবার সহাবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করবে জনগণ তা আশা করে। টিআইবির ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, যেভাবেই হোক জাতি অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে। … ওই আন্দোলনে বিএনপি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ জনবিচ্ছিন্ন অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাদের একটা পথ দরকার ছিল। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তাদের ওই পথ খুলে দিয়েছে। তারা সুযোগ পেয়েছে দলকে আবারো সংগঠিত করার। আশা করি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবে। যেহেতু বিএনপি দাবি করে তারা নির্বাচনমুখী দল, তারা নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করবে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে সরকারের ওপর। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করার সুযোগ পেয়েছে সরকার। দুপক্ষের দায়িত্বশীল গণতান্ত্রিক আচরণের ওপর নির্ভর করছে দীর্ঘমেয়াদি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ। এ বিষয়ে মতামত দিয়ে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, খালেদা জিয়ার বাড়ি ফেরার মধ্য দিয়ে বিরাজমান সমস্যা কিছুটা হলেও সমাধানের দিকে এগুচ্ছে। দীর্ঘ তিন মাসের অস্থিরতা ও সহিংসতা দূর হলো। এর মধ্যে অনেকগুলো প্রাণ ঝরে গেছে পেট্রলবোমা ও ক্রসফায়ারে। দুপক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে হবে। তাদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে। রাজনৈতিক সহিংসতায় আর যাতে কোনো প্রাণ না হারায় সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। জাতিকে মুক্তি দিতে হলে সবাইকে সহনশীল আচরণ করতে হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার আন্দোলনের ডাকে দেশের মানুষ সাড়া দেয়নি। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হয়ে আন্দোলনের নামে টানা তিন মাস ধরে বিএনপি-জামায়াত সহিংসতা চালিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। এই তিন মাসে সহিংসতার শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ, দেশের সম্পদ ধ্বংস ও জনগণের ক্ষতি হয়েছে। খালেদা জিয়া বিজয়ী হয়ে বাড়ি ফিরবেন এই পণ করে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন কিন্তু তিনি ব্যর্থ হয়েছেন মন্তব্য করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, বাড়ি ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে এসে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি বাড়ি ফিরবেন না, মামলার হাজিরা দিতে আদালতেও যাবেন না। এখন তিনি আদালতেও হাজির হলেন, বাড়িও ফিরলেন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে। তিন মাস নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে পেট্রলবোমা মেরে হত্যা, অগ্নিদগ্ধ করা ছাড়া কোনো লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। তিনি যে জিদ ধরেছিলেন, আদালতে যাবেন না, শেষ পর্যন্ত আদালতে গেলেন, আত্মসমর্পণ করলেন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করবেন। কিন্তু তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে এতগুলো প্রাণ কেড়ে নিলেন কেন। বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণœ করলেন কেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেছেন, খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হয়েছেন, জামিন পেয়ে বাসায় ফিরে গেছেন এটা ইতিবাচক দিক। তিনি তিন মাস ধরে অবরোধ-হরতাল দিয়েছেন। অবশ্য কর্মসূচি শুধু নামেই আছে মানুষ সাড়া দেয়নি। তবে দুঃখজনক হলো এখনো জঙ্গি সন্ত্রাস বন্ধ হয়নি। এখনো জ্বলছে বাসে আগুন। আমাদের প্রত্যাশা তারা এটা না করে নির্বাচনের পথে যাবে। আন্দোলনের নামে যে জীবনগুলো ঝরে গেছে তার পুনরাবৃত্তি হবে না।

কথা হচ্ছে, রাজনীতি কার জন্য? মানুষ পুড়িয়ে কি রাজনীতি হয়? দেশের রাজনীতি কোনদিকে যাচ্ছে- সে প্রশ্ন শেষ হয়ে যায়নি। কারণ হরতাল আছে। আছে চরম শঙ্কাও।

এদিকে চলমান আন্দোলনের চেয়ে খালেদা জিয়া সিটি নির্বাচনকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে খবর বেরিয়েছে। এ জন্য জোট সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে শিগগিরই ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঠে নামবেন তিনি। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পথসভা করবেন। সরকারের আচরণ ও মনোভাব গভীর পর্যবেক্ষণে রাখবেন খালেদা জিয়া। জনগণের সমর্থন নিয়ে তিন সিটিতে জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে প্রতি ওয়ার্ডে নির্বাচন পরিচালনা কমিটিসহ তৈরি করা হচ্ছে নানা কর্মপরিকল্পনা। ঢাকা ও চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনাও আছে। ইতোমধ্যেই হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে। দুই সিটি থেকে অবরোধও তুলে নেয়ার সম্ভাবনা আছে।

