নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফিরে দেখা অতীত ও সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয়

০৯ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:০৯



ফিরে দেখা অতীত ও সিটি নির্বাচনে জয়-পরাজয়
ফকির ইলিয়াস
==========================================

ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তিনটি আসনেই জিতেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ভোটের দিন দুপুরে প্রধান অংশগ্রহণকারী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। কিভাবে তারা বর্জনের পরিকল্পনা করেছিলেন, সেই কথোপকথনের রেকর্ডিং বাজারে ঘুরপাক খাচ্ছে। তারা কি বুঝতে পেরেছিলেন- তারা হেরে যাবেন? এ জন্যই তারা এই কাজটি করেছিলেন? স্বীকার করি, ভোটের দিন বেশকিছু কেন্দ্রে লুটপাট হয়েছে। ভোট জালিয়াতি হয়েছে। প্রশ্ন করতে চাই- কোন ভোটে বাংলাদেশে জালিয়াতি হয়নি? বিএনপির সময়ে যে ভোট জালিয়াতি হয়েছিল, তা নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট ইতোমধ্যে মিডিয়ায় এসেছে।

বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের আমলেও ঢাকাসহ তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল। গণমাধ্যমের সমালোচনার ঝড় উঠেছিল ওই নির্বাচন নিয়েও। তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ মেয়র পদে কোনো প্রার্থী না দিলেও বিএনপি ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তাদের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনে। বাম জোটের মেয়র প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশাকে রাজশাহীর একটি কেন্দ্রে বিএনপির সমর্থকরা আটক করে লাঞ্ছিত করে। সেনাসদস্যরা তাকে উদ্ধার করে। ঢাকায় বিএনপির প্রতিদ্ব›দ্বী ছিল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। এই দলের সমর্থকদের ঢাকায় ব্যাপকভাবে লাঞ্ছিত করে বিএনপির কর্মীরা।

২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হন বিএনপির প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকা। ওই সময় নির্বাচন কমিশনার দাবি করেছিলেন- ঢাকায় প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটার ভোট দেয়। তবে তখন বিএনপিপন্থী নামে পরিচিত মানবাধিকার সংগঠন এই ভোটারদের হার নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ওই সময় নির্বাচন কমিশনার দাবি করেছিল, ঢাকায় ৩৪ দশমিক ৩৭ ভাগ, ৬৪ দশমিক ৪০ ভাগ খুলনায় এবং ৭১ দশমিক ৪১ ভাগ রাজশাহীতে ভোট পড়েছে। রিপোর্টে অধিকার আরো জানিয়েছিল, ঢাকায় ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির ঘটনা ঘটে। ভোট কেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অপরাধে ঢাকায় ৫২ জন, রাজশাহীতে ১৭ জন এবং ১৯ জন খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা সবাই ছিলেন বিএনপির কর্মী।

২০১৫-এর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কে কত ভোট পেয়েছেন, তা একটু দেখা যাক। নির্বাচন কমিশন জানাচ্ছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ভোটারের সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯০০টি। এই সিটিতে আনিসুল হক টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। আর নিকটতম পরাজিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বাস প্রতীকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট পান। ঢাকা দক্ষিণে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৮ জন। এখানে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ইলিশ মাছ প্রতীকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ ভোট পেয়ে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী মির্জা আব্বাস মগ প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১টি। চট্টগ্রাম সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ জন। এই সিটিতে আ জ ম নাছির উদ্দীন হাতি প্রতীকে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী এম মনজুর আলম কমলালেবু প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৭টি। একটা বিষয় খুব স্পষ্ট, বিএনপি প্রার্থীরা লাখ লাখ ভোট পেয়েছেন। এটাও পরিষ্কার হয়ে গেছে, বাংলাদেশে এই দুটি রাজনৈতিক দলেরই শক্ত প্রতিপত্তি রয়েছে। এর বাইরে যারা নির্বাচন করেছেন, তারা টক শোর যত বড় মাতব্বরই হোন না কেন, ফেসবুকে লাখো সমর্থকই থাকুক না কেন- মানুষ যে তাদের ভোট দেয় না, তা জানা গেছে এবারেও। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মাহী বি. চৌধুরী, জোনায়েদ সাকি, আবদুল্লাহ আল ক্বাফি, গোলাম মওলা রনি, নাদের চৌধুরীসহ মোট ৪২ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। সিটি নির্বাচন আমাদের চোখ আবারো খুলে দিয়েছে।

