নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিক্রিয়াশীলদের গতিপ্রকৃতি ও ধর্মীয় সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩১



প্রতিক্রিয়াশীলদের গতিপ্রকৃতি ও ধর্মীয় সংস্কৃতির ভবিষ্যৎ
ফকির ইলিয়াস
----------------------------------------================================

বড় জটিল সমস্যা। প্রতিক্রিয়াশীলরা হাত সাফাই করছে। তারা তাদের বুলি পাল্টাচ্ছে নিজেদের প্রয়োজনে। একটি জঙ্গি গ্রুপ বলে দিয়েছে ঈদের নামাজ পড়া যাবে না। আরো অনেক কিছু তারা বলতে পারে। এরা পাল্টে দিতে পারে ইসলামি সংস্কৃতির ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। এই যে মনগড়া কথাবার্তা এরা বলছে এর কড়া প্রতিবাদ করছে না মুসলিম বিশ্ব। এর কারণ কি? তারা কি এসব জঙ্গিকে ভয় পাচ্ছে?

একটা সংবাদ অনেকের নজরে এসেছে হয়তোবা। বলা হচ্ছে- ঈদের দিনে জুমার নামাজ পড়ার দরকার নেই। এই বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় মিডিয়াগুলো রিপোর্টও করেছে। সুপ্রিম কাউন্সিলের একজন সদস্য হলেন আলী আল-হাকামি, তিনি এক ফতোয়া ইস্যু করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, মুসলমানদের জন্য একই দিনের ঈদ ও জুমা হওয়ার কারণে এক সঙ্গে দুটো বিষয় পালন করার প্রয়োজন নেই। ঈদ জামায়াত পড়ার পরে জুমা পড়ার দরকার নেই, কেবল ঈদের নামাজ পড়াটাই যথেষ্ট। এ বিষয়ে আরেকজন ইসলামি বক্তা ড. জাকির নায়েক বেশ কিছুদিন থেকেই নানা কথা বলে আসছেন। তিনি বলেছেন- ‘জুমার দিনে আগে ঈদের নামাজ আদায় করলে পরে জুমার নামাজ আদায় করা আর না করা ঐচ্ছিক ব্যাপার। সুতরাং এগুলোই ঈদের নামাজের পদ্ধতি। (আবু দাউদ, অধ্যায়- সালাত, হাদিস নং ১০৬৮)’ এরকম অনেক নতুন কথাই আজকাল শুনছি আমরা। এর কারণ কি? আমরা কি তবে আমাদের ঐতিহ্যগত ইসলামি ধ্যান-ধারণার বিবর্তনের দিকে এগুচ্ছি?

কৃতী বুদ্ধিজীবী আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ দিয়েছেন নিউইয়র্কবাসী। সেখানে তিনি আবারো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আপনাদের অনেকে জানেন, ১৯২৬ সালে ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’ নামে একটি আন্দোলন গড়ে উঠেছিল ঢাকায়। মূলত এ আন্দোলন ছিল মুসলিম সমাজকে প্রগতিমুখী করার জন্য একটি সাহিত্যিক সাংস্কৃতিক আন্দোলন। আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান দর্শন রাজনীতি অর্থনীতি ইত্যাদি নানা বিদ্যার দিগন্তে বিচরণ উৎসাহী এবং মুক্তিবাদ ও মানবতাবাদ উদ্দীপ্ত সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল হুসেন (অর্থনীতি ও বাণিজ্য), অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন (পদার্থ বিদ্যা), বিএ ক্লাসের ছাত্র আবুল ফজল, ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের অধ্যাপক কাজী আবদুল ওদুদ (বাংলা) প্রমুখ ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কাজী আবদুল ওদুদকে বলা হতো এ প্রতিষ্ঠানের মস্তক, আবুল হুসেনকে হস্ত এবং কাজী মোতাহার হোসেনকে হৃদয়।

তাদের লক্ষ্য ছিল মুসলমান বাঙালিকে কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, রাজা রামমোহন রায়কে ‘মহামানব’ বলার অপরাধে এদের বিচারের কাঠগড়ায় তোলা হয়। কাজী আব্দুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন প্রাণভয়ে কলকাতা চলে যান। আপনারা জানেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামকে কাফের ফতোয়া দিয়েছিল তৎকালীন মোল্লারা। বলা হয়েছিল ইংরেজি শিক্ষা হারাম। স্যার সৈয়দ আহমদকেও এরা পছন্দ করেনি ইংরেজি শিক্ষা প্রসারে কাজ করেছিলেন বলে। অথচ এরাই পরে কাজী নজরুল ইসলামকে মুসলিম রেনেসাঁর কবি তকমা দেয়ার কোশেশ করেছে। এখন মৌলবাদীরা নজরুলের গান গান নিজেদের প্রয়োজনে।

জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনের একটি সিরিজ ভাষণ দেয়ার জন্য তিনি নিউইয়র্কে এসেছিলেন। সেখানে তার একটি বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ায়। এ নিয়ে অনেক মিথ্যাচারিতা করছে মৌলবাদীরা। এর মধ্যেই নিউইয়র্কবাসী বাঙালিরা তাকে দিলেন নাগরিক সংবর্ধনা। একটি চমৎকার আয়োজনে, অমর একুশের গানের কিংবদন্তি রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেছেন, আমি মোটেই বিস্মিত নই। এরকম মূর্খ এই সমাজে আগেও ছিল। আগামীতেও থাকবে। তাই একটা সামাজিক বিপ্লব দরকার। যে বিপ্লব মানুষকে বদালাবে জ্ঞানের পথে। মানুষ হাঁটবে আলোর আঙিনায়। ১২ জুলাই ২০১৫ রোববার বিকেল তিনটায় জ্যামাইকার ক্রাউন প্লাজা হোটেলের বলরুমে ছিল তার নাগরিক সংবর্ধনা। অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে। কৌশলগত কারণে ভ্যানু পরিবর্তন করেন উদ্যোক্তারা। বেলা তিনটার আগেই বলরুম কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য উপস্থিত হয় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। অন্যতম আয়োজক ড. নুরান নবীর ভূমিকা বক্তব্যের পর একটি দেশাত্মবোধক গান ও অমর একুশের গান পরিবেশন করেন উদীচীর শিক্ষার্থী নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা। সমবেত সবাই দাঁড়িয়ে কণ্ঠ মেলান গানের সঙ্গে। প্রাজ্ঞ এই ব্যক্তিত্ব বলেন, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পুড়িয়ে মারা হতো নারীদের। ভ্যাটিকানে বিদ্রোহ হয়েছিল। সভ্যতা একেবারে আসেনি। অনেক পরিক্রমা পার হতে হয়েছে মানব সমাজকে।

তিনি বলেন, ইসলামে অনেক ইমাম এসেছেন। তাদের একে অপরের সঙ্গে ভিন্নমত ছিল। সুন্নিহ ও শিয়া মুসলমান বিষয়েও অনেক কথা আছে। কিন্তু মানব সমাজ এগিয়ে গেছে। এগোতেই হয়। তিনি বলেন, আজকের সমাজ সমকামীদের অধিকার দিয়েছে। ‘গে রাইটস’ এখন একটি স্বীকৃত বিষয়। এসব নিয়ে এই প্রজন্মকে ভাবতে হবে। পরখ করতে হবে আলো ও আঁধারের পথ।

তিনি বলেন, আমাদের একজন কামাল আতাতুর্ক দরকার। যিনি অনেক কিছুই নিষিদ্ধ করেছিলেন। তুরস্কে যেভাবে সভ্যতার বিবর্তন হয়েছিল, আজ তা জানতে হবে- বুঝতে হবে এই প্রজন্মকে। তিনি বলেন, বিশ্বে আজ নতুন নতুন মৌলবাদ তৈরি হচ্ছে। এটা কারা করছে? কাদের স্বার্থে করছে? বিশ্বব্যাপী আজ মুসলমান, মুসলমানকে হত্যা করছে সবচেয়ে বেশি। গোত্রগত সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে শুধুমাত্র মূর্খতা, বর্বরতার কারণে। মানুষের অজ্ঞতাই আজ এই নতুন নতুন মৌলবাদের অন্যতম কারণ। অমর একুশের গানের এই স্রষ্টা বলেন, সৌদি বাদশাহ আজ ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন ইরানকে ধ্বংস করার জন্য। বিষয়টি ভাবা যায়! এই হলো মুসলিম সত্তার নমুনা। তিনি বলেন, ভাষা ও রাষ্ট্রের ভিত্তিতে প্রথম জাতি হচ্ছে বাঙালি। আর প্রথম রাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশ। এটা কম বড় অর্জন নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। বরেণ্য এই সাহিত্যিক বলেন, আজ আমাদের চারপাশে বাণিজ্যের হালালিকরণ করা হয়েছে। আমরা খ্রিস্টান ব্যাংক না দেখতে পেলেও কয়েকগণ্ডা ইসলামি ব্যাংক দেখি। এর কারণ কি? সবই স্বার্থের খেলা। এসব মৌলবাদীরাই তাদের স্বার্থে আঘাত পড়লে মনগড়া ফতোয়া দেয়। মানুষের কল্লা চায়! কী বীভৎস এদের আচরণ!