বিএনপি তাদের কৌশল পাল্টেছে। আওয়ামী লীগ কোন পথে এগোবে- সে হিসেব তাদেরও করতে হবে। আবারো বলি, রাজনীতি যদি গণমানুষের জন্য হয় তবে মানুষের মুখের দিকে তাকাতে হবে। গেল তিন মাসের আন্দোলনে যারা নিহত, আহত হয়েছে এরা খুবই গরিব মানুষ। বড় দুই দল কি ওদের ক্ষতিপূরণ দিতে পারবে? না পারবে না। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে ওই ক্ষমতার জন্যই তারা নতুন পথ অবলম্বন করছে। বাংলাদেশের মজলুম মানুষের কোনো স্বপ্নচূড়া নেই। তাদের রয়েছে বেঁচে থেকে হেঁটে যাওয়ার ছোট্ট সড়ক। তারা সেই সড়কের দুধারেই স্বপ্নের বাগান নির্মাণ করে যান। ক্ষমতাবান রাজনীতিকরা যদি সেই বাগানটির সামান্য পরিচর্যা করতেন, তবে বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্নরকম হতো। সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের মানুষ। বর্তমান সরকার সব দাবি পূরণ করতে পারছে না। এটা তাদের অপারগতা, ব্যর্থতা। দেশে একটি বিরোধী দল থেকেও নেই। আর বিএনপির মূল লক্ষ্য ক্ষমতা। জনসেবা নয়। এটা কে না জানে- বাংলাদেশ দুর্বৃত্তদের টাকা বানানোর জন্য বিশ্বের প্রধানতম দেশ! এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে। গণমানুষের হাঁটার সড়ক নির্মাণে মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতিকদের ভণ্ডত্বের লেবাস খুলতে হবে প্রজন্মকেই। সমাজ বিনির্মাণের পূর্বশর্ত হচ্ছে সমাজের মানুষের পরিশুদ্ধ জাগরণ। এই কাজটি করতে তরুণ সমাজকে নেতৃত্বে নিতে হবে। আমরা ঘুণে ধরা সমাজ ভাঙার কথা মুখে বলি। কিন্তু সে চেতনাধারী মানুষেরা কোথায়! এ জন্য যে চেতনার দরকার, তার উন্মেষ ঘটাতে হবে ন্যায়পরায়ণ, সৎ মানুষদেরই।

বাংলাদেশ এখনো বিনিয়োগের জন্য ভালো দেশ। এ কথা অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীরাই বলেন। এমনই একটি খবর আমরা পড়েছি সা¤প্রতিককালে। বাংলাদেশকে সম্ভাবনার ভূমি হিসেবে দেখছে বহুদিনের পরীক্ষিত বন্ধু জাপান। কম খরচের এই দেশটিতে তাই তারা বিনিয়োগ ক্ষেত্র করতে চায়। এ দেশের বহুমাত্রিক শিল্পায়নে সহায়তা করতে চায় এশিয়ার অন্যতম এই অর্থনৈতিক শক্তি। বিনিয়োগ বোর্ড জানিয়েছে, জাপানের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বড় মাপের কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আসিয়ানসহ চীন, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে তাদের গার্মেন্টস কারখানাগুলোও তারা বাংলাদেশে স্থানান্তরের আগ্রহ দেখিয়েছে। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই তরুণ এবং অপেক্ষাকৃত সস্তায় জনশক্তি পাওয়া যায়। জাপানের আগ্রহকে বাস্তবে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার টোকিও সফরের সময় শুধু জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে ৫০০ একরের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা স্থাপনের প্রতিশ্রæতি দেন। সে সময় রপ্তানি প্রস্তুতকরণ কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও জাপানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (জেট্রো) একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করে। সে চুক্তি অনুসারে, জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্য পাঁচটি ইপিজেডে ৪০টি প্লট ও দুটি ভবন জাপানের জন্য করা হয়েছে। এমন অনেকেই হয়তো এগিয়ে আসবে। কিন্তু গণমানুষকে বিজয়ী হতে হবে। তাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ এই রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পাক। গণতন্ত্র যদি মানুষের জন্য হয়, তবে আইনি শাসন প্রতিষ্ঠা করে মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দেয়া হোক। এর চেয়ে বেশি চাওয়ার আর কিছুই নেই।
----------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা॥ শনিবার, ১১ এপ্রিল ২০১৫ প্রকাশিত

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪৯

তাপদহন বলেছেন: আপোষহীন নেত্রী বলেছিলেন, "যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা সফল না করে উনি ঘরে ফিরে যাবেন না।"

আন্দোলন সফল হবার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছেনা - তাই সরকার তাকে ঘরে ফিরে যাবার একটা সুযোগ করে দিলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.