এর আগে সিটি নির্বাচনগুলোতে বিএনপি একচেটিয়া জিতেছিল। কিন্তু এখন তাদের অবস্থা খুবই নাজুক। সিলেটের বিএনপি সমর্থিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কিবরিয়া হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়ার কারণে বরখাস্ত হয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের পদ থেকে অপসারণ করার অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর অভিযোগপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। বহিষ্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এমনটা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। জানা গেছে পুলিশ প্রশাসনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশের চিঠিতে মো. মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নামে পাঁচটি মামলা থাকার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা কয়েকটি মামলার তথ্য দেয়া দিয়ে বলা হয়েছে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র পদে কর্মরত থাকলে মামলাগুলো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খুলনায় মো. মনিরুজ্জামান মনি এবং বরিশালে মো. আহসান হাবিব কামাল মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে। কুমিল্লার মেয়র মনিরুল হক সাক্কুও অনেকটা নিষ্ক্রিয় আছেন বলেই জানাচ্ছেন ওই সিটির মানুষজন।

আওয়ামী লীগ বলছে, সরকারি দলের মেয়র হলেই বেশি কাজ করা সম্ভব। কিন্তু কথা হলো, তাহলে তো গণতন্ত্র বা মানুষের ভোটের অধিকারের কোনো মূল্যই থাকল না। এভাবে কি একটি জাতি, একটি দেশ গণতান্ত্রিক কাঠামো শক্ত করে দাঁড়াতে পারে? না- পারে না।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এসেছে নির্বাচন কমিশনে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে এই অভিযোগ ওঠেনি? এমনো দেখা গেছে, তদন্ত করতে করতেই কেউ তার মেয়াদ পালন করে চলে গেছে। ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট বর্জনের পর তা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগের সপক্ষে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। তাদের আহ্বানের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যে সমস্যা, ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্ত করব, খতিয়ে দেখব। কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল আমার হাতে আসবে। কে কত ভোট পেয়েছে তা দেখতে পারব।’ এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর দিন লালবাগে গুলিবর্ষণে সাতজনের মৃত্যুর ঘটনা, দশম সংসদ নির্বাচনের সময় ৫৮২টি কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া, প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এর সঙ্গে তুলনা করলে, এই নির্বাচন খুবই সুষ্ঠু হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন- ‘হয়তো কিছু ঘটনা ঘটেছে। সাতাশশ কেন্দ্রের মধ্যে দুটি বন্ধ হয়েছে। ৪০/৫০টি জায়গায় কিছু ঘটনা ঘটেছে। ওই কেন্দ্রগুলোতে কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল, তারপর আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়।’ প্রার্থীদের পক্ষে বিএনপির অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, বর্জনের ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে বিএনপি মেয়র প্রার্থীরা এত ভোট পান কী করে? বলেছেন, যারা সমালোচনা করছে, তাদের জবাব দিতে হবে।

এটা বলতেই হবে, এই নির্বাচনে মূলত ধনী পুত্র তাবিথ আউয়ালের অভিষেক হয়েছে। তিনি চলে এসেছেন বিএনপির ব্যানারে। দল হিসেবে এই অর্জন বিএনপিরই। বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে যা চলছে, তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, তা দেশের মানুষকেই ভাবতে হবে। বিএনপি গেল সাড়ে তিন মাস দেশে যে অরাজকতা করেছে- তা না করলে হয়তো অবস্থা অন্যরকম হতে পারত। কিন্তু মানুষ পুড়িয়ে মারার অরাজকতা মেনে নেয়নি। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির এই বোধোদয় না হলে, তাদের সামনে আরো কঠিন সময় আসতে পারে।
------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৯ মে ২০১৫ প্রকাশিত

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:২৩

সুমন কর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.