প্রবীণ এই সাংবাদিক বলেন, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আমি মৃত্যুকেও ভয় করি না। আমার কথা আমি সত্যের পক্ষে বলেই যাবো। আমার বিবেচনাবোধ কেউ রুখতে পারবে না। তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনারা চ্যালেঞ্জ নিয়ে এখানে অনুষ্ঠান আয়োজন করে প্রমাণ করেছেন ১৯৭১ এখনো আমাদের মননে উজ্জ্বল। আপনারা যারা মুক্তিযোদ্ধা এখানে আছেন, আমার সশ্রদ্ধ অভিবাদন গ্রহণ করুন। এই প্রজন্মের সবাইকে বলতে চাই, মানবতার জয় হবেই। কারণ মানুষই জগতের সবচেয়ে বড় শক্তি। আঁধার চিরে মানুষ দাঁড়াবেই। তিনি বলেন, বিশ্বে সেক্যুলার পলিটিকস জয়ী হতেই হবে। তা না হলে মানবতাবোধ থাকবে না। মানুষ আর মানুষ থাকবে না। তিনি খুব দীপ্তকণ্ঠে বলেন, আমি কোনো অপশক্তিকে ভয় করি না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের চারপাশে প্রগতিবাদের লেবাস পরে যারা আছে, এরাই আমাদের প্রধান শত্রু। এরা পড়ে না। জানে না। জানতে চায়ও না। কথায় ও জীবনাচারে এদের বড় অমিল। এদের চিহ্নিত করতে হবে। ‘বন্ধু’ ও ‘শত্রু’ চিনতে হবে আমাদের। মৌলবাদী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা বিষয়ে তিনি বলেন, এদের একটি নিষিদ্ধ করলে তারা অন্য নামে আরো তিনটা করবে। যেভাবে বিশ্বে আমরা নতুন নতুন জঙ্গি গ্রুপের নাম শুনছি।

প্রায় একঘণ্টার বক্তব্যে তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী লীগই করতে পারছে। এটা শেষ হবেই। সেই সঙ্গে যারা মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী চেতনার বীজ বুনছে গ্রামে-গ্রামান্তরে, এদের তৎপরতায় নজর রাখতে হবে। তা না হলে আমাদের অর্জন ¤øান হয়ে যেতে পারে।

এই ঘটনার ধারাবাহিকতা লক্ষ করে আমরা একটা বিষয় শিখলাম। তা হলো- আমাদের চারপাশে যে তথাকথিত কিছু প্রগতিবাদী থাকেন, ঘুরাফেরা করেন- তারা নৈতিকভাবে কত দুর্বল। ধর্মের কথা এলেই আমরা নত হই। হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু ধর্মে ভাষা ও সংস্কৃতির যে বিবর্তন- তা নিয়ে কথা বলতে আমাদের অসুবিধা কোথায়? কেন আমরা মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর পূর্ব সময়ের আরবি ভাষার ইতিহাস পড়ছি না? একটা বিষয় হলো- যুগ এখন গবেষণার। প্রজন্ম হাতের স্মার্টফোনে গুগল সার্চ করে অনেক কিছুই জানতে-শিখতে পারছে। এই যে প্রবাহ তা থামিয়ে রাখা যাবে না। মানুষ জ্ঞানের আলো জ্বালাবেই। কিছু মূর্খ, অর্ধশিক্ষিত যতই চেঁচামেচি করুক না কেন- তারা দলিল দিয়ে এসব সত্যের মোকাবেলা করতে পারবে না।

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী এই ৮১ বছর বয়সেও আমাদের চেতনার বাতিঘর। তিনি যে মশাল হাতে এগিয়ে চলেছেন- তা আমাদের কাছে অনুস্মরণীয়। বিবেক দিয়ে কথা বলার মানুষ আমাদের জাতিসত্তায় এখন নেই বললেই চলে। তিনি প্রজন্মের মাঝে সেই আলোর বীজতলা নির্মাণ করেই যাচ্ছেন। তিনি যে প্রশ্নগুলো তুলেছেন- তা আমাদের ভাবতে হবে গভীরভাবে। কারণ আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অর্জন টিকিয়ে রাখতে হলে প্রজন্মে গড়ে তুলতে হবে সেই আলোকেই।

আমাদের চারপাশে আজ ধর্মের দোহাই দিয়ে কেবলই স্বার্থের খেলা। বিশ্বের সবচেয়ে অনুভূতিশীল বিষয়টির নাম ধর্ম। আর যারা এই শক্তিকে পুঁজি করে ‘কল্যাণের রাজনীতি’ করছে- তাদের মূল উদ্দেশ্য কি তা সবার খোঁজা দরকার। তারা এক গ্রুপ থেকে শত গ্রুপে বিভক্ত হবে ঠিকই- এতে ফেৎনা বাড়বে। যা গোটা বিশ্ব ইতোমধ্যেই অনুধাবন করছে। চরম প্রতিক্রিয়াশীলতা ধর্মীয় সংস্কৃতির ভিতকেও বিনষ্ট করে। আর জাতীয় সংস্কৃতির পায়ে কুড়াল মারা তো এদের অন্যতম এজেন্ডা হিসেবেই থেকে যায়। এই প্রজন্মকে এ বিষয়ে বেশি করে পঠন-পাঠনই আলোর দিশা দিতে পারে।
-----------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৫ জুলাই ২০১৫

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.